আগের পর্বে মূল আলোচনা করা হয়েছে, এই পর্বে আমরা স্টিলথ টেকনোলজি, রাডারের প্রকারভেদ, এন্টেনা নিয়া আলোচনা করব। তো চলুন শুরু করা যাকঃ
রাডারের প্রকারভেদঃ হরেক রকমের রাডার রয়েছে, রয়েছে তাদের নানা রকমের কাজ। কাজের ব্যপ্তি হিসেবে রাডারের ক্লাসিফিকেশন দেখানো হলঃ

রাডারে কি ধরনের এন্টেনা ব্যবহার করা হয়?
সাধারণত রাডারে আইসোট্রপিক টাইপ এন্টেনাগুলো বেশি ব্যবহার করা হয়। আইসোট্রপিক বলতে বোঝায় যে এন্টেনা ৩৬০ ডিগ্রী কোণে চতুর্দিকে ঘুরে টার্গেট স্ক্যানিং করতে পারে। এতে নিশানা করা সহজ হয়ে পড়ে।


প্যারাবোলিক, হ্যালিকেল এন্টেনা গুলা রাডার সিস্টেমে ব্যবহৃত হয় না বেশি । আর মেরিন ইঞ্জিনিয়ার রা অনেক ক্ষেত্রে isotropic dommed type antenna ব্যবহার করে থাকেন। প্যারাবোলিক এন্টেনার একটি বিশেষত্ব আছে। টর্চ লাইট নিশ্চয়ই আমরা কম বেশি সবাই ব্যবহার করেছি। টর্চ লাইট এর রিফ্লেক্টর যেমন তার চারপাশে ছিটকে পড়া আলোকে প্রতিফলিত করে পুরো আলো টার্গেটের উপর concentrate করে তেমনি প্যারাবোলিক এন্টেনার রিফ্লেক্টর ও তার সিগন্যাল কে টার্গেট এর উপর fully concentrate করতে পারে।

আর হ্যালিকেল টাইপ এন্টেনা গুলো উর্ধমূখী y axis বরাবর সিগন্যাল প্রেরণ করে তার টার্গেট স্ক্যানিং করতে পারে। সাধারণত উড়োজাহাজ, স্পেস শিপ কে মনিটরিং করতে এটি ব্যবহৃত হয়।
রাডার ফাকি দেওয়ার প্রযুক্তিঃ
যুদ্ধক্ষেত্রে এগিয়ে থাকতে রাডার ফাকি দেওয়ার বিকল্প নেই, সেই সাথে নিজেদের ট্রাকিং ব্যবস্থাও অতি উচ্চুমানের হতে হবে, নাহলে শুধু যেকোনো একটা নিয়ে মাঠে বেশীক্ষন টিকে থাকা যাবেনা
রাডার ফাকি দিতে হলে যে কাজটা করতে হবে সেটা হল যে, বস্তুতে বাধা পাওয়ার পরে যে সিগন্যাল রাডারে ফিরে যাবে, সেটাকে ব্লক করে দিতে হবে, কিংবা সেটাকে বায়ুমন্ডলে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে, যাতে করে সেই সিগন্যাল আর রাডারে অক্ষতভাবে ফেরত না যেতে পারে। এজন্য যা করতে হবে তা হল যে, বস্তুকে এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে, রাডার থেকে পাঠানো সিগন্যাল বাধা পায়, ছবিতে দেখানো হয়েছেঃ

ছবিতে বি-২ স্পিরিট স্টিলথ বোম্বার দেখানো হয়েছে, যা রাডার ফাকি দেওয়া বস্তুর মধ্যে অন্যতম, চলুন এ সম্পর্কে কিছু জেনে নেওয়া যাকঃ
দেশঃ আমেরিকা
প্রস্তুতকারকঃ নর্থরোপ গ্রুম্যান
আমেরিকার কাছে প্রায় ২০ টির মত এই স্টিলথ বোম্বার রয়েছে, যার প্রতিটির মূল্যমান ২.১বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

আরেকটি উপায় হল যে, রাডারের সিগন্যাল শোষণকারী পদার্থ দিয়ে বস্তুর গায়ে কোটিং দিতে হবে, এতে করে রাডারের পাঠানো সিগন্যাল বস্তুর গায়ে শুষে যাবে, ফলে বস্তু রাডারকে ফাকি দিতে সক্ষম হবে। যেমনঃ টাইটেনিয়াম

সাধারনত স্টিলথ ফাইটারগুলোতে এমন এক ধরনের রঙ ব্যবহার করা হয়, যা রাডার থেকে নিক্ষিপ্ত সিগন্যালকে রাডারে ফেরত যেতে দেয়না, শুষে নেয়। উপরের ছবিতে দেখানো হয়েছে
এবার যদি আপনার শত্রুপক্ষ এমনটা করে তাহলে কি করবেন??
কাউন্টার করার কি উপায় নেই?
অবশ্যই আছে।
১। অনেকগুলা ইমিটার থেকে সিগন্যাল পাঠিয়ে দিলে, কোন না কোনভাবে ফিরতি সিগন্যাল ক্যাপচার করা সক্ষম হবে।
২। স্লিরেন ইফেক্টঃ বায়ুমন্ডলে বস্তু দ্বারা বিশৃংখলার সৃষ্টি হলে, সেটার ফটোগ্রাফি ব্যবহার করে জাহাজ, উড়োজাহাজের অবস্থান শনাক্ত করা যায়।
৩। ভেরি লো ফ্রিকুয়েন্সী পাঠিয়ে এই কাজটি করা যায়, এতে জাহাজ কিংবা বিমানের সিস্টেম এটা ধরতে পারেনা, ফলে ওয়ার্নিং ও দেয় না উড়োহাজার চালককে।
যেসকল বিমান রাডার ফাকি দিতে পারে তাদের লিস্ট দেওয়া হলঃ
রুশ মিগ–৩৫
ইরানের কাহার এফ–৩১৩
যুক্তরাষ্ট্রের লকহিড এফ–১১৭
চীনের দ্য চেংদু জে–২০
বি–২
এফ–২২ র্যাপ্টপ
এফ ৩৫ লাইটনিং ইত্যাদি
যারা একাজ করতে পারে তাদের স্টিলথ বিমান বলা হয়ে থাকে, স্টিলথ বিমানের মূল নকশা এমন অড হওয়ার উদ্দেশ্য হল রাডার ও উত্তাপ এড়িয়ে চলা।
তো স্টিলথ সম্পর্কে আরো কিছু জানা যাক, কেন রাডার আইডেন্টিফাই করতে ব্যর্থ হয়ঃ
স্টেলথ প্রযুক্তি বুঝার আগে আপনাকে রাডার ক্রস সেকশন বুঝতে হবে। রাডার ক্রস সেকশন মানে হলো একটা বস্তুকে রাডার স্ক্রিনে ঠিক কতটা বড় দেখায়। আকার ভেদে রাডার ক্রস সেকশনের ও পরিবর্তন ঘটে। স্টেলথ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এই রাডার ক্রস সেকশন কে কমিয়ে ফেলা হয় যাতে রাডার স্ক্রিনে এটি অত্যন্ত ছোটভাবে ধরা পড়ে, ফলে আসল লক্ষ্য শনাক্তে সমস্যা হয়।
রাডারের কাজ জানতে হলে ডপলার ইফেক্ট জানাই লাগবে
ডপলার ইফেক্টঃ
ডপলার ইফেক্টঃ উৎস এবং পর্যবেক্ষকের মধ্যকার আপেক্ষিক গতির কারণে কোন তরঙ্গ-সংকেতের কম্পাঙ্ক পরিবর্তিত হয়ে যাওয়ার ঘটনাকে ডপলার ক্রিয়া (Doppler Effect) বলা হয়।
একটি সুন্দর উদাহরণ দিয়ে শুরু করি, অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন, অ্যাম্বুলেন্স কাছে আসার সাথে সাথে সাইরেনের শব্দের তীক্ষ্ণতা বৃদ্ধি পেতে থাকে , কিন্তু আবার দূরে সরে যাওয়ার সাথে সাথে তীক্ষ্ণতা কমতে থাকে । ড্পলারের তত্ত্ব থেকে আমরা হিসাব করে বের করতে পারি কতটা দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স টি চলছে বা স্থান পরিবর্তন করছে , সাইরেনের শব্দের কম্পাংকের স্থান বদলের উপর নির্ভর করে এই হিসাবটি করা হয় ।

এই সুত্রকে ব্যবহার করে ড্পলার ওয়েদার রাডার -রাডারের সামনে বা পেছনের পরিবেশের বৃষ্টিপাতের গতি বের করে দিতে পারে । ডপলার প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে বাতাসের বেগ বের করা সম্ভব কেননা বাতাসের স্থান পরিবর্তনের সাথে বৃষ্টিপাতের তারতম্য হয়। চলন্ত বস্তুর গতিবেগ পরিমাপ করতে অবশ্যই ড্পলার রাডারের প্রয়োজন ।
উদাহরণ সমস্যা দেখে বুঝতে পারবেন আসলে কিভাবে এই কাজটি করা হয়ে থাকেঃ
যদি রাডার 5GHZ এর ফ্রিকোয়েন্সি থেকে চালিত হয়, তবে 100KMph গতিতে চলমান একটি বিমানের ডপলার ফ্রিকোয়েন্সিটি সন্ধান করুন।
সমাধানঃ
দেওয়া,
প্রেরিত সংকেতের ফ্রিকোয়েন্সি, f = 5GHZ
বিমানের গতি (লক্ষ্য), Vr = 100KMph
⇒Vr = 100 × 1033600m / সেকেন্ড
⇒Vr = 27.78m / সেকেন্ড
আমরা বিমানের প্রদত্ত গতি (টার্গেট) রূপান্তরিত করেছি, যা কেএমএফ-তে উপস্থিত রয়েছে তার সমতুল্য এম / সেকেন্ডে।
আমরা জানি যে, আলোর গতি, সি = 3 × 10^8 মি / সেকেন্ড
এখন, ডপলার ফ্রিকোয়েন্সিটির সূত্রটি নীচে দেওয়া হল –
FD = 2Vrf/C
উপরের সমীকরণে Vr, f এবং C এর মান প্রতিস্থাপন করুন।
⇒fd = 2* (27.78)* (5 × 10^9)/ ( 3 × 10^8)
⇒fd = 926HZ
সুতরাং, প্রদত্ত নির্দিষ্টকরণের জন্য ডপলার ফ্রিকোয়েন্সি, এফডি এর মান 926HZ

এছাড়াও আরো অনেক বিষয় রয়েছে, সেগুলো নিয়ে সময় হলে আলোচনা করা হবে।
আগের পর্ব পড়তেঃ https://bigganbortika.org/radar-part-1/
সোর্সঃ https://www.livescience.com/32943-how-stealth-planes-evade-enemy.html