মেক্সিকো সিটি, নতুন এয়ারপোর্টটির পাশেই চলছিল খনন কাজ। হঠাত এক্সকেভেটরের ড্রাইভার লক্ষ্য করলেন শক্ত কিছু একটা বেরিয়ে আসছে মাটির নিচ থেকে। আহামরি কিছু ভাবলেন না, সচরাচরই এরকম লৌহ বা ধাতব যন্ত্রাংশ পাওয়া যায়। হালকা মাটি উপরে তুলতেই তাঁর চক্ষু চড়কগাছ! বিশাল আকৃতির কিছু অস্থি বেরিয়ে এল পৃথিবী ফুঁড়ে। পরবর্তী চিত্র আমাদের সবারই জানা, প্রত্নতাত্ত্বিকরা মুখে মাস্ক এবং মাথায় কমলা হেলমেট পরে খুব সতর্কতার সাথে মাটি সরাচ্ছেন এবং অতিকায় অস্থি ও কঙ্কাল বের করে আনছেন মাটির নিচ থেকে।

তাছাড়াও শহরের উত্তর থেকে, জুম্পাংঙ্গ লেকে পাওয়া যায় আরো এক ডজন প্রাচীন পশুপাখির দেহাবশেষ ও কঙ্কালতন্ত্র। আর্মি ক্যাপ্টেন ক্যান্টোরাল জেসাস যিনি এই খনন কাজের তত্ত্বাবধন করছেন, বলেন যে ১০০ এর বেশি ম্যামোথ, উট, ঘোড়া, বাইসান, মাছ, পাখি এবং সরীসৃপের অস্থি পাওয়া গিয়েছে বর্তমানের খননকৃত জায়গাটিতে। মোট ১৯৪ টি জায়গা খনন করে বিভিন্ন প্রাগৈতিহাসিক প্রাণিসমূহের দেহাবশেষ উত্তোলন করা হয় গতবছরের অক্টোবর থেকে। বেশিরভাগ প্রাণিই বেশিরভাগ প্রাণিই ধারনা করা হয় পৃথিবীতে ছিল আজ থেকে দশ কিংবা পঁচিশ হাজার বছর পূর্বে! এক্সপার্টরা দিনরাত কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে যাচ্ছেন খুব সাবধানে উল্লিখিত ম্যামোথ টির কঙ্কালতন্ত্রকে বের করে আনতে যাতে অন্য কোনো সম্ভাবনা নষ্ট না হয়ে যায়।

ওখানকার দায়িত্বে যারা আছেন এবং এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ খুব কড়া নজর রাখছেন যাতে এই উত্তোলন কাজ বিমানবন্দরের কাজের জন্য কোনোভাবে ব্যাহত নাহয় এবং প্রেসিডেন্ট ম্যানুএল লোপেজ আশা ব্যক্ত করেন ২০২২ সালেই সম্পূর্ণ খনন ও প্রাপ্ত বস্তুসমূহ উদ্বোধন করা হবে। এক্সপার্টরা বিশ্বাস করেন এই এলাকাটি প্রাগৈতিহাসিক কালে প্রাকৃতিক সম্পদ দ্বারা পরিপুর্ণ ছিল। এখানে যে পরিমাণ খাদ্য ও পানি ছিল এতে করে বিভিন্ন প্রাণির পক্ষে কয়েক যুগ আরামসে টিকে থাকা কোনো ব্যাপারই ছিল না এবং এই বিষয়টিই হয়ত ম্যামথ গুলোকে অন্য প্রাণীদের মতো এখানে নিয়ে এসেছিল। প্রত্নতত্ত্ববিদ আরস্যালি ইয়ানেজ জানান শীতের সময় জায়গাটি খুব কাদাযুক্ত হয়ে পড়ে যেহেতু এটা একটা লেকের অংশ ছিল। এতে করে বিশালদেহী ম্যামথ সেখানে আটকে যায়। আরও অন্যান্য অনেক প্রাণিই এই লেকের ফাঁদে পা দেয়, আটকে যাওয়ার দরূন না খেয়ে একসময় মৃত্যুবরণ করে। এই লেক ছিল প্রাণিদেহের অবশিষ্টাংশ সংরক্ষণের ভালো একটা জায়গা।

ম্যাক্সিকো অনেক আগে থেকেই পৃথিবীর প্রত্নতত্ত্ববিদদের বিস্মিত করে আসছে ম্যামথের দেহাবশেষ ও কঙ্কালতন্ত্র আবিষ্কারের ক্ষেত্রে। এখানে যে পরিমাণ প্রাচীন ম্যামথের অস্থি ও হাড় পাওয়া গিয়েছে তা আর কোথাও পাওয়া যায়নি পৃথিবীতে। ১৯৭০ সালে যখন শ্রমিকরা ম্যাক্সিকো সিটির পাতাল রেলের কাজ করছিল, তাঁরা সন্ধান পায় ম্যামোথের কংকালতন্ত্রের। ২০১২ সালে পানির চৌবাচ্চা ও ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণের জন্য খনন করার সময় ম্যামথ সহ আরো অন্যান্য প্রাণি সমূহের হাড় পাওয়া যায়। গতবছর আরো ১৪ টি ম্যামোথের কঙ্কাল উদ্ধার করা হয় এই নতুন এয়ারপোর্টের পাশ থেকে।

মজার ব্যাপার হলো কিছু কিছু প্রাণির ফসিল গবেষণা করে দেখা যায় সেগুলোকে কোনোভাবে শিকার করা হয়েছিল। প্রত্নতাত্ত্বিকরা জানান তাঁরা হয়ত ম্যামোথ গুলোর সাথে আবিষ্কার করতে পেরেছেন পৃথিবীর প্রথম “ম্যামোথ ফাঁদ”। ক্রমেই এই আবিষ্কার গুলো আরো সুনিপুণ ভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য খনন ও অনুসন্ধান চলতেই থাকবে এবং সবাই আশা করছেন হয়ত আরো অনেক প্রাগৈতিহাসিক প্রাণির কংকাল পাওয়া যাবে এই মাটির গভীরে। তাছাড়াও প্রেসিডেন্ট ঘোষনা দিয়েছেন নির্মাণাধীন এয়ারপোর্টে প্রাপ্ত ফসিলগুলো নিয়ে একটি জাদুঘরের মত বানানো হবে যা দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
তথ্যসূত্রঃ sciencealert