সোফিয়ানামা

এ সপ্তাহে সোফিয়ার নামটাই বোধ হয় সবচেয়ে বেশিবার কানে এসেছে। না, কোনো ইরানী সুন্দরীর কথা বলছি না। বলছি ‘এরাবিয়ান সিটিজেন’ (!) রোবট সোফিয়ার কথা। বাংলাদেশে চার দিন ব্যাপী আয়োজিত “ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড” মেলায় ঘুরে গেল রোবট সোফিয়া। এক ঝাঁক কৌতুহলী চোখের মাঝে আমরা তাকে বেশ বিরক্ত-বিব্রত অবস্থাতেই দেখতে পেয়েছিলাম। বিস্তারিত জানতে আস্তে ধীরে পড়তে থাকুন ‘সোফিয়ানামা!”

হ্যানসন রোবোটিকস কোম্পানী ইতোমধ্যেই বেশ কিছু হিউম্যানোয়েড রোবটের প্রোটোটাইপ ডিজাইন করেছে। সোফিয়া তাদের প্রথম কাজ নয়। অবশ্য পূর্বের প্রোটোটাইপ গুলোকে বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি বিশ্লেষক পত্রিকা ‘দ্য ভার্জ’ “just lame things” বলেই আখ্যায়িত করেছে, এবং সোফিয়ার ব্যাপারেও তাদের মন্তব্য খুব একটা সুবিধার নয়।

 

সোফিয়ার সাথে যেকোনো ধরনের আলাপচারিতা শুরু করার আগে তাকে লোকাল ওয়াইফাই জোনের সাথে কানেক্ট করাতে হয় এবং তার আউটপুট সেক্টরকে একটি ল্যাপটপের সাথে সংযুক্ত করতে হয়। তাই প্রশ্ন উঠেছে প্রচলিত AI গুলোর চেয়ে সোফিয়ার পার্থক্য ঠিক কতটুকু। উইন্ডোজ মোবাইল ফোন এ ব্যাবহৃত ‘কর্টানা’ কিংবা আইফোনের ‘সিরি’ অথবা ‘গুগল নাউ’ এর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের তুলনায় সোফিয়ার আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের অবস্থান কোথায় এ নিয়ে ইতোমধ্যেই বেশ কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে নির্মাতা প্রতিষ্টান হ্যানসন রোবোটিকসকে। কেননা মোবাইল ডিভাইসে ব্যাবহৃত উক্ত AI গুলোও ইন্টারনেটের সাথে কানেক্টেড অবস্থায় চমকপ্রদ আলাপচারিতা চালিয়ে যেতে পারে এবং ব্যাবহারকারীর প্রশ্নের বুদ্ধিদিপ্ত উত্তর দিতে পারে। এক্ষেত্রে সোফিয়ার সাথে পার্থক্য মূলত তার মুখভঙ্গি তথা ফেসিয়াল এক্সপ্রেশনের ক্ষেত্রটুকুতেই।

 

হ্যানসন রোবোটিকসের বক্তব্য অনুযায়ী সোফিয়া প্রায় ষাটের অধিক মুখভঙ্গি তথা ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন প্রদর্শনে সক্ষম। আর যে যাই বলুক সোফিয়ার কিউট হাসির ঝলকে অনেকের হৃদয়ই চুরি হয়েছে- একথা সত্য। সোফিয়ার এই কিউট ফেসিয়াল স্ট্রাকচার তৈরী করা হয়েছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হ্যানসন রোবোটিকসের কর্ণধার ডক্টর টমাস হ্যানসনের প্রয়াত স্ত্রী ‘হেপবার্ন’ এর মুখের আদলে। সোফিয়ার বর্তমান ফিজিক্যাল স্ট্রাকচারের সাথে “পা” ইনক্লুডেড নেই। কোমরের নিচের অংশটি একটি চেয়ার সংযুক্ত ট্রলি। কিন্তু চমকপ্রদ তথ্য হলো, নির্মানাধীন অবস্থায় তার প্রথম স্ট্যাকচারের সাথে “পা” সংযুক্ত ছিল। কিন্তু পরে কেন তা বাদ দেয়া হলো এর উত্তর হ্যানসন রোবোটিকসই ভালো জানে।

 

এরপর আসা যাক সোফিয়ার আরবীয় নাগরিকত্বের বিষয়ে। এই ব্যাপারটিকে ‘ফোর্বস’ ম্যাগাজিন “বুলশিট” বলে আখ্যায়িত করে সৌদি সরকারের কাছে জানতে চেয়েছে ঠিক কোন কোন বিষয় বিবেচনা করে সোফিয়াকে মানুষের সমান অধিকার দেয়া হলো? এবং জানতে চাওয়া হয়েছে নাগরিকত্বের নিয়মগুলি সোফিয়ার ওপর ঠিক কিভাবে প্রযুক্ত হবে? নাগরিকত্ব প্রদান করলেও সোফিয়ার ব্যাপারে এই প্রশ্ন গুলোর কোনো সন্তোষজনক উত্তরই দেয় নি সৌদী সরকার। অন্য দিকে সৌদীর সাধারণ জনগন সোফিয়ার ব্যাপারে বিভিন্ন কৌতুহলোদ্দীপক এবং হাস্যকর মন্তব্য প্রকাশ করছে। কিছু নমুনা এরকম, “সৌদীর নাগরিক হিসেবে সোফিয়ার অবশ্যই হিজাব এবং স্কার্ফ ছাড়া রাস্তায় বের হওয়া উচিত নয়।” অপর একজন সৌদী নাগরিক প্রশ্ন করেছেন, “সৌদী আরবের নাগরিক হতে চাইলে একজনকে অবশ্যই মুসলিম হতে হবে। একটা রোবটের পক্ষে কি করে মুসলিম হওয়া সম্ভব?!”

 

হ্যানসন রোবোটিকসের মন্তব্য অনুযায়ী সোফিয়ার হাস্যরসবোধ বেশ প্রখর। তার এই ধরনের কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশ মানবজাতির জন্য ক্ষতির কারণ হবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে সোফিয়া বলে “ওহ!….. ইলোন মাস্কের বক্তৃতা আর হলিউড মুভিগুলো বোধহয় একটু বেশিই খেয়েছো! চিন্তার কিছু নেই, আমার সাথে যেমন ব্যাবহার করা হবে আমি তেমনটাই ফেরত দেব।”

 

মানুষের পাশাপাশি কাজ করে সমাজ ব্যাবস্থাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সোফিয়ার আরও উন্নতি সাধন এবং তার মত একই ধরনের পুরুষ রোবোটও নির্মানের কথা ভাবছে হ্যানসন রোবোটিকস।

Comments are closed.