ইনফিওরিটি কমপ্লেক্স

একটা সময় মনে হবে তুমি আসলে কিচ্ছু পারো না। তুমি গুডলুকিং না,তুমি পড়াশোনায় খারাপ,তোমার ভালো কোনো গুণ নাই! তুমি যা করতে চাচ্ছ তার বিপরীত টা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অবশ্য তোমার সহপাঠী বা তোমার বন্ধু অনেক ট্যালেন্টেড। অনেক গুডলুকিং, কেউ ফেমাস। কেউ আবার দুটোই। আর তোমার এসবের কিছুই নেই।এসবের কারণ হচ্ছে ‘ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স‘ যা পৃথিবীর ভয়ংকর রোগগুলোর একটি। তুমি কিছু একটা করতে চাচ্ছ কিন্তু তুমি সেটা করতে পারবেনা, তোমার আত্নবিশ্বাস এর অভাব ঘটবে প্রচুর। হয়তো বা কেউ কিছু বলবে সেটা নিয়েই তুমি খুত খুত করতে থাকবে ঠিকমতো কাজে মনোযোগ দিতে পারবেনা। সবকিছুতেই তোমাকে অযোগ্য মনে হবে। তোমার মনে হবে তোমার আসোলেই কোন বিষয়ে দক্ষতা নেই।


সাধারণত দু’ধরনের ইনফিরিওরিটি দেখা যায়।

প্রথমত, তারা জানেন তারা অনেক যোগ্য ও দক্ষ, কিন্তু কখনোই নিজের তাগিদে সেগুলোকে ভালো করে কাজে লাগাতে চান না। একধরনের অনীহা কাজ করে সবসময়ই। তারা ‘পারে কিন্তু করে না’ দলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যান পরিচিতদের মধ্যে।

অন্যরা যতই তাদের কাজের মূল্যায়ন করুক, যতই প্রশংসায় পঞ্চমুখ হোক, এই মানুষগুলো নিজেদেরকে সেগুলোর যোগ্য দাবিদার বলে ভাবতে পারে না, যদিও তারা ভালোভাবেই ওয়াকিবহাল নিজের সকল গুণ সম্পর্কে!

এদের ধারণাটি অনেকটা এরকম- “আমি জানি আমি সুন্দর, সবাই বলে আমি সুন্দর। কিন্তু আমার নিজেকে কুৎসিত মনে হয়”।

এক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসের অনুপস্থিতি এবং কিছু করার তাগিদের অভাবই প্রধান। এটি বেশ রহস্যময় ইনফিরিওরিটি, বলা যায় অনেকটা অবাস্তব বা কল্পনাপ্রসূত।

দ্বিতীয়ত, তারা জানে যে তারা তুলনামূলক কম যোগ্যতা রাখে কিংবা তাদের মধ্যে অন্যের তুলনায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে কম কর্মক্ষমতা রয়েছে। এরা এই বিষয়গুলোকে এতটাই বেশি ভাবে যে অনেকসময়ই এর অতিরঞ্জন করে ফেলে। তিলকে তাল বানানোর প্রবণতা এদের মধ্যে প্রবল। তারা সমস্যা সমাধানের চাইতে সমস্যায় ডুবে থাকাটাই বেছে নেয়। কোনোপ্রকার লড়াইয়ের পূর্বেই হার মেনে নেয়া এদের অনেক পরিচিত একটি বৈশিষ্ট্য। তারা প্রথমেই হার মেনে নেয় এবং পরাজয়ে ভুগতে থাকে। “আমাকে দিয়ে কিছু হবে না” বা “অন্য সবাই আমার চেয়ে সবদিক দিয়েই ভালো”- এ ধরনের ভাবনায় তারা সবসময় নিমজ্জিত থাকে।

এরা নিজেদের যেকোনো একটি দুর্বলতাকে জীবন সব কমতি বা সমস্যার কেন্দ্রবিন্দু ভেবে বসে থাকে। তারা মনে করে এই জায়গাটি ঠিক হয়ে গেলেই জীবনের সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। এবং অদ্ভুত ব্যাপার এই যে, তারা এর সমাধানের পথে কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করে না।

তুমি চেষ্টা করতে যাবে,কারণ ডিপ ইন্সপাইরেশনাল গল্পগুলো তোমাকে চেষ্টা করতে নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু দেখবা,যা হয়েছিল বিল গেটস এর সাথে,আইন্সটাইনের সাথে,তোমার সাথে তা হচ্ছে না। তুমি পড়তে চাচ্ছ,থিওরীগুলো তোমার মাথায় ঢুকছে না। অন্যরা চট করে বুঝে ফেলছে,তুমি অসহায়। তুমি ক্রিয়েটিভ কিছুতে মন দিতে চাও,তুমি ছবি আঁকতে চাও,গান গাইতে চাও,লিখতে চাও…দেখবা,মানুষজন ইতোমধ্যে তোমার চেয়ে যোজন দূর এগিয়ে গেছে। শত চেষ্টা করেও তুমি তাদের লেভেলে যেতে পারছ না। নিজেকে তখন মনে হবে মেধাহীন,ক্ষুদ্রাকায়,তুচ্ছ…

হ্যা,তুমি সত্যিই অনেক তুচ্ছ। তুমি তুচ্ছ বৃষ্টির ফোঁটার মতো,তুচ্ছ ঘাসফড়িং এর মতো। তোমার জন্ম হয়েছে খুব সাধারণ কারো জন্য। খুব সাধারণ জীবন কাটাতে। যে জীবনে অত্যাশ্চর্য সাফল্যের উত্তেজনা নেই,ছিঁড়ে খাওয়া অ্যাম্বিশন নেই। অন্যকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাবার পরিকল্পনা নেই। তবে হ্যা,এই জীবনে শান্তি আছে। নিশ্চিন্ত সময় কাটানোর শান্তি, নির্দ্বিধায় বোকার মতো হেসে ফেলার শান্তি। মায়ের কাঁধে মাথা এলিয়ে কপাল থেকে ঘাম মুছে ফেলার শান্তি,তোমারই মতো সাধারণ কাউকে জড়িয়ে রেখে বুড়ো হওয়ার শান্তি।
.
‘তুমি এক্সেলেন্ট না’-হ্যা আমি এক্সেলেন্ট না। ‘তুমি সব পারো না’-হ্যা আমি পারি না। সবাইকে পারতে হবে এমন কথা নেই। সবাই আসরের মধ্যমণি হলে আসর জমে না,কাউকে কোলাহলের মধ্যে হারিয়ে যেতে হয়। নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাওয়ার আনন্দ নিতে হয়। নাহয় তুচ্ছ হল,নাহয় সাধারণই হল কিন্তু এটা তোমার সময়,তোমার জীবন। সবাই পারবে না, জীবনে “ইনফিরিওটি কমপ্লেক্স” এর পাল্লায় পড়ে এই একটা জীবন নষ্ট করে ফেললে সেটা আর ফিরে পাবে না। তাই যতটুকু পারো ততটুকুই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকো হয়তো তুমি যতটুকু সুখী আছো তোমার ওই টপার বন্ধুগুলো সেইটুকু সুখ নিয়ে বেচে নেই।

11 Comments

  1. Mahfuz

    লেখক এর সাথে ব্যক্তিগত সাক্ষাতকার এ, যা মনে হচ্ছে, ওনি নিজেই ইনফিরিওরিটি এ আক্রান্ত

    • Ashikur Jsman Rakib

      লেখক উচ্চমাত্রায় এই রোগে আক্রান্ত ! -_-

    • Ashikur Jsman Rakib

      হ্যা লেখক অতিমাত্রায় আক্রান্ত!

  2. rafiq

    কিভাবে একজন এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারে?

    • Ashikur Jsman Rakib

      সাধারণত মানসিক রোগের কারণ বোঝাটা দায় হয়ে পড়ে। মানসিক রোগ শারীরিক ও সামাজিক নানা কারণেই হতে পারে। এর চিকিৎসাও হতে হয় বায়ো-সাইকোস্যোসাল মডেল অনুযায়ী। অর্থাৎ মানসিক রোগের ক্ষেত্রে ওষুধ ও সাইকোথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে ওষুধ ও সাইকোথেরাপির সমন্বিত চিকিৎসায় সবচেয়ে ভালো ফলাফল লাভ করা যায়। তবে কিছু রোগে ওষুধের ভূমিকা মুখ্য আবার কিছু রোগে সাইকোথেরাপি অত্যাবশ্যকীয়। তবে চিকিৎসা গ্রহণ করার জন্য সাইকিয়াট্রিস্ট বা ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টের প্রশিক্ষণ সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিতে হবে।
      এ ছাড়া সমাজে ভালোভাবে পুনর্বাসনের জন্য স্যোসাল ওয়ার্কারের সহযোগিতার প্রয়োজন। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টটিউট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং সব বড় মেডিকেল কলেজে মনোরোগের চিকিৎসা পাওয়া যায়। এ ছাড়া ঢাকার মধ্যে ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতাল (মগবাজার), নাসিরুল্লাহ সাইকোথেরাপি ইউনিট (কলা ভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) ও দর্পনসহ (গুলশান) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাইকোথেরাপি নেওয়া যায়। ঢাকার বাইরে রাজশাহীতে প্যাসিল্ক (পদ্মা আবাসিক, ভদ্রা) এ সাইকোথেরাপি পাওয়া যায়।

      • Rakib

        আর ইনফিরিওটি থেকে মূলত রক্ষা পাওয়া যায় নিজে একটু সচেতনতা এর সাহায্য। গতানুতিকভাবে আমরা সবাই যা পাই তা থেকে অনেক বেশি আশা করি। যতটুকু করছি বা তার থেকে যতটুকু বেনিফিট পাচ্ছি এ নিয়ে সন্তুষ্ঠ থাকতে পারলে ইনশাআল্লাহ এ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে

    • Rakib

      আর ইনফিরিওটি থেকে মূলত রক্ষা পাওয়া যায় নিজে একটু সচেতনতা এর সাহায্য। গতানুতিকভাবে আমরা সবাই যা পাই তা থেকে অনেক বেশি আশা করি। যতটুকু করছি বা তার থেকে যতটুকু বেনিফিট পাচ্ছি এ নিয়ে সন্তুষ্ঠ থাকতে পারলে ইনশাআল্লাহ এ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে

  3. lima

    কিভাবে বের হওয়া যায় এই রোগ থেকে?

    • Ashikur Jsman Rakib

      মানসিক রোগ শারীরিক ও সামাজিক নানা কারণেই হতে পারে। এর চিকিৎসাও হতে হয় বায়ো-সাইকোস্যোসাল মডেল অনুযায়ী। অর্থাৎ মানসিক রোগের ক্ষেত্রে ওষুধ ও সাইকোথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে ওষুধ ও সাইকোথেরাপির সমন্বিত চিকিৎসায় সবচেয়ে ভালো ফলাফল লাভ করা যায়। তবে কিছু রোগে ওষুধের ভূমিকা মুখ্য আবার কিছু রোগে সাইকোথেরাপি অত্যাবশ্যকীয়। তবে চিকিৎসা গ্রহণ করার জন্য সাইকিয়াট্রিস্ট বা ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টের প্রশিক্ষণ সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিতে হবে।
      এ ছাড়া সমাজে ভালোভাবে পুনর্বাসনের জন্য স্যোসাল ওয়ার্কারের সহযোগিতার প্রয়োজন। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টটিউট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং সব বড় মেডিকেল কলেজে মনোরোগের চিকিৎসা পাওয়া যায়। এ ছাড়া ঢাকার মধ্যে ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতাল (মগবাজার), নাসিরুল্লাহ সাইকোথেরাপি ইউনিট (কলা ভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) ও দর্পনসহ (গুলশান) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাইকোথেরাপি নেওয়া যায়। ঢাকার বাইরে রাজশাহীতে প্যাসিল্ক (পদ্মা আবাসিক, ভদ্রা) এ সাইকোথেরাপি পাওয়া যায়।

  4. Barnali

    I am suffering from this.How can I get rid of this? Is there any way other than medication???

    • Ashikur Jsman Rakib

      আর ইনফিরিওটি থেকে মূলত রক্ষা পাওয়া যায় নিজে একটু সচেতনতা এর সাহায্য। ডিপ্রেশন কমান! গতানুতিকভাবে আমরা সবাই যা পাই তা থেকে অনেক বেশি আশা করি। যতটুকু করছি বা তার থেকে যতটুকু বেনিফিট পাচ্ছি এ নিয়ে সন্তুষ্ঠ থাকতে পারলে ইনশাআল্লাহ এ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may use these HTML tags and attributes: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>