প্লুটো কি একটি গ্রহ ?

ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা এর একটি গবেষণা অনুসারে, প্লুটো কে গ্রহের তালিকা হতে বাদ দেয়ার কারণটি যুক্তিযুক্ত ছিল না।

২০০৬ সালে ইন্টারন্যাশনাল এস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন, বিশ্বের এস্ট্রোনমি বিশেষজ্ঞ একটি দল ‘গ্রহের ‘ একটি সংজ্ঞা প্রতিষ্ঠিত  করে, সেটি হল গ্রহ হতে হলে এর  বৃহৎ মহাকর্ষ বল থাকতে হবে।

প্লুটোকে গ্রহের তালিকা হতে বাদ দেওয়া হয়েছিল, কারণ নেপচুনের মহাকর্ষ বল প্লুটো কে প্রভাবিত করে। প্লুটোর কক্ষপথের কিছু অংশ কুইপার বেল্টের ভিতরে রয়েছে , যার কারণে প্লুটো তার নামের পাশে হতে গ্রহের মর্যাদা হারিয়েছে।

কুইপার বেল্ট

আমাদের সৌরজগতে চারটি পাথুরে গ্রহ আকারে ছোট এবং চারটি গ্যাসীয় গ্রহ আকারে বড়। বুধ ,শুক্র, মঙ্গল, পৃথিবী এ চারটি ক্ষুদ্র পাথুরে গ্রহ। বৃহস্পতি, শনি,ইউরেনাস, নেপচুন এ চারটি বৃহৎ গ্যাসীয় গ্রহ। মঙ্গল আর বৃহস্পতির মাঝে বিভিন্ন আকার ও আকৃতির পাথর খন্ড গ্রহ গুলোর মত সূর্যের চারদিকে ঘূর্ণায়মান আছে। এরা গ্রহাণু। এরা দল বেধে থাকে। প্রাকৃতিক ভাবে যেন এরা পাথুরে আর গ্যাসীয় গ্রহ কে আলাদা করে দিয়েছে। তাই বিজ্ঞানী কুইপারের নাম অনুসারে গ্রহাণুসমূহের এ বলয়কে কুইপার বেল্ট বলে। এই বেল্টের ব্যাস ১০০ কিমি পর্যন্ত হতে পারে। মনে করা হয় সৌরজগতের গ্রহ গুলোর বেশ কিছু উপগ্রহ এই বেল্টের গ্রহাণু থেকেই সৃষ্ট। এজন্যই কিছু উপগ্রহ এখনও দেখতে গোলাকার নয়, যেমন: মঙ্গলের ডিমোস ও ফেবোস।
এছাড়াও নেপচুন ও প্লুটোর মাঝেও রয়েছে এরকম আরও কুইপার বেল্ট, যা প্লুটোর গ্রহত্ব কেড়ে নেওয়ায় বিশেষ ভুমিকা রেখেছিল। তবে এই বেল্টটি পাথর খন্ড নয় মূলত এমোনিয়া সহ কিছু পদার্থের বরফ দিয়ে তৈরী। কারণ এই অঞ্চল বেশ শীতল।

যাইহোক, ইউনিভার্সিটি’র ফ্লোরিডা স্পেস ইনস্টিটিউটের সাথে যুক্ত ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা  এর গ্রহ বিজ্ঞানী ফিলিপ মিটজার  Icarus জার্নালে প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণায় রিপোর্ট করেছেন, শ্রেণীবিন্যাসের জন্য এই মানদন্ডটি গবেষণা বিদ্যায় সমর্থিত নয়।

গবেষণায় প্রধান লেখক ফিলিপ মিটজার , বিগত ২০০ বছরের বৈজ্ঞানিক সাহিত্য পর্যালোচনা করেছেন এবং ১৮০২ সাল থেকে শুধুমাত্র একটি প্রকাশনা পেয়েছেন – যা গ্রহগুলির শ্রেণীবিন্যাসকরণের জন্য কক্ষপথ পরিষ্কার রাখার প্রয়োজনটি ব্যবহার করেছিল এবং এটি অগ্রহণযোগ্য যুক্তি ভিত্তিক ছিল।

তিনি বলেন ,গ্রহ বিজ্ঞানীরা গ্যালিলিও ‘ র সময় থেকে , শনি গ্রহের টাইটান এবং বৃহস্পতি গ্রহের  ইউরোপা কে গ্রহ হিসেবে গণ্য করছে।

প্লুটো  মঙ্গল গ্রহ থেকে বেশী গতিশীল এবং প্রাণবন্ত। বিশ্বে পৃথিবী হল জটিল ভূতত্ত্বের বৈশিষ্ট্যের একমাত্র গ্রহ

মিটজার বলেন,

” আইএইউ সংজ্ঞা বলে যে, গ্রহ বিজ্ঞানের মৌলিক বস্তুটিকে এমন একটি ধারণার ভিত্তিতে সংজ্ঞায়িত করা উচিত যা কেউ গবেষণায় ব্যবহার করে না “

 

মিটজার বলেন , আমাদের ১০০ টির বেশি উদাহরন রয়েছে যেখানে গ্রহ বিজ্ঞানীরা ‘গ্রহ ‘ শব্দটি ব্যবহার করছে যেটি আইএইউ  এর সংজ্ঞাটিকে মেনে চলে না । কিন্তু  তারা এটি করছে কারণ এটি তাদের জন্য বৈশিষ্ট্যগতভাবে উপকারী। তিনি বলেন আইএইউ এর সংজ্ঞাটি গুছালো নয়, তারা কক্ষপথ পরিষ্কার রাখা বা থাকা বলতে কি বুঝিয়েছে সে সম্পর্কে পরিষ্কার ভাবে কিছু বলেনি। আপনি যদি তাদের এ সংজ্ঞাটি অক্ষরে অক্ষরে  মেনে নেন তাহলে এ বিশ্বে কোনো গ্রহ নেই, কারণ কোনো গ্রহ এর নিজের কক্ষপথ পরিষ্কার করে না।

১৯৫০ সালের দিকে গ্রহ বিজ্ঞানী Gerard Kuiper একটি লেখা প্রকাশ করেন, যেটি গ্রহ এবং সেলেস্টিয়াল বডি( চাঁদ,এস্টেরয়েড ইত্যাদি) দুটিকে একে অপরের পার্থক্য করেছে গ্রহ এবং সেলেস্টিয়াল বডি কীভাবে তৈরি হয়েছে সেটির উপর ভিত্তি করে।

যাই হোক এ কারণটি এখন আর বিবেচনা করা হয় না যদি কিনা এটি  একটি সেলেস্টিয়াল বডি কে গ্রহ বিবেচনা করে বসে।

প্রকাশিত লেখার সহ লেখক Kirby Runyon বলেন, আইএইউ এর সংজ্ঞাটি ভুল ছিল কেননা তাদের লিটারেচার পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে , কক্ষপথ পরিষ্কার রাখা বা থাকার ব্যাপারটি গ্রহ এবং  অ্যাস্টেরয়েড কে পার্থক্য করার ক্ষেত্রে একটি মানদন্ড নয়।

 

যেখানে ২০০৬ সালে আইএইউ তাদের সংজ্ঞাকে সঠিক দাবি করেছিল।

Kirby Runyon বলেন তাদের এ ঐতিহাসিক দাবি ভুল ছিল, তাই প্লুটোর ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা প্রতারণামূলক ছিল।

গ্রহ বা প্ল্যানেটের সংজ্ঞা

মিটজার বলেন , পরিবর্তনশীল জিনিসের উপর যেমন – গ্রহের অরবিটের গতি; এর উপর নির্ভর না করে গ্রহের অভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করা উচিত যার মাধ্যমে গ্রহ কে সংজ্ঞায়িত করা যাবে। গতি ধ্রুবক নয় এটি অনবরত পরিবর্তনশীল। গ্রহের শ্রেণিবিন্যাস করার জন্য তিনি একটি প্রস্তাব দেন যেখানে একটি গ্রহ অনেক বড় হবে এবং যার মধ্যাকর্ষণ এর কারণে গ্রহটি বৃত্তাকার হবে।

মিটজার বলেন  এটি যু্ক্তিহীন কোনো সংজ্ঞা নয়। ”

এটি একটি গ্রহের শরীরের বিবর্তনের ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ এটি দৃশ্যমানভাবে যখন ঘটে, তখন এটি  গ্রহের শরীরের সক্রিয় ভূতত্ত্ব প্রবর্তন করে।”

 

উদাহরণস্বরূপ , প্লুটোর একটি ভূগর্ভস্থ সাগর, একটি অনেকগুলো স্তরের অ্যাটমসফিয়ার,জৈব যৌগ, প্রাচীন লেক, অনেকগুলো উপগ্রহ রয়েছে।

রেফারেন্স ঃ  UCF TODAY

 

 

 

Comments are closed.