এলন মাস্ক এর মাথায় যা আসে তাই তিনি বাস্তবে রূপ দেন, কিছুদিন আগে একটা মিম ভাইরাল হয়েছিল সেখানে দেখা যাচ্ছে ১৯৯৯ সালে তিনি অর্থলেনদেন বিষয়ক ওয়েবসাইট তৈরি করতেন, কিন্তু ২০১৯ সালে এসে দেখা গেলো তিনি যা চান তাই বানান।

রিইয়ুজেবল রকেট থেকে শুরু করে টেসলা রোডস্টার কার, মার্স মিশনের জন্যে স্টারশিপ রকেট, এবার তিনি নিয়ে এলেন, সাইবারট্রাক, এর ছবি দেখে প্রথমেই মনে হবে যে ২ডি শেপের কার, যা আগেকার দিনে কার গেমগুলোয় ব্যবহার করা হত।
আজ অবধি এমন শেপের পিকআপ কেউ দেখেনি, বিষয়টা মাস্ক বলেই সম্ভব হয়েছে, অদূর ভবিষ্যতে আমরা আরো এমন সব ডিজাইন দেখতে পারবো।


দেখতে তেমন হলেও কাজে কিন্তু বাজারের অন্যতম সেরাদের কাতারেই থাকবে টেসলার এই ইলেক্ট্রিক পিকআপ টি।
হালের অন্যতম জনপ্রিয় ফোর্ড- F150 এর সাথে সমানে সমানে টক্কর দিবে এমনটাই জানান দিতে আসছে এই সাইবার ট্রাক।
এটার অন্যতম বিশেষত্ব হচ্ছে, অন্যসব ট্রাক এর মত এটি হাইব্রিড ভেহিকল নয়, ফুল অল ইলেক্ট্রিক পিক আপ, এক চার্জে ৫০০+ মাইল পথ পাড়ি দিতে সক্ষম এর, সবচেয়ে পাওয়ারফুল মটরের ভার্শন টি।

যাই হোক পরিচিতি পর্ব তো হল এবার মূলতথ্যে আসা যাক:
এলন মাস্ক তার টেসলা ইনকর্পোরেটেড এর আন্ডারে নিয়ে এল টেসলা সাইবারট্রাক, যা পুরোটাই ইলেক্ট্রিক চার্জে চলবে। আগাম ফরমাশ নেওয়া শুরু হয়েছে, ২০২১ সালের শেষ নাগাদ এটি বাজারে ছাড়া হবে। অর্ধেক সাইবার, অর্ধেক ট্রাক, সাইবারট্রাক।

১৯৮২ সালের ব্লেড রানার মুভিতে ব্যবহার করা হয়েছে এরকম একটি গাড়ি, যাতে অভিনয় করেছিলেন, হ্যারিসন ফোর্ডের মত অভিনেতা, অনেকেই একে ইন্সপায়ার্ড ফ্রম ব্লেড রানার বলছে,
এলন মাস্ক যেদিন প্রেজেন্টেশন দেন, সেদিন ব্যাকগ্রাউন্ড এ mad max fury road এর টাইটেল সং বাজছিল, যা ইংগিত দেয়, এর বানানোর ইতিহাসের দিকে।

কি জন্যে এটি অন্যদের থেকে আলাদা??
কেনই বা মানুষ এই ট্রাক কিনবে?
সেসবের উত্তর আজকেই এই আর্টিকেলে দেওয়া হবে:
প্রথমেই এর বডি নিয়ে কথা বলা যাক:
বডি:
৩০X কোল্ড রোলড স্টেইনলেস স্টিল এর তৈরি এর বডি, একাধারে যেমন লুক দেয়,ঠিক তেমন টেকশই, যা একে অন্যদের থেকে আলাদা করে রাখবে। বহিকঙ্কাল হিসেবে এর বডি যথেষ্ট শক্তিশালী , দাগমুক্ত রাখতে সক্ষম।

ভারী স্লেজহ্যামারের আঘাতেও এর কিচ্ছু হয়নি, যেখনে নর্মাল ট্রাক এর দরজায় দাগ পড়ে গর্ত হয়ে গিয়েছে।
৯মিলিমিটার হ্যান্ডগান থেকে ছোড়া বুলেটে এর বডির কিছুই হয়নি, এক কথায় এই রেঞ্জে বুলেটপ্রুফ, এতে ব্যবহার করা হয়েছে, ৩মিমি আল্ট্রা হার্ড কোল্ড রোল্ড স্টেইনলেস স্টিল সংকর, যা বাইরের দিকে ব্যবহার করা হয়েছে।
লম্বায় ৬.৫ ফুট। আর রয়েছে টেসলার নিজস্ব আর্মর গ্লাস, যা ড্রাইভার এবং আরোহী দের দিবে সর্বাধিক সুরক্ষা, মেটাল বল এর আঘাতে এর কিছুই হয়নি, বলটি গ্লাস ভেদ করে ভিতরে ঢুকতে পারেনি। ভিডিও তে দেখে নিতে পারেন।

এতে মার্স মিশন এর জন্যে বানানো স্টারশিপ রকেটের সমতুল্য ম্যাটেরিয়ালস ব্যবহার করা হয়েছে।
অ্যাডাপ্টিভ এয়ার সাসপেনশন থাকায়, নিজে থেকেই উচুনিচু রাস্তায় লেভেল করতে পারবে, সেই সাথে আরোহীদের রাস্তার ঝাকুনি থেকে সুরক্ষা দেবে।

বর্তমানে সব ট্রাক এর মধ্যে সর্বাধিক গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স এর প্রায় ১৬ ইঞ্চি, এর ট্রিমটর ভার্শন টি পোরশে’র ৯১১ মডেলের থেকেও দ্রুতগতির, ০-৬০কিমি/ঘন্টা মাত্র ২.৯ সেকেন্ডেরও কম সময়ে গতি তুলতে সক্ষম।

অটোপার্কিং মোড, ট্রেইলার ডকিং, এবং আরেকটি ভার্শন আসবে যার মধ্যে ফুল সেল্ফ ড্রাইভিং অপশন থাকতে যাচ্ছে।
The real world range (city + highway) in summer is ≈765 km.
The real world range (city + highway) in winter is ≈644 km.
Top speed- 209 km/h
অ্যাপ্রোচ অ্যাঙ্গেল – ৩৫°
ডিপার্টচার অ্যাঙ্গেল – ২৮°
ড্রাইভার সিটের সাথে একটি ডিসপ্লে আছে যা প্রায় ১৭” যা টাচপ্যাড। ৬ টি সিট রয়েছে, বিশাল স্পেস নিয়ে গঠিত।৫ টি অরিজিনাল সিট, একটি ফোল্ডিং সিট, ড্রাইভারের পাশে

পেলোড ক্যাপাসিটি- ৩৫০০ পাউন্ড
১৪০০০পাউন্ড টেনে নেওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন মটর হল ট্রিমটর ভার্শন টি।
বাকিগুলো কিছুটা কম ক্যাপাসিটির, ছবিতে তিনটি ভার্শনের ক্যাপাসিটি দেখে নেওয়া যাক:

১০০ কিউবিক ফিট স্টোরেজ ক্যাপাসিটি আছে।
একের মধ্যে এত কিছু কেউ এর আগে দেয়নি, স্পিড,স্টোরেজ, মন্সটার পারফর্মেন্স, সেই সাথে টপ লেভেলের ম্যাটেরিয়ালস, কিন্তু দাম প্রায় নাগালের মধ্যেই।
চলুন তিন ভার্শনের দাম দেখে নেওয়া যাক:

পজেটিভ দিক :
অল ইলেক্ট্রিক
লো কস্ট
লো মেইন্টেনেন্স কস্ট
লো কার্বন এমিশন
লো নয়েজ
হাই পেলোড ক্যাপাসিটি
বিশাল স্টোরেজ
এক্সট্রিম ড্যামেজ টলারেন্স
অটোপার্ক মুড
নেগেটিভ দিক:
ইউএস এ ব্যবহারকারী দের রুলস নিয়ে কিছুটা জল্পনা কল্পনা শুরু হয়ে গেছে অলরেডি
ডেইলি লাইফের জন্যে উপযোগী নয়
ইউজার ফ্রেন্ডলি না, দুর্ঘটনা ঘটলে উদ্ধার করা অনেক সময়সাপেক্ষ হবে।
ওজনে অনেক ভারী
ইউএস এর জনপ্রিয় ট্রাক ফোর্ড f-150 এর সাথে একটি ড্রাগ রেস এ দেখা যায়, পাহাড়ের পাদদেশে থেকে সাইবারট্রাকটি অনায়সেই ফোর্ডের ট্রাককে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, ফোর্ড পেরে উঠতে পারেনি, একেতো ফোর্ডের টায়ার ছিল পুরাতন, সেই সাথে অনলি রিয়াল হুইল ড্রাইভ ছিল, যেখানে টেসলা অল হুইল ড্রাইভ নিয়ে নেমেছিল+ সাইবারট্রাক ছিল এফ-১৫০ এর তুলনায় অনেক ভারী,
যা ফোর্ডের উচ্চমহলকে ক্ষিপ্ত করেছে, তারা ফেয়ার প্লে এর জন্যে টেসলাকে জানিয়েছে, কেননা তাদের মনে হয়েছে লড়াই টা সমানে সমানে হয়নি, এলন মাস্ক তাতে সাড়া দিয়ে বলছেন “bring it On”.

এবার ফোর্ড f150 এর সাথে তুলনা করে দেখা যাকঃ
দাম
f150: ২৮৪৯৫- ৫২৭৪০ ডলার
cybertrack: ৩৯৯০০ডলার-৬৯০০০ডলার
পেলোড :
f150: ৩২৭০ পাউন্ডস
cybertrack: ৩৫০০ পাউন্ডস
টেনে নেওয়ার ক্যাপাসিটি:
f150: ১৩,২০০পাউন্ডস
cybertrack: ১৪,০০০ পাউন্ডস
গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স:
f150ঃ ৯.৯ ইঞ্চি
cybertrack: ১৬ইঞ্চি
অ্যাঙ্গেল :
f150: ২৫.৮ (অ্যাপ্রচ), ২৭.১(ডিপার্চার)
cybertrack: ৩৫(অ্যাপ্রচ), ২৮(ডিপার্চার)
বডি ম্যাটেরিয়ালস:
f150: Aluminium
Cybertrack: Stainless Steel
জ্বালানি:
2020 f150: গ্যাস পাওয়ার্ড
cybertrack: অল ইলেক্ট্রিক
স্টোরেজঃ
f150: ৭৭.৪ কিউবিক ফিট
cybertrack: ১০০ কিউবিক ফিট

সাইবারট্রাক এর ব্যাটারি:
এর ব্যাটারি ক্যাপাসিটি এখনো জানানো হয়নি, ২৫০+কিলোওয়াটের ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে সম্ভবত,ফাস্ট চার্জিং রয়েছে।
২৫০kW+ মানের ব্যাটারি যা প্রায় ৬৯০ হর্সপাওয়ার, ও ৮২৪ পাউন্ড ফিট টর্ক জেনারেট করতে সক্ষম।
সোলার থেকে পাওয়ার জেনারেট করার উপায় থাকছে,(বিল্ট ইন সোলার চার্জিং) যা থেকে দিনপ্রতি ১৫মাইল যাওয়ার সমপরিমাণ চার্জ পাওয়া সম্ভব, টেসলা সেটা ৩০-৪০ মাইলে রুপান্তর করার চেষ্টা করবে। আমেরিকায় দিনপ্রতি ড্রাইভিং গড় হল ৩০মাইল। CHARGING PORT আছে, ১১০-২২০ভোল্টেজ এ চার্জ দেওয়া যাবে।

ধরে নিলাম, এটা চালক ও আরোহীকে সর্বোচ্চ মাত্রার নিরাপত্তা দিবে কিন্ত সিরিয়াস দুর্ঘটনাবশত যদি গাড়ির ড্যামেজ হয়, তাহলে সেটা উদ্ধার করা + আরোহীকে গাড়ির বাইরে দ্রুত নিয়ে আসা নিশ্চিতভাবেই কষ্টকর হবে।
এছাড়াও টেনে নেওয়ার উপর এর গতি নির্ভর করবে অবশ্যই, ম্যাক্সিমাম পেলোড টেনে নেওয়ার সময় এটি সর্বোচ্চ গতিতে চলতে পারবে না।
এটা কি তাহলে উদ্ভট ডিজাইনের গাড়ি আনার রাস্তা প্রশস্ত করে দিল???

এলন মাস্ক বলেছেন, সর্বোচ্চ শক্তিতে চলে সাইবারট্রাক ০.৩০ ড্রাগকোফিসিয়েন্ট অর্জন করতে পারবে, যা পিকআপ ট্রাক এর জন্যে অভাবনীয়, সেই ক্রেডিট এর অ্যারোডায়নামিক ডিজাইনের জন্যে, যদিওবা এখানে কিছু বিষয় উহ্য রেখে হিসাব করা হয়েছে, প্রডাকশনে আসলে প্রকৃত হিসাব বুঝা যাবে, ততদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করা ব্যতীত কাজ নেই।
TWITTER,MUSK
আরেকটা নিউজ দেখে ভাবতে পারেন যে এটা তো সেই হিট হয়ে গেছে অলরেডি, সেটা হল, এখন পর্যন্ত সাইবারট্রাক এর ২৫০,০০০ প্রিঅর্ডার পড়েছে, এটা এত বড় একটা ফ্যাক্ট না যখন আপনি জানবেন যে, এর প্রিঅর্ডার ফি-১০০ডলার, এবং এটি ফেরতযোগ্য, তাই এর প্রিঅর্ডার বিষয়টা ওতটা বড় ফ্যাক্ট না।
আরো অনেক কিছু লেখা যেত, কিন্তু বেশিরভাগ ই এখন অ্যাজাম্পশন। ২০২১ সালের শেষ দিক নাগাদ প্রডাকশন এ আসবে, তার আগে অনেক জল্পনা কল্পনা চলবেই, আজকে এই পর্যন্তই, কোন প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন কমেন্ট বক্সে।
source: https://www.tesla.com › cybertruck
https://www.businessinsider.com › cybertruck-is-a-breakthrough-for-tesla-…
https://edition.cnn.com › perspectives › cybertruck-tesla-elon-musk