আমরা প্রতিনয়তই কত কাজ করছি। খাই দাই, খেলাধুলা করি, মজা করি, বিনোদিত হই, আনন্দ উপভোগ করে, বেলাশেষে ঘুমোতে যাই। কিন্তু এতকিছুর কখনো কি ভাবি এইযে আমাদের মনটা যে মানবদেহ নামের যন্ত্রে বাস করে সেই যন্ত্রের কোন অংশের কাজ কি? কিভাবেই বা কাজ করে? আর কজা করা বন্ধ করে দিলে কিভাবেই বা কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে, এমনকি মারাও যায়?!
খুব ছোট ছোট সহজ প্রশ্নগুলোর উত্তর আসলে প্রায়সময়েই খুব জটিল হয়।
আমাদের এই মানবদেহের প্রতি কিন্তু আবার বহু বিজ্ঞানী, দার্শনিক এমনকি চিত্রশিল্পীদেরও (যেমনঃ রাফায়েল, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি) জানার অনেক ঝোঁক ছিল। জানার সেই ধারাবাহিকতায় আমরা সাজিয়েছি মানবদেহের যন্ত্রকাহিনী নামের এই ধারাবাহিক লেখা, যার প্রথম পর্ব হিসেবে আমরা আলোচনা করবো আজ হৃৎপিণ্ড বা Heart এর জানা অজানা অনেক বিষয় নিয়ে।
তো চলুন তাহলে আলোচনায় যাই।

Heart যে আমাদের দেহের পাম্প মেশিন তা হয়তো এই যুগে কাউকে বলার অপেক্ষা রাখেনা। হার্টের কাজই হচ্ছে রক্ত এদিক সেদিক নির্দিষ্ট গতির মাঝে পাম্প করে ছড়িয়ে দেয়া। আর একাজের জন্যেই হার্ট বা হৃৎপিণ্ড খুব বিশেষ মাসল টিস্যু বা কলা দিয়ে গঠিত, যাকে বলা হয় Cardiac Muscle Tissue। এটি কেবলমাত্র হৃৎপিণ্ডতেই থাকে, অর্থাৎ এই টিস্যুটি একান্তই হৃৎপিণ্ডের জন্য গঠিত হয় যা হৃৎপিণ্ডের সংকোচন (contraction) – সম্প্রসারণের (extraction) কাজ করে থাকে। এই টিস্যুর আরো একটা অনন্য দিক হল এর কোষ অঙ্গ গঠনের পূর্ণ পর্যায়ে গিয়ে বিভাজন বন্ধ করে দেয়, ফলে হৃৎপিণ্ডে ক্যান্সার হওয়াটা খুবই দুর্লভ ব্যাপার। যেহেতু ক্যান্সার মানেই হচ্ছে কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি।

হার্টের কাজ হচ্ছে মূলত ফুসফুস থেকে অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত মস্তিষ্ক আর দেহে ছড়িয়ে দেয়া। আবার সেই ছড়িয়ে দেয়া রক্ত থেকে দেহ অক্সিজেন ব্যবহার করে নিলে সেই Deoxygenated রক্ত ফুসফুসে পাঠিয়ে দেয়া, যাতে করে ফুসফুস বাতাস নিয়ে আবার সেই বাতাসের অক্সিজেন মিশিয়ে দিতে পারে রক্তে আর কার্বন ডাই অক্সাইড বের করে দিতে পারে।
অর্থাৎ এখানে কাজ দুটি।
১. অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত জোগাড় করা + ছড়িয়ে দেয়া।
২. ব্যবহার হওয়া অক্সিজেনহীন (Deoxygenated) কার্বন ডাই অক্সাইড যুক্ত রক্ত জোগার করা + বর্জ্য নিঃসরণ ও অক্সিজেন গ্রহণের জন্য ফুসফুসে পাঠিয়ে দেয়া।
অর্থাৎ প্রতিক্ষেত্রে দুটো করে কাজের মোট ৪টা ধাপ।
আর এই ২-৪ ধাপের জন্যেই হৃৎপিণ্ড ২ ভাগে বিভক্ত, যার প্রতিটা ভাগে দুটো করে অংশ। অর্থাৎ মোট চারটা।
সুতরাং আমরা সহজেই বুঝতে পারে এই দুইভাগের একটা অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত নেয় আর ছড়ায় আর আরেকটা অক্সিজেনহীন রক্ত জোগার করে আর অক্সিজেনমিশ্রিত হবার জন্যে ফুসফুসে পাঠিয়ে দেয়। ব্যাপারটা যেন দুটো আলাদা আলাদা সিলিন্ডারের মত। যার প্রতিটাতে দুটো করে ভাগ। উপরের ভাগ দুটো মানে যে ভাগ দুটোয় রক্ত প্রবেশ করে, সেদুটোকে Atrium বা প্রকোষ্ঠ বলে। আর সেখান থেকে রক্ত বেরিয়ে যাবার উদ্দেশ্যে যে ভাগে যায় তাকে Ventricle বা নিলয় বলে।
হার্টের স্বাভাবিক অবস্থান আমাদের বুকের কিছুটা বাঁদিকে। ফুসফুসের দুই দিক থেকে দুটি করে মোট চারটি ফুসফুসীয় শিরা (Pulmonary Vein) থেকে অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত বাম এ্যাট্রিয়ামে বা প্রকোষ্ঠে প্রবেশ করে। এরপর সেখান থেকে Mitral/Bicuspid Valve বা কপাটিকা যা মানুষের ঠোঁটের মতই আটকে থাকে তা খুলে গেলে বাম এ্যাট্রিয়াম থেকে রক্ত বাম Ventricle বা নিলয়ে প্রবেশ করে। তখন আবার বাইকাসপিড ভালভ বন্ধ হয়ে যায় এবং Aortic Valve বা মহাধমনীয় কপাটিকা খুলে যায়, এবং রক্ত সেই উন্মুক্ত মুখ দিয়ে মহাধমনীতে এবং সেখান থেকে Aortic Arch এ গিয়ে ধমনীগুলোয় বিভক্ত হয়ে সারাদেহ আর মাথায় ছড়িয়ে পড়ে।
অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত সারাদেহে অক্সিজেন পৌছে দিয়ে বিনিময়ে কার্বন ডাইঅক্সাইডযুক্ত রক্ত নিয়ে দেহের উপর ও নীচ থেকে যথাক্রমে Superior Vena Cava আর Inferior Vena Cava দিয়ে ডান প্রকোষ্ঠে (Atrium) প্রবেশ করে। আবার সেখান থেকে Tricuspid Valve খুলে গেলে তা যায় ডান নিলয় (Ventricle) এ। তখন নিলয় থেকে বেরুবার পথের ফুসফুসীয় কপাটিকা (Pulmonary Valve) বন্ধ থাকে। এরপর ট্রাকাস্পিড ভালভ বন্ধ হলে পালমোনারি ভালভ খুলে যায় এবং সেখান থেকে রক্ত ডান ও বাম ফুসফুসীয় ধমনী (Pulmonary Artery) দিয়ে ফুসফুসের দিকে যাত্রা শুরু করে।
ফুসফুসে গিয়ে অক্সিজেন নেয়া হয়ে গেলে তা আবার ঐযে ৪টি ফুসফুসীয় শিরা আছে, তা দিয়ে আবার বাম প্রকোষ্ঠে ফিরে আসে।
আর এই প্রক্রিয়াটিই একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দেহে গড়ে প্রতি মিনিটে ৭০-১০০ বার করে হয়! আর ঐযে ভালভগুলো খোলা আর বন্ধ হওয়া, সেটার ফলে সৃষ্ট ধাক্কাকেই আমরা নাড়ির স্পন্দন বা পালস বলে ডাকি। আবার ঐ একই কারণে যখন ট্রাইকাসপিড আর বাইকাসপিড ভালভ খুলে রক্ত দুই ভেন্ট্রিকলে প্রবেশ করে তখন তা হৃৎপিণ্ডের প্রসারিত অবস্থা থাকে যাকে Diastole বলে আর যখন সেইদুটো ভালভ বন্ধ হয়ে ভেন্ট্রিকল থেকে রক্ত বের করে দেয়ার জন্যে পালমোনারি আর এ্যাওর্টিক ভালভ খুলে যায়, তখন হৃৎপিণ্ড সংকুচিত হয় এবং তাকে সিস্টোল বলে। এর উপর ভিত্তী করেই রক্তের সিস্টোলিক আর ডায়াস্টোলিক চাপ বা প্রেশার মাপা হয় যা প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে ৮০/১২০ ( ডায়াস্টোলিক/সিস্টোলিক) থাকে।
একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের হৃৎপিণ্ড হাতের পাঁজার সমান হয়। নারীদের চাইতে পুরুষদের হৃৎপিণ্ড আকারে খানিক বড় হয়ে থাকে।
শিশুর বিকাশ থেকে শুরু করে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই ছোটোখাটো জিনিষটা অবিরাম শক্তিতে ক্রমাগত রক্ত পাম্প করে চলে যা গড়ে মিনিটে ১০০ বার হলে ঘণ্টায় ৬০০০ বার, দিনে ১৪৪,০০০ বার, আর বছরে পাঁচ কোটি পচিশ লক্ষ ষাট হাজার (৫২,৫৬০,০০০) বার! হৃৎপিণ্ড থেকে ছড়িয়ে পড়া এই শিরা আর ধমনিই গিয়ে দেহের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়েছে। যেগুলোকে একের পর এক লম্বভাবে সাজালে প্রায় ষাট হাজার (৬০,০০০) মাইল হবে দৈর্ঘ্যে!
হৃৎপিণ্ডের প্রাচীর তিনটি আস্তরণে বিভক্ত। এগুলো হল epicardium, myocardium আর endocardium ।
হৃৎপিণ্ডের ডান এ্যান্ট্রিয়ামের পাশে থাকা সাইনোএ্যাট্রিয়াল নোড (Sinoatrial Node) বা Sinus node হচ্ছে সেই বস্তু যা বিদ্যুৎকোষের মত হৃৎপিণ্ডের মাঝে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের মাধ্যমে এর গতিবিধি বজায় রাখে। যার ফলে একে হার্টের প্রাকৃতিক গতিদাতা বা Natural Pacemaker বলা হয়। উল্লেখ্য যে পেসমেকার মূলত একধরণের যন্ত্রবিশেষ যা হৃৎপিণ্ড তার স্বাভাবিক হারে পাম্প করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেললে প্রতিস্থাপন করা হয়।
হৃৎপিণ্ডের অস্বাভাবিক বিদ্যুৎসঞ্চালন প্রক্রিয়ার দরুন দ্রুতস্পন্দন বা (tachycardia) আবার ক্ষীনস্পন্দন (bradycardia) হতে পারে।
হৃৎপিণ্ডের স্নায়ুতন্ত্র
আপনি কি জানেন যে আপনার যে হৃৎপিণ্ড, যার কাজ হচ্ছে কেবল রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন ছড়ানো আর কার্বন ডাই অক্সাইড বের করা, সেই হৃৎপিন্ডেরো একটা স্নায়ুতন্ত্র রয়েছে?
হ্যা, আছে বটে। একে Autonomic nervous system বলে যা হৃৎপিণ্ডের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করে। তবে এতে খুশি হয়ে এমনটা ভাবার অবকাশ নেই যে এই স্নায়ুতন্ত্র হৃৎপিণ্ডের ভেতরেই অবস্থিত এবং তার মস্তিষ্কের মত চিন্তা করার ক্ষমতা রয়েছে।
Autonomic nervous system বা ANS হচ্ছে fight or flight স্নায়বিক ব্যবস্থা। এটি কেবল হৃৎপিণ্ডের জন্যে আলাদাভাবে গঠিত কিছু নয়ে বরঞ্চ হৃৎপিণ্ডসহ অন্যান্য অভ্যন্তরীণ কিছু অঙ্গের কার্যপ্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রনের জন্যে গঠিত হয়, যা মূলত মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসেরই অংশ। অর্থাৎ হৃৎপিণ্ড এটার নিয়ন্ত্রিত হয় কেবল ঠিক অন্যান্য কিছু অঙ্গের মত। কিন্তু এটি হৃৎপিণ্ডের কোনো অংশই নয়। হৃৎপিণ্ড বরাবরই কেবলমাত্র দেহের রক্ত পাম্প করার যন্ত্র বৈ কিছুই নয়। তাই যদি কেউ আপনাকে কখনো বলে যে হৃৎপিণ্ড হচ্ছে মন আর এর একটা স্নায়ুতন্ত্রও আছে তখন তাকে জবাবে বলে দিতে পারেন “Autonomic Nervous System doesn’t belongs to heart. Rather, heart belongs to Autonomic Nervous System.”
হৃৎপিণ্ডের সমস্যা ও রোগবালাইসমূহ।
বহুধরণে হৃদরোগ রয়েছে পৃথিবীজুড়ে মানুষের মাঝে। তবে এর মধ্যে Cardiovascular Diseases এর ঘরে পড়া হৃদরোগগুলো পৃথিবীর সবচাইতে বেশি হওয়া হৃদরোগ।
রক্তসংবহনতন্ত্র ও হৃৎপিণ্ডের সমস্যাজনিক রোগগুলোকে Cardiovascular Disease বলা হয়।
এই ক্যাটেগরিতে রয়েছেঃ
১. Coronary Artery Disease
এই ক্যাটাগরির মাঝে রয়েছে stable angina, unstable angina, myocardial infarction ও sudden cardiac death এর মত রোগসমুহ। পৃথিবীতে মারা যাওয়া মানুষের মাঝে ১৫.৯% মৃত্যুর কারণ এই বিভাগের মধ্যে থাকা রোগগুলো। যা দরুন একে most common cause of death বলা হয় বিশ্বজুড়ে।
এই রোগের অন্তর্ভুক্ত সমস্যাগুলো হয় মূলত হৃৎপিণ্ডের দিকে যাওয়া ধমনিগুলোতে চর্বি, ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য তন্তুজাতীয় পদার্থ জমাট বেধে যাবার ফলে। এগুলো জমাট বেধে শুধু যে রক্ত যাবার পথ অনেকখানি সংকুচিত করে ফেলে তা নয়, বাকিয়েও ফেলে বটে। রক্ত ঠিকঠাকমত চলাচল করতে না পারার ফলে অভ্যন্তরীণ কোষগুলো পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায়না, ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া শুরু করে। এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে একটা মানুষের মৃত্যুও হতে পারে এজন্যে।
বুকে ব্যাথা এবং সেই ব্যাথা হাত পিঠ, ঘাড় আর চোয়ালে ছড়িয়ে পড়া, ব্যায়াম করতে গেলে এমন মনে হওয়া এবং বিশ্রামে আবার উপসর্গগুলো দূর হওয়া এর প্রধান লক্ষণসমুহ।
অনিয়ন্ত্রিত ও ভারসাম্যহীন খাদ্যব্যবস্থা, অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত ও শর্করাযুক্ত খাবার খাওয়া এবং সেই সাথে ব্যায়াম, শরীরচর্চা এড়িয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত ধূমপান CAD এর প্রধান কারণ সমূহ
২. Hypertensive heart disease
মূলত অস্বাভাবিকরকমের রক্তচাপ ও রক্তচাপের জটিলতার ফলে এধরণের রোগ বাসা বাধে।
ঘনঘন ক্লান্তিবোধ, বমি বমি ভাব, বুক ধড়ফড়, নাড়ির অস্বাভাবিক স্পন্দন ইত্যাদি HHD এর লক্ষণ। বেশিদিনযাবত বা বেশিরকমের এমন লক্ষণ দেখা দিলে দেরী না করে অতিদ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন রোগীকে।
চর্বিযুক্ত খাবার, ধূমপান, মদপান, উচ্চরক্তচাপের ব্যবস্থা না নেয়া ইত্যাদি এই রোগের কারণ।
৩. Heart Failure
হার্ট ফেইলিও বলতে হৃৎপিণ্ডের অক্ষমতাকে বুঝায়। একটা সময় গিয়ে হৃৎপিণ্ডের পেশীগুলো যখন স্বাভাবিকভাবে সংকোচন – সম্প্রসারণ ঘটাতে পারেনা বা সহজ কথা যখন ঠিকঠাকমত কাজ করার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, ঐ অবস্থাকে হার্ট ফেইলিওর বা হৃৎপিণ্ডের অকার্যকারিতা বলা হয়।
হার্ট ফেইলিওরে নিশ্বাসে সমস্যা, হৃদস্পন্দনের অস্বাভাবিকতা, ক্ষুধামন্দা, ক্লান্তিবোধ, পায়ের পাতা, পায়ের কাপ ও পেট ফুলে যাওয়া প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দেয়।
হার্ট ফেইলিওর সাধারণত নিলয়সমহুহের পেশীর অকার্যকরীতার দরুন হয় যা সময়ের সাথে সাথে ঘটে, আবার অনেকক্ষেত্রে হার্ট এ্যাটাক (করোনারী আর্টারি ডিজিজ) এর সমস্যার কারণেও হতে পারে।
হার্ট ফেইলিওরের কোনো লক্ষণ দেখা দিয়ে কালবিলম্ব না করে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত।
৪. Cardiomyopathy
সেইসব হৃদরোগ এর আওতাভুক্ত যেগুলোর সাথে হৃৎপেশীর অক্ষমতা সম্পৃক্ত।
৫. Myocardial infarction
একেই আমরা সহজ ভাষায় হার্ট এ্যাটাক বলতে শুনি। এটা এমন এক অবস্থা যখন কোনো কারণে রক্ত স্বাভাবিকভাবে হৃৎপিণ্ডে চলাচলে আংশিক বা পূর্ণরূপে বাধাগ্রস্ত হয়। যার দরুন অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয় এবং যার দরুন খুবই দ্রুত হৃৎপিণ্ডের পেশীসমুহ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া শুরু করে।
হার্ট এ্যাটাক বা Myocardial infarction এ প্রচন্ডরকমের ব্যাথা অনুভূত হয় বুকের খানিক বা পাশ ও হাত জুড়ে।
এমন অবস্থায় দেরী না করে রোগীকে সাথে সাথে ইমার্জেন্সিতে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।
অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, চর্বিযুক্ত ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান ও মদপান ইত্যাদি এর কারণ।
৬. Arrhythmia বা Irregular Heartbeat Disease
এটা আসলে কতগুলো এমন অসুখের গ্রুপ যেগুলোতে আক্রান্ত অবস্থায় হৃৎস্পন্দন খুব দ্রুত হয়, বা খুব ধীরে হয় বা অনিয়মিতভাবে হয়।
এই গ্রুপের অসুখগুলোর অনেকখানি হাল্কা গোছের হলেও কিছু কিছু অসুখ প্রাণঘাতী এবং তাতে মেডিকেল ইমার্জেন্সি প্রয়োজন, এমনকি তৎক্ষণাৎ অপারেশনেরো প্রয়োজন পড়তে পারে।
দেহে ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্যহীন অবস্থা, হৃৎপেশীর অকার্যকারিতা, হৃৎপেশীতে সঠিকভাবে বিদ্যুৎপ্রবাহ না হওয়া, হার্ট এ্যাটাক দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ইত্যাদি কারণে arrhythmia হতে পারে।
এরিথমিয়া’সমূহের মধ্যে Premature atrial contractions ও Premature ventricular contractions সবচে পরিচিত দুটি সমস্যা যা যথাক্রমে প্রকোষ্ঠ আর নিলয়ের সাময়িক অস্বাভাবিক সংকোচনের জন্যে হয়ে থাকে। নিলয়ের অস্বাভাবিক সংকোচন অনেকসময় মানসিক চাপে থাকলে বা ক্যাফেইন আর নিকোটিনের প্রভাবেও হয়। তবে অনেকসময়ে তা অভ্যন্তরীণ সমস্যার দরুণও হতে পারে।
এছাড়াও রয়েছে Accessory pathway tachycardias যাতে হৃৎপিণ্ডের প্রকোষ্ঠ আর নিলয়ের রক্ত চলাচল পথের স্বাভাবিক সংখ্যার চাইতে বেশি পথ থাকে। যার দরুন স্পন্দন অস্বাভাবিক বেড়ে যেতে পারে।
রয়েছে Sinus node dysfunction ও Heart block এর মত সমস্যা যাতে যাতে হৃৎপেশীতে বিদ্যুৎপ্রবাহ ঠিকমত হতে পারেনা বা একদমই বাধাগ্রস্ত (blocked) হয়ে পড়ে।
এছাড়াও এই ক্যাটেগরিতে প্রকোষ্ঠ ও নিলয়ের অস্বাভাবিক সংকোচন – সম্প্রসারণের আরো বহু সমস্যা রয়েছে।
৭. Heart Valve Disease
হৃৎপিণ্ডের ট্রাইকাসপিড, বাইকাসপিড, পালমোনারি আর এ্যাওর্টিক, এই চার ভালভের এক বা একাধিক ভালভ যখন ঠিকঠামত না খুলে বা না বন্ধ হয় তখন এই সমস্যাকে Heart Valve Disease বলে। খোলার বা বন্ধ হবার অক্ষমতা, ভালভ এর ধরণের উপর নির্ভর করে এই সাবক্যাটেগরিটা ভিন্ন ভিন্ন রোগে বিভক্ত। HVD এর ফলে হৃৎপিণ্ডের ভয়াবহরকম ক্ষতি হতে পারে।
শ্বাসকষ্টের সমস্যা , মাথা ঝিম ঝিম করা, অক্সিজেনের ঘাটতি অনুভব করা, পায়ের গোড়ালি ফুলে যাওয়া, দুর্বল লাগা, বুক ধড়ফড় করা ইত্যাদি HDV এর লক্ষণ। লক্ষণসমুহ ক্রমাগত দেখা দিলে অতিসত্বর ভাল কোনো চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন।
৮. Cardiomyopathy
এই সমস্যাতে হৃৎপিণ্ড স্বাভাবিকের চাইতে বৃহদাকার ধারণ করে। সেই সাথে এর প্রাচীর পুরু আর খানিক শক্ত হয়ে যাওয়া দরুন ঠিকমত রক্ত পাম্প করতে পারেনা।
মূলত ৪ ধরণের cardiomyopathy রয়েছে। এগুলো হলঃ
i.Dilated cardiomyopathy
ii.Hypertrophic cardiomyopathy
iii.Ischemic cardiomyopathy
iv.Restrictive cardiomyopathy
এছাড়াও আরো বহু ক্যাটাগরি আর সাব-ক্যাটাগরিতে বিভক্ত বহু হৃদরোগ রয়েছে, যাতে বরাবরই মৃত্যুঝুঁকি থেকেই যায়। তাই বুকে ব্যাথা, সাথে মাথা ঝিমুনি দেয়া, চোখে ঝাপসা বা অন্ধকার দেখা, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া ইত্যাদি উপসর্গ একের পর এক দেখা দিলে দেরী না করে অতিসত্বর ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
তো এই ছিল হৃৎপিণ্ড নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন।আশাকরি পরবর্তীতে আবারো নিয়ে হাজির হবো এর পরবর্তী পর্ব, যা থাকবে ফুসফুস নিয়ে।
ততক্ষণে ভাল থাকুন। সুস্থ থাকুন, নিজের খেয়াল রাখুন।
তথ্যসূত্র:
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Heart
https://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S0022282818301007
https://www.webmd.com/heart-disease/guide/heart-disease-heart-attacks
https://www.webmd.com/heart-disease/guide/heart-disease-abnormal-heart-rhythm
https://www.webmd.com/heart-disease/guide/heart-valve-disease
https://www.webmd.com/heart-disease/guide/heart-disease-symptoms-types
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Heart_arrhythmia
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Congenital_heart_defect
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Valvular_heart_disease
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Cardiovascular_disease
One Comment
মানবদেহের যন্ত্রকাহিনীঃ পর্ব ২ (রক্ত) | বিজ্ঞানবর্তিকা
[…] আমরা আলোচনা করেছিলাম হৃৎপিন্ড নিয়ে। (প্রথম পর্বের লিঙ্কঃ https://bigganbortika.org/human-heart-part-1/) আজ আমরা হাজির হয়েছি […]