মঙ্গলগ্রহে জীবন: বসতি স্থাপনের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করলেন এলান মাস্ক

অসম্ভব পছন্দের একটা বিষয় নিয়ে লিখতে বসেছি । একটা করে নতুন দিন পার হচ্ছে আর মানবজাতি জ্ঞানে-বিজ্ঞানে নিজেদেরকেই অভাবনীয় কিছু উপহার দিয়ে চলেছে। সেই উনিশ শতকেই তারা চাঁদে পা দেওয়ার কাজটি সেরে ফেলেছে। আর এখন মঙ্গলে বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা করছে।
পুরো বিষয়টার পেছেনে দুটো প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। প্রথমটা আমেরিকার জাতীয় মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান — নাসা। আর দ্বিতীয়টা, আমেরিকার একটি প্রাইভেট মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান — স্পেসএক্স। প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান হলেও প্রতাপশালী প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স কাজে কর্মে প্রায়ই নাসার সমতুল্য কখনো বা নাসার চেয়ে একটু বেশিই এগিয়ে।

মঙ্গলে মানুষ পাঠাবার পরিকল্পনাটি তারাই সবার আগে শুরু করেছিল। এবং সবার আগে বাস্তবায়ন করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। স্পেসএক্স এর মূল কান্ডারী হলেন এলান মাস্ক নামের একজন মানুষ। যারা তাঁকে চেনেন না তারা জেনে রাখুন এলান মাস্ক হলেন বিশ্বখ্যাত গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘টেসলা মটরস’, বিশ্বব্যাপী টাকা পাঠানোর মাধ্যম ‘পে পাল’ এবং ‘স্পেসএক্স’ এর প্রতিষ্ঠাতা এবং মালিক। যদি কখনো সুযোগ হয় তাহলে তাঁর ওপর একটা আর্টিকেল লিখব। তাহলেই বুঝতে পারবেন এলান মাস্ক কি জিনিস!
যা হোক, মূল প্রসংগ হলো অতি সম্প্রতি এই বিলিওনার মঙ্গল গ্রহের ব্যাপারে তাঁর প্রজেক্ট ডিটেলস প্রকাশ করেছেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী ১০ বছরের মধ্যে মানুষকে তিনি একটি “মাল্টি প্লেনেটারি” বা বহুগ্রহবাসী প্রজাতিতে রূপ দিতে চান।তিনি মানুষকে মঙ্গলে পাঠাতে চান মানব সভ্যতার একটি “ব্যাকআপ ড্রাইভ” হিসাবে।
তাঁর এই সব পরিকল্পনা বিশদভাবে বর্ণনা করে সম্প্রতি তিনি একটি পেপার প্রকাশ করেন। সেই পেপারে তিনি মঙ্গল অভিযানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অবকাঠামোগত, আর্থিক এবং বৈজ্ঞানিক আউটলাইন তুলে ধরেছেন।
পেপার অনুযায়ী, মঙ্গল অভিযানের জন্য একবারে ১০০ যাত্রী বহন করতে সক্ষম এমন একটি দানবাকৃতির স্পেস ক্রাফট ডিজাইন করা হবে। “আমাদের প্রবল আকাঙ্ক্ষা। আমরা এমন একটা মহাকাশ যানের কথা বলছি যা ১৩০০০ টন ভার বইতে পারবে। আর এটার টেক অফের দৃশ্যটা নিশ্চয়ই দেখার মত হবে!” স্বপ্নে বিভোর কথা গুলো বলেন এলান মাস্ক।
চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো মঙ্গলে ১০ লাখ মানুষের এমন একটা কলোনি গড়ে তোলা, যা আত্মনির্ভরশীল এবং নিজে থেকেই টিকে থাকতে সক্ষম। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করলে এরকম একটা কলোনি গড়ে উঠতে ৪০ থেকে ১০০ বছর সময় লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি পুরো ব্যাপারটি ভেন চিত্রের দুটি নিশ্ছেদ্য বৃত্তের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। বৃত্ত দুটির একটি নির্দেশ করে কত জন মানুষ মঙ্গলে যেতে আগ্রহী আর অপরটি নির্দেশ করে কত জন মানুষ এই ধরনের কাজে অর্থ ব্যয় করতে ইচ্ছুক। হিসাব অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে যে এক জন মঙ্গল যাত্রীর পেছনে দশ বিলিওন ডলার পর্যন্ত খরচ হতে পারে।
তবে খরচের অংক টা দেখে হতাশ নন মাস্ক। তিনি মনে করেন মানুষকে “বহুগ্রহবাসী প্রজাতি” বানানোর প্রজেক্টে যত বেশি সাধারণ মানুষ অর্থ ব্যয় করতে আগ্রহী হবে জন প্রতি খরচ তত কমে যাবে। এবং জনপ্রতি এই খরচটা ১০ বিলিওন ডলার থেকে কমিয়ে একটি সাধারণ আমেরিকান বাড়ির মূল্যে নামিয়ে আনা সম্ভব বলে দাবী করেন এলান মাস্ক। তবে এই ব্যাপারটি নির্ভর করছে এই প্রজেক্টে বিশ্বব্যাপী সাধারণ মানুষের অংশ গ্রহণের ওপর।
মাস্কের মতে খরচটা অন্তত ৫০ লাখ গুন কমিয়ে আনতে হবে। যাতে করে সাধারণ মানুষ সহজেই মঙ্গলে বাস করার কথা ভাবতে পারে। খরচ কমাতে অসাধারণ কিছু পরিকল্পনা করে রেখেছেন মাস্ক। তার কিছু নমুনা এরকম, রকেট গুলোর পুন:ব্যাবহার বেশ বড় অংকের খরচ কমাতে সক্ষম হবে। আবার জ্বালানী ভরার জন্য বার বার পৃথিবীতে ল্যান্ড না করে অরবিটেই জ্বালানী ভরার ব্যাবস্থা করলেও অনেকাংশে খরচ কমবে।
“মঙ্গলে বাস করা একটা মজার ব্যাপার হবে। সেখানকার মাধ্যাকর্ষণ পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের মাত্র ৩৭ ভাগ। তাই আপনি সেখানে ভারী ভারী বস্তু অনায়াসেই তুলতে সক্ষম হবেন। এবং ইচ্ছে মত লাফিয়ে বেড়াতে পারবেন।” কথা গুলো বলেন মাস্ক। হিসেব অনুযায়ী পৃথিবী থেকে মঙ্গলে পৌঁছাতে ৩০ দিন এর মত সময় লাগতে পারে।
তাহলে কবে থেকে মঙ্গল অভিযানের কাজটা শুরু হচ্ছে? উত্তরে মাস্ক বলেন, “যত দ্রুত সম্ভব। সব কিছু ঠিক থাকলে হয়তো ২০২৩ এই কাজ শুরু হবে। আর সব কিছু খুব ভালোভাবে চললে ১০ বছর টাইমফ্রেমের মধ্যেই মঙ্গলে মানুষের একটা মোটামুটি কলোনির দেখা পাওয়া যাবে।”
এই ছিল মঙ্গল অভিযানের ব্যাপারে এলান মস্কের পুরো প্ল্যান। কে জানে আজ থেকে ৪০ বছর পর আমাদের গ্রান্ড সন দের সাথে দেখা করতে আমাদের হয়তো মঙ্গলে যেতে হবে। তত দিন বেঁচে থাকুন। ভালো থাকুন আর ভালো রাখুন।
প্রতিবেদকঃ তানভীর ইশরাক উৎস

Comments are closed.