কোয়ান্টাম কম্পিউটার কিভাবে কাজ করে? 

বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারী গবেষণাগার, এমনকি আইবিএম এর মত বড় বড় প্রতিষ্ঠান উঠে পড়ে লেগেছে এমন একটি কম্পিউটারের প্রোটোটাইপ বানাতে যেটা এই সময়ের “ঘাগু টাইপ” সমস্যা গুলো নির্বিঘ্নে সমাধান করতে পারবে। ঘাগু টাইপ সমস্যা হল সেই সব ছ্যাঁচড়া সমস্যা যেগুলো সমাধান করতে আমাদের এই জামানার কম্পিউটার গুলোকে বেশ খানিকটা বেগ পেতে হয়।

বুঝতেই পারছেন কোয়ান্টাম কম্পিউটারের কথা বলছি। তবে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ধারণা টা এখন আর প্রোটোটাইপ এর মাঝে সীমাবদ্ধ নেই। গুগল, আইবিএম, নাসার মত বড় বড় প্রতিষ্ঠানের তৎপরতায় কম্পিউটার জগতের বিস্ট এখন তাত্ত্বিক পর্যায় পার করে ল্যাবরেটরিতে বাস্তবিক রূপ ধারণ করেছে। তাই আজকে আপনাদের সামনে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ধারণাটি নিয়ে আসছি কোন রকম জটিল হিসাব নিকাশ কিংবা তত্ত্ব ছাড়াই একদম সাদামাটা ভাবে।

আইবিএম কোম্পানির জে ওয়াটসন ল্যাবের জানালা বিহীন একটি কক্ষে এই পৃথিবীর সবচেয়ে শীতলতম পরিবেশে গুঞ্জন করে যাচ্ছে একটি কোয়ান্টাম কম্পিউটার। কোয়ান্টাম প্রসেসরকে ঠাণ্ডা করতে যে রেফ্রিজারেটর ব্যাবহার করা হচ্ছে গুঞ্জন মূলত তারই।

“প্রতি মুহূর্তে অচিন্তনীয় পরিমাণ ডাটা প্রসেস করার ক্ষমতা রয়েছে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের। একটি কার্যকর কোয়ান্টাম কম্পিউটার যত দূর সম্ভব মানব জাতির এযাবতকালে নির্মিত সব চেয়ে সূক্ষ্মতম প্রযুক্তি।” কথাগুলো বলেন রেগেট্টি কম্পিউটারের সিইও চাড রেগেট্টি।

প্রসেসিং পাওয়ারের দিক থেকে কোয়ান্টাম কম্পিউটার অস্বাভাবিক ক্ষমতা সম্পন্ন। এটা কিভাবে কাজ করে তার উত্তর বুঝতে চেষ্টা করাও একটা অস্বাভাবিক জটিল প্রসেস। তবুও আপনাদের জন্য একটা সরলীকরণ রূপ দেওয়া হল।

এংরি বার্ড গেমটা খেলেছেন? এটা কিভাবে কাজ করে জানেন? গেমটা খেলার সময় আপনার ফোনের সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট কিছু ইকুয়েশন ক্যালকুলেট করে থাকে। যা গেম লাইব্রেরিতে কোডিং করা থাকে। এই ইকুয়েশন গুলো আসলে গ্রাভিটির ইফেক্ট গুলো সিমুলেট করতে সাহায্য করে। বুঝতে পারেন নি? ঠিক আছে বুঝিয়ে দিচ্ছি। এংরি বার্ড এর একটা পাখিকে টেনে ছেড়ে দিলে সেটা কোথায় ধাক্কা খেয়ে কোন জায়গায় গিয়ে পড়বে এটা সত্যিকার গ্রাভিটেশনাল ফোর্স এর মত করে ইফেক্ট দেওয়া হল ওইসব ইকুয়েশন এর কাজ। এভাবে আমাদের সাধারণ ডিজিটাল কম্পিউটার গুলো কাজ করে।

আচ্ছা। তাহলে কোয়ান্টাম কম্পিউটার কিভাবে কাজ করে? কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ক্ষেত্রে ঘটনা টা এভাবে ঘটে- আপনি কয়েকটা পাখি নিক্ষেপ করুন। থ্রোয়িং পয়েন্ট এবং টার্গেটেড অবজেক্ট দেখেই কম্পিউটার সিদ্ধান্ত নেবে পাখিটা কোথায় গিয়ে পড়বে। এক্ষেত্রে কোয়ান্টাম কম্পিউটার একটা ইনপুটের জন্য সম্ভাব্য সকল আউটপুট ট্রাই করে এবং সবচেয়ে বেশি সম্ভাব্য আউটপুট টা প্রদর্শন করে। আর এই সকল কাজ সম্পাদন হয় এক সেকেন্ডের কয়েক মিলিওন ভাগের এক ভাগ সময়ের মধ্যে।

এই হল সাধারণ কম্পিউটার আর কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য। সাধারণ কম্পিউটারে ফলাফল টুকু আগেই নির্ধারণ করা থাকে। আর কোয়ান্টাম কম্পিউটার একটা ঘটনার জন্য সম্ভাব্য সবচেয়ে কাছের ফলাফলটা নিজেই বের করে।

কোয়ান্টাম কম্পিউটার নিয়ে এই ছিল আজকের আয়োজন। হালনাগাদকৃত তথ্য পাওয়া মাত্রই আপনাদের জানানো হবে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। আর বিজ্ঞানবর্তিকার সাথেই থাকুন।

Comments are closed.