আমেরিকান সাইক্রিয়াটিক এসোসিয়েশনের নতুন জরিপে জানা গেছে, প্রায় এক-তৃতীয়াংশ প্রাপ্ত বয়স্ক আমেরিকান ভাবছেন , সোশ্যাল মিডিয়া তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। অপরদিকে মাত্র ৫ শতাংশ মানুষের কাছে সোশ্যাল মিডিয়া মানসিক স্বাস্থ্যের বিবেচনায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। প্রায় ৪৫ শতাংশ মানুষ এর ইতিবাচক, নেতিবাচক উভয়-দিকের কথাই বলেছেন।

এই জরিপের তুই-তৃতীয়াংশ মানুষ মনে করেন, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, বিষণ্ণতা সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাপক ব্যাবহারের সাথে জড়িত। বিষণ্ণতার সাথে সোশ্যাল মিডিয়ার সম্পর্ক নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হয়েছে। অন্যান্য গবেষণা গুলো হিংসা, আত্মসম্মানবোধের ঘাটতি, সামাজিক দুশ্চিন্তার সাথে এর সম্পর্ক খুঁজে বের করেছে।
Jelena Kecmanovic, পেশায় একজন মনস্তাত্ত্বিক, তাঁর রোগীদের জীবনে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাবহার গবেষণা করে মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার ৬টি উপায় বাৎলে দিয়েছেন।
১. কখন, কোথায় সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করবেন তা নিয়ন্ত্রণ করুন
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে ব্যক্তি যোগাযোগের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করতে পারে। আপনি যদি প্রতিদিন নির্দিষ্ট কিছু সময় ফোন বন্ধ করে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকেন তবে অন্য মানুষের সাথে সু-সম্পর্ক গড়ে ওঠার বেশি সম্ভাবনা রয়েছে। পরিবার-পরিজনের সাথে খাবার সময়টায়, বাচ্চাদের সাথে খেলার সময় কিংবা পার্টনারের সাথে কথা বলার সময়টায় সোশ্যাল মিডিয়া চেক না করার জন্য বদ্ধপরিকর হতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে সোশ্যাল মিডিয়া যেন আপনার কাজের ক্ষতি, কোন প্রজেক্ট থেকে মনঃসংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে না পারে। বিশেষ করে শোবার ঘরে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ রাখা যাবে না। এতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।
২. সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকুন
নিয়ম করে দিনে একাধিকার সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকুন। বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে ফেসবুকিং থেকে ৫ দিন অথবা ১ সপ্তাহ নিজেকে দূরে রাখলে নিজের ওপর ধকল কমে যায় , জীবনের প্রতি তৃপ্তি বাড়ে। টানা তিন সপ্তাহ দিনে মাত্র ১০ মিনিট করে ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট ব্যবহারে একাকীত্ব এবং বিষণ্ণতা কমে যায়। প্রথমদিকে এমনটা করতে কষ্ট হতে পারে। সেক্ষেত্রে পরিবার পরিজনের কাছে প্রকাশ্যে ছুটি নিয়েছেন জানানো যেতে পারে। এরপর মোবাইল থেকে আপনার পছন্দের সোশ্যাল মিডিয়া সার্ভিসের অ্যাপ ডিলিট করে দিন।
৩. নিজের কর্মকাণ্ড ও অনুভূতির ওপর নজর দিন
গতানুগতিকের চেয়ে ভিন্ন সময়ে, ভিন্ন সময় দৈর্ঘে আপনার পছন্দের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যাবহার করতে কেমন লাগছে সে ব্যাপারে এক্সপেরিমেন্ট করুন। খেয়াল করুন প্রতিটা সেশনের আগে এবং পরে কেমন লাগছে। দেখবেন যে টানা ৪৫ মিনিট ফেসবুক চালানোর চেয়ে মাঝে মাঝে অল্পসময় চালানোতে বেশি ভালো লাগছে। যদি দেখেন, মাঝরাতে অনন্তকাল ধরে ফেসবুক চালানোয় নিজের প্রতি খারাপ লাগা গ্রাস করে নিচ্ছে, তবে রাত ১০টার পর ফেসবুককে জীবন থেকে বিদায় করে দিন। মনে রাখবেন, যেসব মানুষ সোশ্যাল মিডিয়াকে ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করছে, সারা দিন শুধু অন্যের পোষ্ট দেখে যায়, তারা অন্যদের থেকে বেশি খারাপ বোধ করে। তাই চেষ্টা করবেন পরিচিত মানুষদের সাথে অনলাইনেও বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকতে।
৪. জিজ্ঞেস করুন “কেন?”
সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই যদি টুইটারে তাকান তবে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন কেন টুইটারে এসেছেন? ব্রেকিং নিউজের খবর পেতে নাকি যে দিনটার মুখোমুখি হতে ভয় পাচ্ছেন তার থেকে মুক্তি হিসেবে শুধু শুধু স্ক্রল করছেন? আপনি কি খেয়াল করেছেন, যখনই আপনার সামনে কঠিন কোনও কাজের দায়িত্ব আসে তখনই আপনার ইন্সটাগ্রাম চালানোর তীব্র আকাঙ্ক্ষা জাগে। সাহসী হন আর নিজের সাথে সৎ হন। যেক’বার সোশ্যাল মিডিয়া ব্রাউজ করতে মোবাইলে হাত চলে যাচ্ছে , ততবার নিজেকে প্রশ্ন করুন “আমি এটা কেন করছি?” আপনি আপনার জীবন থেকে কী পেতে চান তা ভাবুন।
৫. কিছু বন্ধুদের বাদ দিন
সময়ের পরিক্রমায়, আপনার অনেক অনলাইন বন্ধু হয়েছে, অনেক মানুষ, প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হয়েছেন। এখনো কিছু কন্টেন্টের ব্যাপারে আপনার আগ্রহ জাগে। কিন্তু এর বেশিরভাগই বিরক্তিকর, অসহ্যকর কিংবা তার থেকেও খারাপ। এখন সময় এসেছে এসব মানুষকে আন-ফলো, মিউট, হাইড করে দেওয়া, বেশিরভাগ মানুষই তা খেয়াল করবে না। এতে দেখবেন আপনার জীবন আরও ভালো হবে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, ফেসবুকে বন্ধুদের জীবনযাপন অন্যান্য কন্টেন্টের তুলনায় জীবনে বেশী নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এসব বন্ধুদের ফেসবুক থেকে বাদ দিন আর যেসব সাইটের কন্টেন্ট অনুপ্রেরণা-দায়ক, অবিশ্বাস্য, মজার তাদের সাথে যুক্ত হন।
৬. সোশ্যাল মিডিয়াকে বাস্তব জীবনের সাথে প্রতিস্থাপন করা বন্ধ করুন
এমনভাবে ফেসবুক চালাবেন না যাতে মাসের পর মাস চলে যায় তবু আপনার নব্জাতক ভাগ্নেকে দেখার সময় আপনার হয়ে ওঠে না। কলিগের সাথে টুইটিং করা মজার হতে পারে, কিন্তু খেয়াল রাখবেন তা যেন সামনা সামনি কথা বলার সাথে পালটে না যায়। ভেবে চিনতে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যাবহার করলে , সোশ্যাল মিডিয়া আপনার জীবনে একটি উপকারী সংযুক্তি হতে পারে। কিন্তু আপনার সামনে বসা মানুষটিই কেবল পারে আপনার কারোও সাথে সত্যিকার ভাবে যুক্ত হওয়ার মানুষ্য চাহিদাটি পূরণ করতে।
তথ্যসুত্র- কিউরিসিটি ডট কম