কাঁদলে কেন অশ্রু ঝরে

মন খারাপ হলে আমাদের কান্না পায়। কান্না পেলেই চোখ থেকে গড়িয়ে নামে অশ্রু। প্রিয়জনের মৃত্যু বা অন্য যে কারণেই হোক না কেন জীবনে কখনো অশ্রুপাত করে নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। তবে কেউ শোগ্রেন্স সিন্ড্রোমে ভুগলে ভিন্ন কথা। কারণ, এই রোগে আক্রান্ত মানুষ কাঁদতে জানে না। খুবই কষ্টকর। তাই নয় কি? চিন্তা করতে পারবেন? আপনার সামনে আপনার কোন আত্মীয় মৃত্যুবরণ করেছে। আপনার খুব কষ্ট হচ্ছে অথচ চোখ থেকে এক ফোঁটা অশ্রু বের হচ্ছে না।

কিন্তু কখনো কি ভেবেছেন,

কাঁদলে চোখ থেকে অশ্রু নামের তরল নিঃসৃত হয় কেন?

অশ্রু কি শুধু আমাদের কষ্টেরই প্রতিফলন? অন্য প্রাণীদেরও কি অশ্রু আছে? নাকি শুধু মানুষই কাঁদতে জানে? চলুন জেনে নেই অশ্রু সম্পর্কে কিছু অজানা কথা। অশ্রু হচ্ছে পানি, লবণ কিছু, antibody আর কিছু অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল এজেন্ট এর সংমিশ্রণ যা মানুষের চোখের ঠিক পাশে অবস্থিত অশ্রু গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়ে চোখকে বিভিন্ন অণুজীবের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। এখানেই শেষ নয়। মানুষ সহ বিভিন্ন প্রাণীর অশ্রুর রাসায়নিক মিশ্রণ গবেষণা করে আরো অনেক চমকপ্রদ তথ্য বিজ্ঞানীদের হাতের নাগালে এসেছে।

আমরা মূলত তিনটি শ্রেণীতে অশ্রুকে ভাগ করতে পারি।
১।Basal Tear
২। Reflex Tear
৩। emotional Tear


আমাদের চোখকে সব সময় ভেজা রাখতে কিছু পরিমাণ অশ্রু সব সময়ে নিঃসৃত হয়। একেই আমরা বলছি ব্যাসাল। আবার ধরুন আপনার চোখে বালি বা ক্ষুদ্র কিছু পড়েছে অথবা বাসার পাশে কোথাও পেঁয়াজ কাটা হচ্ছে তখন আপনি দেখবেন আপনার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। এটাকে আমরা বলছি রিফ্লেক্স টিয়ার। আর এর মূল উদ্দেশ্য হল যে পদার্থের কারণে আপনার চোখে জ্বালাপোড়া করছে সেটা অতিরিক্ত তরল দিয়ে ধুয়ে ফেলার চেষ্টা করা।

এবার আসা যাক সবচেয়ে রহস্যময় অশ্রুর কথায়। গবেষণায় দেখা গেছে ব্যাসাল আর reflex tear বিভিন্ন প্রাণীতে পাওয়া গেলেও শুধুমাত্র মানুষেই emotional টিয়ার পাওয়া যায়। তবে হাতি বা গড়িলাতেও পাওয়া যেতে পারে বলে অনেকের ধারণা রয়েছে। কিন্তু কেন রহস্যময় এই ইমোশনাল টিয়ার?

কারণ, এর রাসায়নিক গঠন। ইমোশনাল টিয়ারের রাসায়নিক গঠন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে এতে বিভিন্ন ধরনের স্ট্রেস হরমোন রয়েছে যা ন্যাচারাল পেইন কিলার হিসেবে কাজ করে। ইমোশনাল টিয়ার যা আমরা কান্না নামে জানি আসলে অতিরিক্ত দুঃখ ও মানসিক চাপের বিরুদ্ধে আমাদের মস্তিষ্কের এক ধরনের প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা। মানসিকভাবে খুব বেশি উত্তেজিত হয়ে গেলে যেমন অতিরিক্ত সুখ বা দুঃখের অবস্থায় ইমোশনাল টিয়ার বের হয়ে আসে। সিনেমার জগতে গ্লিসারিন ব্যবহার করে চোখ দিয়ে কৃত্রিম ভাবে অশ্রু বের করা হয়। কিন্তু সেই অশ্রু টি সত্য না মিথ্যা তা কিন্তু খুব সহজেই রাসায়নিক বিশ্লেষণ এর মাধ্যমে বের করা সম্ভব। এখানেই শেষ নয়। গবেষণায় দেখা গেছে টিয়ার কেমোসিগ্ন্যালিং এর মাধ্যমে অশ্রু একে অপরের মধ্যে তথ্য আদান প্রদানেও ব্যবহৃত হয়। পুরুষ ইঁদুরের ক্ষেত্রে অশ্রুতে এক ধরনের সেক্স হরমোন পাওয়া যায় যা স্ত্রী ইঁদুরকে আকর্ষণ করে। আবার এক ধরনের অন্ধ লেমোশ ইঁদুর আক্রমণাত্মক ইঁদুরের থেকে আত্মরক্ষার জন্য নিজের শরীরে নিজের অশ্রু মাখে। এছাড়াও রয়েছে আরো অনেক অনেক রহস্যময় তথ্য। হয়তো সেদিন আর দূরে নয় যেদিন কাছের মানুষের চোখের অশ্রু রাসায়নিক গঠন বিশ্লেষণ করে বলে দেওয়া যাবে মনের কথা।

Comments are closed.