মহাকাশে গাঁজা সেবন নিয়ে বিজ্ঞান কি বলে?

Feature image

মহাকাশে একজন নভোচারীকে সবসময় বিশেষ সতর্কতার মধ্যে থাকতে হয়। বদ্ধ পরিবেশ, শুন্য অভিকর্ষজ বল, ওজনহীনতা, স্পেস স্টেশনের সফিসটিকেটেড স্ট্রাকচার সবকিছু মিলিয়ে অত্যন্ত জটিল একটি পরিবেশ। যেখানে সামান্য অসাবধানতা মানে ভয়াবহতা।
কখনো ভেবে দেখেছেন এমন একটি পরিবেশে গাঁজা সেবনের ফলে কি ঘটনা ঘটতে পারে?

গাঁজা সেবনের ফলে মস্তিষ্কে নানা আজব কাণ্ডকারখানা ঘটতে শুরু করে। যাকে আমরা “হাই” (high) হওয়া নামে জানি। ওজনহীন পরিবেশে “হাই” হলে কেমন লাগতে পারে সে বিষয়েই জানবো আমরা।
তবে বিষয়টা কিন্তু মোটেও সহজ নয়। কারণ স্পেস স্টেশনে যেকোনো ধরনের নেশা জাতীয় বস্তু সেবন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

গাঁজার পরিচিতি

গাঁজা
ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন নামে এর পরিচিত মোটামুটি সবার কাছেই। উপমহাদেশে গাঁজা নামে পরিচিত একই জিনিস পশ্চিমা দেশ গুলোতে মারিজুয়ানা বা মারিহুয়ানা নামে পরিচিত। গাছের পাতা বা ডালের আঠালো কষ দিয়ে তৈরী এ অঞ্চলে চরস আর পশ্চিমা দেশে হাশিশ। শুধু তাই নয়; ভাং, সিদ্ধি, পাট্টি, সব্জি, গ্রাস, মাজুন নানা নামে এটি পরিচিত।

বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই এর ব্যবহার অবৈধ হলেও চিকিৎসাশাস্ত্রে অনেক দেশে গাঁজাকে বৈধতা দেয়া হয়েছে। নানা ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকা সত্ত্বেও এর রয়েছে ভেষজ গুণ।

যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা এখন গাঁজা, ভাং ও মারিজুয়ানার ওপর গবেষণা করে জেনেছেন, এ সব মাদকদ্রব্য থেকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন ব্যথানাশক ওষুধ প্রস্তুত করা সম্ভব, যা মানুষের কোনো ক্ষতি করবে না। ফ্রান্সের গবেষকরা জানান, ‘তারা ইঁদুরের মস্তিষ্কের যে অংশের কোষের নিউরনে গাঁজা বা মারিজুয়ানার মাদক ক্রিয়া করে তা ওষুধ প্রয়োগ করে নিষ্ক্রিয় করেন প্রথম। এর পর ওই ইঁদুরের শরীরে এসব মাদক প্রবেশ করিয়ে দেখা গেছে, তাতে ইঁদুরটি বেহুশ হয় না। বরং ওটির প্রাণচাঞ্চল্য ঠিকই থাকে। এ অভিজ্ঞতা থেকে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ব্যথানাশক হিসেবে গাঁজা বা মারিজুয়ানার ভালো গুণ মানুষের বিভিন্ন রোগের ওষুধ এবং অস্ত্রোপচারের জন্য চেতনানাশক হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। শিগগিরই গাঁজা ও মারিজুয়ানার নির্যাস থেকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন এ ওষুধ প্রস্তুত হবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেছেন।

তবে বেশিরভাগ মানুষের কাছে গাঁজা মানে নেশার উপকরণ। কারণ এর প্রভাবে খেলে মন-মস্তিষ্কে কিছু সাময়িক পরিবর্তন ঘটে।

গাঁজায় কেন নেশা হয়?

গাঁজায় আছে টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনোল (টিএইচসি)। এটা মস্তিষ্কে এমন এক অংশে কাজ করে যে অংশটি সুখকর অনুভূতির সৃষ্টি করে। কাজেই পেটপুরে খাওয়া বা সেক্সের মতোই সুখ দেয় গাঁজা।

গাঁজা সেবনের পর হৃদস্পন্দন প্রতি মিনিটে ২০-৫০টি বেড়ে যায়। যা কিনা ২০ মিনিট থেকে ৩ ঘণ্ট পর্যন্ত স্থায়ী থাকে।

আরেকটি গবেষণায় বলা হয়, গাঁজা মস্তিষ্কের সেরেবেলাম অংশে রক্ত চলাচলে প্রভাববিস্তার করে। যার ফলে সেবনকারীর সময়জ্ঞান কাজ করে না।

আর এসব কারণেই মহাকাশে গাঁজা সম্পূর্ণ রূপে হারাম করেছে নাসা। তাছাড়া গাঁজা যেখানে আগুন তো সেখানে থাকবেই। আর অনিয়ন্ত্রিত আগুন সবসময়ই বিপজ্জনক। তার সাথে যদি যুক্ত হয় শুন্য অভিকর্ষীয় বদ্ধ পরিবেশ তখন বিপদের মাত্রাটা বেড়ে যায় আরো কয়েক গুণ। কারণ মহাকাশে আগুনও কিছুটা অদ্ভুত আচরণ করে।

কিন্তু নাসার চোখকে ফাঁকি দিয়ে হোক, আর যেভাবেই হোক আপনি যদি মহাকাশে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে বসে গাঁজা ফুঁকতে শুরু করেন তবে কি কি ঘটতে পারে ভেবেছেন কখনো?

মহাকাশে গাঁজা সেবনে নেশার মাত্রা কেমন হবে?

গাঁজা সেবনের মূখ্য উদ্দেশ্যই হল “হাই” হওয়া। কিন্তু জেনে হতাশ হবেন যে মহাকাশে গাঁজার ওভারডোজ নিয়েও “হাই” হতে পারাটা রীতিমত ভাগ্যের ব্যাপার।
বিভিন্ন ধরনের মহাজাগতিকরশ্মি গাঁজার প্রভাব অনেকাংশেই কমিয়ে দেয়। কিন্তু পৃথিবীতে ম্যাগনেটিক ফিল্ড এবং বায়ুমণ্ডলের উপস্থিতির কারণে অধিকাংশ মহাজাগতিকরশ্মি ঠিকভাবে প্রবেশ করতে পারে না। তাই যে পরিমাণ গাঁজা খেয়ে আপনি পৃথিবীতে বিশাল “হাই” হয়ে থাকবেন, সে পরিমাণ গাঁজা স্পেস স্টেশনে ফুঁকে মোটেও “হাই” হবেন না।

কেন মহাকাশে গাঁজার নেশার মাত্রা কমে যায়?

মহাজাগতিকরশ্মির উপস্থিতি আপনার মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাসের (Hippocampus)  ক্যানাবিনোয়েড রিসেপ্টরকে ঠিকভাবে কাজ করতে বাঁধা দেয়। আর এই হিপোক্যাম্পাসের কাজই হচ্ছে আপনার ইমোশন এবং শর্ট টাইম মেমোরি নিয়ে খেলা করা। গাঁজা সেবন করার ফলে এই অংশটি সাধারণের চেয়ে অনেক বেশি সময় ধরে উজ্জীবিত থাকে যার ফলে মানুষ এক ধরনের ঘোরে থাকে।

যেহেতু মহাকাশে বিভিন্ন ধরনের মহাজাগতিকরশ্মির উপস্থিতি হিপোক্যাম্পাসকে অনেক সময় ধরে উজ্জীবিত থাকতে বাঁধা দেয় তাই মহাকাশে গাঁজার ফলে নেশার প্রভাব অনেক কমে যায়।

মোদ্দাকথা, নাসাকে ফাঁকি দিয়ে স্পেস স্টেশনে গাঁজা নিয়েও লাভ নেই।

রেফারেন্সঃ

 

মাথার ভেতর গাজা কেন ঘুরে?

 

Comments are closed.