কেমন হবে যদি আমরা দীর্ঘক্ষণ গ্যাজেট ইউজ করতে পারি চার্জে লাগানোর টেনশন ছাড়াই?? ঠিক তেমন ব্যাটারির সন্ধান নিয়ে আজকের আর্টিকেল।
আমরা যারা স্মার্ট গ্যাজেট ব্যবহার করি, তাদের সবাইকে দিনের একটা সময় গ্যাজেট থেকে দূরে থাকতে হয়, চার্জ নেই বলে, চার্জিং পোর্ট এ লাগিয়ে অনেকটা অলস সময় পার করতে হয়। পেসমেকার থেকে শুরু করে স্মার্টফোন, কোথায় তাদের উপস্থিতি নেই???
মাঝেমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কাজের সময় ব্যাটারি ডেড হয়ে গেলে বুঝা যায়, দীর্ঘ ব্যাকআপ টাইম কতটা জরুরি!!! প্রফেসর আৎসুও ইয়ামাদা এবং তার দল সাম্প্রতিককালে এমন এক ম্যাটেরিয়াল আবিষ্কার করেছেন যা, প্রচলিত ব্যাটারিকে প্রতিস্থাপিত করতে যাচ্ছে অদূর ভবিষ্যতে।
সে সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে বিজ্ঞানীরা এমন এক ধরণের ব্যাটারি আবিষ্কার করেছেন, যা নিজে নিজেই কিনা নিজের কোষের ক্ষতি পূরণ করতে সক্ষম। দেখা যায়, কয়েক বছর ইউজ করার পর ব্যাটারি আগের মত ব্যাকআপ আর দিতে পারে না, দিনের পর দিনের ব্যাকআপ কমতেই থাকে, খুব দ্রুত ড্রেইন হয় ব্যাটারি। গ্রাহক যেমন একদিকে বিরক্ত হয় অপরদিকে কোম্পানীর প্রডাক্টের উপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলে।
সে সমস্যা সমাধানের জন্যে বিজ্ঞানীরা এমন এক ধরণের ব্যাটারি আবিষ্কার করেছেন যা কিনা প্রচলিত ব্যাটারির থেকে কয়েকগুন ব্যাকাপ টাইম বেশি দিতে পারবে, ফলে দীর্ঘক্ষণ স্মার্টগ্যাজেটের সাথে সম্পৃক্ত থাকা সম্ভব হবে। তারা বলেছেন যে,
আমরা যদি অক্সিজেন রেডক্স লেয়ারড অক্সাইড ব্যবহার করে ব্যাটারি তৈরি করি তাহলে একাধারে চার্জিং ও ডিসচার্জিং এর ফলে ঘটা লেয়ারের ক্ষয়ক্ষতি তো কমেই তার সাথে লেয়ারগুলো নিজেরাই নিজেদের ক্ষয়পূরণ করতে সক্ষম হয়।

সহজভাবে বলা যায় যে, ব্যাটারির কোষগুলো ক্ষয় হয়ে যাবার ফলে এদের কর্মদক্ষতা কমে যায়, কিন্তু নতুন এই ব্যাটারি নিজেই নিজের ক্ষতিগ্রস্থ কোষ পূনরায় ঠিক করতে পারবে, যা এর আগে কেউ করে দেখাতে পারেনি। তারা কাজ করছেন কিভাবে ব্যাটারিকে ড্যামেজ রিপেয়ার করার শক্তি প্রদান করা যেতে পারে, যাতে করে ব্যাকাপ টাইম যেন প্রথমবারের মতই থাকে। গতানুগতিকভাবে, ব্যাটারির একটি ধনাত্মক ও ঋণাত্মক প্রান্ত এবং ইলেক্ট্রলাইট(তড়িৎ বিশ্লেষক পদার্থ) থাকে।
অপরদিকে লিথিয়াম আয়ন বা লিপো ব্যাটারি গুলো চার্জ হয় রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে যেখানে আয়নগুলো ছোটাছুটি করে পজেটিভ ইলেক্ট্রড থেকে ইলেক্ট্রলাইটে, তারপর সেখান থেকে যায় নেগেটিভ ইলেক্ট্রড এ। আবার যখন সঞ্চিত চার্জ ব্যবহার করার দরকার হয় তখন কাজটি ঘটে ঠিক উল্টো প্রসেস এ।
লিপো তে নেগেটিভ ইলেক্ট্রড বানানো হয় গ্রাফেন থেকে এবং পজেটিভ ইলেক্ট্রড বানানো হয় লিথিয়াম কোবাল্ট ওক্সাইড থেকে যা কিনা সংযুক্ত থাকে দুর্বল ভ্যানডার ওয়ালস বন্ধন দ্বারা। এই বন্ধন দেখতে পাওয়া যায় খুব কাছাকাছি লেগে থাকা পদার্থের মাঝে।
অনবরত চার্জিং ডিসচার্জিং প্রসেসের মধ্যে দিয়ে যাবার ফলে এই লেয়ারগুলোর মাঝে একটা গ্যাপ(শূন্যস্থান) তৈরি হয় যা ফাটল নামে অবহিত করা যায়। এই ফাটলগুলো ব্যাটারির ক্যাপাসিটি কমিয়ে দেবার জন্যে অনেকাংশে দায়ী।
এখন আমরা যদি কোনোভাবে এই ফাটলগুলো রিপেয়ার কিংবা ড্যামেজ হবার হাত থেকে রক্ষা করতে পারি, তাহলে আমরা অফুরন্ত ব্যাকাপ পেতে পারি।
সেই কাজটি করার জন্যে টোকিও ইউনিভার্সিটি একদল ইঞ্জিনিয়ার লিথিয়াম আয়নের বদলে সোডিয়াম আয়ন নিয়েছেন, যা আগামী দিনের দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারির রূপকার হতে যাচ্ছে। একটি এক্সট্রা সোডিয়াম আয়ন থাকা ম্যাটেরিয়াল থেকে ইলেক্ট্রড বানিয়ে তারা এই ক্ষয় হবার প্রসেস টা দূর করতে সক্ষম হয়েছেন। ফলে এই পদ্ধতিতে আবিষ্কৃত ব্যাটারি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়না খুব সহজে, ফলে দিতে পারে দীর্ঘক্ষণ ব্যাকাপ টাইম। যেকারণে ক্ষয় হবার পরিমাণ টা অনেক কমে এসেছে তা হল, ভ্যান ডার ওয়ালস বন্ধন কে প্রতিস্থাপিত করা কুলম্বিক আকর্ষণ তত্ত্ব। আর আমরা জানি কুলম্বের সূত্র থেকেই জানি, সেইম চার্জ রিপেল ইচ আদার, অপজিট চার্জ অ্যাট্রাক্ট ইস আদার, এই তত্ত্ব এখানেই ইউজ করা হয়েছে।
কুলম্বিক বন্ধন ভ্যানডার ওয়ালস অপেক্ষা অনেক শক্তিশালী। ফলে চার্জিং এর সময় যে সোডিয়াম আয়ন ঘুরে পজেটিভ ইলেক্ট্রড এ যাত্রা করে, ডিসচার্জিং এর সময় তারা পূনরায় আগের অবস্থানে ফিরে আসে, সেলের ক্ষয়ক্ষতি পূরণের জন্যে। ফলে দীর্ঘস্থায়ী ব্যাকাপ পাওয়া যায় এবং ড্যামেজ ও খুব দ্রুত রিপেয়ার হয় যদি হয়ে থাকে।

বাণিজ্যিকভাবে এখনো বাজারে এর আবির্ভাব ঘটেনি, তবে যখন ঘটবে তখন যে বেশ সাড়া ফেলবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কে না চায়, চার্জে না লাগিয়ে গ্যাজেট ব্যবহার করতে, সেই স্বপ্ন বুঝি এবার সত্যি হতে যাচ্ছে। আশা করি খুব দ্রুত তা বাজারে এসে আমাদের চাওয়াগুলোকে পূরন করুক, কতকিছুই তো উন্নত হচ্ছে, এবার না হয় ব্যাটারির পালা এসেছে।
Article source: curiosity