আপনি কি নিজ চোখে দেখেছেন পৃথিবী গোল? নাকি অন্যের কথা শুনেই মেনে নিলেন পৃথিবী গোল?
আমাদের বেশিরভাগের অবস্থাই এরকম। অন্যে যা বলে আমরা সহজে বিশ্বাস করে নেই। হেতু, যে বলেছে সে অনেক জ্ঞানী গুণী লোক। যাই হোক, আজ থেকে মানে এখন থেকে আর শুনে বিশ্বাসী হতে হবে না। প্রমাণও দিতে পারবেন এর স্বপক্ষে। নতুন করে বুঝবেন যে, সবকিছু স্বাভাবিক পর্যবেক্ষণ দিয়েও বিচার করা যায় না। আমাদের পর্যবেক্ষণেও থাকতে পারে অনেক ত্রুটি। যুক্তি যদি যৌক্তিক না হয় তাহলেই বাধে সমস্যা। তাই শুধু যুক্তি থাকলেই হবে না। যুক্তিকে হতে হবে যৌক্তিক।
John G. Abizaid এর লেখা ৮২ পৃষ্ঠার The enlightenment of the world বই থেকে নিচের প্রমাণগুলো নেয়া হয়েছে। এই বইতে লেখক প্রমাণ করে দেখিয়েছন যে, পৃথিবী সমতল। একইসাথে প্রমাণ করেছেন পৃথিবী স্থির এবং চাঁদ, সূর্য পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। যাই হোক, চলুন দেখা যাক সমতল পৃথিবীর কিছু প্রমাণ।
সমতল পৃথিবী’র প্রমাণ
প্রমাণ-১: এক গ্লাস পানি নিন। এবার একটা ফুটবল নিন। গ্লাসের পানিটুকু ফুটবলের উপরে ঢেলে দিন। কি দেখলেন?
পানিটুকু ফুটবল গড়িয়ে পড়ে যাচ্ছে নিচে। অর্থাৎ গ্লাসের পানি আর ফুটবলের পৃষ্ঠ জুড়ে নেই।
প্রমাণ-২: এবার একটা সস প্যান নিন। সাথে আগের মত এক গ্লাস পানি। পানিটুকু সসপেনে ঢেলে দিন। নিশ্চয় দেখবেন গ্লাসের পানি সুন্দরভাবে সসপ্যানের মধ্যে রয়েছে। এবং পানির পৃষ্ট সমতল হয়ে আছে।
সিদ্ধান্ত: এর থেকে বোঝা গেল যে, গোল কিছুর উপরে পানি থাকে না। কারণ পানি হচ্ছে তরল পদার্থ। এর ধর্মই টলমলে এবং স্থির অবস্থায় থেকে সমতল থাকা। যেটা আমরা সসপ্যানে দেখতে পেয়েছি। সসপ্যান সমতল হওয়ায় সেখানে পানি সমতল ভাবে দেখতে পাই।
পর্যবেক্ষণ থেকে এসব কথা বলাই যায় তাই না?
এবার পৃথিবীর সাথে মিলিয়ে দেখুন। সাগরে গিয়ে দেখবেন পানি সমতল। নদীতে, পুকুরেও তাই দেখবেন। সুতরাং পৃথিবীতে পানি যেহেতু সমতল সেহেতু পৃথিবীকেও সমতল হতে হবে।
সুতরাং, পৃথিবী সমতল (প্রমাণিত)
পৃথিবী সমতল নয়
বিজ্ঞানের আলোকে যুক্তি: উপরে দেখতেই পেলেন যে, পর্যবেক্ষণ গত যুক্তি দিয়ে কত সহজেই পৃথিবীকে সমতল করে ফেলা যায়। কিন্তু এখানে বাস্তবতা কি? পর্যবেক্ষণের কি কোনো ত্রুটি আছে নাকি ঠিকাছে? দেখা যাক-
প্রথমতঃ পৃথিবী বিশাল। আর এবং অবশ্যই বিশাল বৃত্ত। বিশাল একটা বৃত্তের উপর আমাদের ক্ষুদ্র মানুষের কাছে এর একটা অংশকে সমতল মনে হবে সেটাই স্বাভাবিক।
সুতরাং, আপাত দৃষ্টিতে কোনো কিছু সমতল মনে হলেও দূর থেকে পূর্ণ পর্যবেক্ষণ করলে সেটার আকার বদলে যেতে পারে। এটাই হচ্ছে পর্যবেক্ষণের ত্রুটি। সম্পূর্ণভাবে পর্যবেক্ষণ না করে সিদ্ধান্তে আসা যায় না।
দ্বিতীয়তঃ ফ্ল্যাট আর্থাররা হয়তো গ্র্যাভিটির কথা ভুলে গিয়েছেন। তারা গ্র্যাভিটি বিশ্বাস করে না অথচ আইনস্টাইনের জেনারেল রিলেটিভিটি ঠিকই কপচায়!
কোন কিছু কেন পরবে? অবশ্যই এর পেছনে কোনো কারণ থাকতে হবে? আর পৃথিবীর উপরে ফুটবলের এই এক্সপেরিমেন্ট এবং পৃথিবীর পানির পরীক্ষা এক হতে পারে না। ফুটবলে পানি ঢাললে তা ফুটবলের পৃষ্ঠে থাকে না, কারণ হচ্ছে পৃথিবীর আকর্ষণ। কিন্তু পৃথিবীতে পানি ঘিরে থাকে, এর কারণও পৃথিবীর আকর্ষণ। অন্য কিছু আকর্ষণ করলে হয়তো পৃথিবীতে পানি থাকত না, পরে যেত। যদি সেটার আকর্ষণ পৃথিবী থেকে অনেক অনেক বেশি হত। সূর্য অনেক দূরে হওয়ায় সেই আকর্ষণ কমে যায়। তাই সূর্য বা চাঁদের আকর্ষনে পৃথিবীর পানি চাঁদ বা সূর্যে চলে যায় না।
ঠিকেকইভাবে ফুটবলকে যদি পৃথিবী থেকে অনেকদূরে মহাকাশে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন দেখা যাবে পানি ঢাললে সেটা ফুটবলের পৃষ্ঠকে ঠিকই ঘিরে রাখছে। খোঁজ করলে ISS এর ইউটিউবে এমন অনেক ভিডিও পাব।
তাহলে স্বার্বিকভাবে বলতে পারি উপরের প্রথম পরীক্ষা দুটোতে পর্যবেক্ষণ গত ত্রুটি ছিল। এবং এ কারণেই সেই পরীক্ষা থেকে ভুল সিদ্ধান্ত এসেছে।
আবার, পৃথিবী সহ কোন মহাজাগতিক বস্তু যদি আকারে বেশ বড় হয় তাহলে সেটা কোনোভাবেই সমতল বা প্লেটের মত কিছু হতে পারবে না। এরকম কিছু থাকলেও সেটা নিজের সাথে আকর্ষণে গোল বা প্রায় গোল আকারে পরিণত হতে বাধ্য। মহাবিশ্বের ফিজিক্স মেলাতে হলে পৃথিবীকে গোল হতেই হবে।
নাসা, ইসা এবং অন্যান্য স্পেস এজেন্সির তোলা ছবিগুলো ফটোশপ বা ফিস আই লেন্সের কারসাজিও যদি হয়(!) তবুও পৃথিবীকে গোল হতেই হবে।
সুতরাং, যার যার পৃথিবী সমতল ছিল আজ থেকে সেটাকে গোল করে নিন। নইলে আপনার ফিজিক্স মিলবে না :p
বি.দ্রঃ সমতল ও গোল পৃথিবী নিয়ে যে দ্বন্দ্ব সেটার প্রমাণাদি নিয়ে সিরিজ লিখব চিন্তা করেছি। এর জন্য ফ্ল্যাট আর্থারদের সব বই পড়তে হচ্ছে এবং তাদের ফোরামের FAQ গুলোও পড়তে হচ্ছে।
আশা করি তাদের প্রতিটা যুক্তি এবং প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাব পুরো সিরিজে। সমতল পৃথিবী আর গোল পৃথিবী নিয়ে আপনার যেকোনো প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন। ধীরে ধীরে উত্তর দিতে চেষ্টা করব।
10 Comments
Anonymous
THANK YOU
sm mohsin
ওনাকে বলেন একটা ফুট বল এর গায়ে চুল পরিমান পানি দিতে। পানি কি গরিয়ে জায় নাকি ওখানেই লেগে থাকে দেখবেন। পৃথিবি যদি একটা ফুটবল হয়, তাহলে ১গ্লাস পানি দেখার মত যন্ত্র আজও আবিষ্কৃত হয় নাই।
kamruzzaman Emon
@sm mohsin ঠিক বলেছেন। তাছাড়া ফুটবলের ক্ষেত্রে পৃথিবীর মহাকর্ষ কাজ করে। কিন্তু পৃথিবীর ক্ষেত্রে তেমন আকর্ষণ কাজ করে না যে পানি পৃথিবী থেকে গড়িয়ে নিচে পড়ে যাবে।
Neel Mony
আমাদের সৌরজগতের সবকিছুই একেবারে নিখুত ভাবে ঘূর্ণয়মান ও গতিশীল, নিশ্চয় তার জন্য একটি খুব শক্তিশালি কেন্দ্র থাকাটা আবশ্যক, সূর্য কেন্দ্র নয়, কারন সূর্যও ঘূর্নয়মান তাছাড়া তাতে উপগ্রহের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হবার কথা।
এর সমাধান বিজ্ঞানে নিশ্চয় আছে, অথচ আমি তা খুঁজে পাচ্ছিনা। জানালে কৃতার্থ হব।
kamruzzaman Emon
আপনি কাকে কেন্দ্র ধরবেন সেটা নির্ভর করে পর্যবেক্ষণের উপরে। আপনাকে একটা রেফারেন্স ফ্রেমকে বিবেচনা করে তার সাপেক্ষে সব বিবেচনা করতে হবে।
সূর্য নিজেই তার গ্যালাক্সির সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। কিন্তু সৌরজগতের গ্রহগুলো আবার সূর্যকে মোটামুটি(!) কেন্দ্র করে বৃত্তাকার বা উপবৃত্তাকার পথে ঘুর্ণায়মান। আবার এসব গ্রহকে কেন্দ্র করে গ্রহের উপগ্রহগুলো ঘুরছে। যেমন পৃথিবীকে কেন্দ্র করে চাঁদ ঘুরছে।
যেমন আমাদের পোর্টালেই একটা লেখা আছে সূর্য আর বৃহস্পতি নিয়ে। বৃহস্পতি সূর্যের চারপাশে ঘোরে না! এই লেখাটি পড়ে দেখবেন।
সকল গ্রহ সূর্যকে নিখুত কেন্দ্র করে না ঘুরলেও মোটামুটি সূর্যই আমাদের সৌরজগতের কেন্দ্র।
যদি আরো জানার থাকে তাহলে জিজ্ঞেস করতে পারেন। আপনার সুন্দর প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ।
Anonymous
আচ্ছা,, বিভিন্ন ইউটিউব ভিডিও বা অন্যান্য সূত্রে বলা হয় যে আমরা পৃথিবীর আকার যেমনটি ধারনা করি সম্পূর্ণ গোলাকার কিংবা কমলাকৃতির সেরকমটি নাকি নয় বরং কিছুটা গোলাকার ধরনের এবং দুই মেরু সূচালো আকৃতির এ ধারণা কতটুকু যৌক্তিক বা সত্য,,??
kamruzzaman Emon
ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিওতে এসব গাজাখুরে জিনিস দেখা যেতেই পারে। ভিডিওর ভিউ বাড়ানোর জন্য অনেকে ইচ্ছা করেই এসব কন্সপিরেসি ছড়ায়। কিন্তু আপনি বললেন অন্যান্য সূত্রে বলা হয়েছে পৃথিবীর মেরু সুচের মত!!? কোণ সূত্রে এমন বলা হয়েছে সেটা যদি একটু উল্লেখ করতেন তাহলে আমার উত্তর দেয়াটা সুবিধা হত। আমি এমন কোনো সূত্র আজো দেখি নি যেখানে বলা হয়েছে পৃথিবী গোল বা কমলালেবুর মত না, সূচের মত মেরু আছে!
Syed Arif
ভাইরে তুমি দুনিয়ার ভিতরে থেকে বলে দিলে পৃথিবী সমতল!!! তুমি কি মার্ধ্যাকর্ষন নাম শুনছো।সেইটা পৃথিবীর পানিকে চাপ দিয়ে রাখে
kamruzzaman Emon
ফ্ল্যাট আর্থাররা মাধ্যাকর্ষণ বিশ্বাস করে না। তারা মনে করে কোনো কিছু নিচে পরে কারণ হচ্ছে পৃথিবী ৯.৮ মি/সে^২ তরণে উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে এবং এই ওঠার কারণ হচ্ছে ডার্ক এনার্জী :3
হাস্যকর ব্যাপার স্যাপার।
Apu
মার্ধ্যাকর্ষন শক্তির কারনেই পানি পৃথিবী থেকে পড়ে যায় না। তাই সমতল পৃথিবী প্রমানে এটা খুবই ফালতু যুক্তি…