পশুর বিষ্ঠা হতে তৈরী হচ্ছে কাগজ

সবার মতো আমিও জানতাম যে গাছ,বাঁশ,পাল্প,আঁশ ইত্যাদির সাহায্যে কাগজ তৈরী হয়। অন্য কোন উপায়েও যে কাগজ তৈরী সম্ভব এটা নিয়ে কখনো মাথা ঘামাইনি। কিন্তু এক অদ্ভূত জিনিসের ব্যাপারের জানতে পারলাম আজ।

আমরা সোশ্যাল মিডিয়া কম বেশি সবাই ব্যবহার করি। আর সোশ্যাল মিডিয়ার তালিকায় সবার আগে আসে ফেসবুক। ফেসবুকে Nas Daily পেইজের ভিডিও আমরা অনেকেই দেখি। সেখানকার এক ভিডিও থেকে জানতে পারি যে শ্রীলঙ্কানরা হাতির বিষ্ঠা দিয়ে নিয়মিত কাগজ তৈরী করছে। শ্রীলঙ্কায় প্রায় ১৬ প্রজাতির হাতি পাওয়া যায়। অনেক মানুষের জীবিকা নির্ভর করে এই হাতিগুলোর উপর। শ্রীলঙ্কা পৃথিবীর প্রায় ৩০ টি দেশে বিষ্ঠার তৈরী এই কাগজ নিয়মিত রপ্তানি করছে।

বিষয়টি বেশ ইন্টারেস্টিং লাগলো। তারপর দেখি যে শুধুমাত্র শ্রীলঙ্কা নয় ভারতে দু-একজন ইন্টারপ্রেনার শুরু করলেও ব্যাপক বিস্তৃতি রয়েছে কেনিয়াতে। কেনিয়ায় প্রচুর মানুষ এই ব্যবসার দিয়ে ঝুঁকছে। মূলত হাতির বিষ্ঠা দিয়ে তৈরী হচ্ছে এসব কাগজ।

শুধু হাতির বিষ্ঠা দিয়েই সম্ভব?

না। শুধু হাতির বিষ্ঠা নয়। ঘোড়া,গাঁধা,গরু ইত্যাদির বিষ্ঠা দিয়েও তৈরী সম্ভব। সব প্রানির বিষ্ঠা দিয়ে কাগজ হয় না। যেসব প্রাণিদের বিষ্ঠা দিয়ে কাগজ তৈরী করা হবে সেসব প্রানির মধ্যে দুইটি বৈশিষ্ট্য থাকা লাগবে।

১. প্রানিকে অবশ্যই তৃণভোজী হতে হবে এবং তার খাদ্য তালিকায় বাঁশ,শাক-সবজি,আঁখ,ঘাস ইত্যাদি থাকতে হবে। মোট কথা আঁশ জাতীয় খাদ্যের প্রাচুর্যতা থাকবে হবে।

২. প্রানির পরিপাকতন্ত্র দুর্বল হতে হবে। মানে হল খাবারের প্রতিটি কণাকে ভেঙে ফেলতে সক্ষম এরকম শক্তিশালী পরিপাকতন্ত্র থাকা যাবে না। এতে করে বিষ্ঠাতেও কিছু আঁশ পাওয়া যাবে। আর আঁশ ছাড়া কিন্তু কাগজ অসম্ভব।

তো হাতিকেই এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। হাতির বিষ্ঠায় আঁশের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি থাকে,এটি অন্যতম একটি কারণ।

কাগজের মান কেমন?

এখন প্রশ্ন আসতেই পারে। কাগজ তৈরী করলেই তো হল না। কাগজের কোয়ালিটি কেমন! এক কথায় উত্তর দিলে কোয়ালিটি সর্বোচ্চ। ৫৮ বছর বয়সী হাতির বিষ্ঠা হতে উৎপন্ন কাগজ অনেক উন্নত মানসম্পন্ন হয়ে থাকে। হাতির বয়স যত বাড়ে পরিপাকতন্ত্র ততো দুর্বল হয়, ফলে বিষ্ঠায় আঁশের পরিমাণ বাড়ে। তাই ভালো কাগজ তৈরী হয়।

তাহলে বলতেই পারেন যে ৫৮ বছর কেনো আমি ১০০ বছর বয়সী হাতির বিষ্ঠা নিবো। সেখান আঁশ বেশি পাওয়া যাবে, কাগজও ভালো হবে।

হাতির বিষ্ঠা, আঁশ দ্বারা পূর্ণ

জ্বী না ভাই। কোনকিছু কম যেমন ভালো না, তেমনি কোন কিছু বেশিও আবার ভালো না। বেশি আঁশে কাগজের কোয়ালিটি নষ্ট হবে। কাগজ তৈরী করা নাও যেতে পারে এক্ষেত্রে। ৫৮ বছর বয়সী হাতির বিষ্ঠাকেই আদর্শ ধরা হয়।

হাতির বিষ্ঠা আরো একটি কারণে ব্যবহার করা হয়। হাতি হতে প্রচুর বিষ্ঠা লাভ করা সম্ভব। স্থলভাগের প্রাণিকুলের সবচেয়ে বড় স্তন্যপায়ী প্রানিটি হতে আপনি একবারে যে পরিমাণ বিষ্ঠা পাবেন, অন্য অনেক প্রানি আপনাকে সারাদিনে সেই পরিমাণ বিষ্ঠা দিতে পারবে না।

কিভাবে কাগজ উৎপন্ন হয়?

এটা বেশ লম্বা একটা প্রসেস।

১.Collecting poo

২.Cleaning and Boiling

৩.Mixing and Blending

৪.Colouring

৫.Screening

৬.Drying

এই ৬টি ধাপে কাগজ তৈরী হয়। যদি পাঠকগণ এই ধাপগুলো সম্পর্কে বিষদভাবে জানতে চান তবে অন্য একদিন সেই সম্পর্কে লিখবো।

বাণিজ্যিকভাবে কতটা লাভজনক?

বিষ্ঠা হতে কাগজ তৈরীর বিষয়টি কয়েকটি অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ। ফলে এই ব্যবসায় বিনিয়োগ কম। উন্নত বিশ্বে এই ব্যবসা চালু না হওয়ার কারণে এখনো সবার ফোকাসে আসে নি। তবে এখন চারিদিকে ছড়াচ্ছে এই আইডিয়া। ভবিষ্যতে অনেক লাভজনক হিসেবেই প্রমাণিত হবে বলে আশা করছি।

ধারণা করা যাচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতে শুধুমাত্র এই বিষ্ঠা হতেই কাগজ উৎপন্ন করা হবে। কারণ পৃথিবীতে বনভূমির পরিমাণ দিন দিন কমেই যাচ্ছে। নিজেদের অস্তিত্বের জন্যই গাছ বাঁচানো প্রয়োজন। অপরদিকে কাগজের চাহিদা কখনো কমবে না। বরং দিন দিন বেড়েই যাবে। তাই নিজেদের অস্তিত্বের কথা চিন্তা করে গাছের পরিবর্তে বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে হাতির বিষ্ঠা দিয়েই ব্যাপকভাবে কাগজ উৎপাদন করা হবে।

কেনিয়ার স্থানীয় ব্যবসায়ী Mr.Matano, তিনি অনেকদিন ধরেই এই ব্যবসার সাথে জড়িত। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “তার ৪২জন কর্মচারীর বেতন-ভাতা দেওয়ার পর তার বার্ষিক লাভ হয় গড়ে প্রায় ২.৩ মিলিয়ন শিলিংস”। শিলিং হল কেনিয়ার মুদ্রার নাম। ২.৩ মিলিয়ন হল প্রায় ২৩০০০ আমেরিকান ডলারের সমান। যদি আরো বিনিয়োগ করে ব্যবসার প্রসার করা যায় তবে লাভ আরো কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। উল্লেখ্য যে, Mr.Matano বৃহৎ কোন ব্যবসায়ী নন। তার ব্যবসার ক্ষেত্র ছোটই বলা চলে।

অনেক কোম্পানি হাতির বিষ্ঠা দিয়ে তৈরী খাতা-পত্র ক্লাসরুম কিট হিসেবেও বিক্রি করছে। http://www.poopoopaper.com নামের একটি ওয়েবসাইটে এই ক্লাসরুম কিট পাওয়া যাচ্ছে ১৪.৫০$ এ।

পরিবেশ বান্ধব কাগজ দ্রুতই ছড়িয়ে পড়িছে সমগ্র বিশ্বে। অনেক বেকার যুবকই জঙ্গল থেকে হাতির বিষ্ঠা সংগ্রহ করে, কাগজ তৈরীর কারখানায় বিক্রি করে আয়ের একটি রাস্তা তৈরী করছে। শুনতে হাস্যকর মনে হলেও এটা বেশ লাভজনক প্রমাণিত হচ্ছে যুবকদের কাছে। এক কথায়, People are making money with shits.

সম্পূর্ণ পরিবেশ বান্ধব এই কাগজ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ুক প্রত্যেকের ঘরে ঘরে এই আশাই করছি। বনভূমিও বৃদ্ধি পাবে, কাগজও চলবে। একটি সুস্থ ও সুন্দর পৃথিবীর লক্ষ্যে আরো একধাপ এগিয়ে।

ধন্যবাদ। ভালো থাকুন,সুস্থ থাকুন।

তথ্যসূত্র: ন্যাস ডেইলি,উইকিপিডিয়া,পুপুপেপার,বিবিসি।

Comments are closed.