কিছুকাল আগেও একটা রকেট পৃথিবীর প্রাচীর ছেড়ে গেলে সেটির অক্ষত অবস্থায় ফিরে আসার সম্ভাবনা শূন্যে ছিল। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে আসতেই সেটি পুড়ে ছাই হয়ে যেত, কিন্তু সময় বদলে গেছে, বেশকিছু কোম্পানি এতই উন্নতমানের রকেট বানিয়েছে যেগুলো মহাশূন্য থেকে সফল্ভবে ভূমিতে অবতরণ করেছে।
তার মধ্যে যার নাম না বললেই নয় , এলন মাস্কের “স্পেসএক্স”
২০০২ সালে এলন মাস্ক “স্পেসএক্স” প্রতিষ্ঠা করেন মহাশূন্য যাত্রার ব্যয় কমানোর জন্য,মঙ্গলে কলোনি স্থাপনের জন্য- যা বর্তমানে ফ্যালকন সিরিজের রকেট এবং ড্রাগন সিরিজের মহাকাশযান নিয়ে কাজ করছে।
ইতিমধ্যে “ফ্যালকন নাইন” এবং “ফ্যালকন নাইন হেভি” নিয়ে কাজ করা হচ্ছে যা মহাশুন্যে পেলোড বহন করে নিয়ে যাচ্ছে।
আমাদের দেশের প্রথম স্যাটেলাইট “বঙ্গবন্ধু-১” এই “ফ্যাল্কন নাইন” এর দ্বারাই মহাশুন্যে প্রেরণ করা হয়েছে।
স্পেসএক্স এর মূল লক্ষ্য হল মহাশূন্য যাত্রার খরচ তুলনামূলক ভাবে অনেকাংশে কমিয়ে আনা, এবং তারা এই লক্ষ্যে অনেকদূর এগিয়েও গেছে, তারা রকেটের প্রতিটি অংশ নিজেরা উৎপাদন করে থাকে ফলে কমদামে বেস্ট প্রোডাক্ট পাওয়া সহজলভ্য হয় এবং বস্তুর মানের মধ্যে সামঞ্জস্যতা থাকে।
তারা ভাবে, মহাশূন্য যাত্রা সহজলভ্য করতে হলে একটি রকেট একবারের বেশী ব্যবহার করার উপযোগী করতে হবে তবেই প্রতি রকেট লঞ্চ এ খরচ অনেক কমে আসবে। সেলক্ষ্যে কাজের ফল হল ফ্যাল্কন ৯ রকেট।
একটা কমার্শিয়াল এয়ারলাইনার যেখানে দিনে বেশকয়েক বার যাত্রা করে এবং হাজার এর উপরে হাজার ফ্লাইট সম্পন্ন করে সেখানে একটি রকেট মাত্র একবার ব্যবহার করা যায়, যা কিনা সম্পদের অপব্যবহার, অথচ একটি রকেটের দাম কমার্শিয়াল এয়ারলাইনার এর সমান ই কিন্তু সার্ভিস এর দিক দিয়ে পুরোই দুই মেরু।
স্পেসএক্স এর ফ্যাল্কন ৯ রকেট টি এই অসম্ভব কে সম্ভব করেছে ,২০১৭ সালে প্রথম অর্বিটাল ক্লাস রকেটের রিফ্লাইট পরিচালনা করে দেখিয়েছে এবং প্রথম অংশ সফল ভাবে আটলান্টিক এ ভাসমান ড্রন শিপে অবতরণ করেছে, যা পৃথিবীতে প্রথম।
এবার ফ্যাল্কন ৯ সম্পর্কে কিছু জানা যাকঃ
উচ্চতা: ৭০ মিটার
ভর: ৫,৪্৯,০৫৪ কেজি
ডায়ামিটার: ৩.৭মিটার
ধাপ: ২
বহনযোগ্য ভার: ২২,৮০০কেজি(লো আর্থ অর্বিটাল), মঙ্গলে(৪০২০ কেজি)
দুইধাপে কাজ করতে সক্ষমতা সম্পন্ন রকেট,
প্রথম রিফ্লাইট সম্পন্ন করা রকেট,
ইঞ্জিন সংখ্যাঃ প্রথম ধাপে ৯টি
দ্বিতীয় ধাপেঃ ১টি ধাক্কার পরিমাণঃ ১.৭মিলিয়ন পাউন্ড
দামঃ ৬২মিলিয়ন ডলার
এবার ফ্যাল্কন ৯ হেভি নিয়ে কিছু জানা যাকঃ
উচ্চতা: ৭০মিটার
ভর: ১৪,২০,৭৮৮ কেজি
প্রস্থঃ ১২.২ মিটার
ধাপ: ২
বহনযোগ্য ভার: ৬৩,৮০০ কেজি
ইঞ্জিন সংখ্যাঃ ৩*৯= ২৭
ধাক্কার পরিমাণঃ ৫ মিলিয়ন পাউন্ড (১৮ টি ৭৪৭ এয়ারলাইনার এর ধাক্কার সমান)
দামঃ ৯০ মিলিয়ন ডলার
সফলভাবে পরিচালিত ভ্রমনঃ ১/১
সমসাময়িক সকল রকেটের সাথে তুলনা দেখে নেওয়া যাক নিচের ছবিতেঃ
তবে এখন পর্যন্ত সর্বকালের সেরা রকেটের নাম বলতে গেলে অব্যশই স্যাটার্ন ফাইভ(৫) এর নাম উল্লেখ করতে হবে।
যার উচ্চতা: ১১০.৬ মিটার
ভর: ২৯৭০০০০ কেজি (ফ্যাল্কন ৯ হেভি থেকে দ্বিগুণ ভারী)
ধাপ: ৩
ভারবহন ক্ষমতাঃ ১,৪০,০০০ কেজি
সফল উড্ডয়ন: ১২/১৩
বর্তমান অবস্থাঃ অচল
ভ্রমণ প্রতি ব্যয়ঃ ১৮৫মিলিয়ন ডলার যা বর্তমানে ১.১৬বিলিয়ন ডলার
বর্তমানে স্পেসএক্স কে টেক্কা দেওয়ার মত যে রকেট রয়েছে সেটি হল “ডেল্টা ৪ হেভি” যার প্রতিষ্ঠাতা United Launch Alliance
উচ্চতা: ৭২ মিটার
প্রস্থঃ ১৫ মিটার
ভর: ৭,৩৩,০০০কেজি
ধাপ: ২
পেলোডঃ ২৮,৩৭০ কেজি
সফলভাবে পরিচালিত ভ্রমনঃ ৯/১০ (ফ্যাল্কন হেভির পরেই অবস্থান, সচল রকেট হিসেবে)
থ্রাস্টঃ ১.৪১০ মিলিয়ন পাউন্ড
খরচ: ৩৫০মিলিয়ন ডলার
বর্তমানে স্পেসএক্স তাদের পরবর্তী রকেট নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে,যার নাম করণ করা হয়েছে “বিগ ফ্যাল্কন রকেট” যাকে বানানো হচ্ছে মঙ্গলে মানুষ নিয়ে যাওয়ার বাহন হিসেবে। এই লক্ষ্যে ফান্ড গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এই রকেটটি কে বানানো হচ্ছে গ্রহ থেকে গ্রহে মানুষ পরিবহনের জন্য – যা ফ্যাল্কন সিরিজের বাকি রকেট গুলো কে রিপ্লেস করবে এবং সাথে ড্রাগন স্পেসক্রাফট কেও।
উচ্চতা হবেঃ ১১৮ মিটার (সর্বাধিক)
বহনযোগ্য ভার: ১৫০ টন , ফলে স্যাটার্ন ৫ কে পিছনে ফেলে দিবে পেলোড বহনের দিক দিয়ে।
পৃথিবীতে যদি এই রকেট ব্যবহার করা হয় এক দেশ/শহর থেকে আরেক দেশে/শহরে যেতে তবে যে সময় লাগবে তা নিম্নে দেখানো হলঃ
TIME COMPARISONS TO MAJOR CITIES
ROUTE DISTANCE COMMERCIAL AIRLINE TIME VIA BFR
LOS ANGELES TO NEW YORK 3,983km 5 hours, 25 min 25 min
BANGKOK TO DUBAI 4,909km 6 hours, 25 min 27 min
TOKYO TO SINGAPORE 5,350km 7 hours, 10 min 28 min
LONDON TO NEW YORK 5,555km 7 hours, 55 min 29 min
NEW YORK TO PARIS 5,849km 7 hours, 20 min 30 min
SYDNEY TO SINGAPORE 6,288km 8 hours, 20 min 31 min
LOS ANGELES TO LONDON 8,781km 10 hours, 30 min 32 min
LONDON TO HONG KONG 9,648km 11 hours, 50 min 34 min
ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও থেকে দেখে নিতে পারেন কিভাবে ভ্রমণ সম্পন্ন করেছে রকেট গুলো।
তবে আজ এই পর্যন্তই।
কারো কোন প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন।
সোর্সঃ www.spacex.com