গাণিতিকভাবে অমরত্ব অসম্ভব!

একটা ধাঁধা ধরি:

আমরা জানি যে, বিবর্তনিকভাবে সন্তান উৎপাদনকারী প্রজাতিই টিকে যায়। যদি কোনো ফ্যাক্টর বা বৈশিষ্ট্যের কারণে কোনো প্রাণী অসুখে পড়ে, তবে সুস্থতার অন্যান্য ফ্যাক্টরের সম্মিলিত অংশগ্রহণে সেই অসুখ ঢাকা পড়ে যায়। কিন্তু সারা জীবনে একটুও অসুখ বা কোনো ক্ষতের সম্মুখীন না হয়েও বৃদ্ধ বয়সে ঠিকই সবাইকে মৃত্যুকে বরণ করে নিতে হয়। তো বিবর্তন কেন বয়সকে স্থবির করে করে দিতে পারলো না?
এই ধাঁধার উত্তর দিয়েছে গণিত!
হ্যাঁ, ইউনিভার্সিটি অব আরিজোনার গবেষক দল বলেছেন যে অমরত্ব আসলে গাণিতিকভাবেই সম্ভব নয়!
এই মুহূর্তে যদি প্রশ্ন করা হয় যে কেন বিবর্তন বয়োবৃদ্ধিকে রোধ করতে পারেনি তাহলে এর ব্যাখ্যা হবে, বার্ধক্য তখনই আপনার কাছে সমস্যা হয়ে দেখা দেয় যখন আপনার প্রজনন ক্ষমতা শেষ হয়ে যায়। এখন কেন একসময় আপনার প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে যায় এটাও একটা প্রশ্ন। তবে এটা নিয়এ আমরা পরে আলোচনা করব। বিবর্তন বিজ্ঞানী পল নেলসন ও জোয়ানা ম্যাসেল এর মতে আসল কথা হচ্ছে, আমাদের এই বার্ধক্য আসলে বহুকোষী জীবদের ক্লাবে নাম লেখানোর ফি!
বৃদ্ধ কোষগুলো নিয়ে দুই ধরনের সমস্যা হতে পারে। হয় তারা তাদের বৃদ্ধি শ্লথ করে দিতে পারে; ফলে কোষ আর পরবর্তীতে বিভাজিত না-ও হতে পারে। অথবা তাদের বৃদ্ধির হার খুব বেড়ে যেতে পারে; ফলে কোষ বিভাজন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
কোষের বৃদ্ধি শ্লথ হয়ে যাওয়ার ফলাফলটা আমরা প্রায়ই চোখের সামনে দেখতে পাই; যখন চুল কৃষ্ণকণিকা উৎপাদন বন্ধ করে দিয়ে ধূসর হয়ে যায়। এছাড়াও, আমাদের ত্বকের ভাঁজ পড়া থেকেও তা উপলব্ধি করা যায়। ত্বক কোলাজেন ও ইলাস্টিন উৎপাদন বন্ধ করে দিলে ত্বকে পানির ঘাটতি দেখা দেয়, ফলে ত্বক তার মসৃণতা হারিয়ে বার্ধক্যে পৌঁছায়। সচরাচর আমরা বার্ধক্যের এমন রূপ দেখেই অভ্যস্ত।
আবার যখন কোষের বৃদ্ধির হার বেড়ে যায়, তখন আবার অনেকের মধ্যে ক্যান্সারের ঝুঁকি দেখা দেয়। কারণ কোষের অনিয়ন্ত্রিত বিভাজনের ফলেই ক্যান্সার কোষের সৃষ্টি হয়। ক্যান্সারের ভয়াবহতা সম্পর্কে আমরা সকলেই অবগত। কিন্তু তা সত্বেও ক্যান্সার কোষ ওই পাকা চুল এবং ঢোলা চামড়ার মতই কোষের বার্ধক্যের ফল; এর উপসর্গ শুধুমাত্র সমস্যায় উপনীত হলেই প্রকাশ পায়।
নেলসন ও মেসেল কিছু বৈশিষ্ট্যের বিবর্তনের একটা মানদণ্ড তৈরি করেছেন, যে বৈশিষ্ট্যগুলো কোষের বৃদ্ধির হার বাড়িয়ে দিতে পারে আবার কমিয়েও দিতে পারে। এই পরীক্ষায় তারা একটি ইতিবাচক ফল পেয়েছেন।
যদি আপনি কোষের বৃদ্ধিহার কমিয়ে আনার কোনো উপায় খুঁজে পান, তবে আপনাকে অভিনন্দন। কেননা তখন আর আপনাকে পাকা চুল আর ঢোলা চামড়া নিয়ে একদমই চিন্তা করতে হবে না ! আবার এর উল্টোটা যদি দেখি, তাহলে তখন ক্যান্সার কোষের সাথে দেখা হয়ে যাবে। আর যদি আপনি কোষের এই দ্রুত বৃদ্ধিহারকে নিয়ন্ত্রণের উপায় পেয়ে যান, তবে আপনি তো ক্যান্সারের চিকিৎসাই আবিষ্কার করে ফেললেন!
অন্যদিকে, মন্থর গতিতে চলতে থাকা কোষ আপনার শরীরে বাসা বেঁধে আপনাকে এমনিতেই মৃত্যুপথযাত্রী বানিয়ে ফেলবে।
গবেষক ম্যাসেল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “বার্ধক্য গাণিতিকভাবেই অপরিহার্য। যৌক্তিক, তত্ত্বীয়, গাণিতিক – কোনোভাবেই এর থেকে পালাবার উপায় নেই।“ বহুকোষী হওয়ার মানেই হল, আপনার কোষগুলো একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করেই বেঁচে থাকবে। এই ভারসাম্যকে যদি আপনি ব্যহত করতে চান, তবে এর ফলাফল খুবই খারাপ হতে পারে। আমরা আমাদের জীবনকাল বাড়াতে পারি, কিন্তু মৃত্যু থেকে নিস্তার? তা সম্ভব নয়। বরং মৃত্যুই আপনার জীবনের প্রাপ্ত সময়কে আপনার কাছে মূল্যবান করে তুলেছে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may use these HTML tags and attributes: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>