৩. ক্রিস্পার রোগ সৃষ্টিকারী সকল অণুজীবকে চিরতরে সরিয়ে সক্ষম:
যদিও চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির ফলে মরণঘাতি এইচ আই ভি (HIV) ভাইরাসের সংক্রমণ প্রাণঘাতী থেকে বেঁচে থাকার জন্য সহনীয় পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে, তবুও এর চিরস্থায়ী কোনো প্রতিরোধ ব্যবস্থা বিজ্ঞানীরা এখনও খুঁজে পাননি। এই সমস্যাটির সমাধান ক্রিসপারের মাধ্যমে করা যেতে পারে। অর্থাৎ একটি মরণঘাতী রোগকে তার মারণ স্বভাব থেকে আমূলে পরিবর্তন করা সম্ভব। ২০১৭ সালে চীনা বিজ্ঞানীদের একটি দল ইঁদুরের একটি জিনের মিউটেশনকে অনুলিপন (একই জেনেটিক সিকোয়েন্সের হুবহু কপি তৈরি) করেন, যেটি কোষকে ভাইরাসের প্রবেশের হাত থেকে রক্ষা করে। ফলে ইঁদুরে এইচ আই ভি –র বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেড়ে যায়। বর্তমানে বিজ্ঞানীরা এই একই পরীক্ষা আরও অন্যান্য প্রাণীর উপরও করে দেখছেন। মানুষের উপরও এই পরীক্ষাটি করে ভাইরাস আক্রমণের ভয়াবহতা থেকে মানবজাতিকে মুক্তি দেওয়া যায়, তবে এখানে একটু চিন্তার ব্যাপার আছে যে এই একই পদ্ধতি মানবজাতির উপরও কাজ করবে কিনা। উক্ত মিউটেশন যা এইচ আই ভি –র বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রাকৃতিকভাবেই বৃদ্ধি করে তা শুধুমাত্র অল্প সংখ্যক মানুষের মধ্যেই পাওয়া যায়। যেসব মনুষ্য স্টেম কোষ এই নির্দিষ্ট মিউটেশনটি ধারণ করে না তাঁদের ক্ষেত্রে ক্রিসপার ব্যবহার করে তা স্টেম কোষে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া যায়। আশা করা যায় ভবিষ্যতে বিজ্ঞানীরা অনেক সুদৃঢ়ভাবেই মানবজাতিকে এই মরণঘাতী রোগটির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ্য করে তুলতে সক্ষম হবেন।
২০১৮ সালের জুলাইতে চীনেই আরেকটি জিন সম্পাদন সংক্রান্ত পরীক্ষা চালানোর কথা আছে। এই পরীক্ষাটিতে ক্রিসপার ব্যবহার করে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (Human Papilloma Virus – HPV) –এর জিনগুলোকে কার্যকরভাবে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হবে। হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস মানুষের জরায়ুর ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য দায়ী।
আরেকটু ভিন্ন পদ্ধতিতে নর্থ ক্যারোলিনার বিজ্ঞানীরা ব্যাক্টেরিওফাজ (Bacteriophage) ভাইরাসকে সম্পাদনের জন্য ক্রিসপার ব্যবহার করেছেন। ব্যাক্টেরিওফাজ হচ্ছে এমন এক ধরনের ভাইরাস যা ব্যাক্টেরিয়াকে আক্রমণ করে এর কোষীয় বস্তু ব্যবহার করে তার নিজস্ব বংশবিস্তার করে। বিজ্ঞানীরা এবার ক্রিসপার ব্যবহার করে সেই ব্যাক্টেরিওফাজকে এমনভাবে সম্পাদন করেছেন যাতে এই ভাইরাসটি ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়ার ধ্বংসযজ্ঞে ব্যবহৃত হতে পারে। ১৯২০ সাল থেকে নানা ব্যাক্টেরিয়া সংক্রান্ত ইনফেকশনে চিকিৎসা সংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ফাজ ভাইরাসগুলো ব্যবহার করা হত। তবে সরাসরি প্রকৃতি থেকে এদের সংগ্রহ করা ছিল এক দুরূহ ব্যাপার। তৎকালীন সময়ে পর্যাপ্ত জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে পরীক্ষাগুলোর থেকে নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যেত। ক্রমবর্ধমান অ্যান্টিবায়োটিকের বাজারে এই পদ্ধতি এক কথায় অগ্রাহ্য করা হয়।
বর্তমানে কিছু গবেষক উদ্বেগ প্রকাশ করছেন যে, যদি শরীরে প্রচুর পরিমাণে ফাজ ব্যাক্টেরিয়ার প্রবেশ সংঘটিত হয় তাহলে তা আমাদের শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। এমনকি এমনও সম্ভাবনা করা হচ্ছে যে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাক্টেরিয়ার মত ফাজ প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ারও উত্থান ঘটতে পারে যা পরবর্তীতে ফাজ ভাইরাসকে বিনষ্ট করতে উদ্যত হবে।
যদিও এখনও মানুষের উপর সরাসরি এই পরীক্ষাগুলো মাত্র শুরু হতে যাচ্ছে, তবুও বিজ্ঞানীরা আশাবাদী যে ক্রিসপারেরে মাধ্যমে সম্পাদিত ফাজের মাধ্যমে তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে। কারণ ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশনের চিকিৎসায় এর ব্যবহার পরীক্ষিত এবং নিরাপদ। আসলে ২০১৭ সালের এক পরীক্ষায় বিজ্ঞানীরা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ্য ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণে আক্রান্ত এক ইঁদুরের উপর ক্রিসপার সম্পাদিত ব্যাক্টারিয়োফাজ ব্যবহার করে এর জীবন বাঁচাতে সক্ষম হন।
৪. ক্রিস্পার নতুন প্রজাতির স্বাস্থ্যকর খাবার উৎপাদনে সক্ষম:
কৃষি গবেষণার ক্ষেত্রে ক্রিস্পার জিন সম্পাদন প্রযুক্তি অনেক সম্ভাবনার সাক্ষ্য রেখেছে। নিউ ইয়র্কের কোল্ড স্প্রিং হারবর ল্যাবরেটরির (Cold Spring Harbor Laboratory) বিজ্ঞানীরা এই প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে টমেটোর উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ করেছেন। গবেষণাগারটিতে জিন সম্পাদনার এমন কৌশলের উদ্ভাবন করা হয় যার মাধ্যমে টমেটোর ফলন বৃদ্ধির জন্য এর নানা বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন আনা হয়। এদের মধ্যে টমেটোর আকার, এর গাছের কাণ্ডের বিন্যাসের গঠন এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সর্বোচ্চ ফলনের জন্য এর আয়তন – প্রভৃতি বৈশিষ্ট্যের জন্য সংশ্লিষ্ট জিনকে সম্পাদন করা হয়।
“একটি সুইচ ব্যবহার করে যেমন বাতিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তেমনি এখন প্রতিটি জৈবিক বৈশিষ্ট্যকেও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আমরা এখন ডিএনএ-র সহজাত কাঠামো (native DNA) নিয়েই কাজ করতে পারি আর প্রদত্ত বৈশিষ্ট্যগুলোর আরও উন্নতি সাধন করতে পারি। আমরা বিশ্বাস করি, এর মাধ্যমে আমরা উৎপাদনের যে সীমা রয়েছে তাকে আমরা অতিক্রম করতে পারব।”,প্রধান গবেষক ও কোল্ড স্প্রিং হারবর ল্যাবরেটরির অধ্যাপক জ্যাকারি লিপম্যান (Zachary Lippman) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলেন। উচ্চ ফলনশীল শস্যের মাধ্যমে ক্ষুধার্ত পৃথিবীর মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার কাজটি শুরু হয়ে গেছে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন যে, ক্রিস্পার তার অমোঘ ক্ষমতার মাধ্যমে জেনেটিক্যালি মডিফাইড খাদ্য সম্পর্কে যে সকল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অপবাদ ও ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে তা ঝেড়ে ফেলে দিতে সক্ষম হবে।
২০১৬ সালে একটি ডিউ-পোন্ট পাইয়োনিয়ার (DuPont Pioneer) নামের একটি কৃষি প্রযুক্তি কোম্পানি ক্রিস্পার সম্পাদিত এক ভূট্টার প্রকার উদ্ভাবন করে। তবে প্রায়োগিক ক্ষেত্রে ভূট্টার এই প্রকরণটি কোনো জিএমও (জেনেটিক্যালি মডিফাইড অর্গানিজম) নয়। কারণ তারা একটি বিশেষ উপায়ে জিন সম্পাদনের কাজটি করেছেন। অনেকের কাছে জিএমও আর জিন সম্পাদিত শস্য একই মনে হতে পারে। কিন্তু এদের মধ্যে খুব সুস্পষ্ট ও একটি সরল পার্থক্য বিদ্যমান। প্রথাগত জিএমও শস্য তৈরির ক্ষেত্রে ঐ শস্যের জিনোমে বাইরের একটি জিন বা ডিএনএ-র অংশ প্রবেশ করানো হয়। সেই বহিরাগত ডিএনএ অংশটি হতে পারে যেকোনো প্রজাতির জীবের, যেমন – ব্যাক্টেরিয়া, বা নিকটবর্তী কোনো প্রকরণের। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ জীবটিতে নতুন ও আরও উন্নত বৈশিষ্ট্যের স্থানান্তর করা হয়। অন্যদিকে, জিন সম্পাদন বলতে একটি নির্দিষ্ট জিনে নানা রকম পরিবর্তন সাধনকে বোঝানো হয়ে থাকে। এই পরিবর্তন করা যেতে পারে সহজাত জিনটির কোনো নির্দিষ্ট স্থানে সূক্ষ্ম কোনো পরিবর্তন ঘটিয়ে, অথবা কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত জিনকে সরিয়ে ফেলে, অথবা বিদ্যমান ডিএনএ-র জিনসমূহের স্থান বদল করে। অর্থাৎ এখানে বহিরাগত কোনো ডিএনএ বা জিনের অনুপ্রবেশ ঘটবে না।
বর্তমানে জিএমও খাদ্যের উপর অনেকেরই এক ধরনের অসহিষ্ণু মনোভাব রয়েছে। তাই ডিউ-পোন্ট পাইয়োনিয়ার ও এর মত আরও অনেক কোম্পানি আশা করছে যে জিন সম্পাদিত খাদ্য জিএমও খাদ্যের তুলনায় গ্রাহকদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে। বিগত কয়েক দশক ধরে মার্কিন আমেরিকার বাজারে জিএম খাদ্যের প্রাপ্যতা চোখে পড়ার মত। তবে বিজ্ঞানীরা জিএম খাদ্যের জন্য কোনো রকম স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখতে পাচ্ছেন না। যদিও জিএম খাদ্যের এক বড় বিরোধী দল মনে করছে যে বিজ্ঞানীরা এখনও আসলে জিএম খাদ্যের জন্য সৃষ্ট স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে অবগত নন। একই কথা ক্রিসপার দ্বারা জিন সম্পাদিত খাদ্যের বেলায়ও প্রযোজ্য।
অবশ্যই বিজ্ঞানীরা নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ফলাফল ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়াতে সব সময়ই পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও তা চলমান থাকবে। তবে গবেষণার শুরুর অংশ হিসেবেও তারা খুব আশাবাদী ফলাফল দেখাতে সক্ষম হয়েছেন। এমনকি ধারণা করা হচ্ছে যে, খুব সম্ভবত ক্রিসপার দ্বারা সম্পাদিত খাদ্যশস্য অচিরেই বিশ্ব বাজারের এক বিরাট অংশ দখল করে নেবে।
ডিউ-পোন্ট পাইয়োনিয়ার আশা করছে যে তারা ২০২০ সালের মধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তাদের সম্পাদিত “নরম” ভূট্টা নিয়ে আসতে পারবে। এক প্রকার জিন সম্পাদিত মাশরুম ইতিমধ্যেই মার্কিন সরকারের কৃষি বিভাগ কর্তৃক ছাড়পত্র পেয়ে গেছে। এটি কোনো প্রকার ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়া বা অন্য প্রজাতির ডিএনএ বা জিনোমের কোনো অংশ বহন না করার ফলে সর্বপ্রথম ক্রিসপার সম্পাদিত জীব হিসেবে বৈধতার স্বীকৃতি লাভ করেছে। সুইডেনও ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়ে দিয়েছে যে তারা এখন থেকে জিন সম্পাদিত খাদ্যশস্য ও জীবকে জিএমও এর থেকে আলাদা শ্রেণি হিসেবে বিবেচনা করবে। একই সাথে এর রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিও অন্যরকম হবে। যদিও ইউরোপিয়ান কমিশন এখনও এ ব্যাপারে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করে নি।
৫. ক্রিস্পার এই পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এবং ক্ষতিকর পোকাকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে সক্ষম:
ক্রিসপারের মত জিন সম্পাদন প্রযুক্তি নানা প্রাণঘাতী ও সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ করে তা প্রতিহত করার ভূমিকা পালন করেত পারে। তবে কিছু বিজ্ঞানী ভাবছেন অন্য ব্যাপার। তাদের মতে রোগ বহনকারী ও সংক্রমণের জন্য দায়ী জীবকে পুরোপুরি সরিয়ে দেওয়ার চেয়ে রোগ সংক্রমণের হার বা সংক্রমণের গতি কমিয়ে দিলে তা আরও বেশি ফলপ্রসূ হবে। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া-র বিজ্ঞানীরা এমন এক প্রজাতির মশা উদ্ভাবন করেছেন যা শুধুমাত্র ক্রিসপার দ্বারা কৃত পরিবর্তনের প্রতিই সংবেদনশীল। এবং তাঁরা আরও এক অভূতপূর্ব ফলাফল লক্ষ্য করেছেন,আর তা হল এই সংবেদনশীলতার বৈশিষ্ট্য তা এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে বংশগতভাবে বাহিত হচ্ছে। মশার প্রজাতিটির চোখ, পাখা এবং কিউটিকলের গঠনের জন্য দায়ী জিনগুলোর পরিবর্তনের মাধ্যমে হলুদ, তিন চোখ বিশিষ্ট এবং ডানা বিহীন মশার উদ্ভাবন করেন বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীরা মশার জিনোমের বিভিন্ন স্থানের অনেকগুলো জিনকে লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করেন যাদের কার্যক্রম বিনষ্ট করে দেওয়া হয়। এই বিনষ্টকৃত জিনগুলোর নিষ্ক্রিয় কার্যক্রম পরবর্তী প্রজন্মে স্থানান্তরের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা “জিন চলন” বা “জিন ড্রাইভ” (Gene Drive) পদ্ধতি নিয়ে পরীক্ষা করে যাচ্ছেন। জিন ড্রাইভ বা জিন চলন হচ্ছে এমন এক পদ্ধতি যার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় যে জেনেটিক ভাবে প্রাপ্ত বৈশিষ্ট্যগুলো পরবর্তী প্রজন্মে বাহিত হবে কি না। মশার দৃষ্টিশক্তি এবং এর ওড়ার ক্ষমতাকে নষ্ট করার মাধ্যমে অব ক্যালিফোর্নিয়া-র বিজ্ঞানীরা এখন খুব আশাবাদী যে পরবর্তীতে তাঁরা মশার মাধ্যমে সৃষ্ট মানুষের বিভিন্ন মারাত্মক ও সংক্রামক রোগ, যেমন- ডেঙ্গু এবং পীত জ্বর (Yellow Fever) ইত্যাদির সংক্রমণও ব্যাপক হারে কমাতে সফল হবেন।
অন্যদিকে অন্যান্য বিজ্ঞানীরা মশার প্রজনন পদ্ধতিতে হস্তক্ষেপ করে মশার জনসংখ্যার ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে কাজ করে যাচ্ছেন। ২০১৬ সালে লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজের একদল গবেষক ক্রিসপার ব্যবহারের মাধ্যমে এমন এক জিন চলন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন যা কিনা ম্যালেরিয়া জীবাণু বহনকারী মশকীর প্রজনন চক্রে হস্তক্ষেপ করে। এর ফলে মশকীর বন্ধ্যাত্বকরণ উদ্বুদ্ধ হয়। ফলাফল হিসেবে দেখা যায়, মশকীর সংক্রমণকারী বৈশিষ্ট্যগুলো পরবর্তী প্রজন্মে বাহিত হওয়ার পথ আপনাআপনিই রুদ্ধ হয়ে যায়।
তবে এখানে একটি কথা রয়ে যায়। তা হল, মশার এই জনসংখ্যা বৃদ্ধির উপর যে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে তা আমাদের জন্য অজানা কোনো ফলাফলও বয়ে আনতে পারে। প্রকৃতি থেকে কোনো একটি প্রজাতি সম্পূর্ণরূপে বিলীন হয়ে গেলে তা অবশ্যই তার যত্নশীল বাস্তুসংস্থানের ভারসাম্যকে ব্যহত করবে। বাস্তুসংস্থানে সেই প্রজাতির ভূমিকা যত নগণ্যই হোক না কেন,সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ব্যত্যয়ও এক ধ্বংসাত্মক ফল বয়ে নিয়ে আসতে পারে। তা হতে পারে খাদ্যশৃঙ্খলের বিরাট পরিবর্তন অথবা অন্য কোনো প্রজাতির মাধ্যমে অন্য কোনো উপায়ে ম্যালেরিয়া রোগের সংক্রমণ।
আগামীকালের ক্রিস্পার:
চলতি বিজ্ঞানের ক্রমাগত উন্নতি বলছে যে, ক্রিস্পার শুধু একটি সর্বোতমুখী প্রযুক্তিই নয়, বরং এটি এর ব্যবহারের ক্ষেত্রগুলোতে যথাযথ এবং নিরাপদ। তবে এর বিশাল অগ্রগতি সাধন এখনও বাকি। ক্রিস্পার-ক্যাস৯ এর মত জিন সম্পাদন প্রযুক্তির যে সুবিশাল সম্ভাবনা ভবিষ্যতে রয়েছে তার শুধু সূচনাটাই অবলোকন করছি মাত্র। আমাদের এবং সেই সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে প্রযুক্তিগত ও নৈতিক প্রতিবন্ধকতার মত বিষয়গুলো। সেই ভবিষ্যতে আমরা আমাদের পৃথিবীকে উপহার দিতে পারি জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার্ড ও উন্নত খাদ্য, জেনেটিক রোগমুক্ত মনুষ্যপ্রজাতি এবং ফিরিয়ে আনতে পারি পৃথিবী মায়ের হারিয়ে যাওয়া নানা প্রজাতির সন্তানদের। আমরা কিন্তু এখন সেই পথেই হাঁটছি!
One Comment
অ্যানিমেশনে নয়, বাস্তবে দেখা মিলবে বিলুপ্ত প্রাণী ম্যামথ | বিজ্ঞানবর্তিকা
[…] CRISPR এর ভবিষ্যৎ। পর্ব-০২ […]