ইন স্ক্রিন ফ্রিঙ্গারফ্রিন্ট

স্মার্টফোনপ্রেমীদের কাছে স্মার্টফোনের একটি জনপ্রিয় ফিচার হলো এর আনলক করার মেথড টি।মোটামুটি সকল স্মার্টফোনে বেশ কয়েকটি আনলক মেথড থাকে।এগুলো হলো প্যাটার্ন,পিন,পাসওয়ার্ড,ভয়েস রিকোগনিশন,ফেসিয়াল রিকগনিশন,ফ্রিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানিং।গত বছর যখন সব স্মার্টফোনের ভেসেল চিকন হওয়া শুরু করে ১৮ঃ৯ ডিসপ্লের মোবাইলের আবির্ভাব ঘটে তখন ক্রমেই ব্যবহারকারীদের নিকট ফ্রীঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যান করে মোবাইল আনলক করার মেথড টি জনপ্রিয় হয়।তখন থেকেই স্মার্টফোনপ্রেমীদের ইন-স্ক্রিন বা আন্ডার-স্ক্রিন ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর নিয়ে আগ্রহ এবং কল্পনার শুরু হয়।

কেননা, স্মার্টফোনগুলির স্ক্রিন যদি এজ টু এজ রাখা হয় তখন স্মার্টফোনের ডিসপ্লের নিচের দিকে কিংবা উপরের দিকে এমন কোন সুবিধাজনক স্থান ফাকা থাকে না যেখানে ফ্রিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর বসানো যায়। যা ম্যানুফেকচারদের কাছে একটি সমস্যা বলে চিহ্নিত হয়।এই সমস্যা সমাধান করার জন্য অনেক ম্যানুফেকচার অনেকভাবে চেষ্টা করেছে,কিন্তু কেউই ১০০% সফল হতে পারেনি। অনেক ম্যানুফেকচার বিকল্প হিসেবে ব্যাকসাইডে ফ্রিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর টি স্থাপন করে কিন্তু তা অনসাইড ফ্রিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরের মতো অত কার্যকরী নয় এবং ব্যবহার করতে সমস্যার ও সৃষ্টি হয়। যার ফলে ম্যানুফেকচার রা এই সমস্যা সমাধানে ব্যস্ত হয়ে উঠে।কিন্তু কেউ ই তেমনভাবে সফল হতে পারেনি। বড় বড় কোম্পানি যেমন এপল এই সমস্যা সমাধান করার জন্য সম্পূর্ণ ভিন্ন উপায় বের করে। তারা তাদের নিজস্ব প্রযুক্তিতে উদ্ভাবিত ফেস আইডি টেকনোলজি  ব্যবহার করে।  কিন্তু দুৰ্ভাগ্যবশত, এটিও ফ্রন্ট ফেসিং ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরের মতো এতো সহজ এবং কার্যকর নয়। ।অন্যদিকে স্যামসাং ভেবেছিলো ফ্রিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরটিকে পিছনের দিকে একটি অস্বস্তিকর জায়গায় স্থাপন করার।কিন্তু সেটি ফোনের সামনের দিকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর রাখার মতো এতটা কার্যকরী এবং সহজ নয়। তাই সবাই এই পদ্ধতিটি পছন্দও করেনি।

ভিভোর ইন্সক্রিন ফ্রিঙারপ্রিন্ট যুক্ত স্মার্টফোন

তাই এটির বেস্ট সল্যুশন হচ্ছে এমন কোন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা যার মাধ্যমে ফ্রিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরটিকে স্ক্রিনের নিচে প্লেস করা যাবে এবং ডিসপ্লে টাচ করেই ফ্রিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যান এবং মোবাইল আনলক করা যাবে। কিন্তু এই সহজ বিষয়টির প্রয়োগ অনেক জটিল। যার ফলে বড় বড় কোম্পানিগুলো অনেক গবেষণা করেও সফলভাবে এর প্রয়োগ ঘটাতে পারেনি। ইন স্ক্রিন ফ্রিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর প্লেস না করতে পেরেই তারা অন্যান্য মেথড এর কথা ভাবে।কিন্তু এবছর অনুষ্ঠিত হওয়া বিশ্ববিখ্যাত ইলেকট্রনিক পণ্য প্রদর্শনী অনুষ্ঠান সিইএস২০১৮ তে ভিবো এমন একটি স্মার্টফোন প্রদর্শন করে যাতে রয়েছে ইন স্ক্রিন ফ্রিঙ্গারপ্রিন্ট টেকনোলজি। যা স্মার্টফোনপ্রেমীদের জন্য আক্ষরিক অর্থেই একটি সুখবর। ভিবো এই স্মার্টফোনটির এখনো নামকরণ করেনি। তাদের দেয়া তথ্যমতে তারা স্মার্টফোনটি বিক্রির ক্ষেত্রে এশিয়ান বাজারের দিকে বেশি লক্ষ্য রাখবে।

ইন স্ক্রিন ফ্রিঙ্গারপ্রিন্ট টেকনোলজি

 

ভিভো-র এই নতুন স্মার্টফোনে ডিসপ্লের নিচে যে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরটি থাকছে সেটির অফিশিয়াল নাম হচ্ছে সিন্যাপটিকস ক্লিয়ার আইডি (Synaptics Clear ID)। এই  ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরটি বাজারের অন্যান্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরযুক্ত হয় এন্ড স্মার্টফোনগুলোর মতোই। অন্যান্য সাধারণ ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরের ওপরে যেমন আঙ্গুল রাখলেই ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যান করে অথেন্টিকেট করে এবং সঠিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট রিড করতে পারলেই ফোনটি আনলক হয়ে যায়, এই ইন-স্ক্রিন ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরটিও ঠিক একইভাবে কাজ করবে। সিইএস ২০১৮ তে এই স্মার্টফোনটি নিয়ে করা সব হ্যান্ডস অন ইম্প্রেশনস থেকে দেখা যায়, এই স্মার্টফোনটির ইন-স্ক্রিন ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর ইতোমধ্যেই যথেষ্ট ফাস্ট এবং রেস্পন্সিভ। অবশ্যই ভিভো এই ফিঙ্গারপ্রিন্টটি তাদের স্মার্টফোনে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু প্রযুক্তির ব্যবহার করেছে। তবে, বাইরে থেকে আপনার কাছে এটি সাধারণ একটি ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরের মতোই মনে হবে,  শুধুমাত্র একটি পার্থক্যই চোখে পড়বে, তা হচ্ছে এই ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরটি আপনার ফোনের ডিসপ্লের নিচে লুকানো থাকবে।এছাড়া এই স্মার্টফোনটিতে আরো থাকবে  বেজেল লেস ডিসপ্লে,১৮ঃ৯এস্পেক্ট  রেশিও বাকি সব অন্যান্য আধুনিক স্মার্টফোনের মত এই ফোনেও থাকবে।এছাড়া এই ফোনে বিশেষভাবে ব্যবহার করা হয়েছে এমোলেড ডিসপ্লে।যা, ইন স্ক্রিন ফ্রিঙ্গারপ্রিন্ট টেকনোলজিটির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।কেননা এই ডিসপ্লে ছাড়া এই প্রযুক্তি কাজ করবে না।”এই ফোনটির একমাত্র প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে এর ইন-স্ক্রিন ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর !”

Comments are closed.