ফেসবুক গ্রুপ হচ্ছে এমন এক জায়গা, যেখানে একই ধরণের বিষয়বস্তুতে আগ্রহী মানুষেরা সে বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করে। গতবছরের হিসাব মতে প্রায় ১.৮ বিলিয়ন মানুষ ফেসবুক গ্রুপ ব্যবহার করে। প্রতিমাসেই এ সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতদিন এই ফেসবুক গ্রুপ গুলোর তিন ধরণের নিরাপত্তা সেটিংস ছিল। যা অনেক সময়ই সাধারণ ব্যবহারকারীদের বিভ্রান্তিতে ফেলে দিত।
এই সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্ট বেশ কিছুদিন ধরেই তাদের নিরাপত্তা সেটিংস নিয়ে বেশ প্রশ্নবাণ আর সমালোচনার সম্মুখীন। তাই এবার ব্যবহারকারীরা যাতে আরও সহজে ফেসবুক গ্রুপের এসব সেটিংস ব্যবহার করতে পারে তার জন্যে বেশ কিছু পরিবর্তন আনছে।
বর্তমানে ফেসবুক গ্রুপে পাবলিক (Public), ক্লোজড (Closed) এবং সিক্রেট (Secret) এ তিনধরণের প্রাইভেসি সেটিংস রয়েছে। এসব সেটিংসের উপর ভিত্তি করে আগ্রহী ব্যবহারকারীরা গ্রুপগুলোকে খুঁজে বের করে, গ্রুপের অন্যদের পোস্ট দেখতে পারে, গ্রুপে যুক্ত হওয়ার জন্য অনুরোধ (Request) পাঠাতে পারে। ক্লোজড গ্রুপগুলোতে, শুধুমাত্র গ্রুপের যুক্ত হওয়া সদস্যরাই দেখতে পারে গ্রুপটিতে কারা রয়েছে, আর গ্রুপে কী কথাবার্তা অর্থাৎ পোস্ট হচ্ছে। শুধুমাত্র সদস্যরাই গ্রুপটিকে খুঁজে বের করতে পারে। গ্রুপে যুক্ত হতে গেলে গ্রুপের সদস্যদের কারও কাছ থেকে আমন্ত্রণ (Invitation) এর প্রয়োজন হয়।
তবে নতুন আপডেটে ফেসবুক গ্রুপগুলোর এখন থেকে দুটো প্রাইভেসি সেটিংস থাকবে। পাব্লিক অথবা প্রাইভেট। আগে যে গ্রুপ গুলো “সিক্রেট” ছিলো সেগুলো “প্রাইভেট এবং হিডেন (Private And Hidden)” বলে আক্ষায়িত হবে। আর ক্লোজড গ্রুপ গুলোর নাম হবে “প্রাইভেট কিন্তু দৃশ্যমান (Private But Visible)”। মানে হচ্ছে যে কেউ এই ধরণের গ্রুপ খুঁজে বের করতে পারবে। আর প্রাইভেট গ্রুপগুলোতে শুধুমাত্র সদস্যরাই গ্রুপের পোস্টগুলো দেখতে পাবে।
এই পদক্ষেপেই বোঝা যায় কিভাবে ফেসবুকের গ্রুপগুলো অনেক ব্যবহারকারীদের তাদের ব্যক্তিগত জায়গা হিসেবে ব্যবহৃত হয় ।
“ আমরা এই পরিবর্তনটা আনছি কারণ জানতে পেরেছি লোকজন তাদের গ্রুপগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে আরও স্বচ্ছতা চায়।”
ফেসবুক গ্রুপের একজন প্রোডাক্ট ম্যানেজার, জর্ডান ডেভিস এসব কথা একটি ব্লগে বলেছেন।
“ দুটি মাত্র নিরাপত্তা সেটিংস – পাবলিক এবং প্রাইভেট – কারা গ্রুপটি খুঁজে পাবে, কারা সদস্য তা দেখতে এবং গ্রুপের পোস্ট দেখতে পারবে, সে ব্যাপারে সদস্যদের আরও পরিষ্কারভাবে বুঝতে সাহায্য করবে।”
ফেসবুক তাদের সোশ্যাল নেটওয়ার্কের এসব ব্যক্তিগত জায়গাগুলোতে নজরদারী আরও বাড়াচ্ছে। তারমধ্যে বার্তা আদান-প্রদানের জন্য ম্যাসেজিং অন্যতম। এমনকি স্টোরিজের (Stories) এর মতন ফিচার , যেখানে ব্যবহারকারীরা ছবি, ভিডিও ২৪ঘণ্টার জন্য প্রকাশ করত সেখানের নিরাপত্তা জোরদার করছে ফেসবুক। কারণ এসব ফিচার থেকে ঘৃণাত্মক কথাবার্তা, ভুল তথ্য এবং অন্যান্য আক্রমণাত্মক কন্টেন্ট যা কিনা ফেসবুকের নিয়ম-শৃঙ্খলা পরিপন্থী তা নিয়ন্ত্রণ করা ফেসবুকের জন্য ক্রমশ কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। দ্য গার্ডিয়ান -এর ভাষ্যমতে , ভ্যাক্সিন-বিরোধী মানুষজন সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে এসব ক্লোজড গ্রুপগুলোতে ভুল তথ্য মানুষের মাঝে ছড়াচ্ছে।
ডেভিস ব্লগটিতে বলেছেন, ফেসবুকের “সেফটি এন্ড সিকিউরিটি” দলে প্রায় ৩০,০০০ হাজারেরও বেশি মানুষ কাজ করে। আর সেখানে অনেকে আলাদাভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত রয়েছে ফেসবুক গ্রুপগুলোর ব্যবহারকারীদের ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা করতে। এছাড়াও ফেসবুক বিভিন্ন ধরণের কন্টেন্ট মডারেটর এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্ট ব্যবহার করে এসব আক্রমণাত্মক কন্টেন্ট খুঁজে বের করছে। কোম্পানিটির এসব নিয়ম পাবলিক এবং প্রাইভেট উভয় প্রকার গ্রুপগুলোর জনই প্রযোজ্য।
ফেসবুকে নতুন ফিচার সম্পর্কে জানুন এখানে।
ফেসবুক নানান ধরণের উপাত্তের উপর ভিত্তি করে একটি গ্রুপ চালু থাকবে নাকি বন্ধ করে দেওয়া হবে সেটার সিদ্ধান্ত নেয়। এসব উপাত্তের মাঝে রয়েছে, গ্রুপগুলোর ফোকাস কি-ওয়ার্ড, ডেসক্রিপশনে কোন ঘৃণাত্মক উস্কানি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা। এছাড়াও যদি গ্রুপের এডমিনরা ফেসবুকের নিয়ম-শৃঙ্খলা পরিপন্থী কোন পোস্ট এপ্রুভ করে তবে পুরো গ্রুপটিই বন্ধ থাকবে সাময়িক কিংবা সবসময়ের জন্য ।
তথ্যসুত্র – সেন্ট ডট কম