কিছুকাল আগে মানুষ স্মার্টফোনের কিছুই জানত না ,আজ এই ২০১৮ সাল স্মার্টফোন দুনিয়া, স্মার্টফোন ছাড়া একদিন কল্পনা করাই দুষ্কর।
সময়ের সাথে স্মার্টফোনের ডিসপ্লে , বিল্ড কোয়ালিটি , ডিউরাবিলিটি ,লুক, ক্যামেরা ইত্যাদি সহ সকল ক্ষেত্রেই অনেক পরিবর্তন এসে গেছে কিন্তু এই চিপ বা প্রসেসর ই সবকিছুর মূলে এটাই স্মার্টফোন অপারেট করে।
আচ্ছা এইযে বললাম চিপ বা প্রসেসর , এর কাজ কি ??
মানবদেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ মস্তিষ্ক, এটি ছাড়া কোন প্রকার কাজ করা যেমন অসম্ভব , ঠিক তেমনিভাবে এই চিপ্সেট বা প্রসেসর ছাড়া স্মার্টফোন অচল । প্রসেসর স্মার্টফোনের কেন্দ্রীয় কারখানা, এটি গ্রাহকের থেকে আদেশ গ্রহন করে, এবং সেকেন্ডে প্রায় ১ বিলিয়ন হিসাব সম্পন্ন করে থাকে, প্রসেসর যত কর্মক্ষম হবে তত দ্রুত কাজ সম্পন্ন হবে, যেকোনো অ্যাপ্লিকেশন খুব দ্রুত ওপেন হবে সেটা যেকোনো অ্যাপ যেমনঃ ক্যামেরা , গেম, ইমেইল ,মিডিয়া প্লেয়ার , গ্যালারি ইত্যাদি।
সাবলীল অপারেশন এর জন্য যা যা করা দরকার সেগুলোই প্রসেসর করে থাকে, ফলে ল্যাগ ছাড়াই ফোন চালানো যায়। ফলে যে ফোনের প্রসেসর যত ভাল , তার কাজ সম্পন্ন করার হার ও খুব দ্রুত এবং বেশী।
এককথায় যদি বলা লাগে তবে বলা যায় , স্মার্টফোন যে ইনপুট গুলো রিসিভ করে সেগুলোকে প্রসেস করাই এর কাজ, এবং ইনপুট গুলোকে কাজে লাগিয়ে কাজটি সম্পন্ন করা। এজন্য একে “ব্রেইন অফ ডিভাইস” বলা হয়ে থাকে।
চলুন তবে জেনে নেয়া যাক কি কি কাজ করে এই প্রসেসর একটি ফোনেঃ
১। সিপিইউঃ কন্ট্রোল প্রসেসিং ইউনিট
কাজঃ কমান্ড গ্রহন করে, দ্রুত হিসাব কষে তার ফলাফল হিসেবে ডিভাইস এ সিগন্যাল পাঠায় । গিগাহার্জ দ্বারা এর শক্তিমত্তা গণনা করা হয়ে থাকে,যা দ্বারা বুঝা যায় একটি চিপ এক সেকেন্ডে কি পরিমাণ নির্দেশ পালন করতে পারে।উদাহরণস্বরূপঃ ১গিগাহার্জ এর একটি চিপ সেকেন্ডে ১ বিলিয়ন চক্র সম্পন্ন করে থাকে ।
২। জিপিইউঃ গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিটঃ
কাজঃ সিপিইউ কে বিভিন্ন গ্রাফিক্স হ্যন্ডেল করতে সাহায্য করাই এর কাজ, আর এখনকার প্রায় সব স্মার্টফোনেই ডেডিকেটেড জিপিইউ চিপ থাকে, ফলে গ্রাফিক্স রিলেটেড কাজ গুলো অনেক সহজেই ল্যাগিং ছাড়া হয়ে যায়। পরিবর্তন টা তখনি চোখে পরবে যখন আপনি গেম খেলবেন কিংবা মুভি দেখবেন। ভিডিও স্মুথলি চলবে, ফাস্ট মুভিং অবজেক্ট পেক্সেলেটেড ভাবে দেখা যাবে না। সোজা বাংলায় , এটি সিপিইউ কে মুক্ত রাখে গ্রাফিক্স এর চাপ থেকে। উদাহরণঃ কোয়াল্কমের আড্রেনো ৬৩০, ৫৪০,৪৩০
৩। ক্যামেরা আইএসপিঃ ইমেজ সিগন্যাল প্রসেসর
কাজঃ দ্রুত ছবি তোলা , উচ্চ রেজুলেশন সাপোর্টেড, ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন,ছবির গুণাগুণ উন্নত করাই এর কাজ, ফলে উন্নতমানের পিকচার সহ লেটেস্ট অত্যাধুনিক ভিডিও দেখার অভিজ্ঞতা পাওয়া যাবে।
৪। রেডিও ও থ্রিজি/ ফোরজি মডেমঃ এর দ্বারা বাইরের জগতের সাথে কানেক্টেড থাকা যায়, এছাড়াও রেডিও ভয়েস কানেকশন আদান প্রদান করে, এবং মডেম দিয়ে ডিজিটাল সিগন্যাল আদান প্রদান করা হয়।
৫। মেমোরি কন্ট্রোলারঃ এটা ফোন মেমরির সাথে প্রসেসর এর লিঙ্ক স্থাপন করে,ইন্সট্যান্ট কানেকশন বিটুইন ফাইলস অ্যান্ড অ্যাপলিকেশন, ফলে খুব দ্রুততার সাথে ফটো অ্যালবাম দেখা যাবে, পছন্দের ওয়েবসাইট ভিজিট করা যাবে অথবা মেসেজ পড়া যাবে ।
৬। অডিও ও ভিডিওঃ এদের প্রসেস করার জন্য চিপে আলাদা ডেডিকেটেড ইউনিট থাকে, যার ফলে ১০৮০পিক্সেল এর ভিডিও প্লে খুব অনায়সেই হয়ে যায়, এছাড়াও মিউজিক ট্র্যাকের জন্য আলাদা সুবিধা থাকেই।
বর্তমানের ভালো কিছু প্রসেসর হলঃ
১ অ্যাপলের বায়োনিক চিপ- A-১২
২ কোয়ালকমের স্ন্যাপড্রাগন -৮৪৫
৩ হুয়াওয়ের হাইসিলিকন কিরিন- ৯৮০
৪ স্যামসাং এর এক্সিনোস সিরিজ
৫ ইন্টেল অ্যাটোম প্রসেসর
৬ মিডিয়াটেক সিরিজ
বর্তমানের ফ্ল্যাগশিপ ফোন গুলোতে সবচেয়ে লেটেস্ট চিপ ব্যবহার করা হয় যার ফলে এইসব সেটগুলো বাজারের আর সকল সেটের তুলনায় অনেকগুনে দ্রুততার সাথে কাজ সম্পন্ন করতে পারে, যেহেতু এরা বাজারের সমসাময়িক চিপ্সেটের মধ্যে সেরা, তাই এদের সান্নিধ্য পেতে গেলে বেশ ভালো পরিমাণের টাকা খরচ করতে হবে।
আমাদের আলোচনা ১ ও ২ নং নিয়ে:
কোয়ালকমের স্ন্যাপড্রাগন -৮৪৫ঃ
এতে যে সকল সুবিধা রয়েছে তা হলঃ
spectra 280: 16 MP images/sঃ ছবি তোলায় নতুন মাত্রা এনেছে।
Adreno 630 used (lastest GPU):যেকোনো গেমস ল্যাগ ছাড়াই খেলা যাবে, হোক সেটা পাব্জি, নিড ফর স্পিড, অ্যাস্ফল্ট, ফিফা কিংবা ড্রিম লিগ সকার।
ফলে নতুন এক অভিজ্ঞতা পাওয়া যাবে গেমস দুনিয়ার সাথে।
Secure processing security (vault like security): নিরাপত্তার বিষয়টি ভেবেই এটি তৈরি করা হয়েছে ,যা আপনার ব্যক্তিগত তথ্য রক্ষায় যেমন ছবি, ডকুমেন্ট ইত্যাদি কে এক্সট্রা প্রটেকশন দিবে।
All day battery life: যেহেতু সর্বাধুনিক প্রযুক্তি , ও সফটওয়্যার অপ্টিমাইজেশন এত ভালো যে এতে ব্যবহার করা ফোনে ৩০০০/৩৫০০মিলিঅ্যাম্পিয়ারহাওয়ার এর ব্যাটারি দিয়ে সারাদিন অনায়সে চলা যাবে।
Supports quick charge 4.0 (50 in 15 mins)
CPU: upto 2.8 GHz (kryo-385) বাজারের সেরা সিপিইউ এতে ব্যবহার করা হয়েছে বিধায় ফোনে কোন কাজ করতে সমস্যা হওয়ার প্রশ্নই আসে না। সেকেন্ডে প্রায় ২.৮ কোটি সাইকেল সম্পন্ন করতে সক্ষম।
Fabrication: 10nm SoC(system on chip)
Transistor count: 5.3 BILLION
Performance boost: 25-30% over Sd 835ঃ আগের ভার্সন এর তুলনায় প্রায় ২৫-৩০% ফাস্টার।
Improved voice recognition and low power voice processing ঃ কথার আওয়াজ এর ক্লিয়ারিটি উন্নত হয়েছে আগের থেকে, নয়েজ অনেক কম।
Can support cinema grade footage ঃ সিনেমায় ধারণ করা ফুটেজ এবার ফোনে ধারণ / তোলা যাবে।
Video at 240fpsঃ সেকেন্ডে ২৪০ ফ্রেমে ভিডিও করা যাবে, এছাড়াও স্লো মোশন তো আছেই।
Storage upto: 256gbঃ ২৫৬ জিবি পর্যন্ত স্টোরেজ সুবিধা ফলে স্টোরেজ এর অভাবের দিন শেষ
Devices with snapdragon 845: oneplus 6, poco f1, Samsung galaxy note 9 etc
অ্যাপলের বায়োনিক চিপ- A-12:
15% more faster than A-11: আগের ভার্সন এর তুলনায় ১৫% দ্রুত
Upto 50% lower power usage than A-11ঃ প্রায় ৫০% পাওয়ার সাশ্রয়ী আগের থেকে
GPU: 4 cores
Apple designed NEURAL engine:
অ্যাপলের নিজস্ব আর্টিফিশিয়াল ইঞ্জিন যা নিজে থেকেই পরিবেশের/আশেপাশের তথ্য অ্যানালাইসিস করে গ্রাহককে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে, ছবি তুললে নিউরাল ইঞ্জিন সেটা পরীক্ষা করে বাস্তব সম্মত ফলাফল এবং চমকপ্রদ কিছু অভিজ্ঞতা দিবে।
এছাড়াওঃ
- Recognize patterns
- Can predict
- Learn from experiences
এই সুবিধা গুলো পাওয়া যাবে।
Advanced Face ID: মুখমন্ডলের প্রায় ৩০০০০ ডট সিলেক্ট করে ফোনকে ফেস আনলক সুবিধা দিচ্ছে, যা বর্তমানে বাজারের অন্য কোন ফোনেই নেই, এটা অ্যাপলের ব্যক্তিগত মাইলস্টোন আগামীর নিরাপত্তার ক্ষেত্রে।
ইনফ্রারেড আলোতে পরীক্ষা করলে এটি বুঝা যাবে , অবিশ্বাস্য দ্রুততায় এটি ফোন আনলক করে যা সুপারফাস্ট ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর সাথে টেক্কা দিতে সক্ষম।
No fingerprint sensor ঃফেস আইডি উন্নতি করে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর বাদ দিয়ে দিয়েছে
5 trillion operation per second ; সেকেন্ডে ৫ ট্রিলিয়ন অপারেশন পরিচালনা করতে সক্ষম এই চিপ্সেট টি।
Fabrication: 7nm(1st one)ঃ সর্বপ্রথম ৭ন্যানোমিটার এর চিপ্সেট, হুয়াওয়ে অবশ্য ঘোষণা আগেই দিয়েছিল তাদের হাইসিলিকন কিরিন ৯৮০ – ৭ ন্যানোমিটার এর হবে, কিন্তু অ্যাপল আগেই বাজারে এনে ফেললো ।
আগের থেকে আকার অনেক কমে গিয়ে এর কর্মক্ষমতা অনেকগুনে বাড়িয়ে দিয়েছে, ট্রানসিস্টর এর ঘনত্ব অনেকগুনে বেড়ে দাড়িয়েছে।
CPU: 6 cores ছয়টি কোর একসাথে কাজ করবে নির্দেশনা মোতাবেক ।
NEURAL engine: 8 cores
Transistor count: 6.9BILLION
Storage: upto 512 gb বাজারের সবচেয়ে বেশী স্টোরেজ সুবিধা দেয়া ফোন এটি।
ফলে কখনই জায়গার অভাব অনুভূত হবে না।। ইচ্ছামত ছবি, ভিডিও , ডক রাখা যাবে, স্পেস এর অভাবে ডিলিট করা লাগবে না কিছু কিংবা স্পেস ফাকা করতে পিসিতে নিতে হবে না কিছুই।
Phones with A-12 bionic chip: iphone XS, XS MAX ,XR
এটি তো গেল কি কি সুবিধা পাওয়া যাবে যদি এই চিপসেটওয়ালা ফোন ব্যবহার করা হয়।
এবার এদের মধ্যে কে বেস্ট সেটি নিয়ে কিছু কথা বলা যাকঃ
According to ANTUTU benchmark:
Apple xs max: সর্বমোট ৩৬৩,৫২৫ যা এযাবৎ কালের সেরা।
Samsung note 9: ২৮১,৯৩৪ সবমিলিয়ে।
অ্যাপ ওপেনিংঃ
অ্যাপল যেই অ্যাপ ২.৩ সেকেন্ডে অপেন করেছে সেটি ওপেন করতে স্যামসাং এর প্রায় ৫ সেকেন্ড লেগেছে স্ব স্ব মডেলের ক্ষেত্রে
SOURCE: VARIOUS YOUTUBE REVIEW
Geekbench score:
For apple xs max: 21,895
For Samsung galaxy note 9: 14,365
Multi-core score test:
For apple xs max : 11555
For Samsung galaxy note 9: 8998
এছাড়াও আরো অনেক টেস্ট রয়েছে , তবে সবগুলোর গড় ফলাফলে অ্যাপল এগিয়ে স্যামসাং এর মডেলের থেকে যদিওবা একজ্যাক্ট কম্পারিজন করা ঠিক নয়।
এক পরীক্ষায় দেখা গেছে অ্যাপলের বায়োনিক চিপ-১২ স্ন্যাপড্রাগন-৮৪৫ এর তুলনায় ২-৩গুন দ্রুত
নিচে লিংক দেওয়া আছে, দেখে নিতে পারেন।
আবার দামের দিক দিয়েও অ্যাপল এগিয়ে , প্রায় ১ লক্ষ টাকার(প্রায় ১১০০ ডলার) উপরে লাগবে আইফোন এক্স এস মাক্স এর মালিক হতে ।
অপরদিকে স্যামসাং নিতে গেলে ৬২০ ডলার গুনতে হবে।
অনেক কথা হল, কারো যদি জানার কিছু থাকে তবে গুগল তো আছেই এছাড়াও আমাদের কমেন্ট বক্স আপনাদের জন্য রয়েছেই।