অনিদ্রা বর্তমান সময়ে একটি পরিচিত ব্যাধি বলা যেতে পারে। আপনি হয়ত খুব বেশী কান্ত হওয়া সত্ত্বেও ঘুমাতে পারছেন না। যাতে করে ভুগছেন হতাশায়। ( দেখুন হতাশা কাটতে ঘুম ) কিন্তু কেন এমন হচ্ছে আর এর থেকে মুক্তির উপায়ইবা কি হতে পারে তা জানার অাগ্রহ হয়ত আমার আপনার সবার।
অনিদ্রাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয়ে থাকে “Insomnia” ।
আমরা সকলেই হয়ত সাম্প্রতিক সময়ে অাবিষ্কৃত দেহ ঘড়ির কথা শুনেছি।আমাদের সকলের মস্তিষ্কই “Circadian clock” মেনে চলে। যা অ্যাড্রালালিন এবং করটিসেলের মত অ্যাড্রিনাল হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রন করে থাকে। সেই সাথে শরীরের তাপমাত্রা, মস্তিষ্কের নানাবিধ কার্যাকলাপ এবং হরমোন উৎপাদন নিয়ন্ত্রন করে।
আর এই অভ্যন্তরীণ দেহ ঘড়িটি দিন-রাত,আলো – অন্ধকার,ঋতু পরিবর্তনের সাথে সংযুক্ত। এবং এটি পৃথিবীর ঘূর্ণনের সাথে সাথে একা একাই বদলে যায়।
সাধারনত এই Circadian – Clock এবং অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি একত্রে কাজ করে একটি হরমোন তৈরী করতে থাকে যাকে বলা হয় “Wake up” হরমোন। যখন আমরা ঘুমিয়ে থাকি তখন এর পরিমান একেবারেই কম থাকে যার ফলে আমরা ঘুমাই এবং প্রকৃতিগত ভাবেই নির্দিষ্ট সময় পর এই হরমোনের মাত্রা বাড়তে থাকে এবং একটি পর্যায়ে আমরা জেগে উঠি।
তবে বিভিন্ন ধরনের স্ট্রেস, ক্লান্তি ও মানসিক চাপের দ্বারা আমাদের দেহ ঘড়ি পরিবর্তিত হয়ে হরমোনের উৎপাদন বাড়িয়ে দিতে পারে আর হরমোন বাড়ার ফলে আমরা অনিদ্রা বা Insomnia তে ভুগি।
তবে সাম্প্রতিক Baylor University -র একদল গবেষক Insomnia থেকে মুক্তির একটি উপায় নির্ধারণ করেছেন এবং তিনটি ধাপে সেটিকে সাজিয়েছেন সেটি হচ্ছেঃ
১. ঘুমানোর আগে পরের দিনের কর্মপরিকল্পনা তৈরী করুন।
২. ঘুমাতে যান।
৩. কর্মপরিকল্পনাবিহীন রাতের তুলনায় ভাল ভাবে ঘুমান।
এটা হয়তবা খুব সাদাসিধে মনে হচ্ছে কিন্তু এই তিনটি ধাপ সত্যিই চমৎকার কাজ করে বলে জানুয়ারীতে Journal of Experimental Psychology তে প্রকাশিত হয়।
এই গবেষণায় অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে যারা ঘুমানোর আগে কর্মপরিকল্পনা তৈরী করেছিল তারা কর্মপরিকল্পনা তৈরী না করাদের তুলনায় তারাতারি ঘুমিয়ে পরেন এবং তাদের তুলনায় বিরতিহীন ভাবে ঘুমান।
এই গবেষণার মূ্ল অংশ ছিল অংশগ্রহণকারীদের মানসিক ভাবে চাপ মুক্ত করা। কেননা তাত্ত্বিকভাবে ভাল ঘুমের জন্য মানসিক ভাবে চাপ মুক্ত থাকাটা অনেক বেশী জরুরী।
বেইলারের স্লিপ নিউরোসাইন অ্যান্ড কনগনিশন ল্যাবরেটরির পরিচালক মাইকেল স্কিলিন এ প্রসঙ্গে বলেন,” আমরা এমন একটা সময় পার করছি যেখানে মানুষ ২৪/৭ দিনে আমাদের করণীয় নিয়ে চিন্তিত যা আমাদের সংস্কৃতি হয়ে দাড়িয়েছে। যেখানে আমাদের করণীয় তালিকা ক্রমাগত ক্রমবর্ধমান হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে যার ফলে ঘুমোতে যাওয়ার সময়ও আমরা অসমাপ্ত কর্ম নিয়ে চিন্তা করছি। বেশীর ভাগ লোকই এটা নিয়ে এতটাই চিন্তা করেন যে ঘুমানোর সাথে সাথে সমস্যার মোকাবেলা করতে পারবেন কিনা তা খুঁজে বের করতে চান যার ফলে অনিদ্রা স্বভাবিক ব্যাপার হয়ে উঠে।”
এটি প্রমাণের জন্য গবেষকরা ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সের ৫৭ জন পুরুষ ও মহিলাদেরকে এক সপ্তাহ ধরে নিয়ন্ত্রিত ল্যাবে ঘুমানোর জন্য অামন্ত্রন জানান। তাদের জন্য একটি নিয়মও বেধে দেন গবেষকরা সেটি হচ্ছে রাত সাড়ে দশটায় (১০:৩০pm) সকল বাতি বন্ধকরে দেওয়া হবে এবং এর পর কোন প্রকার প্রযুক্তির ব্যবহার,হোমওয়ার্ক বা অন্য যেকোন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
ঘুমানোর পাঁচ মিনিট আগে অংশগ্রহণকারীদের কর্ম সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত লেখা সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
যেখানে অর্ধেক অংশগ্রহণকারী পরেররদিনে যে সব কাজ করতে চান তা লিখেন এবং বাকিরা আজকে সম্পূর্ণ করা কাজ গুলো লিখেন। লেখা শেষে সকলে ঘুমাতে চলে যান। এর পর সমস্তরাত ধরে গবেষকরা Polysomnography নামক একটি কৌশল ব্যবহার করে প্রতিটি অংশগ্রহণকারী এর মস্তিষ্কের কার্যকলাপ,আই মমুভমেন্ট, পেশীর কার্যকলাপ এবং অন্যান্য জৈব পরিবর্তন রেকর্ড করে।
গবেষকরা লক্ষ করেন যে যারা টু-দ্য লিস্ট লিখেছেন এবং যারা ইতিমধ্যেই সম্পন্ন কাজগুলি সম্পর্কে লিখেছেন তাদের তুলনায় প্রায় ৯ মিনিট বেশি দ্রুত ঘুমিয়ে পড়েছেন।
২০০৬ সালেও অনুরূপ একটি গবেষণায় দেখানো হয়েছিল ১০ মিনিটের ব্যবধানে তারা ঘুমিয়ে পড়েছিলেন
তবে দলটি জানায় আরো বেশ কিছু নমুনা গ্রহন করলে হয়ত পরীক্ষাটি আর উন্নত করা সম্ভব। অংশগ্রহণকারী ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব এবং তার পূর্বের মেডিকাল রিপোর্ট পর্যালোচনাও একটি বড় বিষয়। কারন ২০০৬ সালের করা গবেষণাটি বাত রোগ,এইচআইভি / এইডস সহ রোগের রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে যুক্ত ছিল। তবে এই গবেষণায় মানসিক প্রশান্তির উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
সুতরাং, বিছানায় যাওয়ার পরের দিনের কর্মপরিকল্পনা তৈরী করুন এবং আশা করি অাগের দিনের তুলনায় আপনি খুব তারাতারিই ঘুমিয়ে পরবেন।
“শুভ রাত্রি”