হারিয়ে যাওয়া কিছু বৈজ্ঞানিক আবিস্কার। পর্ব ১

বিজ্ঞান আমাদের জীবনকে বদলে দিয়েছে। যুগ যুগ ধরে বিজ্ঞানের বিভিন্ন আবিষ্কার আমাদের জীবনকে করেছে সহজ এবং স্বাচ্ছন্দ্যময়। তবে কিছু কিছু আবিষ্কার আছে যা কোনো না কোনো কারণে আলোর মুখ দেখেনি। এ পর্বে সেসব হারিয়ে যাওয়া বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার সম্বন্ধে জানব।

1. Sloot Digital Coding System:

আমরা প্রত্যেকেই এখন স্মার্টফোন ব্যবহার করি। আর এই স্মার্টফোন গুলিতে কিছু পরিমাণ ইন্টারনাল মেমোরি থাকে। এছাড়া আমরা সাপোর্টেড এক্সটারনাল মেমোরি ব্যবহার করি। যেখানে আমরা আমাদের প্রয়োজনের ডাটা সেভ করতে পারি। যেমন : মুভি,গান,গেমস ইত্যাদি। এগুলো করতে করতে আমাদের মেমোরি একদিন না একদিন ফুল হয়ে যায়। তখন আমাদের মনে হয়, ইশ!! মেমোরি আরেকটু বেশি হলে ভাল হত। জেন স্লুট নামক নেদারল্যান্ডস এর একজন ইলেক্ট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ার এই প্রব্লেম টিকে প্রায় দূর করে ফেলেছিলেন তার আবিষ্কার এর মাধ্যমে। তিনি ১৯৯৫ সালে এমন একটি ডাটা কমপ্রেশন টেকনিক আবিষ্কার করেছিলেন,, যাতে একটি সম্পূর্ণ হলিউড মুভিকে মাত্র ৮ Kb মেমোরিতে সেভ করা যেত। তিনি এই কমপ্রেশন টেকনিক টি Philps কোম্পানির এক্সিকিউটিভের সামনে প্রদর্শন করেছিলেন। তিনি মাত্র ৬৪ Kb মেমোরির একটি চিপ দিয়ে লাগাতার ১৬ টি ফুল কালারের,ফুল রেজ্যুলেশনের হলিউড মুভি চালিয়ে দেখান। কিন্তু কোম্পানির সাথে ডিল সাইন হবার একদিন আগে ১৯৯৯ সালের ১১ ই জুলাই হার্ট অ্যাটাকে তিনি মারা যান। এবং যেই ফ্লপি ডিস্কে এর এলগরিদম টি সেভ ছিল, সেটিরও কোনো খোজ পাওয়া যায় নি।

2. Death Ray :

নিকোলা টেসলা ; এই নামটির সাথে এর আগেও হয়ত আপনি পরিচিত হয়েছেন। কারণ তিনি একজন মহান বিজ্ঞানী ছিলেন। তার আবিষ্কার যুগ যুগ ধরে মানবসভ্যতা কে সাহায্য করে চলেছে। তবে তার কিছু আবিষ্কার তার মৃত্যুর সাথে সাথেই বিলুপ্ত হয়ে যায়। এই আবিষ্কার গুলোর মধ্যে একটি অসম্পূর্ণ আবিষ্কার, যা মানুষ কে সারাজীবন আকর্ষণ করেছে, যার নাম ‘ Death Ray ‘. তিনি ১৯৩০ সালে দ্য ডেথ রে বা ডেথ বিম নামক, থিওরেটিকাল পার্টিকেল বিম বা ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক ওয়েপেন বানিয়েই ফেলেছিলেন।

এই অস্ত্রটির ক্ষমতা এত বেশি হত যে,১০ হাজার এয়ারক্রাফট ২০০ মাইল দূর থেকে ধ্বংস করে দিতে পারত। এই অস্ত্রটির ক্ষমতা এত বেশি হত যে, এটা যার কাছে থাকবে তাকে হারানো কখনই সম্ভব ছিল না। কিন্তু ইতিহাসবিদ দের মতে,নিকোলা টেসলা এটা কখনই তৈরি করে উঠতে পারেননি। কারণ এটি তৈরির জন্য যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন ছিল,সেটা তার কাছে ছিল। আর তখনকার মানুষ এর ধারনা এটাই ছিল যে, এই ধরনের অস্ত্র তৈরি হতে পারেনা। তাই কোনো কোম্পানি বা কোনো সংস্থা, এমনকি তার দেশ তার এই আবিষ্কারের পিছনে টাকা খরচ করতে রাজি হয় নি। তাই তার এই আবিষ্কার তার মৃত্যুর সাথে সাথে ই অসম্পূর্ণ অবস্থায় বিলুপ্ত হয়ে যায়।

3. Cloudbuster :
https://encrypted-tbn0.gstatic.com/images?q=tbn%3AANd9GcQfmAyMokpXs6EbKrrkxhpoYbZnHRHD2zuf1spVZDpOWxOI3XXL

অস্ট্রিয়ান ফিজোএনালিস্ট উইলহেম রিচ এমন একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেন, যার সাহায্যে কৃত্রিমভাবে বৃষ্টি আনা সম্ভব ছিল। তিনি এটির নাম দেন Cloudbuster। বায়ুমণ্ডলের উপর অবস্থিত অর্গন এনার্জি কে ম্যানুপুলেট করে তিনি কৃত্রিমভাবে বৃষ্টি সৃষ্টি করে দেখিয়েছিলেন। এই যন্ত্রটিকে আকাশের একটি নির্দিষ্ট দিকে ফোকাস করা হত এবং বায়ুমণ্ডলের অর্গন এনার্জি কে শোষণ করে নিত। যাতে কৃত্রিমভাবে মেঘের সৃষ্টি হত এবং বৃষ্টি শুরু হত। কিছু ফাকা ধাতব টিউবের মত ছিল এই Cloudbuster. ১৯৫৩ সালের ৬ ই জুলাই সকালে কিছু কৃষকের অনুরোধে তিনি এই মেশিনটির প্রয়োগ করেন। এবং সন্ধ্যা নাগাদ সেই স্থানে বৃষ্টি নামতে শুরু করে। ১৯৫৩ সালের পর উইলহেম রিচ এটার প্রয়োগ আর করতে পারেন নি । কারণ FDA সংস্থা মানুষ কে বোকা বানানোর অপরাধে তাকে বন্দি করে নেয়। এবং তিনি বন্দী অবস্থাতেই মৃত্যুবরণ করেন। FDA সংস্থার দাবি ছিল, ৬ ই জুলাই এর আগের দিন রাত থেকেই আবহাওয়া পাল্টাতে শুরু করে, তাই কার্যত স্বাবাভিক ভাবেই বৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বলেন, তার এই আবিষ্কার কে ধামাচাপা দেয়া হয়। কারণ এটির ফলে পৃথিবীতে শস্যের উৎপাদন অনেক বেড়ে যেত। এবং ছোট ছোট দেশ গুলি অনেক বেশি উন্নতি করতে পারত। হয়ত বড় বড় দেশ গুলি ছোট দেশ গুলোর উপর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলত, যা তারা চাইত না। তাই তার এই আবিষ্কার কে ধ্বংস করে দেয়া হয়। তার আবিষ্কার এর ধ্বংসাবশেষ এখনো আমেরিকার রেন্গেলে,মেইনেতে [ Dodge Pond Rd, Rangeley, ME ] দেখা যায়।

4. Starlite :


১৯৭০-৮০ সালের মধ্যে অ্যামাচার কেমিস্ট মরিস ওয়ার্ড এমন একটি পদার্থ আবিস্কার করেন,যেটির খুব উচ্চ তাপমাত্রা সহ্য করার ক্ষমতা ছিল। তিনি এর নাম দেন Starlite. ১৯৯৩ সালে Tomorrow’s World নামের একটি টিভি শো তে তিনি এটির ক্ষমতার প্রদর্শন করেন। বলা হয়,এই পদার্থ টির ১০ হাজার ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা সহ্য করার ক্ষমতা ছিল। একটি পরীক্ষাতে দেখা যায়,একটি ডিম কে স্টারলাইট দিয়ে ঢেকে দিয়ে আগুনের সামনে ধরা হলেও ডিম টি সম্পূর্ণ রূপে অক্ষত ছিল। এই পদার্থ টির বিশেষ ব্যাপার ছিল,এটির থেকে কোনো রকম টক্সিক বাই প্রোডাক্ট নির্গত হত না।
নাসা সহ অন্যান্য বড় বড় সংস্থা এই পদার্থ টির ফর্মুলা জানার চেষ্টা করে,কিন্তু ওয়ার্ড এটির সিক্রেট কখনোই কাওকে বলেননি। ২০১১ সালে তার মৃত্যু হয়। তাই এটির ফর্মুলা আর জানা সম্ভব হয় নি,কারণ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এটির সিক্রেট কাওকে বলেননি।

আজকের পর্বটি এ পর্যন্ত ই। ভাল লাগলে লেখাটি শেয়ার করবেন।

References :

roadsideamerica.com   pinterest.com wikipedia.org

Comments are closed.