রোবটিক স্কিন : সবকিছুই পরিবর্তন হবে রোবটে

যখন আমরা রোবট বা রোবটিক্স বিষয়ে চিন্তা করি মনের অজান্তেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ট্রান্সফরমারস সিরিজের মুভিগুলোর কথা। আর কাট্টখট্টো হয়ে আগালে মনে পড়ে দৃঢ় শক্ত বা বড় কোন কিছু যা কিনা কোন এক নির্দিষ্ট কাজেই ব্যাবহার হয়। Yale University এর রিসার্চারগন নতুন রোবটিক স্কিন তৈরি করার মাধ্যমে রোবট সন্মন্ধে আমাদের পুরাতন ধারণা মুখে ঠুনকো আঘাতই করেছেন বলা চলে। নতুন ধরণের এই রোবটিক স্কিন দিয়ে দৈনন্দিন ব্যবহার্য যে কোন সজীব/জড় বস্তুকে রোবটে রুপান্তর করে ফেলা যাবে ।

মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড ম্যাটেরিয়ালস সাইন্স বিভাগের অধ্যাপক Rebecca Kramer-Bottiglio এর গবেষণা ল্যাবে তৈরি হওয়া এই রোবটিক স্কিন, সাধারণ ব্যাবহারকারীদের সহজেই নিজস্ব রোবট তৈরিতে কাজে আসবে। Kramer-Bottiglio এর মতে, এই স্কিন গুলো শুধু কোন নির্দিষ্ট কাজের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়নি। যে কেউ এটিকে সন্ধানকারী, উদ্ধারকারী রোবটসহ গায়ে দেওয়ার মত করে স্মার্ট শার্ট টেকনোলজি হিসেবেও ব্যাবহার করতে পারবেন। তার টিমের গবেষণা পত্রটি গত ১৯ সেপ্টেম্বর Science Robotics এ প্রকাশ পায়।

এই স্কিনগুলো তৈরি করা হয়েছে বলের প্রভাবে পরিবর্তনশীল ইলাস্টিক শীট এবং এম্বেডেড সেন্সরের সমন্বয়ে । নমনীয় কোন কিছুর উপর এই স্কিন গুলোকে বসিয়ে দিলে তা সহজেই অন্য কোন বস্তুর আকার ধারণ করতে পারে। এই অস্থায়ী রোবটটি বস্তুর বৈশিষ্টের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরণের কাজ করতে পারে, স্কিন গুলোর মুভমেন্টের মাধ্যমে।

এই স্কিনগুলোকে কোন অবজেক্টের চারপাশে মুড়িয়ে যেকোন কাজের জন্য ব্যাবহার করা যেতে পারে। উদাহারণ স্বরুপ, সুদৃঢ় কোন বস্তুর চলাচল করাতে। পরে এটিকে খুলে অন্য কোন বস্তু/অবজেক্টের সাথে যুক্ত করে ভিন্ন কাজের জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে। Kramer-Bottiglio এর মতে আমরা বস্তুথেকে স্কিন গুলোকে খুলে শার্টে লাগিয়ে স্মার্ট ওয়াচের মত একটি ওয়ারেবল ডিভাইস হিসেবে ব্যাবহার করতে পারি।

সাধারণত রোবটগুলো কোন একটি নির্দিষ্ট কাজ করার লক্ষ্য নিয়েই তৈরি করা হয়ে থাকে। তবে রোবটিক স্কিনগুলো ইউজারদের একই রোবটকে বিভিন্ন কাজে ব্যাবহার করার সুযোগ করে দেবে বলে গবেষকগণ মনে করছেন। অর্থাৎ এই রোবটগুলো এমন সকল কাজে ব্যাবহার করা যাবে যার জন্য কিনা রোবটগুলোকে ডিজাইনও করা হয়নি। বলতে গেলে একের মধ্যে অনেকের সমাহার! এছাড়াও একটির বেশি স্কিন ব্যাবহার করে রোবটিকে জটিল মুভমেন্ট দেওয়া সম্ভব বলে দাবী গবেষকদের। Kramer-Bottiglio বলেন ভিন্ন লেয়ারেই স্কিন ভিন্ন-ভিন্ন গতি প্রকৃতির জন্য ব্যাবহার করা যেতে পারে। তার মানে শুধুমাত্র স্কিনের অরিয়েন্টেশন আর প্রোগ্রামিং পরিবর্তন করেই একটি রোবটকে কাজের জায়গাকে বহুগুনে বাড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে।

রোবোটিক্স স্কিনের কর্মকাণ্ড প্রদর্শনের জন্য, গবেষকরা কয়েকটি প্রোটোটাইপ তৈরি করেছিলেন। এই প্রটোটাইপগুলোর মধ্যে রয়েছে সিলিন্ডার আকৃতির ফোমের মত স্কিন যেটা শুঁয়ো পোকার মত চলাচল করতে পারে। তারা শার্টের মত একটি পরিধানযোগ্য ডিভাইস তৈরি করেছেন যা কিনা সঠিক ভাবে শরীরের নড়াচড়ায় সাহায্য করবে। সেই সাথে একটি এমন একটি রোবটিক হ্যান্ডের মত গ্রীপার তৈরি করা হয়েছে যা কোন কিছুকে শক্ত করতে বা সহজে মুভ করতে সাহায্য করবে।

গবেষক দলের প্রধান Kramer-Bottiglio বলেন, কয়েক বছর আগে নাসা যখন সফট রোবটিক সিস্টেম নিয়ে প্রজেক্ট কল করে, তখন তিনি এই আইডিয়া নিয়ে এগিয়ে আসেন। নতুন এই প্রযুক্তিটি নাসার সাথে পার্টনারশিপে থেকে তিনি ও তার গবেষণা ল্যাব তৈরি করেছে। নতুন ধরণের রোবটিক নকশার ফলে একই জিনিস বারবার ভিন্ন মাত্রায়, ভিন্ন অরিয়েন্টেশনে ব্যাবহার করে মহাকাশে থাকা Astronauts একই ধরণের একাধিক কাজ পুনরায় ব্যাবহার যোগ্য ম্যাটেরিয়াল দিয়ে করতে সাহায্য করবে বলে গবেষকদের মত। এই স্কিন গুলোই হতে পারে ভবিষ্যতের রোবটিক হাত। ইয়েল গবেষকগণ বলেছেন, রোবটিক স্কিনের সাহায্যে সফট মার্স রোভার তৈরি করা হবে যা কিনা সহজেই বন্ধুর জায়গায় চলতে পারে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন প্রথাগত মার্স রোভারের তুলনায় এমন রোভার বেশি সুবিধা পাবে। তাদের মতানুসারে বেলুন থেকে শুরু করে বল কিংবা দুমড়ানো-মোচড়ানো কাগজের টুকরাকেও এখন রোবটে পরিনত করা যাবে।

Kramer-Bottiglio আরও বলেন, মূল একটি জিনিসই আমরা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেছি আর তা হল এর বহুবিধ ব্যাবহার, বিশেষত এমন সব জায়গায়, যেখানে কিনা পরিবেশ সর্বদাই পরিবর্তনশীল। এমন এক উদ্ভাবনী জন্য রিসার্চের জন্য Kramer-Bottiglio ন্যাশনাল সাইন্স ফাউন্ডেশন থেকে ২ মিলিয়ন ডলারের ফান্ড পেয়েছেন। বর্তমানে ল্যাবের সাইন্টিস্টগন থ্রি ডি প্রিন্টিং এ সফট রোবটিক্স এর ভবিষ্যৎ এবং ডিভাইসের স্ট্রিমলাইনিং নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।

হয়ত সে দিন আর বেশি দূরে নয় যখন আমরা বাসা বাড়িতে গৃহস্থলীর কাজে এই রোবটিক স্কিন গুলোকে ব্যাবহার করতে চলেছি…!

WATCH VIDEO: 

Reference :

nasa.gov

robotics.sciencemag.org

sciencedaily.com

ই-স্কিন

 

Comments are closed.