সম্ভবত আমরা কখনো ভালোবাসতে গিয়ে ধমকে দাঁড়াই নি, এবং ভালোবাসাকে “প্রাকৃতিক অনুভূতি” ব্যতীত অন্যকিছু হিসেবে কল্পনা ও করি নি। তবে এ বিষয়ে কারোর ই সন্দেহ নেই যে, পৃথিবীর অন্যতম রহস্যময় বিষয়ের একটি হল এটি- “ভালোলাগা এবং ভালোবাসা।” কখনো আমরা ভেবেছি, ভালোবাসা এর ক্ষেত্রে উভয়ের মধ্যবর্তী রসায়ন এর উদ্ভবই বা কোথা হতে! চলুন জানা যাক ‘ভালোবাসার পিছনের বিজ্ঞান’ সম্পর্কে, কেননা সন্দেহাতীতভাবে ভবিষ্যতে এটি আপনায় একটি পরিপূর্ণ জীবন গঠনে সাহায্য করবে।
আমরা আশ্চর্যজনক ভাবে এই রহস্যময় অনুভূতিকে সহজভাষায় ‘ভালোবাসা’ বলে থাকলেও, এই অনুভূতির পিছনেও রয়েছে জটিলতা। শারীরিক অঙ্গভঙ্গি, কণ্ঠস্বর এবং ভালোলাগার মানুষের প্রতি প্রতিক্রিয়া – এ তিনটি ক্ষেত্র কাউকে ভালোলাগার পিছে কাজ করে। ২০১২ সালে “Psychopharmacology” তে প্রকাশিত এক গবেষণা-প্রবন্ধে এমন কিছু বিষয় সম্পর্কেই বলা হয়।
।
গবেষণা হতে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ীঃ
- ৫৫% শতাংশ ক্ষেত্রে, কারো শারীরিক অঙ্গভঙ্গি কাউকে ভালোলাগার প্রথম প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। মস্তিস্ক খুব দ্রুত ই কারো শারীরিক অঙ্গভঙ্গির কার্যক্রম নির্ণয় করতে পারে। যার ফলে আপনি কারো প্রতি দূর্বলতা প্রদর্শন করবেন কি করবেন না সে সম্পর্কিত চূড়ান্ত সংকেত মস্তিস্ক গ্রহণ করে।
- ৩৮% ক্ষেত্রে প্রিয়জনের কন্ঠস্বর আপনায় সম্পূর্ণরূপে তাকে ভালোবাসতে সাহায্য করে।
- প্রিয়-মানুষের কোনো বিষয়ের প্রতি প্রতিক্রিয়া ৭% শতাংশ ক্ষেত্রে চূড়ান্তভাবে ভাবতে সাহায্য করে।
কারো প্রতি ভালোবাসায় পতিত হবার ৩ টি ধাপঃ
সম্প্রতি যুক্তরাস্ট্রের “রাওটার্গ ইউনিভার্সিটি” এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে ভালোবাসা এবং এর পিছনের বিজ্ঞান সম্পর্কে। উপর্যুক্ত প্রতিবেদনে কারো প্রতি ভালোবাসায় চূড়ান্তভাবে নিহিত হবার ৩ টি ধাপ প্রকাশ করা হয়। ধাপ তিনটি হলঃ “কারো প্রতি আগ্রহ”, “প্রবল আকাঙ্খা এবং আকর্ষণ” এবং “সংযুক্তি এবং সান্নিধ্য”। এছাড়াও ধাপ তিনটি সম্পন্নে সর্বমোট ৫ টি হরমোন কাজ করে বলে গবেষণা প্রতিবেদনটিতে তুলে ধরা হয়।
ধাপ ১ঃ কারো প্রতি আগ্রহ
“আগ্রহ” বিষয়টা অনেকাংশে নিশ্চিত করে আপনি কারো প্রেমে নিমগ্ন কি না। কোনো ব্যক্তিত্ব এর প্রতি আগ্রহ অনেকাংশে নির্ভর করে বেশ কিছু মানব-হরমোনের উপর ও। ‘এস্ট্রোজেন’ আর ‘টেস্টোস্টেরন’- এ দুটি হরমোন মানব-মস্তিস্কে সংকেত প্রেরণ করে, যে আপনার কোনো মানুষের প্রতি আগ্রহী হওয়া উচিত না অনুচিত।
কোনো মানুষে ব্যক্তিত্ব এবং তার শারীরিক গড়ন এক্ষেত্রে একটি বিশেষ ক্ষেত্র হিসেবে কাজ করে। কারো প্রতি আগ্রহ বা অনাগ্রহ প্রকাশের মাধ্যমেই অনুধাবন করা যায় যে, এই সম্পর্ক আর এগিয়ে যাবে কি যাবে না।
ধাপ ২ঃ প্রবল আকাঙ্খা এবং আকর্ষণ
কাউকে ভালোবাসতে হলে তার প্রতি আপনার সাধারণভাবেই আকর্ষণ অনুভব করতে হবে- এটিই ভালোবাসার ২য় ধাপ। এই ধাপটি নিসন্দেহাতীত ভাবে তিনটি ধাপের মধ্যে সুন্দরতর। এটিই সে পর্যায়, যেথায় একজন ব্যক্তি সত্যিকার অর্থে কারো প্রতি আকর্ষিত হয় এবং ভালোবাসার জালে বেঁধে যায়। গবেষণায় অংশগ্রহণরত সকলে এ ধাপে প্রিয়জনের কথা মনে করে উত্তেজনা অনুধাবনের কথা তুলে ধরেন।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ ধাপে ভালোবাসার মানুষ কে নিয়ে আলাদা জগত তৈরীর স্বপ্ন বুননের বিষয়টি চলে আসে। ধাপটি আরো তিনটি হরমোনের সহযোগীতায় পরিপূর্ণতা প্রকাশ পায়। হরমোন তিনটি হলঃ
- এড্রেনালাইন
- ডোপামিন
- সেরোটোনিন
‘এড্রেনালাইন’ ভালোবাসার মানুষের প্রতি ভিন্ন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টিতে সাহায্য করে। যেখানে ‘ডোপামিন’ নিঃসরণের মাধ্যমে, ভালোবাসার মানুষটির প্রতি আপনার সর্বাপেক্ষা আকর্ষণের কাঠামো সৃষ্টি করে। ‘সেরোটোনিন’ নামক হরমোনটি ভালোবাসার মানুষ সম্পর্কে আপনায় আরো বেশি ভাবতে সাহায্য করে এবং প্রিয় মানুষ টি ব্যতীত অন্য সকল বিষয় কে তুচ্ছ ভাবতেও সাহায্য করে।
সাধারণত, পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের ‘সেরোটোনিন’ বেশি থাকে। মহিলাদের ক্ষেত্রে, এ ধাপে দিনের ৬৫% সময় তারা তাদের প্রিয়জন সম্পর্কে ভাবনায় অধীর থাকে বলে তুলে ধরা হয়।
ধাপ ৩ঃ সংযুক্তি এবং সান্নিধ্য
যখন একটি দম্পতি উপর্যুক্ত ধাপ দু’টো অতিক্রম করে আসে, তখন তাদের মধ্যবর্তী বোঝাপড়া এবং বন্ধন থাকে আগের থেকে অনেক বেশী শক্তিশালী। “একে অপরের সান্নিধ্য”-এ থাকবার মাধ্যমে সম্পর্ককে বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। এই ধাপটি তাদের পরস্পরের প্রতি আরো দায়িত্বশীল হবার শিক্ষা দেয়। ভবিষ্যত-সন্তানদের বিষয়েও অংশগ্রহণকারীদের অনেকে এ পর্যায়ে ভেবেছেন বলে প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়।
পাশাপাশি “অক্সিটোসিন” এবং “ভাসোপ্রেসিন” নামক দু’টি হরমোন এ ধাপ সম্পন্নে সাহায্য করে। হরমোন দু’টি মূলত সম্পর্ক বজায় রাখা,পরস্পরের প্রতি দায়িত্ববোধ সৃষ্টি, ইতিবাচক ভাবভঙ্গির প্রসার- এ সকল ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
সখি, ভালোবাসা কারে কয়!
এ বিষয়ে কেউ ই নিশ্চিত নয় যে, আপনার প্রিয়-মানুষটির আকারে, আচরণে কেমন হওয়া উচিত। কেননা, পৃথিবীর কেউ ই জানে না যে, আপনার মস্তিস্ক কখন আপনায় প্রিয় মানুষটিকে খুঁজে পাবে এবং উপর্যুক্ত সংকেত পৌছাবে। “লাভ ইজ ব্লাইন্ড” বা ‘অন্ধ-ভালোবাসা’র বিষয়টি এক্ষেত্রে অনেকাংশেই সত্য।
ভালোবাসা একটি প্রাকৃতিক ভাবনা,যেথায় আপনি ধাঁধা তৈরী করবেন, ধাঁধার উত্তর খুঁজবেন, এবং নিজেই চিন্তার মধ্যে হারিয়ে যাবেন।
Leave a Reply