২০০৩ সালে চিলির আটাকামা মরুভূমির একটি পরিত্যক্ত গির্জার পিছনে পাওয়া যায় এক বিষ্ময়কর মানবকঙ্কাল। কঙ্কালটিকে বিষ্ময়কর বলার পিছনে একধিক কারণ রয়েছে। প্রথমত কঙ্কালটি দৈর্ঘ্যে মাত্র ৬ ইঞ্চি। এছাড়াও কঙ্কালটির মাত্র ১০ জোড়া পাঁজর রয়েছে যেখানে একজন স্বাভাবিক মানুষের পাঁজর সংখ্যা ১২ জোড়া। কঙ্কালটির মাথা কিছুটা শঙ্কু-আকৃতির। আটাকামা মরুভূমির নামানুসারে কঙ্কালটির নাম দেওয়া হয় আটা।
প্রথমত বিজ্ঞানীরা কঙ্কালটিকে এলিয়েন ভাবলেও, এস টানফোর্ড ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ায় নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এর মধ্যে মানব শিশুর বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। কঙ্কালটি আবিষ্কারের প্রায় এক যুগ পর ২০১২ সালে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের মাইক্রোবায়োলজি এবং ইমিউনোলজির অধ্যাপক ড্যানিয়েল গ্যারি কঙ্কালটির বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান শুরু করে। প্রাথমিক পরীক্ষার পর প্রমাণিত হয় এটি ছয় থেকে আট বছরের কোনো মেয়ের কঙ্কাল।
কঙ্কালটিকে নিয়ে পুরোদমে বিশ্লেষণ শুরু হয় স্ট্যানফোর্ডের প্রফেসর ডাঃ নোলান এর গবেষণার কেন্দ্রবিন্দুতে আনা হলে।নোলান তার এক বিবৃতিতে বিবিসি কে বলেন,
“কঙ্কালটির হাড়ের আনুপাতিক পরিপূরক ছিল, নমুনাটি ছোট হওয়া সত্ত্বেও দেহটি পরিপক্ব, এই বৈষম্যটি বেশীরভাগ গবেষণার সৃষ্টি করেছিল, তাই আমরা বিশ্বাস করি যে, এক বা একাধিক mutated জিন এই বৈষম্যের জন্য দায়ী ছিল।” এছাড়াও ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির হেলথ সায়েন্সের পরিচালক অটুল বুটেন বলেন, “এটা জিনোমের মতো একটি বিশৃঙ্খল নমুনা, যাকে বিশ্লেষণ করে আমরা বর্তমান চিকিৎসা নমুনাগুলো পরিচালনা করতে পারি, যা একাধিক মিউটেশন দ্বারা পরিচালিত হতে পারে।”
আটা নামক এই কঙ্কালটির ভবিষ্যতের গবেষণায় জেনেটিক কঙ্কাল রোগের বোধগম্যতার উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে।
চিলির ছয় ইঞ্চি-দীর্ঘ এই কঙ্কালটির হয়ে যাওয়া পরীক্ষাগুলো নিশ্চিত করে যে, এটি একটি নতুন জিনের দেহাবশেষের প্রতিনিধিত্ব করে যা মূল জিনগুলোর একাধিক মিউটেশনের ফল এছাড়া এটির DNA টেস্টিং ইঙ্গিত দেয় যে, হাড় এবং অন্যান্য অসংলগ্ন বয়সের জেনেটিক মিউটেশনের ফলে হতে পারে। কিছুদিন পর কঙ্কালটিকে নিয়ে নতুনভাবে গবেষনা করার পর সেই পুরানো ধারনাগুলোর সাথে সংযুক্ত হয় আরো কিছু নতুন ধারনা যাতে বলা হয় কঙ্কালটির কোষের নিউক্লিয়াসের মধ্যে রয়েছে মানুষের মতো জেনেটিক ব্লুগ্নিট যার ফলে কঙ্কালটিকে অন্য গ্রহের প্রাণী কিংবা এলিয়েন ভাবার ঘটনার অবসান হয়। যদিও এখনও কঙ্কালটিকে নিয়ে চলছে নানান গবেষণা, এ সকল গবেষণার কেন্দ্রবিন্দুতে এখনো কিছু রহস্যময় প্রশ্ন রয়ে যায়। যেমন: কঙ্কালটির পাঁজর সংখ্যা স্বাভাবিক মানুষ হতে কম এবং মাথার আকৃতিরও কিছুটা ব্যতিক্রম রয়েছে।
পরিশেষে ২০১৮ সালের মার্চ মাসে নোলান কতৃক বিবৃত ফলাফলে বলা হয় যে, "কঙ্কালটির ভ্রূণের এক বিরল পরিপক্ব হাড়ের ব্যাধি ছিলো।" সেই সাথে তারা কঙ্কালটির ৭টি জিনে ৬৪টি অস্বাভাবিক মিউটেশন সনাক্ত করে। এছাড়াও তারা আরো কিছু মিউটেশন খুঁজে বের করে যেগুলো বিশেষভাবে কঙ্কালের ক্রমবিকাশকে প্রভাবিত করে।
আটাকামা মরুভূমি হতে প্রাপ্ত এই কঙ্কালটি বিংশ শতাব্দীর এক অন্যতম রহস্য। প্রথমদিকে কেউ কেউ কঙ্কালটিকে অন্য গ্রহের প্রাণী কিংবা এলিয়েন মনে করে থাকলেও নানান গবেষণার পর এটি একটি ৬-৮ বছরের মানবশিশুর কঙ্কাল হিসেবে চিহ্নিত হয়। তবে এখনো কঙ্কালটিকে নিয়ে বিজ্ঞানীদের মনে নানান প্রশ্ন রয়েছে, যা এক রহস্যময়তার সৃষ্টির করে।
Leave a Reply