কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বনাম প্রজননক্ষম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশাল ইন্টেলিজেন্স সম্পর্কে আমরা মোটামুটি সবাই ওয়াকিবহাল। করটানা, সিরি, গুগোল নাও এর যুগে আমরা মোটামুটি সবাই কখনো না কখনো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার শরণাপন্ন হয়েছি। আর আমাদের মধ্যে যারা প্রযুক্তি বিষয়ে একটু বেশিই আগ্রহী, তারা হয়তো এটাও জানি যে এই সব আর্টিফিশাল ইন্টেলিজেন্স কিভাবে কাজ করে। আর সময়ের সাথে সাথে প্রতিনিয়তই বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুলো এ আই (AI) প্রযুক্তির উন্নয়ন সাধন করে যাচ্ছে। তো আজকে আমরা আর্টিফিশাল ইন্টেলিজেন্স এরই একটি অতি চমকপ্রদ উন্নতির ব্যাপারে জানবো।

 

গতানুগতিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই পর্যায়টিকে প্রযুক্তি বিশারদ্গণ “নেক্সট জেনারেশন এআই” বলেই আখ্যায়িত করছেন। গুগোলের মতো প্রতিষ্ঠান আসলে প্রযুক্তির দুনিয়ায় এরকম একটা দুইটা মাথা নষ্ট করা এপ্রোচ নিয়ে আসতেই পারে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নাই। তো ওরা আসলে এমন একটি এআই (AI) আর্কিটেকচার ডিজাইন করেছে যা নিজেই আরেকটি এআই আর্কিটেকচার ডিজাইন করতে পারে। গুগোলের ডিজাইনকৃত এআই টিকে বলা হচ্ছে “প্যারেন্ট এআই”। এবং এই প্যারেন্ট এআই যে এআই গুলো ডিজাইন করে সেগুলোকে বলা হচ্ছে “চাইল্ড এআই”। টাস্কি খাওয়ার দরকার নাই আসলে। সময়ের সাথে যে হারে প্রযুক্তিগত উন্নতি সাধিত হচ্ছে তাতে আমাদের এই ধরনের চমকপ্রদ প্রযুক্তির সাথে খাপ খাওয়ানোর মানসিকতা তৈরি করতে হবে।

গুগোলের নেক্সট জেনারেশন এআই কিভাবে কাজ করে সেটা বোঝার আগে বর্তমানে প্রচলিত এ আই গুলো কিভাবে কাজ করে তা একটু সংক্ষেপে জেনে নেয়া যাক। সিরি, করটানা, কিংবা গুগোল নাও এর ক্ষেত্রে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান তাদের সার্ভারে এআই আর্কিটেকচার গুলো কিছু প্যাটার্ন মেইটেইন করে কোড করে। ধরা যাক, আপনি উইন্ডোজের করটানা ইউজার। আপনি করটানাকে বললেন, “ টেল মি আ শর্ট স্টোরি”। প্রতি উত্তরে করটানা আপনাকে বলল, “ওয়ান্স আপন আ টাইম পিপল আস্কড দেয়ার ডিজিটাল এসিস্ট্যান্ট টু টেল আ শর্ট স্টোরি “ । এই উত্তরটায় করটানা আপনার সাথে ফ্লার্ট ও করলো আবার আপনাকে একটা শর্ট স্টোরিও শোনালো। করটানা আপনার সাথে কত রকম উপায়ে ফ্লার্ট করবে সেই প্যাটার্নটা আসলে ওর সার্ভারেই ডিজাইন করা আছে। আপনার প্রশ্ন অনুযায়ি সে একেক বার একেক প্যাটার্ন মেইনটেইন করে উত্তর সাজায়।

আবার আরেকটু উন্নত এআই এর কথা যদি চিন্তা করেন, যেমন বিখ্যাত রোবট সোফিয়ার এআই আর একটু ভিন্ন ভাবে কাজ করে। করটানা আপনাকে উত্তর দেয়ার আগে নেট কানেক্টেড হয়ে আপনার প্রশ্নের উত্তরটি সংগ্রহ করবে তারপর আপনাকে সে আনুযায়ি উত্তর জানাবে। কিন্তু সোফিয়ার ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে সেটি ইন্টারনেট কানেক্টেড হওয়া ছাড়াও পূর্ব অভিজ্ঞতায় প্রাপ্ত জ্ঞান থেকে আপনার সাথে কথা বার্তা চালিয়ে যাতে পারবে।

 

নেক্সট জেনারেশন এআই (AI)

এবার গুগোলের নেক্সট জেনারেশন এআই এর কর্ম পদ্ধতির ব্যাপারে কিছু জানার চেষ্টা করা যাক। সংক্ষেপে এই ব্যাপক জটিল বিষয়টিকে সহজভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করা হলো। প্রথমে প্যারেন্ট এআই টি একটি চাইল্ড এআই তৈরি করে। তারপর প্যারেন্ট এআই-টি চাইল্ড এআই-কে একটি টাস্ক দেয়। চাইল্ড এআই কাজটি সম্পন্ন করে প্যারেন্ট এআই-কে ফিডব্যাক দেয়। এরপর প্যারেন্ট এআই তার চাইল্ড এআই-এর ফিডব্যাক বিশ্লেষণ করে ভুল গুলো চিহ্নিত করে। অতঃপর আরেকটি চাইল্ড এআই ডিজাইন করে যেটাতে পূর্ববর্তি চাইল্ড এআই এর ভুল গুলো সংশোধিত হয়। তারপর এই এআই টিকেও একটি টাস্ক দেয়া হয়। আগের নিয়ম অনুযায়ী ফিডব্যাক বিশ্লেষণ করে প্যারেন্ট এআই। আরও ডেভলপড আরেকটি এআই তৈরি করে। এভাবে চলতেই থাকে। ফর দ্য থাউজেন্ডস অফ টাইম!

গুগলের মতানুযায়ী তাদের প্যারেন্ট এআই যে চাইল্ড এআই গুলো ডিজাইন করে সেগুলো যেকোনো হিউম্যান ইঞ্জিনিয়ারের তৈরিকৃত এআই এর চেয়েও বহু গুণে ভালো হয়।

যা হোক, গুগল থাকুক তাদের আমেজিং আর্কিটেকচার নিয়ে । এতো জটিল বিষয় নিয়ে আমাদের না ভাবলেও চলবে। আমরা শুধু সুফলটুকুর অপেক্ষায় থাকি আপাতত।

Comments are closed.