টেলিপোর্টেশন ও কোয়ান্টাম মেকানিক্সের অতীত,বর্তমান : পর্ব-২

প্রথম পর্বের পর থেকে,

এনটেঙ্গেলমেন্ট এর ধারণাই মূলত টেলিপোর্টেশনকে সম্ভব করার আশা দেখালো। আমার প্রথম পর্বের আলোচনার মূল লক্ষ্য ছিলো টেলিপোর্টেশনের পেছনে থাকা এই সুন্দর বিজ্ঞানকে এবং ইতিহাসকে কিছুটা সহজভাবে আপনাদের সামনে তুলে ধরা যেনো আরো সহজে আপনি বুঝতে পারেন যে টেলিপোর্টেশন আসলেই সম্ভব কিনা এবং হলেও তা কিভাবে।

ইতিমধ্যে আফ্রিকার উপকূলে ক্যানেরি আইল্যান্ডে টেলিপোর্টেশনের প্রাথমিক পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে এবং একটি ফোটনকে ৮৯ মাইল দূরে টেলিপোর্ট করা সম্ভব হয়েছে। কিভাবে করা হলো চলুন ব্যাখ্যা করি। প্রথমে দুটি ফোটনকে এনটেঙ্গেলড করা হলো। মানে এদের একজনকে এখন আপনি যেভাবে পরিবর্তন করবেন অপরজনও ঠিক সেভাবে পরিবর্তিত হয়ে যাবে। এদের একটিকে গবেষণাগারে রেখে অপরটিকে লেসারের মাধ্যমে পাঠানো হয় ৮৯ মাইল দূরে অপর একটি আইল্যান্ডে। এবারে গবেষণাগারে থাকা ফোটনের কাছে নতুন একটি ফোটনকে আনা হলো যাকে টেলিপোর্ট করা হবে। নতুন ফোটনটির প্রভাবে যেইমাত্র গবেষণাগারে থাকা ফোটনটি প্রভাবিত হয়ে তার মত বৈশিষ্ট্য ধারণ করলো ঠিক সেই মুহূর্তে ৮৯ মাইল দূরের ফোটনটি হুবহু নতুন ফোটনটির বৈশিষ্ট্য ধারণ করলো যেন আসলে ঐ নতুন কণাটি গবেষণাগার থেকে টেলিপোর্ট হয়ে এলো।

মানুষকে কি এভাবে টেলিপোর্ট করা যাবে?

অবশ্যই যাবে। কিভাবে?চলুন ব্যাখ্যা করি।

আপনি,আমি,আমরা সবাই ট্রিলিয়ন সংখ্যক পরমাণু নিয়ে গঠিত যারা প্রত্যেকে একটি কণার মত বিবেচ্য যাদের নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ধরুন আপনাকে বাংলাদেশ থেকে ফ্রান্সে টেলিপোর্ট করা হবে। বাংলাদেশ এবং ফ্রান্স উভয় জায়গায় দুটি কোয়ান্টাম স্টেশন স্থাপন করা হলো। এক স্টেশন থেকে আপনি টেলিপোর্ট হবেন এবং অন্য স্টেশনে আপনাকে রিসিভ করা হবে। আপনাকে প্রথমে একটি চেম্বারে প্রবেশ করানো হবে এবং স্ক্যান করার মাধ্যমে আপনার শরীর যে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পরমাণুতে গঠিত তার কোয়ান্টাম স্টেট লিপিবদ্ধ করা হবে। ফ্রান্সে থাকা স্টেশনে এই তথ্য পৌঁছানো মাত্র এনটেঙ্গেলমেন্টের মাধ্যমে ফ্রান্সের স্টেশনে অবস্থিত চেম্বারে ট্রিলিয়ন সংখ্যক কণাকে হুবহু আপনার শরীরে থাকা কণাগুলোর কোয়ান্টাম স্টেটে নিয়ে যাওয়া হবে ফলে হুবহু আপনার মত দেখতে একজনকে ফ্রান্সে রিসিভ করা হবে যা আসলে আপনিই, যেন মনে হবে আপনি টেলিপোর্ট হয়ে এসেছেন। ইতিমধ্যে ফ্রান্সে ডেটা পৌঁছানোর পর নতুন যে কণাগুলো আপনাকে গঠন করছে তাদের কোয়ান্টাম স্টেট পরিবর্তনের মাধ্যমে আপনার দেহ গঠন হতে হতেই ধ্বংস করে দেয়া হবে বাংলাদেশে থাকা আপনার দেহকে। দেহ বললে ভুল হবে কারণ কোয়ান্টাম স্টেট কপি হবার সাথে সাথে আপনার দেহ ট্রিলিয়ন সংখ্যক কণায় বিভক্ত হয়ে যাবে এবং কণাগুলোর কোয়ান্টাম স্টেটকে এমন অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হবে যা আর কখনো আপনাকে বা আপনার শরীরকে গঠন করতে পারবে না। তবে এ ধরণের টেলিপোর্টেশন বাস্তবে রূপ নিতে বিজ্ঞানীদের আরও বহু দূরের পথ পাড়ি দিতে হবে।

‘Star Trek’ এর চোখ ধাঁধানো এনার্জি রেভ্যুলেশন অথবা Ned Beauman এর উপন্যাস ‘The Teleportation Accident’ যাই বলুন না কেন এরা প্রত্যেকে আমাদের বিজ্ঞানপ্রেমী মনকে রোমাঞ্চিত করে।আমাদের বিজ্ঞানপ্রেমী মন বিজ্ঞানকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে ভালবাসে। সে দিনটির স্বপ্ন দেখে যেদিন টেলিপোর্টেশনের মাধ্যমে মানুষ চোখের নিমিষে দূর-দূরান্তে হারিয়ে যাবে। কোন এক নতুন ভোরে large object – দের টেলিপোর্টেশন হবে বাঁ হাতের খেলা।ছোটবেলার সেই হারিয়ে বেড়ানোর স্বপ্নটা একদিন সত্যি হবে।আজ এ পর্যন্তই।আবারো ফিরে আসবো প্রিয় পদার্থবিদ্যার সুন্দরতম কোন বিষয়ের আলোচনা নিয়ে।বিজ্ঞানকে ভালবাসুন,বিজ্ঞানের সাথে থাকুন।

পর্ব ১ এর লিংকঃ 

টেলিপোর্টেশন ও কোয়ান্টাম মেকানিক্সের অতীত,বর্তমান : পর্ব-১

রেফারেন্সঃ  nature.com , pitt.edu,  ,sciencemag.org

Comments are closed.