গুজবঃ Photo Lab ইউজার এর ডাটা মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থায় যায়!!!

“Okay, Google”- বলার সাথে সাথে লাইন থেকে ট্রিগার ওয়ার্ড বেছে নিয়ে সাথে সাথে ফোন বুঝতে পারে আপনি গুগলের ভয়েজ কমান্ড ইউজ করতে চাচ্ছেন। এখন একবার ভাবুন তো এরজন্য কি আপনাকে আলাদাভাবে মাইক্রোফোন একটিভ করা লাগছে বা কোনো এপ এ ঢুকে বলতে হচ্ছে? মানে কি দাঁড়ায় এর?

আপনি যেদিন থেকে গুগলের পন্য ব্যবহার শুরু করলেন সেদিন থেকে আপনার ডাটা গুগলে যাচ্ছে। এমনকি আপনি নিজে সে অনুমতি দিয়েছেন!! বিশ্বাস হচ্ছে না?

উপরের উইন্ডোটা হচ্ছে যখন আপনি ফোনে গুগল একাউন্ট দিয়ে লগ ইন করেন। এখানে স্পষ্ট বলা আছে আপনার ডাটা এড এনালাইসিস এর জন্য যাবে।

এখন আসি আসল কথায়, সম্প্রতি একটি নিউজ খুব ছড়াচ্ছে যে, যারা Photo Lab এপ ইউজ করে তাদের তথ্য যাবে মার্কিন গোয়েন্দার কাছে। কথাটি পুরো ভুল। আসলে এই এপ না চালালেও আপনার ডাটা আগে থেকেই গোয়েন্দা সংস্থা সহ বিভিন্ন কোম্পানির কাছে আছে। এই লিংক এ ক্লিক করে(এখানে) জানতে পারবেন আপনার ডাটা ইউজ করে ফেসবুক, গুগল কত ডলার ইনকাম করে থাকে।

আপনি হয়তো প্রায়ই ফেসবুকের কোনো পোষ্টের উপরে দেখে থাকে “Sponsored” লেখা। ফেসবুকে বিলিয়ন ইউজার থাকতেও কেনো আপনার নিউজফিডেই এই এড আসছে? কখনো প্রশ্ন হয়েছে?

কারণ একটিই, ফেসবুকে আপনার ডাটা, মেসেজ এসব কিছুর Sentiment Analysis করে এবং বিভিন্ন NLP (Natural Language Processing) ব্যবহার করে আপনার চ্যাট থেকে বেছে নেওয়া হচ্ছে ব্যবসায়িক রিলেটেড কোনো শব্দ। আপনার দেওয়া বিভিন্ন রিয়েক্ট এর উপর ভিত্তি করে ট্রেইন করা হচ্ছে State of the Art এর মেশিন লারনিং এলগরিদমকে। কিন্তু এ নিয়ে আমরা এতো আহামড়ি ভাবে নিউজ ছড়াই না কেন? কারণ একটিই, আমাদের ফেসবুক ইউজ করতেই হবে।

আচ্ছা এখন আসা যাক মার্কিন গোয়েন্দা নিয়ে। আপ্নারা হয়তো জানেন 9/11 এর কথা। 9/11 এর পর থেকে NSA প্রায় প্রতিটি নেটওয়ার্ক এ মনিটরিং করে। সকল ডাটা NSA ইন্টারসেপ্ট করে। যে সেবা আপনি ইউজ করছেন এবং যা USA দিয়ে থাকছে, সেখানের আপনার সকল প্রকার ডাটা USA এনালিসিস করবে। শুধুমাত্র জঙ্গবাদী বা USA এর জাতীয়তাবাদে আঘাত করতে পারে এমন সকল ডটা তাদের কাছে মুল্যবান। 9/11 এর পর থেকে USA এর সাইবার ওয়ার্ল্ড খুব দ্রুত পরিবর্তন এনেছে। এবং আইন অনুযায়ী USA এর সকল টেক কোম্পানি তাদের ডাটা NSA কে দিতে বাধ্য। তাই আপনি যদি ভেবে থাকে এই Photo Lab এপ আপনি ইউজ করেন নি তাহলে আপনার সব ডাটা নিরাপদ, তাহলে তা হলো সবচেয়ে অজ্ঞ কথা। এখন একটু ঠান্ডা মাথায় ভাবুন, ধরে নিন আপনার ডাটা নাহয় গেলো গোয়েন্দার কাছে (যদিও যেদিন থেকে ফোন ইউজ করেন সেদিন থেকেই যাচ্ছে), তাহলে আপনার এতো চিন্তা হওয়ার কারণ কি? আপনি তো কোনো জঙ্গিয়াদী করেন নি, আপনি একজন সাধারন মানুষ, যে নিজের একটা ছবিকে সুন্দর ইডিটিং করতে চাচ্ছেন।

এই এপের জন্য চিন্তা না হয়ে আপনার চিন্তা করা উচিত আপনি যে ক্র্যাক ইউজ করেন পিসিতে সেগুলো নিয়ে। কারণ ক্র্যাক আপনার পিসিতে বসিয়ে রাখতে পারে একটি BackDoor যার মাধ্যমে ক্র্যাক কোম্পানিগুলো যেকোনো সময় আপনার পিসিতে ঢুকতে পারছে, শুধু তাই নয়, আপনার পিসিতে হয়তো একটি কি-লগার ও সেটাপ করে দিয়েছে। আপনি যা টাইপ করছেন তা একটি ফাইল আকারে পেয়ে যাচ্ছে ক্র্যাকাররা।

আরেকটি চিন্তা বিষয় হওয়া উচিত “ফ্রি VPN”. আপনার কি আদৌ কোনো ধারনা আছে ফ্রি VPN কিভাবে আপনার ডটা নিচ্ছেন। সহজ ভাষায় যদি আপনাকে বুঝাই, আপনি একটা মেসেজ আমাকে পাঠাতে চাচ্ছেন যেটা খুবই গোপনীয়। এখন সেটা আপনি লিখতে পারছেন না, আপনি অন্য কাউকে দিয়ে টাইপ করে পাঠাচ্ছেন। আপনি যখনি VPN ইউজ করা শুরু করলেন, ঠিক তখন থেকে আপনার সব ডাটা VPN এর সার্ভার হয়ে যাবে। অর্থাৎ এতে কোনো সন্দেহই নেই যে VPN কোম্পানি গুলো আপনার ডাটা এনালাইসিস করবে।

আমাদের মধ্যে সাইবার সচেতনতা খুবই কম। আমরা গুরুত্বপূর্ণ কিছুতে খেয়াল না করে পুরো মাথাটা নষ্ট করি গুজব শুনে। অবশ্য এর জন্য আপনি দায়ী না, দায়ী আমাদের মিডিয়া।

লেখাটি যুক্তিসংগত মনে হলে, অবশ্যই অন্তত আপনি এই বিধিনিষেধ গুলো মেনে চলবেন। ধন্যবাদ।

2 Comments

Comments are closed.