শীঘ্রই মঙ্গলের উদ্দেশ্যে রওনা দিবে নাসা’র রোভার Perseverance!

গত ২৭ শে জুলাই শেষবারের মতো চূড়ান্ত অনুমোদন পেল নাসার ৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যে নির্মিত Mars 2020 Perseverance Rover! এই অনুমোদনের মাধ্যমে রোভারটি ৩০ শে জুন মঙ্গলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার জন্য সুযোগ পেল যা অবশ্যই মানবজাতির ইতিহাসের জন্য আরেকটি বড় মাইফলক। ফ্লোরিডার ক্যাপ ক্যানাভেরাল এয়ার স্টেশন থেকে। নাসা এডমিনিস্ট্রেটর জিম ব্রাইডেনস্টাইন জানান Launch Readiness Review একবার সফলভাবে সম্পন্ন হওয়া মানে আর কোনো বাধা রইল না রোভারের সামনে এবং তারা পুরোপুরিভাবে প্রস্তুত!

Perseverance শব্দের অর্থ হচ্ছে উদ্যম! এই রোভারটিকে বহন করবে United Launch Alliance এর ভারী রকেট এটলাস ৫। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় বেলা ১১ টা ৫০ মিনিট থেকে space.com এর ওয়েবসাইটে লাইভ দেখা যাবে। কনফারেন্সের সময় নাসা’র আবহাওয়াবিদ জেসিকা উইলিয়াম বলেন, “বৃহস্পতিবার মাত্র ২০ শতাংশ সম্ভাবনা আছে কোনো আবহাওয়া জনিত জটিলতা তৈরি হওয়ার, এ যেন প্রকৃতি আমাদের জন্যই দিনটি নির্ধারিত করে দিয়েছে!” বৃহস্পতিবার থেকে শুরু করে এই যাত্রা স্থায়ী হবে প্রায় ৭ মাস ব্যাপি এবং ২০২১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলের Jezero Crater এ অবতরণ করবে রোভার Perseverance! পারমাণবিক শক্তি চলিত এই রোভারটি মঙ্গলে প্রায় ১ বছর(পৃথিবীর হিসাবে ২ বছর) অনুসন্ধান করবে উল্লিখিত Crater এর ৪৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। ধারণা করা হয় অতীতে কোনো একসময় এই অঞ্চলটিতে নদী বহমান ছিল এবং তা পানি দ্বারা পূর্ণ ছিল।

মূল কথা হচ্ছে  Perseverance রোভারটির উদ্দেশ্য থাকবে মঙ্গলে কোনো ধরনের জীবনের খোঁজ পাওয়া যায় কীনা বা অতীতে ছিল কী না এসব নিয়ে গভীর ও বিস্তৃত অনুসন্ধান চালানো। তাছাড়াও এটি জায়গাটির ভূ-তাত্বিক গঠন নিয়ে গবেষণা করবে ও প্রাপ্ত নমুনা সংগ্রহ করবে। এই নমুনা গুলো পৃথিবীতে ২০৩১ সালের মধ্যে চলে আসবে বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের, এর জন্য কাজ করবে নাসা/ ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির দ্বৈত জোট। যদি রোভারটি সঠিকভাবে ফিরে আসতে পারে সব নমুনা নিয়ে তাহলে বিজ্ঞানীরা খুব সহজেই মাটি পরীক্ষা করে মঙ্গলে জীবনের অস্তিত্ব সম্পর্কে ধারণা দিতে পারবেন এবং একইসাথে এটি হবে ইতিহাসের প্রথম কোনো গ্রহ থেকে মিশন শেষ করে ফিরে আসার ঘটনা। যদিও এর আগে অন্য ধরনের sample- return মিশন ঘটেছিল, যেমন এপোলো মিশন থেকে নভোচারীরা একশ পাউন্ডেরও বেশি চন্দ্রের মাটি নিয়ে ঠিকই পৃথিবীতে ফিরে এসেছিলেন।

Atlas V

Perseverance মঙ্গলে কিছু নতুন প্রযুক্তির পরীক্ষাও করবে। যেমন রোভারটির একটি যন্ত্রাংশের নাম হলো MOXIE যার কাজ মঙ্গলের কার্বনডাই অক্সাইড পূর্ণ পাতলা বায়ুমণ্ডল থেকে অক্সিজেন তৈরি করা। যদি এই ধরনের প্রযুক্তি সঠিকভাবে কাজ করে তবে ভবিষ্যতে মহাকাশচারীরা সহজে মঙ্গলের ভূমিতে বিচরণ করতে পারবে যা নাসা ২০৩০ এর মধ্যে সম্ভব করতে চায়। তাছাড়াও রোভারটির সাথে থাকবে প্রায় ২ কিলো ভরের একটি হেলিকপ্টার। যখনই রোভার পূর্ণাঙ্গ ভাবে সেট হয়ে যাবে সেই হেলিকপ্টারটি কয়েকটা টেস্ট ফ্লাইট সম্পাদন করবে এবং এটা হবে কোনো এলিয়েন গ্রহে প্রথম উড্ডয়ন! যদি এই টেস্ট ফ্লাইট সফল হয় তবে আসন্ন মিশন গুলোতে এই ধরনের ছোটো হেলিকপ্টার গুলো রোভার অথবা মহাকাশচারীদের স্কাউট করতে পারবে এবং অতি সহজেই সেসব জায়গায় যেতে পারবে যেখানে মানুষ বা অন্য কোনো যন্ত্রের পক্ষে পৌছানো সম্ভব নয়। অনেকটা ক্যামেরাবাহী ছোটো ড্রোনের মত কাজ করবে এটি। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে যখন Perseverance কাজ করবে অথবা এর কোনো মুভমেন্ট হবে তখন কেউ এটিকে দেখতে পারবেনা কোনো বাহ্যিক ক্যামেরার মাধ্যমে, কিন্তু সেই হেলিকপ্টারটি খুব সুন্দরভাবেই আমাদেরকে রোভারের বিভিন্ন মুহূর্তের ছবি এবং ভিডিও পাঠাতে পারবে।

১৫ ই আগস্ট পর্যন্ত ধার্য করা হয়েছে রোভারের উড্ডয়ন সময়সীমা। যদি কোনো জটিলতার কারণে এটি না যেতে পারে এই সময়ের মধ্যে তবে অপেক্ষা করতে হবে ২০২২ সাল পর্যন্ত। কিন্তু এত দেরীতে কিসের জন্য? কারণ হচ্ছে পৃথিবী আর মঙ্গল প্রতি ২৬ মাস অন্তর একে অপরের নিকটবর্তী হয় অল্প কয়েক সপ্তাহের জন্য যা এই ধরনের মিশনের জন্য একেবারে উপযুক্ত মুহূর্ত। আরেকটা মজার ব্যপার হচ্ছে এই কয়েক সপ্তাহে নাসা’র রোভার উড্ডয়ন হবে তৃতীয় কোনো মিশন! কারণ ১৯ জুলাই আরব আমিরাতের অরবিটার হোপ উৎক্ষেপিত হয় এবং ২৩ শে জুলাই চীনের তিয়ানউইন-১ অরবিটার- ল্যান্ডার- রোভার যাত্রা শুরু করে মঙ্গলের উদ্দেশ্যে।

Hope Orbiter

সবার অপেক্ষা এখন প্রতিটা যানের উদ্দেশ্যে যারা মঙ্গলের উদ্দেশ্যে পথ পাড়ি দিবে। হয়ত নিয়ে আসবে এমন কিছু তথ্য এবং সম্ভাবনা যা বদলে দিতে পারে মানবজাতির ইতিহাস!

তথ্যসূত্রঃ space.com, NASA

Comments are closed.