স্পেসএক্স টেসলা বোরিং কোম্পানি এলন মাস্ক এই নামগুলোর যেকোনো একটাও শুনে নাই এমন প্রযুক্তিবিদ মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর বটে।
কিছু কাজ সাধারণ ঘরানার বাইরে ঘটে, যা দ্রুত পরিচিতি লাভ করতে সাহায্য করে।
এলন মাস্ক এর গৃহীত কিছু প্রজেক্ট ঠিক সেই কাজটাই করতে সক্ষম হয়েছে।
স্পেস এ পুনঃব্যবহারযোগ্য রকেট এনে যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে এসেছেন, সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়(অটোনোমাস) গাড়ী এনেছেন টেসলার ট্যাগে।
হাইপার লুপ রয়েছে অল্প সময়ের ব্যবধানে অনেক দূরত্ব পাড়ি দেওয়ার মাধ্যম হিসেবে।
– ভালো ভাবে চেনার আরেকটি মাধ্যেম হল, স্পেসএক্স এরই ফ্যাল্কন ৯ হেভি রকেটে করেই আমাদের বঙ্গবন্ধু ১ স্যাটেলাইট মহাকাশে প্রেরণ করা হয়েছে।
– এছাড়াও স্টারলিংক নামে একটি প্রজেক্ট রয়েছে যা কয়েকহাজার স্যাটেলাইট এর সাহায্যে ইন্টারনেট সুবিধা দিবে,যা প্রচলিত ব্যবস্থার চেয়ে অনেকগুনে দ্রুতগতির।
– এছাড়া মঙ্গলে যাওয়া নিয়ে স্টারশিপ বা বিগ ফ্যাল্কন রকেট বানানোর কাজও দ্রুত এগিয়ে চলছে।
তবে আজকে আমাদের টপিক হল: উনার আরেক প্রতিষ্ঠান নিউরালিংক এবং এর সদ্য ঘোষিত প্রজেক্টঃ
সোজা বাংলায় বলতে গেলে মানব মস্তিষ্কের দ্বারা কম্পিউটার কন্ট্রোল করা।
এটি আর অভাবনীয় নয়, একবারে হাতের মুঠোয় এসে ধরা দিয়েছে।
পার্কিন্সন রোগের রোগীদের মস্তিষ্কে ইলেক্ট্রড ঢুকিয়ে তাদের চিকিৎসা চালাচ্ছে একদল চিকিৎসক।
এআই এর জন্যে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ এটি।
২০১৬ সাল থেকেই তারা ছিল কিন্তু এবারই প্রথম এই টপিক নিয়ে তারা বিশ্বখবরে চলে এসেছে।
– নিউরালিংক একটি ব্রেইন-মেশিন ইন্টারফেস তৈরী করেছে। সহজ কথায় তারা তাদের আবিষ্কৃত সূতার ন্যায় কিছু কানেক্টর/থ্রেড (সহজ কথা ‘তার’) কিংবা মানুষের ব্রেইনে ঢুকাবে। অতঃপর সেই চুলের মত সরু তারগুলো (থ্রেড) মাথার খুলির উপর থাকা একটি ছোট্ট চিপের সাথে যুক্ত হবে। এবং বাইরে কানের একপাশে ব্লুটুথ মডিউল দ্বারা কম্পিউটারের সাথে যুক্ত হবে।
– ছবিতে দেখে নিন


– আর এভাবেই একজন ব্যক্তি তার নিউরণ এর গতিপ্রকৃতি দ্বারা যুক্ত থাকে কম্পিউটার কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, এর ফলে অনেক রোগী যারা মনের ভাব ভাষায় প্রকাশে ব্যর্থ, তারা বাচার নতুন আশা পেল। প্যারালাইজড, বোবা, আলঝেইমার্স রোগী, অন্ধ, শ্রবণেন্দ্রিয় অক্ষম ইত্যাদি কেসে ব্যবহার করে তাদের পুরোপুরি সুস্থ করে না তোলা গেলেও তাদের মনের ভাব প্রকাশের একটা মাধ্যম সৃষ্টি করে তোলা গেছে। ভবিষ্যৎকালে আরো আপডেট হবে আশা করা যাচ্ছে।
কার্যপ্রণালি:

প্রথমেই ড্রিলিং এর দ্বারা খুলি ফুটা করে চুলের তিনভাগের একভাগ ব্যাস নিয়ে বানানো (4micron-6micron) চুলের ন্যায় তন্তু মস্তিষ্কের ভেতরে প্রেরণ করা হয়ে।
এরকম ৯৬ টি তন্তুর একেকটি অ্যারেতে ৩২টি ইলেক্ট্রড রয়েছে সবমিলিয়ে প্রায় ৩০৭২ টি ইলেক্ট্রড, যা বর্তমানের সবচেয়ে সক্ষমতা সম্পন্ন ব্রেইন মেশিন ইন্টারফেসের তুলনার কয়েকগুন দ্রুতগতিকে তথ্য বিশ্লেষণ করতে পারবে। গতানুগতিক মেশিনে মাত্র ২৫৬ টি ইলেক্ট্রড ব্যবহার করা হয়েছে যেখানে নিউরালিংক ৩০৭২ টি ব্যবহার করেছে।
৩০৭২ টির প্যাকেজ যে জায়গা দখল করবে তার আকার হল: ২৩*১৮.৫*২ঘনমি.মি। এই তন্তু গুলোকে ভিতরে পাঠাতে তারা নিউরোসার্জিক্যাল রোবটিক আর্ম ব্যবহার করছেন, যা মিনিটে ৬ টি তন্তু বা ১৯২ টি ইলেক্ট্রড ঢুকাতে সক্ষম।

ভবিষ্যতে তারা লেজার বিম দিয়ে কাজটি করার ইচ্ছা পোষণ করেছে, যা পুরোপুরি রক্তপাতবিহীন হবে। একটি ইউএসবি টাইপ সি(USB TYPE-C) ক্যাবল দ্বারা সকল চ্যানেল থেকে সংগৃহীত করা তথ্য কানেক্টেড ডিভাইসে স্ট্রিমিং( সম্প্রচার) করবে।
মস্তিষ্কের মাধ্যমে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করে কথা বলে অপারগ ব্যক্তিরা কথা বলতে পারবেন বলে জানিয়েছে নিউরালিংকের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ফিলিপ সেবস। এক ধরনের টেলিপ্যাথির মতো এই প্রযুক্তির মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন।
এই নিউরালিঙ্ক হুট করেই আসে নি, বরং এর পিছনে যুগ যুগের গবেষণা ও শিক্ষা কাজ করছে।

নিউরালিংকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্ক প্রতিষ্ঠানটিতে ১০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছেন।
এর আগের প্রযুক্তির নাম ছিল ব্রেইনগেট, যা মাত্র ১২৮টি ইলেক্ট্রড দিয়ে কাজ চালাত, যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ডেভেলপকৃত প্রজেক্ট ছিল এটি।
আপাতত ল্যাবে তারা বিভিন্ন প্রাণীর উপর গবেষণা চালাচ্ছেন। মাস্ক জানান যে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে একটি বানর কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। ইঁদুরের ওপর গবেষণা তো চলছেই সাথে ২০২০ সালের শেষ নাগাদ মানুষের উপর এই প্রযুক্তি প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

তারা নিউরাল লেস বা স্নায়বিক ফিতার মাধ্যমে মস্তিষ্ক থেকে অধিক পরিমাণে ডেটা কালেক্ট করা দিকেই ঝুকছে। এতগুলো ইলেকট্রোড মস্তিষ্কে বসানোর প্রক্রিয়াটিকে নিরাপদ, ব্যথাবিহীন ও কার্যকর করতে হবে। সব মিলিয়ে সে এক বিরাট কর্মযজ্ঞ!
যার জন্যে প্রয়োজন প্রচুর সংখ্যক ইলেক্ট্রড। এখন প্রশ্ন আসতে পারে যে, রক্তে থাকা খনিজ পদার্থ কি এর লেয়ারে কোনো ক্ষতি করতে পারে??
— সেক্ষেত্রে নিউরালিংক বলছে, তাদের ইলেক্ট্রডগুলো উন্নত মানের এবং রক্তে থাকা খনিজ পদার্থের দ্বারা এদের ক্ষতি হবে না উপরন্ত এরা এতটাই সূক্ষ্ম যে রক্তেরচাপের প্রভাব নূন্যতম মাত্রায় থাকবে।
মস্তিষ্কের টিস্যুর কোনোপ্রকার ক্ষতি ছাড়াই কাজটি করা বিশাল চ্যালেঞ্জিং বটে। তারা এটা দাবি করেছে যে, তাদের এই প্রযুক্তি দ্বারা একটি বানর ,কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে।

আশা করা যাচ্ছে আমরা বর্তমানেই ভবিষ্যৎ এর সুফল পেতে শুরু করেছি। নিউরাল লেস তৈরি করা গেলে তা দিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে মানুষ।
আমেরিকার FDA (মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ) থেকে অ্যাপ্রুভাল পাওয়ার অপেক্ষা শুধু। শুধুমাত্র চিকিৎসার ক্ষেত্রেই এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে, যাদের দরকার তারাই এটার সুফল ভোগ করতে পারবেন শুধুমাত্র। এখনো অনেক পথ অতিক্রম করতে হবে মানবকম্পিউটার যুগের শুরু হতে। তবে শুরুটা হয়েই যাক নাহয় এখন।