বর্তমানে পৃথিবী এমন অবস্থানে চলে গেছে যেখানে শুধুই প্লাস্টিক আর প্লাস্টিসিটি।
প্লাস্টিকের করাল গ্রাস থেকে ফিরে আসাই মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে মানবজাতির জন্যে। ১০০ বছর লেগে যায় পচতে, মানু্ষ নাই হয়ে যাবে, তাও প্লাস্টিক বেচেই থাকে।
একেতো এর আদর্শ বিকল্প (পাটজাত পণ্য, আশজাতীয় পণ্য) এখনো সহজলভ্য নয়, তার উপর প্রতিনিয়ত এর ব্যবহার দিনকে দিন বেড়েই চলছে।
কোথাও কেউ নেই যেন এর দৌড় থামানোর।

যাই হোক, প্লাস্টিক তো একবারেই না ব্যবহার করে থাকা যাবে না, তবুও একটু সাবধানতা অবলম্বন করাই যায়।
প্লাস্টিকের গ্রেডিং এর দিকে খেয়াল করলে খুব সহজেই নিরাপদ থাকা সম্ভব। খেয়াল করলে দেখবেন যে, প্লাস্টিকের তৈরি পণ্যতে ত্রিভূজের আকৃতির মধ্যে একটি সংখ্যা লেখা থাকে,সাথে থাকে ইংরেজি কিছু অক্ষর, সেটাই প্লাস্টিকের গ্রেড বুঝায়। অনেক গ্রেড আছে, গ্রেড ১,২,৬,৭ ইত্যাদি।
বানানোর উপকরণ, বিষাক্ততা,তাপধারণ ক্ষমতা,রিসাইকেলিং করা ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে গ্রেডিং করা হয়ে থাকে।

আজকে আমরা সে বিষয়টাতে আলোকপাত করব:
– গ্রেড ১:
এর ক্ষেত্রে রিসাইকেলিং সিম্বল এর মাঝেই ১ সংখ্যা লেখা থাকে এবং PETE লেখা থাকে তার নিচেই।

যা দ্বারা বুঝায়, পলিথিলিন টেরাফথালেট(Polyethylene Terephthalate) নামক পলিথিন দিয়ে এসকল দ্রব্য বানানো হয়ে থাকে যা প্রধানত পানি, সোডা, তেলের জন্যে বোতল বা কন্টেইনার তৈরিতে।

পানীয় বোতল তৈরিতে বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।রিসাইকেল করা সম্ভব, করে গালিচা, খেলনা ইত্যাদি তৈরি করা সম্ভব। তবে দিনের পর দিন ব্যবহার করা বিপদজনক স্বাস্থ্যের জন্যে।
– গ্রেড-২

সিম্বলের মাঝে থাকে ২ সংখ্যাটি এবং এর নিচে থাকে HDPE(High Density Polyethylene)। এর মানে হলো, প্লাস্টিকটিতে উচ্চ ঘন পলিথিলিন পদার্থের উপস্থিতি রয়েছে। শ্যাম্পুর বোতল, সসের বোতল, জুসের বোতল, ক্লিনার এর বোতল, দইয়ের পাত্র ইত্যাদিতে ব্যবহার করতে দেখা যায়, অনেকটা নিরাপদ বলা চলে। কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহারের জন্যে কোনোটাই যুগোপোযোগী নয়।
রিসাইকেলের ফলে এর রুপ হয় কলম, টেবিল, চেয়ারে।
– গ্রেড-৩

আগের মতই সংখ্যা থাকে এবং তা ৩, সংখ্যার নিচে লেখা থাকে V কিংবা PVC(polyvinaylcholoraid). ক্লোরিনের উপস্থিতি রয়েছে। দেখা যায়, ATM card, ডিটারজেন্ট এর বোতলে, খাবার মোড়ানোর প্যাকেট, প্লাম্বিং পাইপ ইত্যাদিতে।
এককথায় দেহের জন্যে ক্ষতিকর, দীর্ঘদিন একটানা ব্যবহারে ক্যান্সার, চর্মরোগের লক্ষণ লুকিয়ে আছে যা প্রকাশ পাবে।
তাছাড়া পরিবেশের জন্যে তো ক্ষতিকর ই।
– গ্রেড-৪

বলতে গেছে অন্যতম নিরাপদ গ্রেড দিনকেদিন ব্যবহারের জন্যে। বানানো হয়ে থাকে LDPE(low density polyethylene) থেকে। সংখ্যা হল ৪ যা ত্রিভূজের মধ্যে থাকে।
ব্যবহার করা হয়ে থাকে- শপিং ব্যাগ, পোশাক, গালিচা, হিমায়িত খাবার, রুটির ব্যাগ, ও খাবার মোড়ানো ইত্যাদির পলিথিন ব্যাগে। রিসাইকেলিং করা কিছুটা কঠিন।
– গ্রেড-৫

সিম্বলের মধ্যে সংখ্যা লেখা থাকে ৫ এবং এর নিচে থাকা ইংরেজি অক্ষর হল PP(polypropylene)
মানে হল প্লাস্টিকটিতে পলিপ্রোপিলিন পদার্থ এর উপস্থিতি রয়েছে যা ব্যবহার করা হয়ে থাকে কেচাপ,সিরাপ ইত্যাদির বোতলে। ব্যবহারের দিক দিয়ে অন্যতম নিরাপদ প্লাস্টিক এটি। রিসাইকেলযোগ্য নয়।
– গ্রেড-৬
এই প্লাস্টিকের গায়ে রিসাইক্লিংয়ের ত্রিভূজ আকৃতিটির নিচেই লেখা থাকে PS (Polystyrene) এবং সংখ্যাটি হল ৬.

ব্যবহারের দিক দিয়ে ক্ষতিকর নাম কুড়িয়েছে এটি। ব্যবহার করা হয় ডিমের খাঁচা, প্লাস্টিকের কাপ প্লেট ইত্যাদিতে। রিসাইকেল করা অন্যগুলোর চেয়ে তুলনামূলক ভাবে কঠিন ই বলা চলে। রিসাইকেলযোগ্য নয়।
স্বাস্থ্যগত সমস্যার পাশাপাশি পরিবেশগত ক্ষয়ক্ষতি সাধিত করে থাকে।
– গ্রেড-৭

এই প্লাস্টিক বিভিন্ন পদার্থের মিশ্রণের মাধ্যমে তৈরি হয়, যা পলিকার্বনেটের অন্তর্ভুক্ত, সিম্বলের ভিতরের সংখ্যাটি হল ৮ এবং এর প্রস্তুতিতে BPA নামক বিষাক্ত পদার্থ ব্যবহার করা হয় যা অনেক রোগের সূত্রপাত ঘটিয়ে থাকে। সাধারণত সানগ্লাস, আইপড, বুলেটপ্রুফ সামগ্রীতে বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
নিরাপদ নয়।
অনেক সময় দেখা যায় আমরা প্লাস্টিকের পদার্থে গরম কিছু নিয়ে ব্যবহার কিংবা পান করে থাকি যা মোটেও কাম্য নয়, এতে করে প্লাস্টিকের উপাদান গলে গিয়ে পানীয় সামগ্রীতে মিশে গিয়ে দেহের DNA এর গঠন পরিবর্তন করে ফেলতে সক্ষম।
তাই আমাদের উচিত প্লাস্টিকজাত পণ্য ব্যবহার কমিয়ে কাচ, পাট, চিনামাটি, স্টেইনলেস স্টিলের পণ্য ব্যবহার করতে পারি, এতে করে যেমন ভালো থাকা যাবে, তেমনভাবে খাদ্যদ্রব্য ভালো রাখা এবং অনেকসময় ধরে সংরক্ষণ করা যাবে।

সোর্সঃ qualitylogoproducts