বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীঃ হাইতু

আসন্ন ছাব্বিশ শতকের মানুষের কাছে আশীর্বাদ স্বরূপ এক ক্ষমতাধর প্রাণী হাইতু। তবে বিজ্ঞান একাডেমী ক্ষমতার ক্রমে মানুষের পরে স্থান দিয়েছে মিরন গ্যালাক্সির অন্তর্গত ত্রৃয়ন গ্রহে থাকা অভিনব এ প্রাণীগুলোকে। পৃথিবী যখন নিশ্চিহ্নের পথে, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ফলে ওজন স্তরের পরিমাণ যখন ৭০ শতাংশে গ্রাস করেছে তখন মরণমুখী পৃথিবীকে টিকিয়ে রাখার জন্য মানুষ সাহায্য পায় হাইতুদের কাছে। অন্যপাশে অত্যাধুনিক এই যুগে সাধারণ নিয়মের মতোই হাইতুদের পরের অবস্থানে আছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে মানুষের তৈরি বায়ো-রবোট। বায়ো-রবোট দের মাঝে প্রাণ না থাকলেও তারা মানুষের মতোই বিচক্ষণ কারণ, মানুষের নিউরনের ক্রেপ্টন তাদের কপোট্রনে লাগিয়ে এই বায়ো-রবোট তৈরি করা হয়েছে। তবে মানুষের মতো আবেগ তাদের মাঝে নেই। তাই ক্ষমতার দিক থেকে এদের হাইতুদের পরে রাখা হয়েছে।

হাইতুরা মানুষের মতো স্বাভাবিক আকৃতির নয়। মানুষের হাত আছে তাদের নেই, প্রজননের মাধ্যমে মানুষ তার বংশধর সৃষ্টি করে, এক্ষেত্রে হাইতুরা মানুষের মতো প্রজননক্ষম নয়। অদ্ভুত এই প্রাণীগুলো প্রায় মানুষের মতো হলেও এরা যে ভিন্ন উপায়ে তাদের বংশধর সৃষ্টি করে তা সাধারণ মানুষের কাছে একটি বিস্ময়। আর এই জিনিসটিই অনন্য হিসেবে মনে হয়েছে পঁচিশ শতকের জীব বিজ্ঞানীদের মাঝে। মূলত হাইতুরা প্রতি ইসরে (ত্রৃয়ন গ্রহের বছরের হিসাব) মাত্র দুবার প্রজনন সম্পন্ন করে, এক্ষেত্রে তাদের প্রজনন হয় পৃথিবীর একটি প্রজাতি হাইড্রার দেহ ছিন্ন হয়ে যাওয়ার মতো করে। অর্থাৎ হাইড্রার শরীরের কোন অংশ ছিন্ন হলে যেমন সেখান থেকে নতুন অংশ সৃষ্টি হয় ঠিক সেভাবে নিজেদের শরীরের অভ্যন্তরে এমন কাজ করতে পারে হাইতু। আর এটাই বিজ্ঞানীদের কাছে এক ধরণের বিস্ময় কারণ হাইতুরা এমন কাজ শরীরের অভ্যন্তরে কিভাবে করে থাকে তা তাদের অজানা! এক্ষেত্রে আরও বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে, প্রজনন সম্পন্ন হওয়ার পর নবাগত হাইতুদের মানব শিশুর মতো সঙ্গে সঙ্গে পর্যায়কাল শুরু হয় না। প্রজননককারী বা মা হাইতুদের মৃত্যুর পর শিশু হাইতুর জন্ম হয় এবং সে সাথে জীবনের যাবতীয় কার্যকলাপ শুরু হয়। আর এভাবেই দুটি নতুন হাইতু প্রজননকারীর মৃত্যুর পর জন্ম লাভ করে। এৃয়ন গ্রহের ভারসাম্য রক্ষা হয় প্রাকৃতিক ভাবে, প্রতি ইসর শেষে এমন উদ্ভট প্রজনন শেষে নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রজননকারী মারা যায়। আবার মানুষের মতো জৈবিক কারণে এদের প্রজনন না হওয়ার জন্য কতক হাইতুদের প্রজনন অসমাপ্ত থেকে যায়। এছাড়াও রয়েছে অনেক পার্থক্য।

অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ করে ক্রমাগত হতবাক হয়েছে। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যে অক্সিজেন প্রয়োজন তা এই হাইতুরা অনায়াসে উৎপাদন করতে সক্ষম তাদের শরীরের অভ্যন্তরে। এদের দেখতে হালকা সবুজ, পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে এদের শরীরে মানুষের মতো কোন জীবকোষ নেই! কিন্তু যা পাওয়া গেছে তা জেনে পুরো পৃথিবীবাসী অবাক, শরীর একধরনের বিশেষ তরলে পরিপূর্ণ যা কখনো পৃথক যোগ্য নয়। যদি এদের শরীরকে পৃথক করার জন্য ধারালো কিছু ব্যবহার করা হয় তাহলে কয়েক মুহূর্ত শেষে আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায়। সেই তরল কে পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে; এতে মুল জৈব উপাদান হিসেবে রয়েছে ক্লোরোপ্লাস্ট। পাশাপাশি রয়েছে আরও অজানা অন্যান্য জৈব উপাদান যা সম্পর্কে মানুষ অনভিজ্ঞ। ক্লোরোপ্লাস্টের ফলে তারা নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে সক্ষম ফলে জন্মের পরপরই তারা নিজেদের খাদ্য প্রস্তুত করতে পারে। কিন্তু হট্টগোল তো বেধে যায় অন্য জায়গায়, বিজ্ঞান একাডেমী সাধারণ মানুষদের কাছে এক অদ্ভুত তথ্য পেশ করে- ‘ভিনগ্রহের এই হাইতু নামক প্রাণী সূর্যের আলো ছাড়াও নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে সক্ষম যেখানে ক্লোরোপ্লাস্টে অবস্থিত ক্লোরোফিল সূর্যালোক ছাড়া খাদ্য তৈরি করতে অক্ষম। পর্যালোচনায় পাওয়া গেছে সূর্যালোক না থাকলে এদের মাঝে তীব্র খাদ্যাভাবের সৃষ্টি হয় তখন খাদ্যের অভাব পূরণের জন্য তারা নিজেদের শরীর থেকে তরল পদার্থ গলাধঃকরণের মাধ্যমে তা মিটাতে সক্ষম হয়।’

এমন হতভম্বর তথ্য জেনে যখন অত্যাধুনিক যুগের সাধারণ মানুষের মাঝে বিশ্বাসের মতিভ্রম দেখা যায়। তখন পরীক্ষা করে একাডেমীর বিজ্ঞানীগণ যা দেখান তা অবিশ্বাস্য এবং এতে করে যা হয় তা চোখে দেখার মতো নয়। তীব্র খাদ্যাভাব দেখা দিলে প্রথমে এরা মাথা সহ মুখমণ্ডলটি প্রথমে খেয়ে ফেলে, পরে ধীরে ধীরে পুরো শরীর। যখন পুরো শরীর খেয়ে ফেলে তখন তাদের আকৃতি হয় এক আঙ্গুলের কিঞ্চিত পরিমাণ এবং এই কিঞ্চিত পরিমাণ থেকেই আবার পুনর্গঠিত হয়ে পূর্ণ অবয়বে ফিরে আসে এবং এক্ষেত্রে সময় লাগে প্রায় বিশ সেকেন্ডের মতো। হাইতুদের মানুষের মতো স্বাভাবিক শ্বসন বা শ্বাস-প্রশ্বাস হয়না। তারা নিজেদের শরীরে অজানা এক ধরনের বিক্রিয়ার মাধ্যমে মিথেন তৈরি করে এবং অদ্ভুতভাবে ক্লোরোপ্লাস্টের সাথে বিক্রিয়া শেষে কার্বনডাই-অক্সাইড ও অক্সিজেন উৎপন্ন করে। অক্সিজেন উৎপন্ন হওয়ার মতো এমন ঘটনাও যখন মানুষ বিশ্বাস করতে অক্ষম হয় তখন একাডেমী প্রায় অনিশ্চয়তার সহিত জানায়- ‘সম্ভবত পুরো মহাবিশ্ব জুড়ে এমন পদার্থ ছড়িয়ে আছে যা হাইতুরা শোষণ করে। শোষিত পদার্থের সাথে বিক্রিয়া করে মিথেন তৈরি করে নিজেদের শরীরে এবং এর ফলে কার্বন-ডাইঅক্সাইড ও হাইড্রোজেন পৃথক করে। হাইতুরা যখন সূর্যালোকের অভাবে পুনর্গঠিত হয় তখন বিক্রিয়া হয় বলে ধারনা করা হয়। এবং এই বিক্রিয়ার ফলে যে জৈব বস্তু উৎপন্ন হয় তা মূলত ক্লোরোপ্লাস্টের সাথে বিক্রিয়ায় সক্ষম। ক্লোরোপ্লাস্টের সাথে এই বিক্রিয়ায় কোন খাদ্য উৎপন্ন হয় না ঠিকই কিন্তু অক্সিজেন উৎপন্ন হয়। খুব কম পরিমাণ অক্সিজেন হাইড্রজেনের সাথে মিলে পানি উৎপন্ন করে এবং বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে হাইতুরা এই পানি অপসারণ করে। কিন্তু এতে করে বেশি পরিমাণ অক্সিজেন থেকে যায় তাদের শরীরে যা তারা পরবর্তীতে তাদের গ্রহের বায়ুমণ্ডলে নির্গত করে।

পৃথিবী যখন একেবারে ধ্বংসের দরজায় তখন এই হাইতুর সাহায্যে নতুন দিগন্তের মুখ উন্মোচিত হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে পুরো বিশ্ববাসী ঋণী হয়ে আছে বাইশ শতকের ড.এ.এইচ আবির নামক প্রখ্যাত একজন এস্ট্রোফিজিসিস্ট(জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী) এর কাছে। সেকালের প্রখ্যাত এই জ্যোতিপদার্থবীদ একদা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে জানান, ‘পৃথিবীর মানুষরা যদি মিরন গ্যালাক্সির ত্রৃয়ন গ্রহে যেতে সক্ষম হয় তবে পৃথিবী একটি বড় ধরনের দুর্যোগ থেকে বেঁচে যেতে পারে। গ্রহটিতে এমন কিছু প্রাণী আছে যা মানুষের জন্য উপকার বয়ে আনতে পারে ভবিষ্যতে।’ আর সেই সূত্র ধরে বিজ্ঞান একাডেমীর নির্দেশে একদল নভোচারী অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে তৈরি হেমন নামক মহাকাশযান যা আলোর গতির অর্ধেক বেগে পৃথিবীর দ্রুতগামী অন্যতম দ্বিতীয় মহাকাশ যান করে সেই গ্রহে যেতে সক্ষম হয়। পরে এদের নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে পৃথিবীবাসী পেয়ে যায় এক পরশ পাথর। একদিকে সূর্যের উপস্থিতিতে অক্সিজেন আবার অন্যদিকে সূর্যের অনুপস্থিততেও অক্সিজেন। ফলে বিপুল পরিমাণ অক্সিজেনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে পুনর্গঠিত হতে থাকে পৃথিবীর ওজোনস্তর। নৈরাশ্যের ঘন কালো আঁধারে ছেয়ে যাওয়া থেকে বেঁচে যায় পৃথিবী। কিন্তু মানুষ নিজেদের ভুল বুঝতে সক্ষম হয় তখন, যখন নির্দিষ্ট সংখ্যার থেকে লোভের প্রভাবে বেশি সংখ্যক হাইতু যখন পৃথিবীতে আনা হয়; আর এতে করে কয়েক বছর পরে ত্রৃয়ন গ্রহের ভারসাম্য বিলীন হতে শুরু করে। কিন্তু মানুষ তার বুদ্ধি আর বিচক্ষণতার মাধ্যমে আনিত হাইতুগুলোর ক্লোন তৈরি করে এবং হাইতুদের তাদের গ্রহে ফেরত পাঠানো হয় আর নতুন ক্লোন-হাইতুদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা তিনগুন করা হয়। কিন্তু ক্লোন সাধারণত আসলদের থেকে কম পরিমাণে অক্সিজেন উৎপন্ন করে বলে একাডেমীর নির্দেশে পৃথিবীবাসীরা একটি নির্দিষ্ট ভূ-খণ্ডে উন্নয়নশীল শিল্প কারখানাসহ উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে সমগ্র পৃথিবীতে বাস করতে থাকে। আর অন্যদিকে আরেকটি ভূ-খণ্ডে শুরু হয় বৃক্ষরোপণ এবং পরিশেষে বৃক্ষরাজির বন। একদিকে বৃক্ষরাজির ফলে সমূহ পরিমাণ অক্সিজেন অন্যদিকে মানুষ চলতে থাকে নতুন দিগন্তের পানে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may use these HTML tags and attributes: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>