চালু হলো পৃথিবীর সবথেকে বৃহৎ রেডিও-টেলিস্কোপ

কয়েক বছরের নির্মাণ কাজ শেষে সচল হলো চীনের তৈরি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রেডিও টেলিস্কোপ। টেলিস্কোপটির নাম হচ্ছে FAST(Five hundred meter Aperture Spherical Radio Telescope). পূর্বে সবথেকে বড় রেডিও ডিশ শেপ টেলিস্কোপ ছিল Puerto Rico এর Arecibo Observatory টেলিস্কোপ যার দৈর্ঘ্য ছিল ৩০৫ মিটার। কিন্তু FAST সে তুলনায় অধিকতর বৃহৎ এবং তথ্য গ্রহণ ক্ষমতাও দ্বিগুণ।

FAST নির্মিত ৪৪৫০ টুকরো আলাদা আলাদা প্যানেল দ্বারা। এটি চীনের দক্ষিণ পশ্চিমে Guizhou প্রদেশে অবস্থিত। ৫০০ মিটার পেয়ালা আকৃতির এই টেলিস্কোপ একটা নির্দিষ্ট অবস্থানে স্থির করা যা কোনোদিকে নাড়ানো যায়না। আবার এটি যে শুধুই পৃথিবীর সবচেয়ে প্রখর সেন্সরযুক্ত টেলিস্কোপ তা নয় বরং সবচেয়ে নিঁখুত filled-Aperture রেডিও টেলিস্কোপ। যদিও রাশিয়ার Ratan-600 ও অত্যন্ত শক্তিশালী, কিন্তু তা ভিন্ন আকৃতির এবং FAST এর মত নিঁখুত নয়।
তবে এখনও একটা ধাপ বাকি সব পরীক্ষা নিরীক্ষার। এই মাসের শেষে FAST তাঁর শেষ টেস্ট এর মধ্য দিয়ে যাবে। FAST এর প্রধান বিজ্ঞানী এবং চীনের National Astronomical Observatories of Chinese Academy of Sciences (NAOC) এর তত্ত্বাবধায়ক Li Di মনে করেন এই টেস্ট এবং রিভিউ এ ভালো ফলাফল পেলেই তাঁরা FAST কে Construction Project থেকে Full Active Project এ ঘোষণা করবেন। এর তত্ত্বাবধান ও দেখভাল করবে NAOC। FAST চাইনিজ জ্যোতির্বিজ্ঞানিদের জন্য উন্মুক্ত হয়েছিল এই বছরের এপ্রিল থেকে। তবে জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি পেয়ে গেলে তা পুরো বিশ্বের বিজ্ঞানীদের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যাবে। Li খুবই আশাবাদ ব্যক্ত করেন যখন FAST ব্যবহারের নীতিমালা আসে। ঊনি বলেন যে এটি হবে একটি মুক্ত আকাশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। শুধু চীন নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও থাকছে FAST কে ঘিরে গবেষণার সুযোগ। যদিও FAST এর নির্মাণে সম্পূর্ণ ফান্ডিং দিয়েছে চীন সরকার। তাছাড়াও Australia’s Commonwealth Scientific and Industrial Research Organization ও সমন্বয়ে কাজ করেছে। তবে চীন সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী এটি হবে সম্পূর্ণ বিশ্বের জন্য উন্মুক্ত। সবাই FAST এর সুবিধা নিতে পারবে।
রেডিও টেলিস্কোপের ব্যবহার শুরু হয় ১৯৩৭ সাল থেকেই যখন বিজ্ঞানী Grote Reber তাঁর বাড়ির পেছনে ৯ মিটার উপবৃত্তাকার রেডিও টেলিস্কোপ নির্মাণ করেন। বর্তমানে রেডিও টেলিস্কোপ গুলো বিশাল ও অতিকায় যেমন FAST এবং Arecibo
রেডিও টেলিস্কোপ অনেক কাজের জন্য ব্যবহৃত হলেও মূলত এদের প্রধান কাজ Pulser থেকে মহাজাগতিক বিকিরণগুলো চিহ্নিত করা। একটা Pulser তখনই গঠিত হয় যখন একটি নক্ষত্র ঘূর্ণায়মান অবস্থায় নিউট্রন তারায় পতিত হয়। যেহেতু ঘূর্ণায়মান থাকে, তাই নিউট্রন তারা অতিমাত্রায় তীব্র বিকিরণ নিঃসৃত করে যা সাধারণ রেডিও টেলিস্কোপ দ্বারা ডিটেক্ট করা যায়না। কিন্তু FAST এর মাধ্যমে এই অতিমাত্রিক বিকিরণ সহজেই চিহ্নিত করা যাবে এবং বিজ্ঞানীরা Gravitational wave এর মতো ঘটনার আরো বিস্তর ধারণা পাবেন। অনেক রেডিও তরঙ্গ আছে যেগুলো আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির বাহিরে থেকে আসে। পৃথিবীতে আসতে আসতে এসব সিগনাল এতোটাই দুর্বল হয় যে তা ডিটেক্ট করা রেডিও টেলিস্কোপ গুলোর জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। আশা করা যাচ্ছে FAST এই অতিমাত্রিক বিকিরণগুলো শক্তিশালী সেন্সর দিয়ে ডিটেক্ট করতে পারবে।


FAST যদিও এখন তাঁর শেষ রিভিউ এবং টেস্টিং পর্যায়ে আছে তবুও বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে একে ব্যবহার করে ১৩৮ টা পালসারের সন্ধান পেয়ে গেছেন যা আসলেই অনেক সন্তোষজনক ফলাফল। তাছাড়াও বিজ্ঞানীরা ব্যক্ত করছেন FAST এর শক্তি ব্যবহার করে তাঁরা মহাবিশ্বে হাইড্রোজেনের উপস্থিতি নির্ণয় করবেন। কারণ হাইড্রোজেন হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম এক পুরনো রাসায়নিক মৌল যার উপস্থিতি তে মহাজাগতিক বস্তু তথা গ্যালাক্সি, নক্ষত্র ইত্যাদির গঠন, বিবর্তন এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে। FAST আগামী ৫ বছরে দুটি মহাকাশ জরিপ করবে এবং ডাটা বিশ্লেষণ করতে সময় লাগবে আরো ১০ বছর। ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের রিসার্চ প্রপোজাল গ্রহণ করা শুরু করেছে NAOC। হয়ত অদূর ভবিষ্যতে FAST কে ঘিরেই জেগে উঠবে নতুন বিপ্লবের, সমাধান হবে মহাকাশ নিয়ে গড়ে উঠা অসংখ্য রহস্যের…

Comments are closed.