ম্যাগলেভ ট্রেনঃ দি ট্রেন দ্যাট ফ্লোটস

A Maglev train car is just a box with magnets on the four corners।

আমরা মনেপ্রাণে এমন একটি ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম চাই যা আমাদের একাধারে গতি এবং নিরাপত্তা দিবে, আকাশপথে উড়োজাহাজ আমাদের সে চাহিদা প্রায় পূরণ করতে পেরেছে যদিওবা আকাশপথে উড্ডয়ন বেশ ঝুঁকিপূর্ণ ।

এতদিন ধরে আমরা দেখে আসছি, ট্রেন প্রচণ্ড শব্দ করে তার লোহার  ট্র্যাক এর উপর দিয়ে যায়, একে তো ইঞ্জিনের শব্দ তার উপর লোহার ট্র্যাকে লোহার চাকার ঘর্ষণ এর শব্দ। ভ্রমণ বিরক্তে পরিণত করতে এগুলোই যথেষ্ট। যদিওবা বাসজার্নির তুলনায় অনেক নিরাপদ , তবুও এর ধীর গতির(কতিপয় দেশের রেল) কারণে সেরকম জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি।

বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ইন্টারসিটি ট্রেনের গতি সর্বোচ্চ ৭৫-৮০কিমি, যেখানে বিদেশের ট্রেনের গড় গতি ই ২০০ কিমি এর উপরে। বাংলাদেশের এখনো এই ক্ষেত্রে অনেক কিছু করার আছে, স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরেও ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে ৫-৭ঘন্টা লাগে যেখানে চাইলেই  এই দূরত্ব ২ ঘণ্টায় পাড়ি দেওয়া সম্ভব।

হবে হয়তো সামনের দিনগুলোতে। আলো আসবে, ট্রেনের সুদিন ফিরে আসবে।

এবার ফিরে যাওয়া যাক আমাদের মূল টপিকে,

নিউইয়র্ক থেকে লস অ্যাঞ্জেলস কিভাবে প্লেন ছাড়া ৭ ঘণ্টায় যাব?

উত্তরঃ ম্যাগলেভ ট্রেনে গেলে।

ভাবতেই কেমন অবাক লাগে যে ট্রেনের গতি এতই বেশী হবে যে , অভাবনীয় দ্রুততার সাথে অনেক দূরের পথ নিমিষেই অতিক্রম করা যাবে।

এই স্বপ্নকে সত্যিকারের রূপ দিয়ে যাচ্ছে জাপানের তৈরি ম্যাগলেভ ট্রেন,নামটি নেওয়া হয়েছে ম্যাগনেটিক লেভিটেশন থেকে, যা চৌম্বক শক্তির  মাধ্যমে ট্রেনটিকে শূন্যে তুলে অবিশ্বাস্য দ্রুততার সাথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

বিশ্বের দ্রুততম ট্রেন এই ম্যাগ্লেভ ট্রেন যা কিনা ঘণ্টায় ৫৭৭কিমি বেগে ছুটে চলতে সক্ষম , এবং বাস্তবে এত গতি অর্জন করেছে।

বর্তমানে এই ম্যাগ্লেভ ট্রেন আমাদের উপর চাহিদাই সাফল্যের সহিত পূরণ করে যাচ্ছে, সেদিন খুব বেশী দূরে নয় যখন ট্রেন হবে সবচেয়ে নিরাপদ এবং দ্রুতগতির বাহন।

এই ম্যাগ্লেভ ট্রেন এর মূলনীতি হল চুম্বক দ্বারা একটি ভেহিকলকে তার ট্র্যাকে আটকে রাখা এবং তার মধ্যে গতির সঞ্চার ঘটানো।

সবচেয়ে মজার বিষয় হল এই ট্রেনের কোন ড্রাইভার নেই, কম্পিউটার অ্যালগরিদম ও নেটওয়ার্কের সাহায্যে ট্রেনটি কন্ট্রোল করা হয়ে থাকে।

একই রুটে চলাচল কারী দুটি ট্রেনের মাঝে কখনোই সংঘর্ষ ঘটবে না যেহেতু এরা একই গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে  ফলে পিছনের ট্রেনটি কখনোই সামনেই ট্রেন কে ধরতে পারবে না।

এক ধরনের লিনিয়ার ইন্ডাকশন মোটর দ্বারা এই কাজটি করা হয়, যদিওবা এই পদ্ধতিতে লোহার চাকা ব্যবহার করা হয়না তবুও অনেকগুলো বগি যুক্ত থাকার কারণে একে ট্রেনের তকমা দেওয়া হয়েছে।

যেহেতু এই প্রযুক্তিতে ঘর্ষনযোগ্য অংশের পরিমাণ অনেক কম, সে হিসেবে অধিক গতি, সাবলীলতা এবং অনেক কম নয়েজ পাওয়া যায় যা অভাবনীয়।

ম্যাগনেটিক গাইডিং ট্র্যাক থেকে প্রায় ১০মিলিমিটার উপরে থাকে ট্রেন টি। গাইড ওয়ে দ্বারাই ট্রেনটি সামনের দিকে এগিয়ে যায়। সেহেতু কোন ইঞ্জিন এর দরকার নেই, ম্যাগনেটিক ফিল্ডের পরিবর্তন এর দ্বারাই গতিশীলতা প্রাপ্ত হয় ট্রেনটি। যখনি ট্রেনটি চলতে শুরু করে , তখন থেকেই ম্যাগনেটিক ফিল্ডের পরিবর্তন শুরু হয় সুইচিং পদ্ধতিতে, এবং ট্রেন কে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া হয়।

ম্যাগনেটিক ইফেক্ট রাখার জন্য সম্পূর্ণ গাইড ওয়ে ইলেক্ট্রম্যাগনেট দ্বারা চালিত।

ফলে প্রচলিত ট্রেনের তুলনায় অনেক কম শক্তির দরকার পরে এই ধরনের ট্রেন এ।  সে শক্তির কিছু অংশ ব্যয় হয় ট্রেনটিকে শূন্যে ভাসিয়ে রাখতে, বাকি অংশ ব্যয় হয় বায়ুর ঘর্ষণ এড়াতে ।

প্রচলিত ট্রেনের সাথে এর পার্থক্য কোথায় ?

প্রচলিত ট্রেনে যেখানে লোহার চাকা এবং লোহার পাত লাগে, এখানে কোন চাকাই লাগে না, ইলেক্ট্রম্যানেটিক সাস্পেনশন দ্বারাই চলে।

প্রচলিত ট্রেনের মত ইঞ্জিন লাগে না যা কিনা বগি গুলো কে টেনে নিয়ে যায়, এখানে চৌম্বক ক্ষেত্র থেকেই প্রয়োজনীয় শক্তির সঞ্চার হয়ে থাকে।

প্রচলিত ট্রেনের তুলনায় নয়েজ খুবি কম, যা অনেক বড় একটি উপকারিতা।

এবার ম্যাগ্লেভ ট্র্যাক নিয়ে জানা যাকঃ

যে পথে ট্রেনটি চলে সেটিই ট্র্যাক। উভয় পাশের ট্র্যাকটি+ট্রেনের নিচের অংশ একে অপরকে বিকর্ষণ করে, যার ফলে ট্র্যাক থেকে প্রায় ০.৩৯ ইঞ্চি উপরে ট্রেনটি ভেসে থাকতে পারে, শূন্যে ভাসানোর পরে যথেষ্ট শক্তি উৎপাদন করতে হয় যা দ্বারা ট্রেনটিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

গাইডের ভিতরে থাকা কয়েলগুলো পরিবর্তনশীল তড়িৎ প্রবাহিত করা হয় যার ফলে একটা নির্দিষ্ট সময় পরে কয়েলের দিক/ পোলারিটি পরিবর্তিত হয়, এই পরিবর্তন এর ফলেই ট্রেনটি সামনের দিকে যেতে ধাক্কা অনুভব করে এবং এই ধাক্কার মান বাড়াতে পিছন থেকেও ম্যাগনেটিক ফিল্ড কাজ করে।

যেহেতু ট্রেনগুলো বাতাসের মধ্যে দিয়ে যায় সেহেতু বাতাসের বাধা ব্যতীত অন্য কোন বাধা কাজ করে না,  ফলে সহজেই ৩০০+ মাইল/ঘণ্টা গতি অর্জন করতে পারে, ফলে রোম থেকে প্যারিস যেতে মাত্র ২ ঘণ্টা লাগবে।

জার্মানি ও জাপান এই ক্ষেত্রে অগ্রদূত এর ভূমিকা পালন করছে, যদিওবা এদের মূল কার্যপ্রণালী একই কিন্তু গঠন আলাদা।

জার্মানি ব্যবহার করে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক সাস্পেনশন প্রযুক্তি, যেখানে ট্রেনের নিচে লাগানো ম্যাগনেট এবং গাইডওয়ের দ্বারা শূন্যে ভেসে থাকার কাজটি হয়ে থাকে।

এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি যাত্রীবাহী ট্রেন প্রায় ৩০০মাইল/ঘণ্টা গতি অর্জন করতে পেরেছে।

অপরদিকে জাপান ব্যবহার করে ইলেক্ট্রো ডায়নামিক সাসপেনশন সিস্টেম, যেখানে ট্রেন চলে ম্যাগ্নেট এর বিকর্ষণধর্মী গুনের কারণে, এখানে সুপার কন্ডাকটর ব্যবহার করা হয়ে থাকে ইলেক্ট্রম্যাগনেট হিসেবে। এই ক্ষেত্রে ট্রেনটি গাইডওয়ে থেকে প্রায় ১০সেমি উপরে ভেসে থাকে। যেহেতু এখানে ম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি হয় সেহেতু পেসমেকার ব্যবহার কারীদের সতর্ক থাকতে হবে।

আবার, শক্তির দিক দিয়ে জার্মানির প্রযুক্তি বেশী শক্তি ব্যয় করে, কিন্তু জাপানের প্রযুক্তিতে শীতলীকরণ এর ক্ষেত্রে ব্যয় বেড়ে যায়।

এই ম্যাগলেভ ট্রেন এর বেশ কিছু পজিটিভ দিক রয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল  কম রক্ষণাবেক্ষণ , কম  নয়েজ,  দ্রুত গতি।

খারাপ দিক নেই বললেই চলে, তবে অনেক ব্যয়বহুল প্রজেক্ট।

অভারল বলা যায়, পরিবেশবান্ধব ট্রেন।

২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি রেকর্ড করা হয় ৬০৩কিমি/ঘণ্টা।

এই প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে হাইপারলুপ ট্রেন লাইনের কথা চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে যার গতি হবে ঘণ্টায় ৭০০+মাইল/ঘণ্টা।

গত ৬০ বছরে এই ম্যাগলেভ ট্রেন এ কোন দূর্ঘটনার কথা শোনা যায়নি, বলা চলে নিরাপদ ট্রাভেল এর দিক দিকে সেরা ভেহিকল।

সম্প্রতি জাপানের প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চুক্তি করতে যাচ্ছেন ম্যাগ্লেভ ট্রেনের প্রযুক্তি নিয়ে।

সামনের দিন গুলোতে আরও নতুন প্রযুক্তি আসবে, আরো দ্রুত যাতায়াত করা সম্ভবপর হবে।

যাত্রীবাহী হাইপারসনিক প্লেন

সোর্সঃ www.energy.gov

https://www.jrailpass.com/blog/maglev-bullet-train

Comments are closed.