কিছু বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা যা ধ্বংস করে দিতে পারত পুরো পৃথিবী ; হ্যাঁ আপনি ঠিক ই পড়েছেন। আমাদের পৃথিবীতে এমন সব বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা করা হয়েছে যা আমাদের পুরো পৃথিবীকে ধ্বংস করে দিতে পারত। তবে সেরকম কিছু হয় নি যদিও কিন্তু সেসব বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষদের ফেলে দিয়েছিল আতংকে । আজ আমরা এই লেখায় সেসব বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা সম্পর্কে জানব।
1. Starfish Prime Experiment :
৯ ই জুলাই, ১৯৬২ সালে USA একটি পারমানবিক বোমা উৎক্ষেপণ করে। যা উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল মহাকাশে এ। এটির উদ্দেশ্য ছিল নিউক্লিয়ার বোমাটির Outer Space এ শক্তি পরীক্ষা করা এবং মহাকাশে বোমা বিস্ফোরণ করলে কি হয়, তা জানা। এটি এখনো পর্যন্ত মহাকাশে করা মনুষ্য সৃষ্ট সবচেয়ে বড় বিস্ফোরণ। এই পরীক্ষাটি করা হয়েছিল কোল্ড ওয়ারের সময়, প্রশান্ত মহাসাগর এর জন্সটন দ্বীপ থেকে ৪০০ কিলোমিটার উচ্চতায়। এই বিস্ফোরণ টির ফলে দেড় মেগাটন টি.এন.টি-র সমপরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয়। যা হিরোশিমার বোমা বিস্ফোরণ এর চেয়ে ১০০ গুণ বেশি শক্তিশালী ছিল। এই বিস্ফোরণ টির ফলে Outer Space-এ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই বিস্ফোরণ ঘটার সাথে সাথেই মহাকাশের তিন টি স্যাটেলাইট ধ্বংস হয়ে যায়। এবং ২ টি স্যাটেলাইট খারাপ হয়ে যায়। ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক পালস সৃষ্টি হওয়ার ফলে আশেপাশের স্ট্রীট লাইট এবং ফোনলাইন গুলির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই বিস্ফোরণ টি এতটাই বড় ছিল যে,মহাকাশে এই বিস্ফোরণ টিকে পৃথিবীর ১৪৫০ কিলোমিটার বৃত্তাকার এলাকা জুড়ে দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। এই বিস্ফোরণ টির ফলে পৃথিবীর চারপাশে একটি আর্টিফিশিয়াল রেডিয়েশন বেল্ট এর সৃষ্টি হয়। যা ৫ বছর পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। যা Lower Earth Orbit এর সকল স্যাটেলাইট নষ্ট করে দেয়। বিজ্ঞানীদের মতে,ভুল করেও যদি এটি আমাদের নিচের বায়ুমণ্ডল এ ঘটত তাহলে খুব ভয়ংকর হত। বায়ুমণ্ডল এ রেডিয়েশন এর মাত্রা বেড়ে যেত। আর তা সমস্ত পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ত। যা মানবকুলের জন্য খুব ই ক্ষতিকারক হতো। এছাড়া এই রেডিয়েশন আমাদের ওজোন লেয়ার কে ক্ষতিগ্রস্ত করতো,যা আমাদের সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মি থেকে বাচায়। যাই হোক,সেরকম কিছুই হয় নি।
2. Kola Superdeep Borehole :
১৯৭০ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন পৃথিবীর কেন্দ্রে একটি গর্ত খোঁড়ার সিদ্ধান্ত নেয় বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহ করার জন্য। গর্তটি খোড়া হয়েছিল Arctic Circle এ। ১৯৮৯ সালে তারা পৃথিবীর উপরের Mantel Layer মানে ৪০ হাজার ২৩০ ফুট গভীরতা পর্যন্ত খনন করতে সক্ষম হয়।
এটি এখনো পর্যন্ত মানবসৃষ্ট সবচেয়ে বড় গর্ত। ১৯৯২ সালে এর খনন কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। কারণ সেখানে তাপমাত্রা পৌছে গিয়েছিল প্রায় ১৮০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তারা মনে করেছিলেন সেখানে তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ১০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস হবে। কিন্তু তাদের ধারণা থেকেও অধিক তাপমাত্রা থাকায় তারা এই প্রোজেক্ট টি বন্ধ করে দেয়। কারণ এই তাপমাত্রায় আরো অধিক গর্ত করা ছিল অসম্ভব।
বৈজ্ঞানিকদের মতে যদি এর খনন কাজ বন্ধ করা না হতো,তাহলে এটি পৃথিবীর ভারসাম্য নষ্ট করে দিতে পারত। এছাড়া এটি তীব্র ভূমিকম্পের সৃষ্টি করত এবং সুপ্ত আগ্নেয়গিরি গুলো জেগে উঠত। এবং ভয়ানক সুনামির সৃষ্টি হতো। এককথায় পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেতে পারত।
3.Trinity Test :
১৯৪৫ সালের ১৬ ই জুলাই ভোর ৫ টা ২৯ মিনিটে পৃথিবীর সর্বপ্রথম Atomic Bomb বা পারমানবিক বোমের পরীক্ষা নিউ মেক্সিকোর জনমানবহীন একটি শহরে করা হয়। এই প্রোজেক্ট টিকে বেশ কয়েকবার বাতিল করা হয়েছিল।
কারণ এই প্রোজেক্ট টির প্রধান বিজ্ঞানী এডওয়ার্ড টেলার, যাকে ফাদার অফ হাইড্রোজেন বোম বলা হয়, তিনি গভীর চিন্তায় ছিলেন। তার ভয় ছিল এই বোম পৃথিবী থেকে মানবজাতি কেই না ধ্বংস করে দেয়। তার এই চিন্তার কারণ ও ছিল যথার্থ। আমাদের বায়ুমণ্ডল এ সবচেয়ে বেশি রয়েছে নাইট্রোজেন রয়েছে। যদি এই এটোমিক বোমা বায়ুমণ্ডল এর নাইট্রোজেন এর নিউক্লিয়াসের সাথে ফিউশন এর ফলে একটি চেইন রিয়েকশন সৃষ্টি করে তাহলে সম্পূর্ণ পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। তবুও US Government এর চাপে তারা পিছু হঠেনি। এই প্রোজেক্ট টি খুব ই সিক্রেট ছিল। তার এই পরীক্ষা এই কারণেই করেছিল যাতে তারা এরকম ই একটি বোমা জাপানে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। যদিও Trinity Test এ কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি এবং সফলভাবে ই এই পরীক্ষাটি সম্পন্ন হয়। এই বিস্ফোরণ টি ২১ কিলোটন টিএনটির সমপরিমাণ শক্তিসম্পন্ন ছিল। এই বিস্ফোরণ টির ফলে ২ মিটার গভীর এবং ১০ মিটার চওড়া গর্তের সৃষ্টি হয়। এই বিস্ফোরণ টির ফলে সৃষ্ট মাশরুম ক্লাউড ১২ কিলোমিটার উঁচুতে উঠে গিয়েছিল। আশেপাশে র এলাকা দিনের আলোর চেয়েও অধিক আলোকিত হয়ে উঠে। বিস্ফোরণ টির ফলে সৃষ্ট শক ওয়েভ ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত অনুভূত করা গিয়েছিল।
4. Large Hadron Collider :
Large Hadron Collider হচ্ছে একটি পার্টিকেল এক্সিলারেটর। যেটার অবস্থান সুইজারল্যান্ড এর জেনেভায়। এটিকে ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন অফ নিউক্লিয়ার রিসার্চ (CERN) দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। বিগ ব্যাংয়ে কি ঘটেছিল এবং মহাবিশ্ব সম্পর্কে তথ্য যেমন ডার্ক ম্যাটার এবং ডার্ক এনার্জি ইত্যাদি বিস্তারিত জানার জন্য এই পার্টিকেল এক্সিলারেটর এ ফিজিক্স এর সবচেয়ে বড় এক্সপেরিমেন্ট করা হয়।
২০০৮ সালে সেপ্টেম্বর মাসে ৬ বিলিয়ন ডলার খরচ করে নির্মিত ২৭ কিলোমিটার ( ১৭ মাইল) লম্বা এই পার্টিকেল এক্সিলারেটরে ৩০০ ট্রিলিয়ন প্রোটন কণাকে আলোর গতিবেগের ৯৯.৯৯% গতিবেগে ধাক্কা লাগানো হয় মাইক্রোস্কপিক ব্ল্যাকহোল তৈরি করার জন্য এবং সাব এটোমিক পার্টিকেল এর অস্তিত্ব জানার জন্য। যা সায়েন্টিফিক স্টাডি এবং স্পেস রিসার্চ কে আরো বেশি উন্নত করত।
কিন্ত বিজ্ঞানী রা সবচেয়ে ভয় পেয়েছিলেন এটা ভেবে যে এই মাইক্রোস্কোপি ব্ল্যাকহোল গুলো যদি চেইন রিয়্যাকশন এর মাধ্যমে যদি আশে পাশের বস্তু গুলোকে যদি গ্রাস করতে শুরু করে তাহলে কিছু সময় পর পুরো পৃথিবীকে এটির ভিতর নিয়ে নিবে। এটি খুবই ভয়ংকর একটি ভাবনা ছিল। কিন্তু যাই হোক সেটা হয়নি।কারণ হকিং বিকিরণ থেকে আমরা জানি একটি ব্ল্যাকহোল যখন তার এনার্জি কে মহাকাশে ছড়িয়ে দেয় তখন তাকে হকিং রেডিয়েশন বলে। এবং ব্ল্যাকহোল টি যত ছোট হবে তত তাড়াতাড়ি তার এনার্জি মহাকাশে ছড়িয়ে পড়বে। তাই এই পরীক্ষা দ্বারা সৃষ্ট ব্ল্যাকহোল গুলি এনার্জি রেডিয়েট করে শেষ হয়ে যায়। এবং পরীক্ষার মাধ্যমে মহাকাশ, ব্ল্যাকহোল এবং সাব এটোমিক পার্টিকেল সম্বন্ধে অনেক কিছু জানা সম্ভব হয়। এবং এই পরীক্ষায় একটি নতুন কণা আবিষ্কৃত হয়। এই নতুন কণা টির নাম দেয়া ‘Higgs Boson’ বা ‘হিগস বোসন’ কণা। একে ‘God Particle’ বা ঈশ্বর কণাও বলা হয়।
এসব পরীক্ষার মধ্যে কোনটি আপনার কাছে বেশি ভয়ংকর পরীক্ষা বলে মনে হয়েছে? তা জানাবেন।
1.https://m.dailyhunt.in/
2.https://educateinspirechange.org