নভেল করোনা ভাইরাস বর্তমানে যা কোভিড-১৯ নামে পরিচিত , যা গত বছর অর্থাৎ ২০১৯ এর শেষ থেকে আলোচনায় এসেছে।
নভেল করোনা ভাইরাস বর্তমানে যা কোভিড-১৯ নামে পরিচিত , যা গত বছর অর্থাৎ ২০১৯ এর শেষ থেকে আলোচনায় এসেছে।
চীন থেকে এর সূত্রপাত হয়ে যা বর্তমানে এই আর্টিকেল লিখা পর্যন্ত সারা বিশ্বে ৫,৮১৯,৯৬২ জনকে আক্রান্ত করে এবং ৩৬২,৭৮৬ জনের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। যার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে বিশ্ব মহামারি নামে অবিহিত করেছে।
এত মৃত্যুর কারন হল করোনা ভাইরাসের এই রূপটি বিজ্ঞানের জগতে নতুন। যার জন্য বিজ্ঞানীরা তাদের স্বর্বাক্ত দিয়ে চেষ্ঠা করছেন এর প্রতিষেধক বের করার এবং কিভাবে তা আরও বিস্তার লাভ না করেতে পারে তা জানার জন্য ।
কিন্তু এই সল্প সময়ে তা খুবিই কষ্ঠসাধ্য , কারন কোভিড-১৯ এর জন্য নির্দিষ্ট কোন প্রতিষেধক নেই। জার্মানির Greifswald University Hospital and Ruhr-Universität Bochum এর গবেষকরা করোনা ভাইরাসের উপর ২২টি গবেষণা কাজের তথ্যের সমন্বয়ে কিছু তথ্য দিয়েছেন।
যার থেকে আমরা জানতে পারব কোভিড-১৯ কোন জিনিসের উপর কতক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে এবং কিভাবে মানুষ এর থেকে বেঁচে থাকতে পারে।
তাদের এই তথ্যটি The Journal of Hospital Infection এ প্রকাশিত হয়েছিল।
যেখানে তারা খুব সম্প্রতি দুটি মহামারি severe acute respiratory syndrome (SARS) and Middle East respiratory syndrome (MERS) এর জন্য দায়ী করোনা ভাইরাসের উপর লক্ষ্য রেখে করেছেন।
কতোক্ষন বাঁচে করোনা ভাইরাস?
করোনা ভাইরাস প্রধানত একটি রেসপাইরেটরি অসুখ।
যার অর্থ এটি প্রধানত বাতাসের মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি কাশির ড্রপলেটের মাধ্যমে তা মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে দেহের ভিতরে প্রবেশ করে সংক্রামিত করে।
তাছাড়া এটি আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি কাশির সময় মুখ দিয়ে যে অজস্র ক্ষুদ্র পানি কণিকা বা ড্রপলেট বের হয় তা যদি কোন জিনিস বা আসবাপত্রের উপর পরে, তবে সেখানে যে প্রতিটি ক্ষুদ্র পানি কনার মধ্যে এই ভাইরাসের জীবাণু থাকে।
তখন যদি কেউ সেই জায়গায় স্পর্শ করে এবং এরপর পুরো ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে হাত না ধুয়ে সে হাত দিয়ে দিয়ে যদি খাবার খায় বা চোখ নাক, কান বা মুখে স্পর্শ করে তবে তারাও এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হবে এবং তাদের থেকে অন্য আরও অনেকে।
কিন্তু পাবলিক পরিবহন, জামাকাপড় , সিড়ির রেলিং সহ এমনকি টাকাতেও এটা কতক্ষন জীবিত থাকবে তা নির্ভর করে তাপমাত্রা, ঐ পরিবেশের প্রকৃতি এবং কি উপাদানের অর্থাৎ কাঠ, তামা, স্টিল সহ আরও কিছু বিষয়ের উপর।
ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলাইনের একজন এপিডমিওলজিস্ট রেচেল গ্রাহাম বলেন মোটা দাগে এটি বাতাসে এক ঘন্টা থেকে এজ দিন পর্যন্তও বেঁচে থাক পারে।
এই গবেষণাটি সার্স-কোভ-১ এবং মার্স রোগের জীবানুর উপর করা হয়েছে । যা কোভিড-১৯ ( সার্স-কোভ-২) এর সমগোত্রীয়।
বাতাসে
বাতাসে করোনা ভাইরাস কয়েক ঘন্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে । অর্থাৎ এটি বাতাসে ৩ ঘন্টার উপরে ইনফেকশিয়াস অবস্থায় বেঁচে থাকতে পারে।
কাগজ ,টিস্যু বা কাগজ জাতীয় জিনিসের উপর
দুটি গবেষণায় দেখা গেছে কাগজের উপর সার্সের জীবানু একগবেষণায় ৪-৫ দিন এবং অন্য গবেষণায় মাত্র ৩ ঘন্টা বেঁচে ছিল।
New England Journal of Medicine এর একটি গবেষণা পত্র থেকে জানা যায় যে, ২০-২১º সে. তাপমাত্রায় কার্ডবোর্ডের উপর সার্স-কোভ-১ , ৪ ঘন্টার মত বেঁচে থাকতে পারে কিন্তু এই নতুন করোনা ভাইরাস কার্ডবোর্ডের উপর ২৪ ঘণ্টা পরর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। অর্থাৎ এটি সার্সের থেকেও ৩ গুন বেশি সময় বেঁচে থাকতে পারে।
প্লাস্টিক,কপার , কাঠ , জামাকাপড় এবং স্টেইনলেস ইস্টিলের উপর
এখন পর্যন্ত পরীক্ষিত উপাদানগুলোর মধ্যে করোনা ভাইরাস সবচেয়ে বেশি সময় অবস্থান করে প্লাস্টিক ,অর্থাৎ পলিপ্রপাইলিন ধরনের প্লাস্টিকের উপর যা সাধারন্ত প্যাকেজিং কাজে পানি নিরোধক থেকে বাচ্চাদের খেলনা সহ দৈন্দিন কাজের সাথে যুক্ত প্রায় সকল প্রকার প্লাস্টিক জাতীয় জিনিসে ব্যহৃত হচ্ছে , তবে বর্তমানে মানুষের যে ব্যাহৃত জিনিসে এটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় তা হল সার্জিক্যাল মাক্স।
the New England Journal of Medicine এ বছরের মার্চের ১৭ তারিখে প্রকাশিত একটি গবেষনা পত্রের থেকে পাওয়া যায় যে , কোভি-১৯ এবং সার্সের মাঝে সমন্বয় করে তারা পান যে,
এটি ৭০ ডিগ্রি ফারেনহাইটে সবচেয়ে বেশি সময় বেঁচে থাকে স্টেইনলেস স্টিল এবং পলিপ্রপাইলিনের উপর । তারা বলেন যে , এই নতুন ভাইরাস তাদের গবেষনার ৭ তম দিনেও সার্জিক্যল মাক্সের উপর উপস্থিত ছিল।
তবে সাধারন্ত এরা প্লাস্টিক ও স্টিলের উপর ৩-৪ দিন ইনফেকশিয়াস অবস্থায় অবস্থান করতে পারে।
এছাড়াও এটি কপারের উপর প্রায় ৪ ঘন্টা , কাপড়ের উপর প্রায় ২ দিন পর্যন্ত অবস্থান করতে পারে । তবে করোনা ভাইরাস অমসৃন উপাদান থেকে মসৃন উপাদনে বেশি সময় ধরে ইনফেকশিয়াস অবস্থান করে ।
কিছুদিন পর হয়তো আমাদের দেশের লকডাউন উঠে যাবে, সবাইকে আবার যার যার কর্মক্ষেত্রে যেতে হবে ,কিন্তু এই ভাইরাসের প্রকপ কিন্তু এত সহজে কমবেনা, আর তাই আমাদের এর বিস্তার এবং আক্রান্ত হবার থেকে সচেতন হতে হবে ,
আমাদের প্রতিদিনই বাইরে থেকে ফিরে ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার পাশাপাশি সবার জামাকাপড় এবং মাক্স প্রতিদিন ধোয়া । এছাড়াও বাসায় ধুকে নিজের মোবাইল ফোনটাও জীবানু মুক্ত করা ।
এছাড়াও বাজার থেকে কোন কিছু কেনার পর ত আমরা রান্না ঘরের এককোনা ১-২ দিন রেখে দিতে পারি এরপর তা ব্যবহার করতে পারি।
কারন আমাদের সব সময়ই একটা কথা মনে রাখতে হবে যে , প্রতিরোধ প্রতিকারের চেয়ে উওম।
রেফারেন্সঃ
https://aem.asm.org/content/76/9/2712.short
https://academic.oup.com/cid/article/41/7/e67/310340
https://www.hindawi.com/journals/av/2011/734690/
https://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S0195670120300463
https://www.medicalnewstoday.com/articles/coronaviruses-how-long-can-they-survive-on-surfaces?fbclid=IwAR3sHkbi2S5bf-wIrGfCNK6ARTg1MyAKiY_6pSt_5dAbj3LCcNEfWsFZOBw#How-to-inactivate-coronavirus