সময়টা গত শতাব্দীর ত্রিশের দশক। তখন পর্যন্ত সবাই কাঠ, চামড়া, ধাতব বস্তু দিয়ে তৈরি বাসনের ওপর নির্ভর করত। আচমকাই দ্বিতীয় বিশ্বযু্দ্ধের আগে আগে ইংল্যান্ডের একটি কারখানায় পেট্রোলিয়াম থেকে আবিষ্কার হয় প্লাস্টিক।
আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ধীরে ধীরে সভ্যতা যত এগিয়েছে প্লাস্টিকের চাহিদা ততই বেড়েছে। আর আমাদের এই চাহিদা আগামী দিনে পৃথিবীকে ধংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে।
প্লাস্টিকের উৎপাদন ও পরিণতি
প্রতিনিয়ত কি পরিমাণ প্লাস্টিক তৈরি হচ্ছে এবং কোথায় গিয়ে তা শেষ হচ্ছে সে ব্যাপারে সাধারণ মানুষের নিশ্চিত কোন ধারণাই নেই। ১৯৫০-এর দশক থেকে উৎপাদিত অথচ পুড়িয়ে ফেলা বা রিসাইকেল করা হয়নি এমন কঠিন প্লাস্টিকের বর্জ্যরে পরিমাণ ৪৯০ কোটি টন। এগুলো মাটিতে পুঁতে চাপা দিতে গেলে ৭০ মিটার গভীর ও ৫৭ বর্গকিলোমিটার জায়গা অর্থাৎ ম্যানহাটানের সমান এলাকা লাগবে।
এগুলো যদি সবটাই জমিতে থাকত কিংবা সাগরের পানিতে ভেসে ভেসে সৈকতে এসে জমা হতো তাহলে সেগুলো সংগ্রহ করা যেত। কিন্তু এর চেয়ে বড় পরিবেশগত ভাবনার ব্যাপার হলো এই প্লাস্টিকের বেশিরভাগ সাগরে গিয়ে শেষ হয়েছে। সেখানে স্রোতের দ্বারা ছড়িয়ে পড়ায় প্লাস্টিক পুনরুদ্ধার করা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে যখন তা ভাঙতে ভাঙতে পরিণত হয়েছে মাইক্রোপ্লাস্টিকে। কম্পিউটার মডেলে দেখা যায় সাগরে ৫১ ট্রিলিয়ন মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা আছে।
বর্তমান হারে চলতে থাকলে ওজনের হিসাবে বিশ্বের জলরাশিতে যে পরিমাণ মাছ আছে ২০৫০ সাল নাগাদ তার চেয়ে বেশি প্লাস্টিক থাকবে।
উপায়
প্রায় এক দশক ধরে ভারতের দেহরাদুনে ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব পেট্রোলিয়াম এর গবেষকেরা প্লাস্টিকের দূষণ রোধে প্লাস্টিক থেকে স্বল্প খরচে পেট্রোলিয়াম তৈরি করার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। তাদের লম্বা সময়ের গবেষণা অবশেষে সফলতার মুখ দেখেছে।
তারা এমন একটি অনুঘটক সমাহার (combination of catalysts) খুঁজে পেয়েছেন যা প্লাস্টিককে খুব সহজেই তরল পেট্রোলিয়াম বা এরোমেটিক যৌগে পরিণত করে। ক্যাটালিস্টের কম্পোজিশন কেমন হবে তার উপর নির্ভর করে নির্দিষ্ট পেট্রোলিয়াম উৎপন্ন করা সম্ভব। সুখবর এই যে, পেট্রোলিয়াম উৎপাদনের এই পদ্ধতিটি সম্পূর্ণ নন টক্সিক (non toxic)।
কিভাবে কাজ করে?
মূলত, এ পদ্ধতিতে প্লাস্টিকের পাইরোলাইসিসের মাধ্যমে পেট্রোলিয়াম উৎপন্ন হয়। ক্যাটালিস্ট এর উপস্থিতিতে উচ্চ তাপমাত্রায় প্লাস্টিকের অণুগুলো ভেঙ্গে যায় যা পরবর্তীতে কনডেনসেশনের ফলে তরল পেট্রোলিয়ামে পরিণত হয়।
এই উপায়ে এক কেজি পলিওলেফিন প্লাস্টিক (যেমন, পলিইথিলিন বা পলিপ্রপিলিন) থেকে ৬০০-৭০০ মিলি পেট্রোল অথবা ৮৫০ মিলি ডিজেল পাওয়া সম্ভব। কিংবা ৪৫০-৫০০ মিলি এরোমেটিক যার সাথে বাই প্রোডাক্ট হিসেবে কিছু পরিমাণ এলপি গ্যাস পাওয়া সম্ভব।
তবে খরচ কিন্তু খুবই কম। মাত্র ৩০-৪০ রুপি (৪০-৫০ টাকা)।
পলিথিন ব্যাগ (LDPE) থেকে পেট্রোলিয়াম
গবেষকেরা প্লাস্টিক বর্জ্য (পলিথিন ব্যাগ জাতীয়) কাওলিন (Kaolin) ক্যাটালিস্ট এর উপস্থিতিতে ৪০০-৫০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে উত্তপ্ত করেন। ফলে লম্বা পলিমার চেইনগুলো ভেঙ্গে ছোট ছোট অণুতে পরিণত হয়। একে “থার্মো ক্যাটালাইটিক ডিগ্রেডেশন” বলা হয়।
বিক্রিয়ার হার কি পরিমাণ কাওলিন (Kaolin) ব্যবহার করা হবে তার উপর নির্ভর করে পরিবর্তন করা সম্ভব। তবে মোটামুটি ৪৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে বিক্রিয়া সবচেয়ে ভালভাবে হয়। যা থেকে প্রায় ৭০-৮০% তরল ফুয়েল পাওয়া সম্ভব।
রেফারেন্সঃecoideaz pib.nic.in