বাাংলাদেশের অনবায়নযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদগুলো এবং তাদের উৎপত্তিস্থল

মানব ইতিহাসে এখন পর্যন্ত যত উন্নতি হয়েছে তার কল্যাণে রয়েছে বর্তমানের জ্বালানি শিল্প এবং সংশ্লিষ্ট সকল শিল্প এবং বাণিজ্য। বর্তমান পৃথিবী চলছে তার ভূ-গর্ভে অবস্থিত তেল, গ্যাস, লৌহ,সোনা, কয়লা (কার্বন), এমনকি পারমাণবিক শক্তি দিয়েই। এসকল শক্তির প্রধান উৎস অবশ্যি সূর্য। পৃথিবীতে শক্তির আরেকটি উৎস হচ্ছে কার্বন। এখন কার্বন বলতে যদি আপনি শুধু কয়লাকে বুঝে থাকেন তা কিন্তু না। প্রাকৃতিক তেল, গ্যাস, অনেক খনিজ পদার্থ এই কার্বনের আরেকটি রূপ।বাকিগুলো হয়ত এসেছে পৃথিবীর ভিতর থেকে অথবা কোনো এক সময় পৃথিবী সৃষ্টির প্রাক-কালে। বাংলাদেশেও প্রাকৃতিক সম্পদের অভাব নেই। আমাদের চোখের অগোচরে রয়ে গেছে সেই সম্পদগুলো যা আজও মাটির অনেক গভীরে লুকিয়ে আছে অথবা সমুদ্রের তীর ঘেষে পড়ে রয়েছে বা সমুদ্রে ঢেউয়ের সাথে বালিতে মিশে যাচ্ছে। হয়ত বঙ্গোপোসাগরের “কন্টিনেন্টাল শেলফ” এ পলললের মধ্যে বা গভীর সমুদ্রে লুকিয়ে আছে বাংলাদেশের অমূল্য কিছু সম্পদ? আসুন জেনে নিই বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদগুলো এবং তাদের উৎস সম্পর্কে।

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদগুলো

বার্মা তেল কোম্পানির ১৯৫৫ সালে এই দেশে গ্যাসের উৎস আবিষ্কার, ১৯৬২ সালে জামালপুরে কয়লার খনি আবিষ্কার এবং উত্তোলন, সাঙ্গু গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার, বালুর মধ্যে বিভিন্ন ধরণের খনিজ পদার্থের আবিষ্কার (কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত), গভীর সমুদ্রে প্রাকৃতিক গ্যাস মিথেনের কঠিন রূপ গ্যাস হাইড্রেটের উপস্থিতি ইত্যাদি প্রমাণ করে বাংলাদেশে কতটুকু প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে এবং যথাযথ ব্যবস্থার মাধ্যমে এই সকল সম্পদ আহরণ করা সম্ভব।

আমাদের যা রয়েছে,

১। প্রাকৃতিক গ্যাস

২। কয়লা

৩। বিভিন্ন খনিজ পদার্থের মধ্য হতে প্রাপ্ত বিভিন্ন ধাতব পদার্থ যেমন বেরিয়াম, ক্রোমিয়াম, সোনা, লৌহ, টিন, থোরিয়াম, টাংস্টেন, জিরকোনিয়াম ইত্যাদি ()

৪। অধাতব পদার্থের মধ্যে লাইম, বালি(সিলিসিয়াস), গ্রেভেল ইত্যাদি।

৫। গ্যাস হাইড্রেট (সমুদ্রের গভীরে অবস্থিত কঠিন মিথেন গ্যাস)

৬। ম্যাঙ্গানিজ নুড়িওলস (বিভিন্ন খনিজের মিশ্রণ)

গ্যাস হাইড্রেট

প্রাকৃতিক সম্পদগুলির উৎপত্তি

পৃথিবীতে প্রাপ্ত খনিজ পদার্থ, পেট্রোলিয়াম জাতীয় পদার্থগুলো হয়ত উনিশ শতকের সময়কাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলন করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, বর্তমান বিশ্ব যে হারে এসকল প্রাকৃতিক সম্পদগুলো ব্যবহার করছে এতে আগামী প্রায় ১০০ বছরের মধ্যে এসকল প্রাকৃতিক অনবায়নযোগ্য সম্পদগুলি শেষ হয়ে যাবে।

এখন আসি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে। বাংলাদেশের বর্তমানে সংরক্ষিত গ্যাসের পরিমাণ প্রায় ৭.২৫ TCF (ট্রিনিয়ন কিউবিক ফিট), (তথ্যসূত্রঃ world meters.info, 2017)। বাংলাদেশের জনসংখ্যার পরিপ্রেক্ষিতে যদি হিসেব করা হয় তবে দেখা যাবে এই গ্যাস প্রায় ১০০ বছরের পূর্বেই শেষ হয়ে যেতে পারে (তথ্যসূত্রঃ দ্যা গার্ডিয়ান, ২০০৫)। এটি গেলো আমাদের ভূমির উপরিভাগের গ্যাস সম্পদ। তাই পরবর্তী সময়ের জন্য সমুদ্রের দিকে ধাবিত করতে হচ্ছে আমাদের চাহিদাকে। এখন এই পরিমাণ গ্যাসের উৎস কি? কেনোই বা আমাদের এই অঞ্চলে প্রচুর গ্যাস পাওয়া যায়? শুধু যে গ্যাস তা নয়, এমনকি কয়েক মাস আগে আমাদের উত্তর অঞ্চলের জেলা দিনাজপুরের ইসাবপুর গ্রামে আকরিক লোহা আবিষ্কৃত হয়। তাছাড়া উত্তর বঙ্গের প্রায় অনেকগুলো জেলায় কয়লার খনি রয়েছে যা থেকে বর্তমানে বাংলাদেশের চাহিদা মেটানো হচ্ছে। বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে বেশি দিন হয়নি। বলা যায় আজ থেকে প্রায় ৫৫-২৫ মিলিয়ন বছর পূর্বে বাংলাদেশের সৃষ্টির শুরু। প্রায় বঙ্গোপোসাগরের সৃষ্টির কাছাকাছি সময়ে। (তথ্যসূত্রঃ দ্যা ওয়ার্ড অ্যাটলাস, ২০০৬)।

বঙ্গোপসাগরের উৎপত্তি নিয়ে আমার পূর্বের আর্টিকেলে উল্লেখ করেছিলাম। যদিও সেখানে শুধুমাত্র উৎপত্তি সম্পর্কে উল্লেখ করা আছে, অনবায়নযোগ্য সম্পদগুলির সাথে এর উৎপত্তির সম্পর্ক রয়েছে। কিভাবে? তাই নিয়েই আজকের আলোচনা।

ঘটনাটা ঘটেছিল আজ থেকে প্রায় ১৬৫ মিলিয়ন বছর পূর্বে। ঐ সময় লাউরেশিয়া এবং গন্ডোয়ানাল্যান্ডে প্রচুর সরীসৃপ (ডাইনাসোর), কয়েক প্রজাতির পাখি, আর বিভিন্ন প্রাণীদের সাথে প্রচুর গাছপালা ছিল। কিছু বিজ্ঞানিদের মতে (তথ্যসূত্রঃ জিওলোজি অফ দ্যি প্ল্যানেট আর্থ, ১৯৯৬) আগ্নেয়গিরি থেকে লাভা এবং কালো ছাইয়ের কারণে দুই কন্টিনেন্টের প্রায় সকল প্রানী এবং উদ্ভিদ চাপা পড়ে যায়। একই ঘটনা ঘটেছিল প্রথম “আইস এইজ” এর সময়।

যে প্রানীগুলো মারা গিয়েছিল তাদের শরীরের পচনের পর তা মাটিতে মিশে যায়। যেটাকে আমরা “ডিকম্পোজিশন” বলে থাকি। এসকল প্রাণি এবং উদ্ভিদের পচনের ফলে কার্বনের পরিমাণ বাড়তে থাকে। মাটিতে চাপা থাকার কারণে কার্বনগুলো এক পর্যায়ে মাটির অনেক নিচের স্তরে চলে যায়। সেখানে প্রচুর তাপ এবং চাপের কারণে কার্বনের বিভিন্ন রূপ দেখতে পাওয়া যায় (যেমন কয়লা, মিথেন গ্যাস, পেট্রলিয়াম)। এসকল ধাপগুলো পাললিক শিলার (সেডিমেন্টারি রক) মধ্যে ঘটে। তাছাড়া আগ্নেয় শিলা এবং রূপান্তরিত শিলার মধ্যেও কিছু জমে থাকে। এগুলো একটু ব্যতিক্রম।   পাললিক শিলা মূলত বছরের পর বছর সমুদ্রের নিচে একের উপর আরেক স্তর জমা হয়ে প্রচুর চাপ এবং তাপের ফলে তৈরি হয়েছে। এই শিলা গঠনের মূল উপাদানই হচ্ছে পলল। এ সকল পলল বিভিন্ন ক্রাটুন এবং অরজেনিক ভেল্ট থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে (রাসায়নিক, বাতাস, বৃষ্টি, পানি) ক্ষয় হয়ে কন্টিনেন্টের উপর অবস্থিত সকল নদী নালার মাধ্যমে সমুদ্রে গিয়ে পড়ে। আবার অপর দিকে বিভিন্ন টেকটনিক ক্রিয়াকলাপের ফলে কিছু কিছু ব্লক সমুদ্রের নিচে চলে যায় আর কিছু ব্লক উপরে উঠে আসে। এদেরকে “আপলিফটমেন্ট” ও “সাবসিডেন্স” বলা হয়ে থাকে। এর মাঝে যে সকল মৃত প্রাণী এবং গাছপালা ছিল সবকিছুই ঐ একটি নির্দিষ্ট স্তরে আটকা পড়ে। যেহেতু পুরো পাললিক শিলার স্তর সমুদ্রের নিচেই অবস্থান করে, সেক্ষেত্রে পানির নিচে প্রচুর চাপের ফলে স্তরগুলো আরো বেশি স্থিতিশীল হয়। যার কারণে যখন কোনো ধরনের ভূমিকম্প ঘটে অর্থাৎ টেকটনিক ক্রিয়াকলাপ ঘটে তখন একটি ব্লক উপরে উঠে আসে অথবা একে অপরকে ধাক্কা দেওয়ার (কনভারজেন্স) ফলেও ভূমি উপরের দিকে উঠে আসে। এই অবস্থা কে এন্টিক্লাইন বা ধনুকের মতো উপরের দিকে বাকানো একটি অবয়ব বা গঠন তৈরি করে থাকে। এই এন্টিক্লাইনের পাশাপাশি সিনক্লাইন (এন্টিক্লাইনের বিপরীত) ও তৈরি হয়।

এখন আসি এই এন্টিক্লাইন এবং সিনক্লাইনের কাজ কি? তার আগে বলে রাখি যে এই এন্টিক্লাইন এবং সিনক্লাইন তৈরি হয়েছে বিভিন্ন পলল স্তরের আকৃতির বিকৃতির(Deformation) কারণে। আর তা হয়েছে টেকটনিক ক্রিয়াকলাপের জন্যে। আমাদের যে পেট্রলিয়াম সম্পদ রয়েছে তা মূলত এই এন্টিক্লাইনের মধ্যেই অবস্থান করে।(তথ্যসূত্রঃ redford.edu) অবশ্য প্রশ্ন আসবে কেন? এবং সিনক্লাইনে নয় কেন?

এর সম্ভাব্য উত্তর কিছু জিওলোজিস্ট রা দিয়ে গিয়েছেন যে, যখন পললের একটি স্তর উপরের দিকে উঠে আসে তখন তাদের মধ্যে কিছু ফাকা স্থানের সৃষ্টি হয় যা অবশ্য সিনক্লাইনের ক্ষেত্রে দেখা যায় না। আর যখন পেট্রলিয়াম খুজা হয় তখন এই স্তরেই খোজা হয়। কারন ৫০-৪০০ মিটারের মধ্য থেকে খনিজ পদার্থ বের করা আর ২০০০-৫০০০ মিটার ভিতর থেকে খনিজ বের করা অবশ্যই অনেক তফাৎ আছে বটেই। তাছাড়া এন্টিক্লাইনে যে গম্ভুজের ন্যায় আকৃতির সৃষ্টি হয় তাতে প্রচুর পরিমাণে পেট্রলিয়াম আটকা পড়তেই পারে। এখানে ৩টি স্তর থাকে। ৩টি স্তরে ৩ ধরনের শিলা পাওয়া যায়। তারা হচ্ছে “সোর্স রক”, “রিজারভয়ার রক” এবং “ক্যাপ রক”। ক্যাপ রক মূলত “রিজারভয়ার রক” ‘র উপরের অংশ যা তার মধ্যে অবস্থানরত তেল গ্যাস কে আটকে রাখতে পারে। যে সকল জায়গায় এই ক্যাপ রক ফেটে গিয়েছে অথবা খুবই দূর্বল অবস্থায় আছে সে সকল জায়গায় গ্যাস বের হতে দেখা যায়। এটা এক ধরনের ক্ষতিও বলা চলে। এই ক্যাপ রক কে ড্রিল করেই মূলত তেল, গ্যাস, কয়লা উত্তলন করা হয়ে থাকে। (তথ্যসূত্রঃ Origin of oil-Stanford university,2013)

বাংলাদেশে উৎপত্তি

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পার্থক্য খুবই কম। শুধু মাত্র সেডিমেন্টেশন এবং ভূতাত্তিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের অবস্থান এবং সৃষ্টির মাঝে কিছু আলাদা বৈশিষ্ট রয়েছে। ৫৫ মিলিয়ন বছরের মাঝে ইন্ডিয়ান কন্টিনেন্ট যখন বর্তমানে তিব্বতের মালভূমি এর অবস্থানে আঘাত করে তারপর হিমালয়ের সৃষ্টি। ঐ সময়ে বাংলাদেশের শুধু মাত্র বগুড়া জেলার উত্তর-পশ্চিম অংশ, দিনাজপুর, রংপুর হয়ে সিলেট পর্যন্তই ছিল। আমরা যে কয়লাগুলো আহরণ করছি তা বেশির ভাগই হচ্ছে উত্তর অঞ্চলের জেলাগুলো থেকে। কারণ ইন্ডিয়ান কন্টিনেন্ট এক সময় গন্ডোয়ানাল্যান্ডের একটি অংশ ছিল। আর গন্ডোয়ানাল্যান্ডে সবচেয়ে বেশি ডাইনেসর এবং গাছপালার সূত্র পাওয়া যায় (দক্ষিণ আমেরিকা, ইন্ডিয়ান কন্টিনেন্ট, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, এন্টার্ক্টিকা)। (তথ্যসূত্রঃ দ্যা জিওলোজিকাল হিস্টরি অফ আর্থ)

কারগুলিয়ান হটস্পট শিফট (পুর্বের আর্টিকেলে বিস্তারিত) ‘র কারণে ইন্ডিয়ান কন্টিনেন্ট গন্ডোয়ানাল্যান্ড থেকে ভেঙ্গে যখন উত্তর-পূর্ব দিকে যায় তখন তার সাথে পুরো একটি ব্লক সরে যায়। তারপর হিমালয় অরজেনিক বেল্ট থেকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপায়ে শিলাগুলো (আগ্নেয় শিলা, পাললিক শিলা, রূপান্তরিত শিলা) ক্ষয় হয়ে বায়ু মাধ্যম অথবা পানির মাধ্যমে (নদী-নালা, খাল-বিল, ভূমির উপর দিয়ে বৃষ্টির মাধ্যমে) সমুদ্রে গিয়ে পড়ে অথবা সমুদ্র সৈকতে এসে জমা হয়। কিছু ক্ষেত্রে এই পলল বা সেডিমেন্টগুলো ব-দ্বীপের সৃষ্টি করে। আর আমাদের বাংলাদেশ নিজেই একটি ব-দ্বীপ। তার কারন প্রায় ৫৫ মিলিয়ন বছর পর থেকে আজ পর্যন্ত শুধুমাত্র সেডিমেন্টেশনের মাধ্যমেই বাংলাদেশের ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়। এই পললগুলোর নিচে যে জীব বা গাছপালা পচে(ফারমেন্টেশন) গিয়েছিল, তাই হচ্ছে আজকের বাংলাদেশের গ্যাসের বড় একটি উৎস।

এটি শুধু এখানেই থেমে নেই। প্রায় কয়েক লক্ষ বছরের সেডিমেন্টেশনের ফলে আমাদের প্রায় ২০০ কি।মি। বিস্তৃত কন্টিনেন্টাল শেলফ তৈরি হয়েছে। এই কন্টিনেন্টাল শেলফ বিভিন্ন পলললের স্তর দিয়ে গঠিত। বঙ্গোপোসাগর খোলার সময় তা বার্মিজ প্লেটের সাথে ধাক্কা খায় এবং সাবডাক্ট করে (পূর্বের আর্টিকেলে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে)। সেখানে যেই খাদ বা ট্রেঞ্চটি তৈরি হয়েছিল তার উপরেই সেডিমেন্টেশন হয় এবং আজকের কন্টিনেন্টাল শেলফ তৈরি হয়। এই কন্টিনেন্টাল শেলফে প্রচুর পরিমাণে পলল জমা হয় আর সাথে কার্বন যৌগ জমা হয়ে থাকে বছরের পর বছর।

বাংলাদেশে যুদ্ধের পর অনেকগুলো তেলের খনি আবিষ্কারের জন্য বিভিন্ন কোম্পানির সাথে চুক্তি বদ্ধ হয়। ১৯৭৪ সালে ৬ টি আর্ন্তজাতিক তেল কোম্পানি বাংলাদেশের অফশোর অঞ্চলগুলোতে পরীক্ষা চালায়। কোম্পানি গুলো হচ্ছে অ্যাশল্যান্ড, আরকো, সিএসও, ইউনিয়ন, বিওডিসি, ইনা নাফতাপ্লিন। তাছাড়া বাংলাদেশের একজন বিজ্ঞানি হাফিজ (১৯৯৭) বঙ্গোপোসাগরে বিভিন্ন সাইস্মিক এবং অন্যান্য গবেষণা পরিচালনা করেন। এর থেকে হাইড্রোকার্বনের অনেক সূত্র পাওয়া যায়। কুতুবদিয়া এবং সাঙ্গু গ্যাস ক্ষেত্র প্রমাণ করে আমাদের অফশোরে কত পরিমাণ গ্যাস থাকতে পারে। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার তেলের সন্ধান পাওয়া যায় নি। (তথ্যসূত্রঃ পেট্রোবাংলা)

প্রোফেসর ড আফতাব আলম খান স্যার নিজেও কিছু সাইস্মিক গবেষণা পরিচালনা করেন। তিনি তার গবেষণায় উল্লেখ করেছিলেন কিছু গভীর খাল নিয়ে যা বর্তমানে পলললের নিচে পুতে আছে। এই সাইস্মিক তথ্যগুলো আমাদের কন্টিনেন্টাল শেলফের উপর করা হয়েছিল। (তথ্যসূত্রঃ Dr. Aftab Alam Khan-Georesource Potential and Geohazard Status of the Bay of Bengal)

এই সকল জায়গাগুলোতেও গ্যাস পাওয়া যাবার প্রচুর সম্ভাবনা থাকেই। গভীর সমুদ্রে (১০০০মিটার+) বিভিন্ন ধরনের খনিজ উপাদান থাকে যা বিভিন্ন ধরনের খনিজ উপাদানের মিশ্রণ। এদের আমরা নুডিওলস বলে থাকি। এছাড়া কঠিন মিথেন গ্যাস হাইড্রেটের উপস্থিতি পাওয়া যায় ভারত এবং বার্মার কন্টিনেন্টাল শেলফের ধার ঘেষে। বাংলাদেশেও থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

আজকের বাংলাদেশ

সেই ৫৫ মিলিয়ন থেকে আজকের ২০২০ সালে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। বিজ্ঞানীদের মতে অনেক ধরনের খনিজ সম্পদ লুকিয়ে আছে এই দেশের মাটিতে। বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান অনু্যায়ী এসকল খনিজ পদার্থ খুজে বের করা এবং উত্তোলন করা অনেক ব্যয় সাপেক্ষ। আমাদের যদি কিছু খুজে বেরও করতে হয়  তবে বাইরের দেশের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এতে করে ক্ষতি বাংলাদেশেরই হচ্ছে কারন সব কিছু বিদেশের অর্থনীতিতে চলে যাচ্ছে। এসকল বিষয়ের উপর আলোকপাত করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ নিজেদের দেশেই এসকল কাজে দক্ষ জনগোষ্ঠি তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এদেশের বিজ্ঞানী এবং ইঞ্জিনিয়ারদের মাধ্যমে অন্যের উপর থেকে নির্ভরশীলতা দূর করা সম্ভব। মাটির নিচ থেকে কিছু খুজে বের করা সহজ কাজ হুলোর মধ্যে একটা না। অনেক বড় বড় কোম্পানিগুলো মিলিয়ান ডলারের ক্ষতির মুখে পড়ে বিলিন হয়ে গিয়েছে। তাই এটা বিজ্ঞানীদের উপর অর্পিত একটি দায়িত্ব, খনি থেকে মহা মূল্যবান জিনিসগুলো খজে বের করা এবং দেশ ও জাতির কল্যাণে তা ব্যবহার করা।

খোদা হাফেজ

2 Comments

Comments are closed.