আজ এবার বইমেলায় প্রকাশিত একটা বিজ্ঞান বইয়ের রিভিউ নিয়ে হাজির হচ্ছি। বইটা আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। এটাকে সচেতনতা মূলক বইও বলা যায়। তো দেখা যাক রিভিউটা।
বইয়ের নাম: ভঙ্গুর পৃথিবী ছেড়ে নক্ষত্রের পানে
লেখক: ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী
প্রকাশকঃ প্রথমা প্রকাশন
ISBN 978 984 91201 0 0
পৃথিবীই আমাদের একমাত্র বাসস্থান। এখানেই আমাদের আবির্ভাব আর এখানেই আমাদের বিকশিত হওয়া। এই পৃথিবীটা কতই না আদর যত্ন করে আমাদের লালন করেছে তার গর্ভে, থাকতে দিয়েছে, খেতে দিয়েছে, তার সৌন্দর্য উপভোগ করতে দিয়েছে। কিন্তু আমরা অকৃতজ্ঞের মত নির্মম ভাবে আমাদের এই উপকারী পৃথিবীর অপকার করে যাচ্ছি। আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবন যাপনে ভোগ বিলাসিতা আনার জন্য ধ্বংস করছি পৃথিবীর পরিবেশ। এতে কিন্তু আমাদেরই ক্ষতি হচ্ছে। আমরা ধীরে ধীরে পৃথিবীকে করে যাচ্ছি বাসের অযোগ্য। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রেখে যাচ্ছি একটা দগ্ধ গ্রহ, যেখানে চারিদিকে শুধু আবর্জনা। এতে করে কিন্তু আমাদের ভবিষ্যতের অস্তিত্ব আশঙ্কার মধ্যে পরে যাচ্ছে। সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে বিলুপ্তির।
মানব সৃষ্টি এসব সমস্যা ছাড়া পৃথিবী বাসের অযোগ্য হবার জন্য আরও অনেক কাড়নই আছে সেসব এই বইতে বিস্তারিত বলা হয়েছে করেছেন। পৃথিবীতে ৫৪ কোটি বছর আগে বহুকোষী জীবের আবির্ভাব হয়েছে। তখন থেকে প্রাকৃতিক বিভিন্ন কাড়নে হয়ে এসেছে অনেক গন বিলুপ্তি। প্রায় একেবারে সমূলে উৎপাটিত হয়েছে প্রাণ। কি কাড়নে,কখন এবং কিভাবে সেসব গন বিলুপ্তি হয়েছে তার বর্ণনা করা হয়েছে গল্পের মত করে। কালের আবর্তনে বিভিন্ন সভ্যতার ধ্বংসের কাড়ন, এছাড়াও কিভাবে পৃথিবী বাসের অযোগ্য হয়ে যেতে পারে এবং এর থেকে নিস্তারের উপায় কি তার সমাধান এখানে দেখান হয়েছে। প্রাণ উপযোগী গ্রহ, গ্রহের আয়ুষ্কাল, গোল্ডিলক্স গ্রহের সম্ভাবনা এবং সেটি কি তার বিস্তারিত বিবরণ জানা যাবে বইয়ে। ভবিষ্যতে কোন একসময় হয়ত আমাদের এই পৃথিবী ছাড়তেই হবে এমনকি এই সৌরজগতও ছাড়তে হবে এবং ছাড়ার পর আমরা কোথায় যেতে পারি এবং কিভাবে, কোন ধরনের প্রযুক্তি দরকার তার একটি সুন্দর উপস্থাপনা রয়েছে বইটিতে। মূলত এই বইয়ের মূল উদ্দেশ্য হল পৃথিবীর প্রতি আমাদের সহনশীল হওয়া এবং এর যত্ন করা। কাড়ন আমাদের এই পৃথিবীটা অত্যন্ত সংবেদনশীল একটা আবদ্ধ সিস্টেম। তাই অনেক সহজেই এটা আক্রান্ত হতে পারে। বইটা আমাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ভাবনার খোরাক যোগাবে। জানতে পারবেন পৃথিবীর অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ অবস্থার তুলনামূলক বিশ্লেষণ। এই বইয়ে উল্লেখিত লেখকের আমার ভালো লাগা সবচেয়ে সুন্দর উক্তিটি হল, “ঋণ করে হলেও ঘি দিয়ে ভাত খান”। আমার কাছে এই কথাটার তাৎপর্য অনেক গভীর।
বইয়ের বাহ্যিক দিক নিয়ে কিছু বলা দরকার। বইয়ের প্রচ্ছদ করেছেন সব্যসাচী হাজরা। প্রচ্ছদটা অসাধারণ লেগেছে আমার কাছে। এখানে পৃথিবীর ভঙ্গুরতা আর পাখি ধারা নক্ষত্র পানে যাত্রা বোঝানো হয়েছে। প্রথমা প্রকাশনী থেকে বের হওয়া এই বইটির পৃষ্ঠা গুলোও অনেক সুন্দর। বইয়ে উল্লেখিত বিভিন্ন ছবি সহজ ও সুন্দর বাংলায় বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। আর বিশেষ করে পুরো বইয়ে কোন প্রিন্ট মিস্টেক নেই। আশা করি সবাই বইটা পড়বেন আর আমাদের স্বাদের পৃথিবীটার কিছুটাও হলেও যত্ন নিতে আগ্রহী হবেন।