মহাকর্ষীয় তরঙ্গের খোঁজে…

মহাকাশ বিজ্ঞানে আগ্রহ আছে যাদের তারা নিশ্চয়ই এস্ট্রনোমিস্টদের “মহাকর্ষীয় তরঙ্গপ্রীতির” ব্যাপারে খুব একটা অনবহিত নন। বহুদিন যাবতই তাঁরা হাল না ছাড়া প্রেমিকের মত মহাকর্ষীয় তরঙ্গের পেছনে লেগে রয়েছেন। আর সে প্রচেষ্টারই অংশ হিসেবে কিছু দিন আগে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি গ্রাভিটেশনাল ওয়েভ খুঁজে বের করার আর একটি নতুন মিশন আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে।

তো আসুন আমরা রাশভারী এসট্রনোমিস্টদের আশিকি খুঁজে বের করারা প্রসেসটি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই। গ্রাভিটেশনাল ওয়েভ খুঁজে বের করার নতুন এই মিশনটির নাম দেয়া হয়েছে “লিসা” (LISA). মানে হলো  Laser Interferometer Space Antenna Mission. এই প্রজেক্টে তিনটা সুন্দর মত দেখতে স্পেস্ক্র্যাফট ব্যাবহার করা হবে। যেগুলোর কাজ হবে স্পেস্টাইমের বুননের ওপর একটা নির্দিষ্ট  সময়ের টেউ শনাক্ত করা। স্পেসক্র্যাফট গুলোর আবস্থান পরস্পর থেকে মিলিওন কিলোমিটারেরও বেশি হবে এবং সেগুলোকে লেজার বিমের মাধ্যমের সংযুক্ত করা হবে।

গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ যেকোন গতিশীল বস্তু থেকে নির্গত হতে পারে। কিন্তু তারা তরঙ্গ দীর্ঘে অনেক ছোট হওয়ায় শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। শুধু মাত্র ব্ল্যাক হোলের মত অনেক বেশি ভর বিশিষ্ট দুটি বস্তুর সংঘর্ষই বেশ বড় দীর্ঘের গ্রাভিটেশনাল ওয়েভ উৎপন্ন করতে সক্ষম। যেগুলোকে সহজে শণাক্ত করা যায়।

গ্রাভিটেশনাল ওয়েভ সর্বপ্রথম শণাক্ত করা হয়েছিল ২০১৬ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারী। সেসময় দুটি বেশ বড় আকারের ব্ল্যাক হোলের সংঘর্ষে এই ওয়েভটি উৎপন্ন হয়েছিল। একেকটি ব্ল্যাক হোলের ভর ছিল সূর্যের ভরের প্রায় ৩০ গুণ বেশি। ব্ল্যাক হোল দুটির সংঘর্ষে উৎপন্ন তরঙ্গটি হাইড্রোজেনের একটি এটোমিক নিউক্লিয়াসের প্রস্থের এক হাজার ভাগের এক ভাগের সমান কম্পন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিল।

“লিসা” নামক মিশনটির মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা মূলত মহাকাশের বিভিন্ন তরঙ্গ দীর্ঘের গ্রাভিটেশনাল ওয়েভকে পার্থক্য করতে পারবেন। সেই সাথে বড় বড় দীর্ঘের তরঙ্গ গুলোর মাঝে মিল খুঁজে বের করতে পারবেন। অনেকে প্রশ্ন করতেই পারেন “ঠিক আছে। সব কিছুই তো বুঝলাম ভাই। কিন্তু এই গ্রাভিটেশনাল ওয়েভ রে যে এত খোঁজাখুঁজি করা হইতেছে, এরে এত খুঁজে কি লাভ? এইটা তো বুঝলাম না।” তাহইলে ভাই শুনেন, এই গ্রাভিটেশনাল ওয়েভ দিয়ে আসলে বোঝা যাবে মহাবিশ্ব সৃষ্টির শুরুর দিকে কোন ছায়াপথ গুলোর গঠন আমাদের ছায়াপথের মত ছিল।

২০১৫ সালে “লিসা পাথফাইন্ডার” নামের একটি মিশন শুরু করা হয়েছিল। “লিসা” মিশনটিকে মহাকাশে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে কত টুকু মাপজোখের প্রয়োজন তা বের করতে একক স্পেসক্র্যাফটের প্রজেক্ট “লিসা পাথফাইন্ডার” ব্যাবহার করা হয়েছিল।

“লিসা” মিশনটির আনুমানিক খরচ ধরা হয়েছে ১.০৫ বিলিওন ইউরো। এবং এই প্রজেক্টের কাজ ২০৩০ সালের মাঝামাঝি নাগাদ শেষ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি “প্লেটো” নামক আরও একটি মিশনের অনুমোদন দিয়েছে। এই মিশনটিকে বলা হচ্ছে “প্লানেট ফাইন্ডার” বা গ্রহ অনুসন্ধানকারী প্রজেক্ট। এটির নীলনকশা প্রায় শেষ এবং শীঘ্রই এর নির্মাণ কাজ শুরু হবে। ২০২৬ সাল নাগাদ এর কাজ শুরু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

প্রতিবেদকঃ তানভীর ইশরাক উৎস
Comments are closed.