গতকাল পহেলা অক্টোবর সোমবার ফিজিওলজি বা মেডিসিনে নোবেলজয়ী দুই গবেষকের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। একজন হলেন যুক্তরাষ্ট্রের জেমস পি. এলিসন ( James P. Allison) এবং অপর জন জাপানের তাসুকু হোনজু (Tasuku Honjo)।
এলিসন, University of Taxas এর M.D. Anderson Cancer Research Centre এর চেয়ারম্যান। নোবেলজয়ী গবেষণা করার সময় তিনি University of California at Berkeley এবং Memorial Sloan Kettering Cancer Center in New York এ কাজ করতেন। অন্যদিকে হোনজু জাপানের Kyoto University এর প্রফেসর।
এলিসন এবং হোনজুর এই আবিষ্কারের আগে ক্যান্সারের চিকিৎসা করা হত সাধারণত অস্ত্রোপচার, রেডিয়েশন, কেমোথেরাপি এবং হরমোনাল চিকিৎসার মাধ্যমে। নোবেল কমিটির তথ্যমতে তাদের এই আবিষ্কার ক্যান্সার চিকিৎসায় সম্পূর্ণ নতুন একটি পদ্ধতি। তাদের গবেষণার উপর ভিত্তি করে যে ওষুধ তৈরি করা হয়েছে তা মূলত চেকপয়েন্ট ইনহিবিটর শ্রেণিতে পড়ে। ওষুধ গুলোর নাম উচ্চারণ রীতিমতো দুঃসাধ্য। প্রথমটি হলো ipilimumab (ব্রান্ড নাম Yervoy) তারপর nivolumab( ব্রান্ড নাম Opdivo) এবং pembrolizumab ( ব্রান্ড নাম Keytruda) বাকিগুলো এখনও বাজারজাত করার অপেক্ষায়।
যাই হোক এবার মুল কথায় যাওয়া যাক। প্রথমদিকে গবেষকেরা ক্যান্সার প্রতিকারের জন্য যে ইমিউন ( শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা) সিস্টেম ব্যবহার করত তা মাঝে মাঝে কাজ করত মাঝে মাঝে করত না। ড.এলিসন এবং ড.হোনজু সেখানেই সফলতা দেখিয়েছেন যেখানে অন্য গবেষকরা পারেননি। তারা খুঁজে বের করেছেন কোষগুলো আসলে কিভাবে কাজ করে এবং সে অনুযায়ী ইমিউন সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণ করার উপায় ও উদ্ভাবন করেছেন।
চেকপয়েন্ট ইনহিবিটর সবধরনের রোগীর জন্য কাজ করে না। এগুলা কিছু অনুমোদিত টাইপের ক্যান্সারের কাজ করে। এছাড়া এগুলোর কিছু পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াও আছে এবং বাৎসরিক ব্যয় প্রায় ১০০০০০ ডলার। বর্তমানে বাজারে যেসব ক্যান্সারের জন্য চেকপয়েন্ট ইনহিবিটর পাওয়া যায় সেগুলো হলো অগ্ন্যাশয়(lung) ক্যান্সার, কিডনি ক্যান্সার, মূত্রাশয় ক্যান্সার,মাথার ক্যান্সার, গলার ক্যান্সার, চামড়ার মারাত্মক মেলানোমা ক্যান্সার, হজকিন (Hodgkin cancer) ক্যান্সারএবং আরো কিছু প্রকারের ক্যান্সার।
১৯৯০ সালে ড.এলিসন এবং ড.হোনজু সম্পূর্ণ আলাদা ভাবে দেখান কিভাবে ইমিউন সিস্টেমের টি-সেলের (T-cell) প্রতি ক্যান্সারসেল প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এবং টি-সেলের ক্যান্সার সেল ধ্বংস করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
টি-সেল হলো এক প্রকার রক্ত কণিকা যেগুলোকে অনেক সময় দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সৈনিক বলা হয়। এগুলো ক্যান্সার সহ অন্যান্য ইনফেকশনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। টি-সেল চেকপয়েন্ট নামক পদার্থ বহন করে যেগুলো ক্ষতিকর কোষ বা সেলকে আটকে ফেলতে পারে যখন এমন কোন ক্ষতিকর কোন কোষকে আটকানোর প্রয়োজন হয়। কিন্তু ক্যান্সার কোষ গুলো টি-সেলের এই চেকপয়েন্ট গুলোকে লক (বন্ধ) করে দিতে পারে। এবং টি-সেল গুলোকে ওই ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা মূলক ব্যবস্থা নেওয়া থেকে বিরত রাখে।
ড. এলিসন এই ধরনের চেকপয়েন্টর নাম দিয়েছেন CTLA-4 এবং ড.হোনজু অন্য আরেক ধরনের চেকপয়েন্ট শনাক্ত করেন এবং নাম দেন PD-1। তাদের আবিষ্কার এই চেকপয়েন্ট গুলোকে নিষ্ক্রিয় করার জন্য ওষুধ তৈরির পথ বের করেছে,যেন টি-সেল গুলো ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করতে পারে।
ছবিটিতে টি-সেলের ক্যান্সারকোষ আক্রমনের কৌশল এবং ক্যান্সারকোষের তা প্রতিরোধের কৌশল এবং ওষুধ প্রয়োগের পর টি-সেলের পুনরায় ক্যান্সারকোষকে আক্রমণের কৌশল দেখানো হয়েছে।
Ipilimumab ড.এলিসনের চেকপয়েন্ট CTLA-4 এর উপর কাজ করে এবং অন্য ওষুধটি কাজ করে PD-1 এর উপর।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারকে তার ব্রেইন এবং লিভারের ক্যান্সারের জন্য চেকপয়েন্ট ইনহিবিটর Keytruda প্রয়োগ করা হয় ২০১৫ সালে এবং গত জুনে তার শরীর স্ক্যান করা হলে কোন ক্যান্সারপাওয়া যায় নাই।
আগস্টে একটি গবেষণা প্রকাশ করা হয় সেখানে দেখা যায় Yervoy এবং Opdivo মেলানোমায় আক্রান্ত রোগীদের জীবন কাল বৃদ্ধি করতে পেরেছে।
কিন্তু এতো সফলতার পরেও এই চিকিৎসার বেশ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে যেমন এক্ষেত্রে রোগীর নিজের শরীরের কোষের প্রতিও অ্যান্টিবডি তৈরি হতে দেখা গেছে। তাছাড়া অগ্ন্যাশয়সহ বেশ কিছু অঙ্গে সমস্যা হতে ও দেখা গেছে।
কিন্তু চিকিৎসকেরা এগুলোর নিয়ন্ত্রণ করতে উপায়ও বের করেছেন। সামগ্রিক দিক বিবেচনায় এগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার চেয়ে উপকারই বেশি পাওয়া যায়।