পুরুষশাষিত এ সমাজ ব্যবস্থায় আমরা মনে করি আমরা পুরুষরাই হচ্ছে সবচেয়ে জ্ঞানী। নারী মস্তিষ্কে আর যাই হোক , বিজ্ঞান এবং গণিতের জটিল কিছু সহজে ঢোকে না। কিন্তু আসলেই কি তাই? ইতিহাস তো বলে অন্য কথা। ইতিহাস বলে , বিজ্ঞানের উন্নতিতে নারীদের অবদানও কম না। তবে আরো একটা ব্যাপার যেটা ইতিহাস থেকে আমরা দেখতে পাই তা হল অনেক জায়গাতেই যেখাতেই নারীরা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তাদের মস্তিষ্কের সঠিক ব্যবহার করতে চেয়েছে সেখানেই তাদের পড়তে হয়েছে অনেক প্রতিকূল পরিবেশে । এছাড়াও ধর্মীয় রোষানলে পড়ে অনেককে প্রাণও দিতে হয়েছে। ঠিক এমন এক জন নারী গণিতজ্ঞ, দার্শনিক এবং বিজ্ঞানীর কথাই আজ বলবো যার নাম “হাইপেশিয়া”। মহিলাদের মধ্যে তিনিই প্রথম উল্লেখযোগ্য গণিতজ্ঞ। তিনি সবচেয়ে প্রসিদ্ধ আলেক্সান্দ্রিয়ান প্যাগান ও ছিলেন। শিক্ষক হিসেবে তার সাফল্য উল্লেখ করার মত।
হাইপেশিয়ার জন্ম আনুমানিক ৩৭০খ্রিস্টাব্দে। তার বাবার নাম থিওন। হাইপেশিয়ার মায়ের সম্পর্কে ইতিহাস ঘেটে সঠিকভাবে জানা যায় না। হাইপেশিয়ার বাবার কাছ থেকেই হাইপেশিয়া বিজ্ঞান, গণিত ও দর্শনে হাতে খড়ি পান। হাইপেশিয়াকে বলা হয় প্রথম নারী গণিতবিদ যার ব্যাপারে ইতিহাসবিদগণ গভীরভাবে জানতে পেরেছেন।হাইপেশিয়ার বাবা ছিলেন আলেকজান্দ্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক । পরবর্তীতে তিনি আলেকজান্দ্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ পদে আসীন হন।
হাইপেশিয়া তাঁর বাবার ছায়ায় বেড়ে উঠেছিলেন একটা শিক্ষাসুলভ আর আবিষ্কারমুখর পরিবেশে । সে কারণেই তাঁর মাঝে জ্ঞানবিজ্ঞান, দর্শনচিন্তা, মুক্তবুদ্ধির চর্চাগুলো গড়ে উঠেছিল। গণিত আর জ্যোতির্বিজ্ঞানকে ধারণ করে নিয়েছিলেন হাইপেশিয়া তার মনের মাঝে । চোখের সামনে ধরা দিতে লাগল যুক্তির অপার সৌন্দর্যের জগত। আলেকজান্দ্রিয়ার জাদুঘর আর লাইব্রেরীতেই তিনি তার জ্ঞানকে ক্রমশ বিকশিত করেছেন । একটা সময় জ্ঞানে ও যশে তিনি ছাপিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর বাবাকেও! যে কারণে হাইপেশিয়া হলেন ইতিহাসে একজন নারী গণিতবিদ আর থিওন হাইপেশিয়ার বাবা হিসেবে পরিচিত।
থিওন বাবা হিসেবে তাঁকে সব ধরনেই শিক্ষাই দিয়েছিলেন । শারীরিক, মানসিক, গ্রন্থগত সব বিদ্যাই মেয়েকে রপ্ত করিয়েছেন ভালোভাবে । জানা যায় সাঁতার, ঘোড়া চালানো , পর্বতারোহণ এবং এরকম প্রতিটা দিনের একটা নির্ধারিত সময় তাঁর এ ধরনের শারীরিক শ্রমের জন্য বরাদ্দ ছিল। মেয়ে হিসেবে জন্মালেও বাবা তাঁর মেয়েকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াসে ছিলেন।
খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩১ অব্দে আলেক্সেন্ডার দ্য গ্রেট প্রতিষ্ঠিত আলেকজেন্দ্রিয়া শহরটি বেশ দ্রুত প্রাচীন সমাজের সংস্কৃতি এবং শিক্ষার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। যে লাইব্রেরিতে তিনি জ্ঞান অনুসন্ধান করতেন সে লাইব্রেরির সংগ্রহে দশ লক্ষেরও অধিক প্রাচীন গ্রন্থ সাজানো ছিল।
থিওন তার কন্যাকে গণিত এবং জ্যোতির্বিদ্যা শিক্ষা দেন এবং তিনি ও তার কন্যা একসাথে মিলে কিছু ভাষ্য তৈরির কাজও করে। বর্তমানে মনে করা হয় যে, টলেমীর আলমাজেস্ট গ্রন্থের থিওন ভার্সনের তৃতীয় অধ্যায়ের গবেষণা কার্যটি- যা পৃথিবী কেন্দ্রিক মহাবিশ্বের মডেলকে প্রতিষ্ঠিত করে এবং যেটা কোপার্নিকাস এবং গ্যালেলিও এর সময়কাল পর্যন্ত স্বীকৃত হয়ে এসেছে- প্রকৃতপক্ষে হাইপেশিয়ার কাজ ছিল।
হাইপেশিয়া নিজেই একজন গণিতবিদ এবং জ্যোতির্বিদ ছিলেন এবং নিজে থেকেই ভাষ্য তৈরির কাজ করতেন এবং নিয়মিতভাবে নিজ বাড়িতেই নানা পাঠ্যক্রমের ছাত্রদের পাঠদান করতেন । সেই ছাত্রদের মধ্যকার একজন, সাইনেসিয়াসের একটি চিঠি ইঙ্গিত করে যে, পাঠগুলোর মধ্যে ছিল কিভাবে একটি অ্যাস্ট্রোল্যাবের (এক ধরনের বহনোপযোগী জ্যোতির্বিদ্যক ক্যালকুলেটর যা বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়ে আসছে।) নকশা করতে হয়।
হাইপেশিয়ার আরেকটি উল্লেখযোগ্য কাজ হল তিনি এপোলোনিয়াসের কণিক এর উপর একটি বই লিখেন। তিনি অধিবৃত্ত , পরাবৃত্ত আর উপবৃত্তের আরো সহজে সবাই বুঝতে পারে এমন ভাবে উপস্থাপনা করেন। ডায়োফেন্টাসের এরিথমেটিকার উপর লেখা হাইপেশিয়ার ব্যাখ্যামূলক গ্রন্থটির- টিকে থাকার সপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। ডায়োফেন্টাসের বীজগণিত মূলত একঘাত ও দ্বিঘাত সমীকরণ সংক্রান্ত সমস্যার উপর আলোকপাত করে; যেখানে হাইপেশিয়া বেশ কিছু বিকল্প সমাধান এবং নতুন সমস্যাবলীর অবতারণা করেন।
এছাড়াও তার আরো কিছু অবদান রয়েছে। হাইপেশিয়া এমন একটা চিন্তার দার্শনিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে যা এখন নিওপ্ল্যাটোনিক স্কুল হিসেবে পরিচিত। চিন্তাটি হল- যাবতীয় কিছু শুধুমাত্র একটি জায়গা থেকে প্রবাহিত হয়। পরবর্তীতে, তার ছাত্র সাইনেসিয়াস খ্রিস্টীয় গির্জার বিশপ পদে অধিষ্ঠিত হয় এবং নিওপ্ল্যাটোনিক চিন্তাকে ট্রিনিত্রি মতবাদে রূপান্তরিত করে। জনসম্মুখে দেয়া হাইপেশিয়ার ভাষণগুলো ছিল বহুল জনপ্রিয় এবং তা অনেক মানুষের সমাগম ঘটাত। রোম, এথেন্স এবং আরো বড় বড় শহর থেকে আলেকজান্দ্রিয়াতে ছাত্ররা আসত তাঁর গণিত ও দর্শনশাস্ত্রের বক্তৃতা শুনতে। গণিত, দর্শন এবং জ্যোতির্বিদ্যায় অসামান্য জ্ঞান ও শিক্ষাদানের ক্ষমতার জন্য তিনি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন সকল শ্রেণীর শীর্ষদের কাছে, যাদের মধ্যে ছিলেন অভিজাত্য পরিবারের সন্তানেরা। কথিত আছে অসাধারণ রূপসী এবং আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের কারণে অনেক ছাত্র তাঁর প্রেমে পড়ে গিয়েছিল, যদিও জ্ঞানরাজ্য ছাড়া আর চিরকুমারী এই মানুষটির মন টলাতে পারেনি। বিখ্যাত দার্শনিক ডামাস্কিয়াস হাইপেশিয়ার মৃত্যুর পরে লেখেন, “হাইপেশিয়া পণ্ডিতের আলখাল্লা গায়ে চাপিয়ে শহরের ভেতর দিয়ে ঘুরে বেড়াত এবং যারা প্লেটো, এরিস্টটলের ব্যাপারে শুনতে চায় তাদের ব্যাপারগুলো বুঝিয়ে বলত”।
এত প্রতিভা থাকার পরেও ধর্মান্ধদের কবলে পড়ে করুন পরিণতিতে পড়তে হয়েছে হাইপেশিয়াকে। তার মৃত্যুর সঠিক তাৎপর্য উপলব্ধি করতে হলে ইতিহাসের বেশকিছু ঘটনার ব্যাখ্যা প্রয়োজন। সম্রাট থিওডোসিয়াস ৩৮০ সালে প্যাগানবাদ এবং অরিয়ানবাদের বিরুদ্ধে একটি অসহিষ্ণুতা নীতির সূচনা ঘটান। তিনি ৩৭৯ থেকে ৩৯২ সাল পর্যন্ত পূর্বাঞ্চলীয় রোমান সাম্রাজ্যের রাজা ছিলেন এবং এরপর থেকে ৩৯৫ সাল পর্যন্ত রোমান সাম্রাজ্যের পূর্ব এবং পশ্চিম উভয় অঞ্চলের অধিপতি ছিলেন। ৩৯১ সালে তিনি আলেক্সান্দ্রিয়ার বিশপ থিওফিলাসের পত্রের জবাবে মিশরের ধর্মীয় সংস্থানসমূহকে ধ্বংস করে দেয়ার অনুমতি প্রদান করেন। এর পরপরই খৃস্টান জনতা সম্মিলিত আক্রমণের মাধ্যমে আলেক্সান্দ্রিয়া গ্রন্থাগার এবং সারাপিস মন্দির সহ অন্যান্য প্যাগান সৌধগুলো ধ্বংস করে দেয়।
৩৯৩ সালে আইনসভার আইনের মাধ্যমে এ ধরণের স্থাপনা বিশেষ করে ইহুদী মন্দির ধ্বংসে আক্রমনাত্মক কার্যাবলির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। কিন্তু ৪১২ সালে আলেক্সান্দ্রিয়ার ঊর্ধ্বতন যাজক হিসেবে সিরিলের ক্ষমতায় আসার পর আবার সেই ধ্বংসাত্মক কাজগুলো শুরু হয়। ৪১৪ সালে আলেক্সান্দ্রিয়ায় ইহুদী বিতারণের সূচনার মাধ্যমে বিপর্যয়ের ঘনঘটা দেখা দেয়। হাইপেশিয়ার নিও-প্লেটোনিক মতবাদে বিশ্বাস, খ্রিষ্টান শাসকদের শঙ্কার কারণ ছিল। তাঁরা হাইপেশিয়ার দর্শনকে মনে করতেন চার্চদ্রোহী। হাইপেশিয়ার প্রভাবকে সিরিল মনে করতেন চার্চের জন্য বড় হুমকি । সিরিলের টার্গেটে পরিনত হন হাইপেশিয়া। এরই ধারাবাহিকতায় একদল ধর্মোন্মাদ খৃস্টান জনতার হাতে হাইপেশিয়া নিহত হন।
দিনটা ছিল ৪১৭ খ্রিস্টাব্দের একটা দিন। প্রতিদিনের মত সেদিনও তিনি ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে রওনা হয়েছিলেন আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরীর উদ্দেশ্যে। পথিমধ্যে তাকে ঘিরে ফেলা হল। তারপর ঘোড়ার গাড়ি থেকে তাকে নামিয়ে মাটিতে ফেলা হল। আর্চ বিশপ সিরিলের নেতৃত্বে তাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় একটা গির্জায়। সেখানে তাকে বিবস্ত্র করে তার ওপর করা হয় অমানুষিক নির্যাতন। এরপর তার ক্ষত বিক্ষত দেহকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলা হল। এত কিছু করেই থেমে যায় নি তারা। সেই মানুষগুলো প্রতিভাময়ী বিজ্ঞানী হাইপেশিয়ারর দেহের ছিন্ন ভিন্ন অংশগুলোকে আগুনের মাঝে ছুড়ে দিয়ে উল্লাসে মেতে ওঠে । পৃথিবীর ইতিহাসে এধরনের নৃশংসতার উদাহরণ হয়ত খুব বেশি নেই। হাইপেশিয়া হত্যাকাণ্ডের পর সিরিলকে ক্যাথলিক চার্চ সেইন্ট বানিয়ে দেয়া হয়। হাইপেশিয়াকে হত্যা করার পরও ধর্মান্ধদের ক্ষুধা মেটে নি। হাইপেশিয়ার হাত ধরে বিজ্ঞানের যে অগ্রযাত্রা হয়েছিল, তাকে সমূলে ধ্বংস করে দেয়ার লক্ষ্যেই আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরীকে গুড়িয়ে দেয়া হল। আর সেই সাথে আগুনে পুড়িয়ে ভস্মীভূত করা হল সেই লাইব্রেরীর দশ লক্ষেরও বেশি বই। যে বইগুলো শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে লেখা হয়েছিল, যে বইগুলোতে সংরক্ষিত ছিল বড় বড় গবেষকদের সারা জীবনের পরিশ্রম, তা একদিনেই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ঘটনার পর প্রায় এক হাজার বছরের জন্য থমকে দাড়িয়েছিল বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা।
অবদানঃ
গনিতঃ
তিনি শিক্ষা এবং বিজ্ঞানকে সঠিক উপমার মাধ্যমে প্রতিকায়িত করেন। তৎকালীন সময়ে এ ধরণের শিক্ষাকে প্যাগান রীতিনীতি ও সংস্কৃতির সাথে একীভূত মনে করা হত এবং এর ফলে জ্ঞানের বিকাশের পথে বাঁধার সৃষ্টি হয়, আর এ কারণেই তাকে অনেক প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হয়।
সুডা লেক্সিকন নামক দশম শতাব্দীর একটি বিশ্বকোষের বর্ণনামতে তিনি কয়েকটি পুস্তকের উপর ভাষ্য রচনা করেন। এর মধ্যে রয়েছে:
আলেক্সান্দ্রিয়ার ডায়োফ্যান্টাস রচিত এরিথমেটীকা।
পার্গার অ্যাপোলোনিয়াস রচিত কনিকস ।
এই বইগুলো পরে আর পাওয়া যায়নি। তবে এরিথমেটিকা বইটির বর্ধিত আরবি সংস্করণে তার ভাষ্য সম্বন্ধে কিছু তথ্য পাওয়া যায়।
জ্যোতির্বিজ্ঞানঃ
জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক একটি সারগ্রন্থের উপর তিনি ভাষ্য রচনা করেন। অনেকের মতে এটি ছিল টলেমী রচিত আলমাজেস্ট। যেমন তার পিতা থিওনের সূত্রে জানা যায় যে, হাইপেশিয়া আলমাজেস্টের উপর তার লেখা ভাষ্যটির পুনঃপরীক্ষণ করেছিলেন।
তার অধিকাংশ কীর্তি সম্বন্ধে যা জানা যায় তার প্রায় পুরো অংশেরই দলিল গৃহীত হয়েছে সাইনেসিয়াসের পত্রাবলী থেকে। সাইনেসিয়াস উল্লেখ করেন যে হাইপেশিয়া একটি অ্যাস্ট্রোল্যাব এবং একটি হাইড্রোস্কোপ তৈরিতে মনোনিবেশ করেছিলেন। উল্লেখ্য সপ্তদশ শতাব্দীতেপিয়েরে ডি ফার্মি হাইড্রোস্কোপকে হাইড্রোমিটার নামে নামাঙ্কিত করেন। যাহোক এ থেকে বুঝা যায় যে হাইপেশিয়া নিজেকে জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং গণিতের চর্চায় উৎসর্গ করেছিলেন।
দর্শনঃ
হাইপেশিয়া দুজন বিখ্যাত নব্য প্লেটোবাদী ব্যক্তিত্বের গণিতজ্ঞ এবং দার্শনিক শিক্ষা ও পদ্ধতির উপর ভাষণ প্রদান করতেন। এই দুজন হলেন প্লোটিনাস (২০৫-২৭০ খৃস্টপূর্বাব্দ) যিনি নব্য প্লেটোবাদের জনক হিসেবে খ্যাত এবং ল্যাম্বলিকাস (২৫০-৩৩০ খৃস্টপূর্বাব্দ) যিনি নব্য প্লেটোবাদের সিরিয় ধারায় উদ্ভাবক।
তার দর্শন ছিল তৎকালীন যুগের সাপেক্ষে অনেক পরিপক্ক ও বৈজ্ঞানিক এবং তার মাঝে পৌরাণিকতা ছিলনা বললেই চলে যদিও তার দর্শন সম্বন্ধে কোন সুস্পষ্ট দলিল বর্তমানে অবশিষ্ট নেই। দর্শনের ব্যাপারে তিনি আপোষহীনভাবে প্যাগান মতবাদের অনুসারী ছিলেন এবং তার এই চিন্তাধারার প্রকৃতি তৎকালীন অন্যান্য নব্য প্লেটোবাদী দর্শনধারা হতে স্বতন্ত্র ছিল।
তার দুটি বিখ্যাত উক্তি থেকে তার দর্শনের অকাট্যতা প্রতিভাত হয়:
তোমার চিন্তা করার অধিকার সংরক্ষণ কর। এমনকি ভুলভাবে চিন্তা করা একেবারে চিন্তা না করা থেকে উত্তম।
কুসংস্কারকে সত্য হিসেবে শিক্ষা দেয়া একটি ভয়ংকরতম বিষয়।
তার এই সকল চিন্তাধারাই হয়তোবা সিরিলকে এতোটা উত্তেজিত করে থাকবে যে সে খৃস্টান জনতাকে এতোটা উন্মত্ত করতে সমর্থ হয়েছিল। আর এরই পরিণতিতে নিহত হতে হয় হাইপেশিয়াকে।
২০০৯ সালে হাইপেশিয়ার জীবন কাহিনী নিয়ে হলিউডে একটি সিনেমা বের হয় যার নাম ” Agora”.