আমিষের উৎস যখন পোকামাকড়

 

আমরা যারা সূর্যাস্তের লালাভ আলোয় এখনো ঘাসফড়িংয়ের নাচ দেখে মুগ্ধ হই, ফুলে ফুলে প্রজাপতির দোল দেখে আন্দোলিত হই, তাদের হয়তো প্রস্তুতির সময় হয়েছে। আমাদের ভাতের পাশে ভর্তা হয়ে আসি আসি করছে এরা। বিকেলের পার্কে বাদামের বদলে ঠোঙ্গায় চড়ে আড্ডা মাতাতে সাজছে এরা। কি অদ্ভুত লাগছে?

“১০ বছরের মধ্যে আমাদের সবাইকে পোকামাকড় খাওয়া শুরু করতে হবে” এমন অবাক করা ভবিষ্যদ্বাণী দিয়েছেন নেটওয়ার্কিং পণ্য নির্মাতা মার্কিন প্রতিষ্ঠান সিসকো’র প্রধান নির্বাহী জন চেম্বারস। সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমিষের পরবর্তী রূপ হবে ঝিঝিঁ পোকা থেকে পাওয়া শক্তি”

নেদারল্যান্ডস এর ওয়া‍হেনিনগেন (Wageningen) বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আর্নল্ড ভ্যান হুইসের গার্ডিয়ান পত্রিকায় দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘২০৫০ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা হবে ৯ বিলিয়ন। আমরা জানি যে মানুষ এখন মাংশ বেশী খাচ্ছে, ২০ বছর আগে গড় ছিল ২০ কেজি, এখন প্রায় মাথাপিছু ৫০ কেজি, আর ২০ বছরে তা বেড়ে দাড়াবে ৮০ কেজি। এভাবে যদি বাড়তে থাকে আমাদের আরেকটা পৃথিবী লাগবে’।

২১০০ সাল নাগাদ পৃথিবীর জনসংখ্যা হবে ১১শ কোটি। এই বিপুল সংখ্যক মানুষের খাবারের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে বলে মনে করছেন না খাদ্য বিশেষজ্ঞরা।

কারণ যতোই উচ্চফলনশীল জাতের শস্য ও প্রাণী প্রজাতি উদ্ভাবন করা হোক যে হারে আবাদি কমে যাচ্ছে তাতে এতো মানুষের আবাসন নিশ্চিত করে আবার পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ করা অসম্ভবই হবে।

এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন খাদ্যশৃঙ্খলে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এতে অনেক শস্য ও প্রাণী প্রজাতিই বিপণ্ণ হয়ে পড়ছে। ফলে ভবিষ্যতে বিশেষ করে আমিষের চাহিদা মেটানো কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।

তবে এর একটা উজ্জ্বল সম্ভাবনা খুঁজে পেয়েছেন খাদ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এর জন্য প্রথমেই আমাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। আর আমিষের চাহিদা সহজে মেটাতে চাইলে সবচেয়ে ভালো বিকল্প হতে পারে পোকামাকড়।

পোকামাকড়ে কি আসলেই কোন পুষ্টিগুন আছে? অবশ্যই, এদের মধ্যে প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থের পরিমান তুলনা মুলকভাবে অনেক বেশী। এছাড়া ভ্যান হুইস নিজের গবেষনায় দেখিয়েছেন যে, খাদ্য হিসাবে পোকামাকড়ের চাষ গবাদীপশু চাষাবাদের চেয়ে অনেক কম গ্রীন হাউস গ্যাস তৈরী করে, যা পরিবেশ বান্ধব( ১০ গুন কম মিথেন, ৩০০ গুন কম নাইট্রাস অক্সাইড, এছাড়া অ্যামোনিয়া তো আছেই)। বিশেষ করে লার্ভা বা শূককীটগুলো, একেকটি যেন আমিষের স্বর্গ। যেমন একশো গ্রাম উইপোকায় রয়েছে ৬১০ ক্যালরি – যা একটি চকলেটের চেয়ে বেশি।এছাড়াও এতে আছে ৩৮ গ্রাম আমিষ ও ৪৬ গ্রাম চর্বি৷

ম্যাটাডোর নেটওয়ার্ক এ প্রকাশিত পোকামাকড় খাওয়ার উপকারীতা নিয়ে লেখা তথ্যচিত্রের একাংশ নিচে দেওয়া হলো
h

দুই হাজারেরও বেশি ভোজ্য পোকা প্রজাতির সন্ধান রয়েছে বিশ্বে। যেগুলো রেকর্ড গতিতে বংশ বৃদ্ধি করতে পারে, বেঁচে থাকতে পারে অন্যের বর্জ্যে এবং যাদের জীবনযাপনে ন্যূনতম জায়গা, পানি আর সম্পদ প্রয়োজন পড়ে। শুধু আমিষ নয় পোকামাকড়ে রয়েছে ফ্যাটি অ্যাসিড, আয়রন, ভিটামিন ও খনিজ, জানিয়েছে স্বয়ং বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, এফএও।

তথ্যসূত্র : ১.ফ্রুটিজম, ম্যাটাডোর নেটওয়ার্ক, বিবিসি
২.আমিষ খুঁজি পোকামাকড়ে – শাকিল রিয়াজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may use these HTML tags and attributes: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>