আমাদের সোলার সিস্টেমের বাইরের কোনো গ্রহে জীবনের খোজ করতে এবং জীবনধারণ সম্ভব কি না, তা নিয়ে নাসা সহ আরো অনেক স্পেস এজেন্সি, বেশ অনেকদিন ধরেই কাজ করে আসছে। যার ফলে আমরা এমন অনেক গ্রহর ব্যাপারে পেয়েছি যেগুলোতে জীবনের খোজ না পেলেও, জীবনধারণ করা যেতে পারে – হ্যাবিটল জোনে থাকা এমন অনেক গ্রহ পেয়েছি।
সম্প্রতি নাসা এমন ই একটি গ্রহের সন্ধান পেয়েছে। TESS নামের একটি শক্তিশালী টেলিস্কোপ সম্প্রতি এটি খুজে পেয়েছে। TESS বা Transttng Exoplanet Survey Satellite টেলিস্কোপ টি কে ২০১৮ সালের এপ্রিলে মহাকাশে পাঠানো হয়। এই স্পেস টেলিস্কোপ টি কেপলার টেলিস্কোপ থেকে অধিক শক্তিশালী। এই টেলিস্কোপ টির মূল উদ্দেশ্য আমাদের সোলার সিস্টেমের বাইরে থাকা এমন সব গ্রহের খোজ করা, যেগুলো তার স্টারের অরবিট একটি হ্যাবিটেবল জোন থেকে করছে।
TESS ২০১৯ সালে আমাদের পৃথিবী থেকে ৩০ আলোকবর্ষ দূরে Hydra Constellation এর দিকে খোজা শুরু করে। TESS এই সময় একটি Dwarf Star বা বামন তারার দিকে খোজা শুরু করে। যেটার আয়তন এবং ভর আমাদের সূর্য এর থেকে ৩ গুণ কম। এবং এর তাপমাত্রা ৪০% কম। বিজ্ঞানীরা এই তারার নাম দিয়েছেন GJ 357। এই তারাটি বেশি গুরুত্ব পেয়েছে এর গ্রহ গুলির কারণে। এই তারা কে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি গ্রহ আবর্তিত হচ্ছে। তবে বিজ্ঞানীরা প্রথম যে গ্রহ টির খোজ পায় সেটির নাম GJ 357B।
TESS দ্বারা এই তারাটি পর্যবেক্ষণ করে এটা জানা গেছে যে, এই তারা থেকে আসা আলো ৩.৯ দিনে খুব ক্ষীন হয়ে যাচ্ছে। যার দ্বারা এটা বোঝা যায় যে এই তারাটির কাছে কোনো গ্রহ আছে। আরো অধিক গবেষণা করার পর তারা GJ 357B গ্রহটি নির্ণয় করতে সক্ষম হয়। এই গ্রহটি আমাদের বুধ গ্রহের থেকেও ১১ গুণ বেশি কাছে দিয়ে তারাটিকে পরিক্রমণ করছে। এজন্য এই গ্রহের সার্ফেস এর তাপমাত্রা ২৫৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
[ GJ 357 এর স্টার সিস্টেম। ]
বিজ্ঞানীরা এই গ্রহটি ও তারাটি নিয়ে আরো বেশি রিসার্চ করা শুরু করে। তারা নিশ্চিত ছিলেন এই গ্রহটির আশেপাশে আরো গ্রহ থাকবে। কারণ বিজ্ঞানীরা তাদের করা পুরনো রিসার্চ থেকে এটা বুঝতে পেরেছিলেন যে, খুঁজে পাওয়া এই নতুন গ্রহটির উপর Gravitational Force বা মহাকর্ষীয় বল এর প্রভাব পড়ছিলো। এই রিসার্চ থেকে বিজ্ঞানী রা এই তারাটির কাছে আরো দুটি গ্রহের সন্ধান পায়।
এদের নাম GJ 357C এবং হ্যাবিটেবল জোনে থাকা GJ357D।
GJ 357C গ্রহটি আমাদের পৃথিবী থেকে ৩.৪ গুণ বেশি ভরসম্পন্ন। এটি তার হোস্ট স্টার অর্থাৎ GJ 357 কে ৯.১ দিনে পরিক্রমণ করে। GJ 357C গ্রহটিতে লিকুইড ওয়াটার থাকতে পারে কিন্তু এর সার্ফেস এর তাপমাত্রা ১২৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তাপমাত্রা অধিক হওয়ায় প্রথম দুটি গ্রহে জীবনধারণ সম্ভব নয়।
কিন্তু তৃতীয় গ্রহ GJ 357D হ্যাবিটেবল জোনে থাকা একটি গ্রহ। এই গ্রহে জীবন হবার সম্ভাবনা বেশি এবং বিজ্ঞানীরা এটা নিয়ে অনেক টাই আশাবাদী।
GJ 357D খুব সম্প্রতি খুজে পাওয়া একটি গ্রহ। এখনো পর্যন্ত আবিষ্কৃত সর্বশেষ গ্রহ এটি। এই গ্রহটি নিয়ে রিসার্চ করে বিজ্ঞানী রা জানতে পারেন, এই গ্রহটি তার হোস্ট স্টার অর্থাৎ GJ 357 এর অরবিট প্রায় ৫৫.৭ দিনে পূরণ করে থাকে। এবং এই গ্রহটি GJ 357 থেকে মাত্র ০.৯৫ AU ( Astronomical Unit.) এর দূরত্ব আছে। যেটা আমাদের সূর্য ও পৃথিবীর দূরত্বের তুলনায় মাত্র ৫% কম। তবে এর আয়তন সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি।
বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন এই গ্রহে আমাদের পৃথিবীর মতোই লিকুইড ওয়াটার থাকতে পারে। এই গ্রহটির ভর আমাদের পৃথিবীর তুলনায় ৬ গুণ বেশি। তাই এই গ্রহটিকে ‘ Super Earth ‘ ক্যাটাগরি তে রাখা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন GJ 357D গ্রহটির আয়তন আমাদের পৃথিবীর সমান বা ১-২ গুণ বেশি হতে পারে।
বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন যদি এই গ্রহটির সার্ফেস এর উপরে ঘন বায়ুমণ্ডল থাকে, তাহলে তার হোস্ট স্টার অর্থাৎ GJ 357 থেকে আসা তাপ কে ধরে রাখতে পারবে। এতে এই গ্রহে লিকুইড ওয়াটার থাকার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। আর যদি তা হয় তাহলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন এতে এলিয়েন লাইফ থাকতে পারে।
এই গ্রহটিকে আরো অনেক রিসার্চ বাকি আছে। খুব শীঘ্রই হয়তো এই গ্রহটির ব্যাপারে আরো চমকপ্রদ তথ্য পাবো।
Source : space.com
Leave a Reply