কোয়ান্টাম কম্পিউটার

বর্তমান শতাব্দীর তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর যন্ত্রপাতিগুলোর মধ্যে একটি অন্যতম নাম কোয়ান্টাম কম্পিউটার। আমরা যারা বিজ্ঞান-প্রেমী তারা অহরহই কোয়ান্টাম কম্পিউটারের নাম শুনে থাকি। কিন্তু আজ পর্যন্ত কি আমাদের কারো মনে প্রশ্ন জেগেছে কোয়ান্টাম কম্পিউটার কী? বা এটি কিভাবে কাজ করে?

যে সকল কম্পিউটার কোয়ান্টাম মেকানিক্সের বিভিন্ন ধর্মকে সরাসরি কাজে লাগিয়ে সব কাজ করে তাকেই কোয়ান্টাম কম্পিউটার বলে।

 

যুগের ক্রমবর্ধমানে কম্পিউটার গুলো হয়ে উঠছে আরো বহুগুণ শক্তিশালী। ২০ বছর আগের ব্যবহৃত বৃহদাকার কম্পিউটারগুলো থেকে বর্তমানে আমাদের পকেটে থাকা স্মার্ট ফোনগুলোর কম্পিউটিং দক্ষতা অনেক বেশী। আর এই দক্ষতাকে আরো কয়েকগুণ বৃদ্ধি করার জন্যই বিজ্ঞানীরা কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কল্পনা করুন একটা কম্পিউটার যেটা কিনা পৃথিবীর সবচেয়ে সুরক্ষিত কোডও ভাঙ্গতে পারে। যেখানে একটি সাধারণ কম্পিউটার কোড ভাঙ্গার ক্ষেত্রে সব ধরনের কম্বিনেশন আলাদা ভাবে চেষ্টা করে সেখানে কোয়ান্টাম কম্পিউটার কোড ভাঙ্গার জন্য সমস্ত কোড একসাথে দিতে পারে। এছাড়াও নতুন মেডিসিনের নকশা এমনকি বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্রের ব্যাপারটিও সহজ করে তুলবে এই কোয়ান্টাম কম্পিউটার। গুগল (Google), আই.বিএম(I.BM), মাইক্রোসফট (Microsoft) এর মত বড় বড় কোম্পানিগুলো অনেকদিন ধরেই চেষ্টা করছে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এ সাফল্য পেতে। কিন্তু এখনো লক্ষ থেকে অনেকটাই দূরে তারা। কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত আসলে খুব সামান্য অগ্রগতি হয়েছে।

এবার জানা যাক কোয়ান্টাম কম্পিউটার কিভাবে কাজ করবে:

একটু বুঝার চেষ্টা করুন সাধারণ কম্পিউটার এর সাথে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের পার্থক্য কোথায়। আমাদের ব্যবহৃত সাধারণ কম্পিউটারে তথ্যগুলো আসে বিটস আকারে, যেটা হয় শূন্য (০) অথবা এক (১)। কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটারে ব্যবহৃত হয় কোয়ান্টাম বিটস বা কিউবিটস (QUBITS) যেটা একই সঙ্গে শূন্য (০) এবং এক (১) হতে পারে। একে সুপারপজিশনও (Superposition) বলা হয়। কিউবিট হিসেবে ব্যবহার করা হয় ফোটন বা ইলেকট্রন। ফোটনের উলম্ব বা লম্ব গতিপথকে ১ অথবা ০ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অপরদিকে ইলেকট্রনের নিম্নমুখী ঘূর্ণন এবং উচ্চমুখী ঘূর্ণনকে যথাক্রমে ০ এবং ১ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। বিটের ক্ষেত্রে যেখানে একটি বিট শুধুমাত্র একটি মানেরই হতে পারে (০ অথবা ১), সেখানে একটি কিউবিট একইসাথে দুইটি মানই হতে পারে। কিউবিটের আরেকটি মজার বৈশিষ্ট্য হল Entanglement. পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দুটি কিউবিটের একটির অবস্থার পরিবর্তন হলে অপরটিরও পরিবর্তিত হবে ,তাদের মধ্যকার দূরত্ব পৃথিবী হতে চাঁদের দূরত্বের সমান হলেও। তাই আপনি সহজেই একটি কম্বিনেশনের সকল কিউবিটের মান পরিবর্তন না করে একটির মান পরিবর্তন করলেই অটোমেটিক অপরগুলোর মান বদলে যাবে। এ প্রক্রিয়াকে বলা হয় কিউবিট ম্যানিপুলেশন। একটা কোয়ান্টাম কম্পিউটারে যখন শূন্য অথবা এক দেয়া হচ্ছে, তখন এটি একই সাথে আরেকটি শূন্য এবং এক যোগ করছে সেই সাথে এটি এক + এক (১+১) এবং শূন্য +শূন্য ও ( ০+০) যোগ করে নিচ্ছে। অর্থাৎ সাধারণ কম্পিউটার হতে কোয়ান্টাম কম্পিউটারে কাজ হবে অনেক দ্রুতগতিতে।

ধরা যাক আপনার সামনে একটি তথ্যের তালিকা রয়েছে, যেখান থেকে আপনাকে নির্দিষ্ট কিছু একটা খুঁজে বের করতে হবে। এখন একটা সাধারণ কম্পিউটার একটা একটা করে তথ্য খুঁজে দেখবে অন্যদিকে কোয়ান্টাম কম্পিউটার একই সাথে তালিকার সবগুলো তথ্যের উপর নজর দিতে পারবে। আমরা জানি কোয়ান্টাম কম্পিউটার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কে আরো দ্রুত ও ভালোভাবে জানতে সাহায্য করবে। এছাড়াও নকশা তৈরি করতে দারুণ কাজে আসবে এটি, যেমন ধরুন আপনি একটি জাহাজের নকশা করছেন, এখন জাহাজটির কতটুকু ধারণক্ষমতা হবে তা কোয়ান্টাম কম্পিউটার একেবারে সহজ করে দিবে। বিশ্বের নামকরা অনেক বিশ্ববিদ্যালয় চেষ্টা করছে তাদের প্রোটোটাইপ কোয়ান্টাম কম্পিউটারকে পরীক্ষাগার থেকে প্রায়োগিক দিকে কাজে লাগাতে। বিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞান-প্রেমীদের কাছে কোয়ান্টাম কম্পিউটার সত্যিই এক আশ্চর্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may use these HTML tags and attributes: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>