হারিয়ে যাওয়া বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার। পর্ব ২

গত পর্বে আমরা হারিয়ে ৪ টি আবিষ্কার নিয়ে জেনেছি। এই পর্বে আমরা আরো ৪ টি হারিয়ে যাওয়া আবিষ্কার সম্পর্কে জানব।

1. Chronovisor


Marcello Pellegrino Ernetti ;একজন ইটালিয়ান ধর্মযাজক এবং প্যারানরমাল এক্সপার্ট ছিলেন। ১৯৬০ সালে তিনি এমন একটি যন্ত্রের আবিষ্কার করেন ; যার সাহায্যে অতীতের ঘটনা দেখতে এবং শুনতে পাওয়া যেত। তিনি এটির নাম দেন Chronovisor. তার মতে লুমিনাস এনার্জি এবং সাউন্ড যখন কোনো বস্তু নির্গত হয়,তখন সেটি আবহাওয়ায় রেকর্ড হয়ে যায় এবং Chronovisor এর সাহায্যে এই যেকোনো ঘটনার এনার্জি কে রি কন্সট্রাক্ট করে অতীতের ঘটনা দেখা এবং শোনা সম্ভব। বলা হয়,তিনি এই যন্ত্রটি ১২ জন প্রসিদ্ধ বিজ্ঞানী দের নিয়ে তৈরি করেন। তাদের মধ্যে Enrico Fermi এবং Wernher Von Braun ছিলেন অন্যতম। তিনি বলেন,এটির সাহায্যে তিনি অতীতের অনেক ঘটনা দেখেছেন। এমনকি তিনি Jesus Christ এর Crucifixion ও দেখেছিলেন। মৃত্যূর আগে তিনি Chronovisor এর নির্মানকারী দলের সাথে দেখা করেন এবং যন্ত্রটিকে ধ্বংস করে দেন। কারো কারো মতে,মৃত্যূর আগে Ernetti এই যন্ত্র টিকে ভ্যাটিকান সিটিতে নিয়ে আসেন এবং এখনো এই যন্ত্রটি ভ্যাটিকান সিটির কোনো গুপ্ত সংগঠন এর কাছে এখনো আছে।


2. Flexible Glass

Isidore of Seville ফ্লেক্সিবল গ্লাস বা নমনীয় কাচের আবিস্কার করেন। তখনকার রোমের সম্রাট ছিলেন Tiberius Caesar. Isidore তার এই আবিস্কার সম্রাট Tiberius Caesar এর সামনে পেশ করেন। তিনি ফ্লেক্সিবল গ্লাস বা নমনীয় কাচ দ্বারা তৈরি একটি পাত্র রাজাকে উপহার দেন। তার এই উপহারে অখুশি হয়ে Tiberius Caesar এটিকে ছুড়ে ফেলে দেন। পাত্রটি না ভেঙে বেকে যায়। তখন Isidore এটিকে সোজা করে তাকে এর উপযোগিতা দেখান এবং এটাও বলেন নমনীয় কাচের আবিষ্কার রাজ্যে অনেক কাজে লাগবে। তা শুনে সম্রাট Tiberius Caesar আরো রেগে যান এবং বলেন এ ধরনের আবিস্কার রাজ্যের মানুষের কাছে সোনা এবং রূপার মূল্য কমিয়ে দেবে এবং হীরা-ধনরত্নের অসম্মান হবে। তাই তিনি তার এই আবিষ্কার কে ধ্বংস করে দেয়ার আদেশ দেন এবং এর আবিষ্কারক অর্থাৎ Isidore কে মৃত্যূদন্ড দেন।

3. Rife Devices


১৯৩৩ সালে Royal Raymond Rife নামে একজন আমেরিকান ইনভেন্টর, একটি অডিও ফ্রিকোয়েন্সি ইমিটিং ডিভাইস আবিস্কার করেন। যেটির মানুষের দেহের ভেতর ফ্রিকোয়েন্সি পাঠানোর ক্ষমতা ছিল। এবং এই ফ্রিকোয়েন্সির মাধ্যমে মাইক্রো অর্গানিজম ধ্বংস এবং বিভিন্ন ধরনের রোগ নিরাময় করা যেত। এমনকি ক্যান্সার কোষকেও ধ্বংস করা সম্ভব ছিল। তিনি একটি মাইক্রোস্কোপ আবিষ্কার করেন। যা তখনকার মাইক্রোস্কোপ গুলির চেয়ে ৮ গুণ বেশি শক্তিশালী ছিল। Rife এর মতে,প্রত্যেকটি রোগের একটি নির্দিষ্ট ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক ফ্রিকোয়েন্সি থাকে। যদি সেই ফ্রিকোয়েন্সি টিকে খুঁজে বের করা সম্ভব হয়,তাহলে সেই একই ফ্রিকোয়েন্সির ইমপালস তৈরি করে ওই রোগটিকে ধ্বংস করা সম্ভব। তিনি প্রথমে ল্যাবরেটরির কিছু প্রানীদের উপর এটির পরীক্ষা করেন এবং তাতে সফলতা পাবার পর,তিনি ১৬ জন ক্যান্সার রোগীদের নিয়ে পরীক্ষা করেন,যারা বিভিন্ন রকম ক্যান্সারে ভুগছিলেন। এই ১৬ জনের মধ্যে ১৪ জন ৭০ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ রূপে সেরে উঠেন এবং বাকি দুজনের আরো ১৬ দিন সময় লাগে। ১৯৪০ সালে Arthur W Yale নামের একজন বিজ্ঞানী এনাঊন্স করেন যে,Rife এমন একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন,যার সাহায্যে ক্যান্সার কে সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংস করা সম্ভব। কিন্তু বড় বড় মেডিসিন কোম্পানি গুলো এতে পথে বসে যেত। যারা ক্যান্সার পেসেন্ট এর কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আয় করত। এছাড়া ক্যান্সার এর চিকিৎসায় বড় বড় হাসপাতাল গুলি প্রচুর অর্থ উপার্জন করে থাকে। তাই তার এই আবিষ্কার কে ধামাচাপা দেয়া হয় এবং কোনো রকম স্বীকৃতি দেয়া হয় নি।

4. Wireless Power Transmission


বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলা বিদ্যুতের Wireless Transmission এর জন্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করছিলেন। ১৮৯১-১৯০৪ সালের মধ্যে তিনি Tesla Coil এর মাধ্যমে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বৈদ্যুতিক তার ছাড়াই স্থানান্তর করতে সক্ষম হন। তার লক্ষ্য ছিল পুরো পৃথিবীতে বিদ্যুত সরবরাহ করা wirelss বা বেতার মাধ্যমে। ১৯০১ সালে তিনি একটি বিশাল হাই ভোল্টেজ wireless power transmission এর জন্য একটি টাওয়ার এর নির্মান শুরু করেন, যাকে আমরা আজ Wardenclyfee Tower বা Tesla Tower নামে চিনি। এটিকে বানানোর পিছনে তার উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বব্যাপি পাওয়ার ট্রান্সমিট করা এবং ইনফরমেশন ব্রডকাস্ট করা। কিন্তু ১৯০৪ সালে দুঃখজনক ভাবে এই প্রোজেক্ট টির ইনভেস্টর JP Morgan নামের একজন যিনি এই প্রোজেক্ট টির পিছনে অর্থ ব্যয় করছিলেন,তিনি অর্থ ব্যয় করা বন্ধ করে দেন। তাই তার এই প্রোজেক্ট টিরর কাজ অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে যায় । তাই Death Ray এর মত এটিও আর আলোর মুখ দেখেনি।

পর্ব ১ এর লিংকঃ 

হারিয়ে যাওয়া কিছু বৈজ্ঞানিক আবিস্কার। পর্ব ১

Comments are closed.