বুদ্ধিমত্তার অপর নামঃ ডলফিন

তোমরা তো জানোই পৃথিবীতে সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী হচ্ছে মানুষ। কিন্তু মানুষের পর সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী কোনটি? তা কি তোমরা জানো? একেক জনের উত্তর হয়তবা একেক রকম হবে । কিন্তু মজার ব্যাপার হল গবেষণার ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, মানুষের পর ডলফিনই একমাত্র পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী! এ নিয়ে অবশ্য বিতর্কও আছে। সে তর্কে আমরা না-ই গেলাম, কিন্তু নিঃসন্দেহে পানিতে দাপাদাপি করে বেড়ানো প্রাণীটি বেশ মজার! আসো আজ আমরা মজার প্রাণী ডলফিন নিয়ে গল্প করবো।

প্রথমেই বলে রাখা ভাল ডলফিন কিন্তু মাছ না ; এরা স্তন্যপায়ী প্রাণী । তারা মাছের মত পানিতে বসবাস করে, সাঁতার কাটে কিন্তু মাছের মত ডিম পাড়ে না। মা ডলফিন ছোট্ট বাচ্চা ডলফিনের জন্ম দেয়। সেই ছোট্ট ডলফিন মায়ের দুধ খেয়ে বড় হতে থাকে। আর এজন্যই এদের স্তন্যপায়ী বলা হয়ে থাকে। অনেকে ধারণা করেন, একসময় ডলফিন ডাঙায় বাস করত। পরবর্তী সময়ে ডাঙায় প্রতিকূল পরিবেশ আর জলে খাদ্যের প্রাচুর্য দেখে এরা পানির সঙ্গেই খাপ খাইয়ে নিয়েছে। যদিও এর পেছনে খুব একটা যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই।

প্রজাতি ও অবস্থান ঃ

পৃথিবীতে  ১৭টি গণে প্রায় ৪০টি প্রজাতির ডলফিন রয়েছে। সামুদ্রিক ডলফিন প্রজাতির সংখ্যা ৩২। স্বাদুপানির প্রজাতি ৫টি। এরা দক্ষিণ আমেরিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার নদীর বাসিন্দা। সকল প্রজাতির মধ্যে বোতলমুখো ডলফিন, গোলাপি ডলফিন, স্পিনার ডলফিন ও পরপয়েজ উল্লেখযোগ্য। ৪ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৪০ কেজি ওজন থেকে শুরু করে ৩০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১০ টন ওজন পর্যন্ত বিভিন্ন আকারের ডলফিন দেখা যায়। সবচেয়ে বড় ডলফিনের নাম হলো কিলার হোয়েল । এদের আবার ওরাকাস  নামেই জানে অনেকে। একটি কিলার হোয়েল  প্রায় ৩২ ফুট লম্বা হয় এবং তার ওজন হয় প্রায় ৫৪০০ কিলোগ্রাম। আর সবচেয়ে  ছোট ডলফিনের নাম তাচুসি  ডলফিন। এদের আকার প্রায় চার ফুট আর  ওজন প্রায় ১১০ পাউন্ড হয়।

পৃথিবীজুড়ে সব স্থানেই ডলফিন দেখা যায়, বিশেষ করে মহীসোপানের কাছের অগভীর সমুদ্রে এদের অবস্থান বেশি। সাধারণ ডলফিন  এবং বোটলনোজ  বা  বোতলের মতো  ডলফিন এমন  এক ধরনের ডলফিন যাদের চিড়িয়াখানা বা এ্যাকুরিয়ামে দেখা যায়। সমুদ্রে স্পিনার ডলফিন  বলে এক ধরনের ডলফিন দেখা যায়, যারা সমুদ্রে বাতাসের উপর লাফিয়ে ডিগবাজী দেয়।
বেশীর ভাগ ডলফিন সমুদ্রে বাস করে এবং তাদের সারা পৃথিবীর প্রায় সব জায়গায় পাওয়া যায়। বেশ কিছু ডলফিন আছে যারা নদীতে বাস করে । নদীর পানি লবণাক্ত নয়। তাই এখানে যারা বাস করে তাদের  রিভার ডলফিন  বলে।

শারীরিক গঠনঃ

ডলফিন অর্থ ঠোঁট। এদের নাক ঠোঁটের মতো, শরীর লম্বাটে। ডলফিন নামের একটি মাছও আছে। লম্বা গড়নের এই মাছটি নীল রঙের, তাতে উজ্জ্বল সোনালি, সবুজ ও বেগুনী আভা আছে। ওজন ৩০ কেজি, লম্বা প্রায় ২ মিটার। একা কিংবা পালে থাকে।

ডলফিনের দেহের সামনের দিকে দুটি ডানার মতো অংশ আছে। একে বলে ফ্লিপার। পানির মধ্যে চলাফেরা আর ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য তারা এই ফ্লিপারকে ব্যবহার করে। বেশীর ভাগ ডলফিনের  পেছনে একটা লম্বা পাখনা আছে। অধিকাংশ ডলফিনের গায়ের রঙ কালো, বাদামি অথবা ধুসর রঙের । তার এই লম্বা লেজটিকে বলে ফ্লুকস। সে তার এই ফ্লুকস দিয়ে পানিতে ঢেউ তুলে সাঁতার কাটে। পানির মধ্যে যতগুলো প্রাণী আছে তাদের মধ্যে সবেচেয়ে দ্রুতগামী প্রাণী এই ডলফিন।  শরীর গরম রাখার জন্য ডলফিনের চামড়ার নীচে একটা চর্বির স্তর থাকে।  এর নাম ব্লবার। এই চর্বির স্তর তার শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এমনকি ঠাণ্ডা পানিতেও এই চর্বির কারণে তার শরীরে তাপ ঠিক থাকে।

ডলফিনের খাবার-দাবারঃ

ডলফিন দাঁত দিয়ে মাছ, অক্টোপাস, সমুদ্রের কচ্ছপ এবং পাখি প্রভৃতি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। যাকে আমরা কিলার হোয়েল বা খুনে তিমি বলছি সে পানিতে অন্য যে সব স্তন্যপায়ি প্রানী আছে তাদের খেয়ে ফেলে । এদের ২৫০ টার মতো ধারালো দাত রয়েছে। এই দাঁত দিয়ে এরা শিকার ধরে খেয়ে থাকে।

ডলফিনের শ্বাসগ্রহণঃ

সব স্তন্যপায়ীর মতো ডলফিন ফুসফুস দিয়ে শ্বাস নেয়। তার মাথায় একটা ফুটো আছে, যাকে বলে বেল্গাহোল (মতান্তরে ব্লোহোল) এই দিয়ে সে নিঃশ্বাস বের করে দিয়ে আবার নিঃশ্বাস নেয় ।একবার নিঃশ্বাস নিয়ে সে পানির ভেতরে চলে যায়।অনেক ডলফিন পানিতে  যে  লাফ  দেয়  তাতে  সে  ২০০ ফুট  পানির  গভীরে  চলে  যেতে  পারে।  নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য ডলফিনকে এক থেকে দুই মিনিট পরপর পানি থেকে বের হয়ে আসতে হয়। নিঃশ্বাস নেওয়া ও তা বের করে দেওয়ার জন্য তাকে পানি থেকে বের হয়ে আসতে হয়। শ্বাসগ্রহণের সুবিধার কথা চিন্তা করেই ডলফিন সবসময় সমুদ্রের উপরের উপরের স্তরে থাকে।

এখন মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে যখন ডলফিন ঘুমিয়ে পড়ে তখন সে কিভাবে শ্বাস নিবে? মানুষের শ্বাসক্রিয়া স্বয়ংক্রিয় । তাই আমরা ঘুমালেও স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে আমাদের ফুসফুস সচল থাকে। কিন্তু ডলফিন তো পানিতে থাকে ! কিন্তু ডলফিনের শ্বাসক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়  নয় । সে কিভাবে করে ঘুমন্ত অবস্থায় শ্বাস নেয় !

ডলফিনের ঘুমের এ বিষয়টি বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন ইলেকট্রো এনসেফালোগ্রাফির (ইইজি) মাধ্যমে। এই পদ্ধতিতে ডলফিনের মাথায় তার লাগিয়ে মস্তিষ্কে বিদ্যুতের মাত্রা নির্ণয় করা হয়। এভাবে প্রাপ্ত ইইজির ফলাফলে দেখা গেছে ঘুমের সময় ডলফিনের অর্ধেক মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকে।

ডলফিনের মস্তিষ্কের অর্ধেক কিছুক্ষণ ঘুমায়, বাকি অর্ধেক ঘুমায় পরের পালায়। তাদের অন্তত অর্ধেক মস্তিষ্ক সবসময় জেগে থাকে, তাই তারা শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য ঘুমের মধ্যেও প্রয়োজনীয় সময়ে ভেসে ওঠে। মাঝে-মধ্যে ডলফিনকে পানির প্রায় উপরিতলে হালকাভাবে নিস্তেজ অবস্থায় ভেসে থাকতে এবং চক্রাকারে ঘুরতে দেখা যায়। এটাই তাদের ঘুমন্ত অবস্থা।

মানুষের সাথে সাদৃশ্যঃ

 মানুষের সাথে যদি কোনো প্রাণীর সবচেয়ে বেশি সাদৃশ্য থাকে, তাহলে সেই প্রাণী মনে হয় ডলফিন। গবেষকরা নিশ্চিত করেছেন, সামাজিক সেতুবন্ধনের অংশ হিসেবে সামুদ্রিক এ স্তন্যপায়ী প্রাণী তাদের মধ্যে কে শত্রু আর কে মিত্র-তা সনাক্ত করতে নিজেরা স্বতন্ত্র নাম ব্যবহার করে থাকে।

 

মানুষের মত ডলফিনদের কথা বলাঃ

ডলফিন শব্দ তৈরি করতে পারে। একে ক্লিক সাউন্ড বলে। গভীর সমুদ্রে কাদাযুক্ত স্থানে যেখানে খুব অন্ধকার সেখানে ডলফিন এই সাউন্ড সৃষ্টি করে তার প্রতিধ্বনির শুনে অনুমান করতে পারে তার সামনে কোন বাঁধা আছে কি নেই। কিছু  কিছু ডলফিনের প্রজাতি সুর করে গান করতে পারে।

অস্ট্রেলিয়ার শার্ক বে-তে গবেষণা চালিয়ে একদল গবেষক এ তথ্য জানিয়েছেন। পানির নিচে মাইক্রোফোন রেখে  ডলফিনের বিভিন্ন সঙ্কেত পর্যালোচনা করে তারা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হন।

গবেষণার জন্য গবেষকরা ১৭টি বটল নোজ ডলফিনের (নাক দেখতে বোতলের মতো বলে এদের নামই হলো  বটলনোজ ডলফিন) রেকর্ড সংগ্রহ করেন। এ শ্রেণির ডলফিন নিজেদের মধ্যে জোট বাধতে বেশ পরিচিত।

টিয়া, বাদুর, হাতি এমনকি বনমানুষ নিজেরা এক ধরনের শব্দ তৈরি করতে সক্ষম যা তারা যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। গবেষণায় বলা হচ্ছে, ডলফিনও শিস ধ্বনি সঙ্কেত ব্যবহার করে নিজেরা যোগাযোগ রক্ষা করে চলে।স্টেফাইন কিংয়ের নেতৃত্ব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষক দলটি বলছে, ডলফিনের এ স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যটি সামুদ্রিক অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে বিরল। বিবর্তনবাদী জীববিজ্ঞানীরা চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদসংস্থা সিনহুয়া কে জানান, ডলফিনের দু’টি দল যখন মুখোমুখি হয়, তখন তারা শিস দিয়ে থাকে। এ শিস ধ্বনির সাহায্যে তারা জানতে পারে কে উপস্থিত হলো আর কে হলো না।

জীববিজ্ঞানীরা বলেছেন, ডলফিন অন্য সামুদ্রিক প্রাণীর যোগাযোগের বিশেষ শব্দ বা সঙ্কেত নকল করতে পারে। আর তারা এটি করে থাকে যখন এসব প্রাণী তাদের আশপাশে থাকে না। তবে তারা এটি কেন করে, তা জানাতে পারেননি গবেষকরা।

কেয়ারিংঃ

ডলফিনরা খুব কেয়ারিং। যখন কারো সাহায্যের প্রয়োজন হয় সে সাহায্যে আবেদন করে ডাক দেয়। তার এই ডাক যারাই শুনতে পায় তারাই ছুটে আসে সাহায্য করার জন্য। যখন কোন ডলফিন আহত হয় বা অসুস্থ হয় তখন সঙ্গীরা তাকে ভেসে থাকতে সহায়তা করে যাতে সে ডুবে না যায়। এই সহযোগিতা অনেক ডলফিন মানুষকেও করেছে। এই ধরণের উদাহরণ আছে অনেক, জাহাজডুবির পর ডলফিনরা দলবেঁধে মানুষদের উদ্ধার করে পাড়ে তুলে দিয়েছে।

সামাজিক প্রাণী ডলফিন

সামুদ্রিক প্রাণীদের মাঝে মানুষের খুব প্রিয় একটি প্রাণী হল ডলফিন। এর বুদ্ধি আর মিশুক আচরণের ভক্ত সবাই। এরা মানুষের কাছাকাছি থাকতে খুব পছন্দ করে। তাই ডলফিনকে মানুষের কল্যাণের কাজে লাগানোর জন্য সকল চেষ্টাই করছেন বিজ্ঞানীরা। ডলফিন একটি বুদ্ধিমান প্রাণী। প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে বানরের মত এরাও বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে পারে। এমনকি সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় দেখা গেছে বয়স্ক ডলফিন থেকে বাচ্চা ডলফিন জ্ঞান আহরণ করতে পারে, ঠিক যেমনটা মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায়।


সাম্প্রতিককালে ডলফিনদেরকে ব্যবহার করা হচ্ছে মনোচিকিৎসা দেওয়ার কাজে। অত্যন্ত মিশুক এবং চঞ্চল এই প্রাণীটি মানসিক প্রতিবন্ধকতা, “ডাউন সিনড্রোম” এবং অটিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সেরে উঠতে সাহায্য করে। মিলিটারি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ডলফিনদেরকে। হ্যাঁ, তোমরা অবাক হলেও ঘটনা ঠিকই। ডুবে যাওয়া জাহাজের খোঁজ করার জন্য মানুষকে উদ্ধার করা জন্য এদের ব্যবহার করা হয়। সদা চলমান এই প্রাণীটিকে চলমান ক্যামেরা হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এদের চলাচল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সীমান্ত পাহারার কাজও করছে নৌবাহিনী।

বাংলাদেশে গড়ে উঠেছে ডলফিনের অভয়াশ্রমঃ

বিরল ইরাবতী সহ সাত প্রজাতির প্রায় নয় হাজার ডলফিনের বিশাল অভয়াশ্রম এখন বাংলাদেশে। পাঁচ বছর আগেও বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন এলাকায় এ ডলফিনের আবাসস্থলের বিষয়টি অনেকের কাছেই ছিল অজানা। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে প্রাণী-প্রকৃতি প্রেমী ও গবেষকদের কাছে ডলফিনের অভয়াশ্রম হিসেবে পরিচিত নাম এটি। শুধু ডলফিনের কারণেই প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক ইকো-ট্যুরিস্ট আসেন এখানে। জানা গেছে, বিশ্বঐতিহ্য ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের নদীসহ ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত গভীর সমুদ্রে রয়েছে পাঁচ হাজার ৪০০ ইরাবতী ডলফিন । আরও ছয় প্রজাতি হলো ইন্দো-প্যাসিফিক হাম্প ব্যাক্ট, বটল নোস, ফিনলেজ, স্পিনার, স্পটেড গংগেজ রিভার ডলফিন । সমুদ্রের এ অংশে ব্রাইডস হোয়েল নামে অনন্য প্রজাতির এক তিমিরও আবাস।

বাংলাদেশে পাওয়া যায় ডলফিন এর এই প্রজাতি

২০০৯ সালের জুনের আগে ইরাবতী ডলফিন  ছিল বিশ্বের বিলুপ্ত প্রজাতির তালিকায়। ওয়ার্ল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটি, এনওয়াই ও বাংলাদেশ সিটাসিন ডাইভারসিটি প্রজেক্টের দেশি-বিদেশি প্রাণী বিশেষজ্ঞরা পূর্ব সুন্দরবনসহ বঙ্গোপসাগরে ব্যাপক অনুসন্ধান চালান। তারা ইরাবতী ছাড়াও ছয় প্রজাতির ডলফিন ও এক প্রজাতির তিমির সন্ধান পান। বিশ্ব থেকে হারিয়ে যেতে বসা ইরাবতীর সন্ধান বাংলাদেশে পাওয়ার ঘটনা তখন প্রাণিবিদদের মধ্যে তুমুল আলোচিত হয়। ওয়ার্ল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটির ‘বিলুপ্ত’ প্রজাতির তালিকা থেকে ইরাবতী রাতারাতি উঠে আসে ‘বিলুপ্তপ্রায়’ তালিকায়। গবেষকরা বাংলাদেশের এই জলসীমার ১৩টি স্পটে ৪০টি হাম্প ব্যাক্ট ডলফিন পান। উপকূল থেকে ১১ মাইলে সুন্দরবনের মধ্যে এক হাজার ৩৮২টি ফিনলেস ও এক হাজার বটল নোস ডলফিনের সন্ধান মেলে। ১৪টি স্পটে পাওয়া যায় আড়াই শতাধিক স্পিনার ডলফিন । আট স্পটে ৮০০ স্পটেড ডলফিন ও ১৩টি স্পটে ২২৫টি গংগেজ রিভার ডলফিনের দেখা মেলে। ব্রাইডস হোয়েল পাওয়া যায় অন্তত ৫০টি। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় ২০১২ সালে সুন্দরবনের এই এলাকার ৩১ দশমিক ৪ কিলোমিটার নদী ও শাখা নদীকে ডলফিনের অভয়াশ্রম ঘোষণা করে। ডলফিন বাঁচাতে এখানে ফাঁস জাল, কারেন্ট জাল, নেট জাল, বেন্দি জাল ও জাল দিয়ে রেণু পোনা মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়।

কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হলো, একদিকে যেমন বাংলাদেশের মত পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এদের অভয়াশ্রম গড়ে উঠছে তেমনি মজার আর  উপকারী  এই  প্রাণীটির  সংখ্যা দিনে দিনে কমেও যাচ্ছে । পানিদূষণ, খাদ্যাভাব এমনকি প্রতি বছর বড় বড়  জাহাজের  ধাক্কায়ও  প্রচুর ডলফিন মারা  যাচ্ছে ।  এছাড়াও ডলফিনদের প্রাকৃতিক বসবাসের এলাকাগুলোতে মানুষের অনধিকার প্রবেশের কারণে ডলফিনদের অস্তিত্ব হয়ে পড়ছে বিপন্ন। মানুষের হস্তক্ষেপের  ফলে কমে আসছে  এদের বাসস্থান  এবং খাদ্য সংগ্রহের এলাকা, পানি দূষণের ফলে এরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তাছাড়া অসাধু  লোকদের  অবৈধ শিকারের জন্য ডলফিন দিনে দিনে সংখ্যায় কমছে। যা খুবই উদ্বেগজনক !

Comments are closed.