Quasar : মহাবিশ্বের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু

কোয়াসার; মহাবিশ্বের আশ্চর্য জনক জিনিস গুলোর মধ্যে অন্যতম। এই মহাবিশ্বের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু হচ্ছে কোয়াসার। আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির মতো শ খানেক গ্যালাক্সি একত্র করলে যে পরিমাণ আলো নির্গত করবে, একটি কোয়াসার ই তার চেয়ে অধিক আলো নির্গত করবে। আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি তেই রয়েছে ২০০-৪০০ বিলিয়ন নক্ষত্র। তাহলে এর উজ্জ্বলতা কত হতে পারে ভাবা যায়!!!

কোয়াসার ( Quasar) শব্দটি মূলত Quasi Stellar Radio Source এর সংক্ষিপ্ত রূপ। কারণ প্রথম যে কোয়াসার আবিষ্কৃত হয় তা রেডিও তরঙ্গ বিকিরণ করত বিধায় এই নাম রাখা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে অনেক কোয়াসার আবিষ্কৃত হয়েছে যেগুলো রেডিও তরঙ্গ বিকিরণ করেনা। তাদের কে Radio Stellar Object বলা হয়। রেডিও টেলিস্কোপ আবিষ্কার এর পূর্বে জ্যোতির্বিদেরা এটিকে নক্ষত্র বা নেবুলা মনে করত। কিন্তু ১৯৫০ সালে রেডিও টেলিস্কোপ আবিষ্কারের পর এটির দ্বারা পর্যবেক্ষণ এর পর তারা বুঝতে পারলেন এটা কোনো নক্ষত্র বা নেবুলা নয়। বরং অন্য কিছু যা গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকে। রেডিও টেলিস্কোপ ছাড়া সাধারণ টেলিস্কোপ দ্বারা এটিকে পর্যবেক্ষণ করলে এটিকে সাধারণত অতি উজ্জ্বল নক্ষত্র ই মনে হবে।
প্রথম দেখতে পাওয়া কোয়াসার হলো 3C-273 এবং 3C-48.

[হাবল টেলিস্কোপের তোলা 3C-273 এর ছবি]

কোয়াসার গুলো ক্রমান্বয়ে দূরে সরে যাচ্ছে প্রতি সেকেন্ডে ৯৩,২০০ মাইল বেগে। এখনো পর্যন্ত প্রায় ২০০,০০০ টি কোয়াসার আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রায় সব কোয়াসার ই আমাদের পৃথিবী থেকে অনেক দূরে অবস্থিত। এখনো পর্যন্ত আবিষ্কৃত কোয়াসার গুলোর মধ্যে সবচেয়ে কাছের কোয়াসার টি হচ্ছে IC 2497. যেটি ৭৩০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এবং ULAS J1342+0928 হচ্ছে সবচেয়ে দূরের কোয়াসার, যেটি ২৯.৩৬ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এই কোয়াসার টি বিগ ব্যাংয়ের ৬৯০ মিলিয়ন বছর পর সৃষ্টি হয়েছিল।


কোয়াসার কিভাবে সৃষ্টি হয় তার সঠিক তথ্য জানা যায় নি। তবে বিজ্ঞানীদের মতে,যখন কোনো গ্যালাক্সি তার জন্মের শুরুর দিকে থাকে তখন তার কেন্দ্রে একটি কোয়াসার সৃষ্টি করে। প্রতিটি গ্যালাক্সির কেন্দ্রেই একটি করে সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল থাকে যার ভর সূর্যের থেকে কয়েক লাখ থেকে কয়েক শত কোটি বেশি হতে পারে। এই সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল এর চার পাশে অ্যাক্রিশন ডিস্ক থাকে। এই অ্যাক্রিশন ডিস্ককে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে মহাজাগতিক ধূলিকণা,গ্যাস ইত্যাদি। এই গ্যাস, ধূলিকণা বা অন্যান্য পদার্থ যখন ব্ল্যাকহোলের মধ্যে পতিত হয়,তখন সেখানে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয়। এই তাপমাত্রা মিলিয়ন ডিগ্রী পর্যন্ত হতে পারে। এবং সেখান থেকে নির্গত হয় রেডিও ওয়েভ এবং অন্যান্য ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক রেডিয়েশন । আর এভাবেই জন্ম নেয় কোয়াসার। যখন সব পদার্থ ব্ল্যাকহোলে পতিত হয়ে যাবে এবং ব্ল্যাকহোলের কাছে শোষণ করার মত কিছুই থাকবে না। তখন ই কোয়াসার থেকে আলো বের হওয়া বন্ধ হয়ে যাবে এবং এটি মারা যাবে। অর্থাৎ কোয়াসারের মৃত্যু হবে।

আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি তে একসময় কোয়াসার ছিল। তবে এখন তা মৃত। তবে আমাদের গ্যালাক্সি তে আবারো কোয়াসার জন্ম নিতে পারে। তবে এর সম্ভাবনা খুব কম। একমাত্র সম্ভাবনা হলো যখন আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি এবং এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির সংঘর্ষ হবে তখন। তবে এটি ঘটতে লেগে যাবে ৪ থেকে ৬ বিলিয়ন বছর।

Reference :
1.factslegend
2.universetoday

Comments are closed.