প্রতিবেদকঃ মোঃ খিজির হায়দার
কল্পনা করুন এমন এক জেট ইঞ্জিনের কথা, যা আপনার মহাকাশযানটিকে প্রচলিত ইঞ্জিন গুলো আপেক্ষা বেশী দ্রুত গতিতে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল থেকে বাহিরে নিয়ে গেলো। আর এসব কিছুই ঘটছে কোনরূপ জীবাশ্ম জ্বালানি ছাড়াই এবং অতি অল্প খরচে। ঠিক এ কাজটিই করবে একটি প্লাজমা জেট ইঞ্জিন। যদিও এই ইঞ্জিনটির গবেষণা এখনো গবেষণাগারে সীমাবদ্ধ রয়েছে তবুও এর প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে স্যাটালাইট ও অন্যান্য মহাকাশযান পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা। আর এখন টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব বার্লিনের গবেষকগণ চেষ্টা করছেন এই ইঞ্জিনকে গবেষণাগারের বাইরে নিয়ে আসার। প্রচলিত জেট ইঞ্জিনগুলিতে থ্রাস্ট বা ধাক্কা তৈরীর জন্য জ্বালানীর সাথে সাথে বাতাস সঙ্কুচনের একটি মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই মিশ্রণটি দ্রুত পুড়ে গিয়ে যানটিকে সামনের অগ্রসর হতে সাহায্য করে। প্লাজমা জেট ইঞ্জিনে তড়িৎচুম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরীর জন্য জ্বালানীর পরিবর্তে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব বার্লিনে বারকান্ট গোকেলে এবং তাঁর দল এই প্লাজমা জেট ইঞ্জিনকে একটি বিমানে স্থাপন করতে যাচ্ছেন। তাঁরা বলেন, “আমারা এমন একটি পদ্ধতি গড়ে তুলতে চাই, যা একটি বিমানকে ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩০ কিলোমিটার উপরে চলতে সাহায্য করবে যেখানে প্রচলিত জেট ইঞ্জিন যেতে পারে না।” আর এটি যাত্রীদের বায়ুমন্ডলের শেষভাগে কিংবা তার বাইরেও নিয়ে যেতে সক্ষম। তবে এ ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের বিষয়টি হচ্ছে, এমন একটি বায়ু-শোষক প্লাজমা পরিচালিত জেট ইঞ্জিন গড়ে তোলা যা এই বিশাল উচ্চতায় বায়ুর চাপ সহ্য করে উড়তে পারবে । প্লাজমা জেট ইঞ্জিনকে একটি ভ্যাকুয়াম অথবা কম চাপের বায়ুমন্ডলে কাজ করার মতো করে নকশা করা হয়েছে, যেখানে তাদের একটি গ্যাস সরবরাহক বহন করতে হবে। কিন্তু এই মুহূর্তে প্রকৌশলী দল এমন একটি ইঞ্জিনের ডিজাইন তৈরির চেষ্টা করছেন বায়ুর নিম্নচাপের মধ্যেও কাজ করতে পারে। “আমরাই সর্বপ্রথম সবথেকে দ্রুতগতির এবং শক্তিশালী প্লাজমা জেট উৎভাবনে সক্ষম হয়েছি। এই জেট ইঞ্জিনটি সেকেন্ডে ২ কিলোমিটারের বেশী গতিতে পৌঁছাতে সক্ষম।” দলটি ইঞ্জিন চালু করার জন্য ন্যানোসেকেন্ডে ইলেকট্রিক ডিসচার্জ প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন যা দ্রুতগতির প্রবাহ সৃষ্ঠির মাধ্যমে দ্রুত গতিতে ইঞ্জিনটিকে চালু করতে সক্ষম। যা উক্ত ইঞ্জিনটিকে, সাধারণ জ্বালানী-চালিত ইঞ্জিনের চেয়ে অনেক বেশী দক্ষ করে তুলেছে। আর প্লাজমা থ্রাস্ট বিস্ফোরন প্রয়োগের এটাই প্রথম কোন ঘটনা। কিন্তু এই প্রযুক্তির মাধ্যমে কোন বিমানকে পরিচালিত করতে হলে কিছু বাধা অতিক্রম করতে হবে। উড্ডয়ন শুরুর জন্য দলটি ৮০ মিলিমিটারের ক্ষুদ্র থ্রাস্ট ব্যবহার করেছেন, যেখানে একটি বাণিজ্যিক বিমান উড়তে এরকম প্রায় ১০,০০০ থ্রাস্টের প্রয়োজন পড়ে। এই সমস্যা বর্তমান নকশাকে অনেকটা জটিল করে তুলেছে। আপাতত সমস্যা এড়িয়ে যেতে, গবেষক দলটি ছোট আকারের বিমান বেছে নিয়েছেন যাদের থ্রাস্ট ১০০ থেকে ১০০০ এর মধ্যে থাকবে। আর তাঁদের ধারণা এটা নির্মান করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব হবে। তবে সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হচ্ছে হালকা ওজনের ব্যাটারির অভাব। প্লাজমা তৈরী ও বজায় রাখতে হলে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুতের প্রয়োজন। গোকেল আশা করছেন যে, তাঁর পদ্ধতিকে পরিচালিত করতে কমপ্যাক্ট ফিউশন রিএকটরের ব্যবহার করবেন। অন্যান্য সম্ভাব্য বিকল্পগুলির মাঝে রয়েছে সৌর প্যানেল কিংবা ইঞ্জিনগুলিকে বিনা তারে শক্তি প্রেরণ করার ব্যবস্থা করা। এরই মধ্যে তিনি হাইব্রিড বিমানের দিকে নজর দিচ্ছেন, যেখানে প্লাজমা ইঞ্জিনকে কম্পন বিস্ফোরক জ্বালানী ইঞ্জিন কিংবা রকেটের সাথে সংযুক্ত করে জ্বালানী সাশ্রয় করা যাবে।